নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুতিন পুতিন পুতিন। একুশ শতকের হিটলার। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজাতে বিশ্বজুড়ে মাঠে নেমে পড়েছে ওয়েস্টার্ন মিডিয়া। সাদ্দামকে শায়েস্তা করা হয়েছে। লাদেনকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তালিবানদের হাতে আফগানিস্তান ছেড়ে দিয়ে আসতে হয়েছে। মানুষের মনে নানান প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দেওয়া শুরু হওয়ার আগেই আর একজনকে দরকার ছিল। ভীষণ ভাবেই দরকার ছিল। একজন খলনায়ক না হলে প্রতিদিনের মেগাসিরিয়ালে দর্শককে বসিয়ে রাখা যায় না। ফলে একজন খলনায়কের দরকার ছিল। না হলে বিশ্বরাজনীতিতে মস্তানি করা অসুবিধের বিষয়। না, সেই কারণেই বিশ্বরাজনীতির নিয়ামকেরা বসেও ছিল না। তারা তলায় তলায় তাদের কাজ ঠিকই এগিয়ে নিয়ে চলছিল। কাজটি কি? না, একজন খলনায়ক তৈরীর কাজ। কিভাবে সেটি সম্ভব? এই বিষয়ে কাদের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি? সাদ্দাম থেকে লাদেন। কারা খলনায়ক বানিয়ে থাকে? উত্তর কারুরই অজানা নয়। এখানে একটু থামতে হবে। সাদ্দাম আর লাদেন। দুজনকেই খলনায়ক বানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই বানানোর পদ্ধতি কি একরকম ছিল? বিশ্ব রাজনীতির খবরাখবর যারা রাখেন। তারা জানেন। দুটি পদ্ধতি দুই রকমের ছিল। শুধু একটি জায়গাতেই মিল ছিল। সেটা হলো অস্ত্র সরবরাহ। তবে কি, পুতিনকেও অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে খলনায়ক বানিয়ে তুলতে। না, পুতিনের সাথে সাদ্দাম বা লাদেনের কোন মিল নেই। আর নেই বলেই তাকে খলনায়ক বানাতে তৈরী করতে হবে নতুন পথ। পুতিনের সাথে সাদ্দাম আর লাদেনের সবচেয়ে বড়ো পার্থক্য কোথায়? সাদ্দাম আর লাদেন দুইজনেই আমেরিকার হাতে তৈরী করা পুতুল। কিন্তু পুতিন কারুর হাতে তৈরী করা পুতুল নয়। পুতিন কারুর কথায় ডন বৈঠক দেওয়া রাষ্ট্র প্রধান নয়। ফলে যে পদ্ধতিতে সাদ্দাম কিংবা লাদেনকে খলনায়ক বানানো সম্ভব। সেই পদ্ধতি পুতিনের জন্য কাজে আসার কথাও নয়।
পুতিনকে ঠিক কোন পদ্ধতিতে খলনায়ক বানিয়ে তোলা সম্ভব হলো? সেটি বুঝতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হয়ে কয়েক দশক। মিখাইল গোর্বাচভের আমলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে দেওয়ার সময়ে ন্যাটো একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়াকে। ন্যাটো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ১৯৮৯ সালে ন্যাটোর পূর্বসীমার পুব দিকে কোন অবস্থাতেই ন্যাটো এক ইঞ্চীও অগ্রসর হবে না। অর্থাৎ নতুন করে পূর্ব ইউরোপের কোন দেশকে ন্যাটোর সদস্য করা হবে না। প্রধানত এই প্রতিশ্রুতির উপরেই ভরসা করে রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে দিতে অগ্রসর হয়। কেমন ছিল ন্যাটোর দেওয়া এই প্রতিশ্রুতি রক্ষার ধরণ? প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ঠিক এক দশক বাদে ১৯৯৯ সালে ন্যাটো পোলাণ্ড হাঙ্গেরি ও চেচিয়াকে ন্যাটোর সদস্যভুক্ত করে নিয়ে ন্যাটোর পূর্ব সীমান অনেকটাই বাড়িয়ে নেয় পূর্ব ইউরোপের দিকে। কমিউনিজম বিদ্বেষীদের অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাঁচের দশকে সোভিয়েত সৈন্যের হাঙ্গেরি ও চেকোস্লাভাকিয়ায় প্রবেশের ইতিহাস তুলে ধরে রাশিয়াকে একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে প্রতিপন্ন করে থাকেন। কিন্তু তাঁরা কেউই ১৯৯৯ সালে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী ন্যাটোর পোলাণ্ড হাঙ্গেরি ও চেচিয়ায় প্রবেশের ঘটনাকে সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন হিসাবে স্বীকার করেন না। হিপোক্রেসির ধর্মই তাই। এরপর আসা যাক ২০০৪ সালে। সেই বছরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ন্যাটোগোষ্ঠী একের পর এক যে দেশগুলিতে পা রাখে। অর্থাৎ তাদের দখলদারী কায়েম করে। সেই দেশগুলি হলো, বুলগেরিয়া, বাল্টিক গোষ্ঠীর তিনটি দেশ, লাটভিয়া, লিথিউনিয়া ও এস্তোনিয়া। এবং রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া স্লোভাকিয়া। না, পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধবাজ ন্যাটোগোষ্ঠীর আগ্রাসনের এটাই শেষ ঘটনা নয়। ২০০৯ সালে তারা পা রাখে আলবানিয়া আর ক্রোয়েশিয়ায়। এরপর ২০১৭ সালে মনটেনেগ্রো, আর ২০২০ সালের করোনাকালে উত্তর ম্যাসিডোনিয়ায় প্রবেশ করে ন্যাটো। ১৯৮৯ সালে রাশিয়াকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার এটাই হলো কায়দা। মনে রাখতে হবে। ন্যাটো একটি যুদ্ধবাজ গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী যখন বেলগ্রেড আক্রমণ করে। যুগোস্লাভাকিয়াকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে পরিণত করে, যুগোস্লাভাকিয়া চোকোস্লাভাকিয়া ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে একাধিক ছোট ছোট দেশে পরিণত করে দেয়। তখন কিন্তু সেটি ওয়ার ক্রাইমের আওতায় পড়ে না। সেই ন্যাটোই যখন লিবিয়াকে শশ্মানে পরিণত করে গদ্দাফিকে খুন করে। সেটিও কোন ওয়ার ক্রাইম নয়। ইরাকে ন্যাটোগোষ্ঠীর দেশগুলি কোটি কোটি ইরাকিদের খুন করলে সেটি মানবতা বিরোধী কোন অপরাধ হয় না। যাক। লিস্ট আর টেনে বাড়িয়ে দরকার নেই। ঘটনা সকলেরই জানা। কোথায় কখন কার হাতে কিভাবে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয় আর হয় না। সেই ফর্মুলাটি মানুষ মাত্রেই জানে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে ১৯৯৯ থেকে ২০২০। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী ন্যাটোগোষ্ঠীর একের পর এক দেশে পা রাখার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলতে থাকা সত্তেও রাশিয়া কিন্তু ন্যাটো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটিও বুলেট খরচ করেনি। আমরা যদি রাশিয়ার মানচিত্রের উপরে চোখ রাখি। তাহলে দেখতে পাবো। এস্তোনিয়া লাটভিয়া আর লিথিউনিয়া রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তের তিনটি দেশ। খুবই ছোট এই তিনটি দেশই বর্তমানে যুদ্ধবাজ ন্যাটোগোষ্ঠীর দখলে। রাশিয়ার দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে বেলারুশ বাদে বাকি দুইটি ইউরোপীয় দেশ হলো উইক্রেন আর মলডোভা। ইউক্রেন শুধুই বড়ো একটি দেশ নয়। ইউক্রেনের একটি বড়ো ইতিহাস রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ানে এই ইউক্রেনই ছিল পারমাণবিক অস্ত্রে সমৃদ্ধ। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে স্বাধীন ইউক্রেন গঠনের সময়েই ঠিক হয়। ইউক্রেনের স্বাধীনতা লাভের মূল শর্তই হবে পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভার নিরপেক্ষতা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী নিরপেক্ষ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ। যে দেশ কোনভাবেই ন্যাটোগোষ্টীভুক্ত দেশগুলির সাথে যোগ দিতে পারবে না। এবং কোন অবস্থাতেই পরমাণু অস্ত্রসম্ভার মজুত ও ব্যবহার করতে পারবে না। সেই শর্তেই ইউক্রেনের স্বাধীনতা লাভ। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে পটপরিবর্তনের শুরু। তৎকালীন মার্কিন বিদেশ সচিব জো বাইডেন এবং তার মন্ত্রকের অন্যতম সচিব ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যাণ্ডের নেতৃত্বে ইউক্রেনের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে একটি পুতুল সরকার বসিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাটি অল্পবিস্তর সকলেরই জানা কথা। কিন্তু অনেকেই যেটি জানেন না, সেটি হলো। এই ঘটনার পর থেকেই শান্ত ইউক্রেনকে মার্কিন শক্তির সরাসরি মদতে অশান্ত করে তোলার কাজ শুরু হয়ে যায়।
কিভাবে শুরু হয় সেই কাজ? শুরু করা হয় ভাষা বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার ইতিহাস বহু পুরানো। দুই অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতির ভিতরে অমিলের থেকে মিলই বেশি। ভাষার দিক দিয়ে ইউক্রেনের বেশির ভাগ মানুষই রুশ ও ইউক্রেন দুই ভাষাই জানেন। জনবিন্যাসের ধরনে, ইউক্রেনবাসীর সত্তর শতাংশের প্রথম ভাষা ইউক্রেন হলেও দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে রুশ ভাষার চলই বেশি। তেমনই বাকি তিরিশ শতাংশ মানুষের প্রথম ভাষা রুশ হলেও দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইউক্রেন ভাষার চল রয়েছে। আরও একটি বিষয় রয়েছে। এই দুই ভাষাগোষ্ঠীর ভিতরে বৈবাহিক সূত্রে পারিবারিক সম্পর্কসূত্রও গভীর। হিটলারের আমলে জার্মানিতে যেমন খৃষ্টান আর ইহুদীদের ভিতরেও এই পারিবারিক সম্পর্কসূত্রের গভীর ইতিহাস বিদ্যমান ছিল। হিটলার ও তার নাৎসী বাহিনী যে সম্পর্কসূত্রের গভীরে আঘাত নামিয়ে নিয়ে এসেছিল নৃশংস ভাবে। ২০১৪ পরবর্তী ইউক্রেনে মার্কিন পরিকল্পনায় ও মদতে ঠিক সেই একই কাজটি শুরু করা হয়েছিল সুচতুর ভাবে কৌশল করে। প্রথমে ইউক্রেনে নবনাৎসী সম্প্রদায়কে অস্ত্র ও অর্থ জুগিয়ে শক্তিশালী করে তোলা হয়। সেই সাথে ইউক্রেনের শিক্ষাঙ্গন থেকে রুশ ভাষায় পঠন পাঠন সম্পূ্র্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রুশভাষী ইউক্রেনবাসীদের ক্রমেই কোণঠাসা করে দেওয়ার কাজটি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইউক্রেনের পূর্বপ্রান্তের ডনবস এলাকায় রুশভাষী ইউক্রেনবাসীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে তাদের উপরেই নামিয়ে নিয়ে আসা হয় নির্যাতন আর নিপীড়ন। এই প্রসঙ্গ আমাদের মনে রাখা দরকার। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরে পাকিস্তানে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের বাংলাভাষীদের উপরে পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়ন অত্যাচার আর নির্যাতনের ইতিহাস। ২০১৪ পরবর্তী ইউক্রেনের ইতিহাস সেই ইতিহাসেরই পুনারাবৃত্তি বলা যেতে পারে। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ও কার্যকারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাকিস্তানী ঘাতক বাহিনীর নির্যাতন আর অত্যাচারের চরমসীমা কিন্তু ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্য্যন্তই ব্যাপ্ত ছিল। ইউক্রেনের ডনবস অঞ্চলে নবনাৎসী ইউক্রেনিয়ানদের অত্যাচারের চরম সীমা শুরু হয় ২০১৪ সালের পর থেকেই। যা চলতে থাকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী পার করেও। এমনকি, ডনবস অঞ্চলের দুইটি প্রদেশ লুহানস্ক ও ডনেৎস্ককে রাশিয়া স্বাধীন বলে ঘোষণা করার পরেও। ফলে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের ইতিহাস সম্বন্ধে যাঁরা অবগত। তাঁরা কিছুটা অনুধাবন করতে পারবেন। ইউক্রেনে ডনবস অঞ্চলের রুশভাষী শহর নগর গ্রামে গত আট বছর ধরে চলতে থাকা লড়াই কোন পর্যায় পৌঁছিয়েছে। ভয়াবহতার চিত্রটা কিছুটা হলেও পরিস্কার হবে।
ডনবস এলাকায় নবনাৎসীদের অত্যাচারের চরম সীমায়, মার্কিন ও ন্যাটো শক্তি ক্রমাগত ভাবে ইউক্রেনকে ন্যাটোগোষ্ঠীভুক্ত করার কূটনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। যেটি রাশিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তার বিষয়ে চরম হুমকির বিষয়। বস্তুত ২০০৭ সাল থেকেই রাশিয়া এই বিষয়টি নিয়ে ন্যাটোগোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির কাছে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে থাকে। ইউক্রেনকে কোনভাবেই ন্যাটোর সদস্য করা চলবে না। কোনভাবেই ইউক্রেনকে পারমাণবিক শক্তিতে সমৃদ্ধ করা যাবে না। এটাই ছিল রাশিয়ার প্রধান দাবি। আর রাশিয়ার এই দাবিকে নস্যাৎ করতেই মার্কিনশক্তি ইউক্রেনে নিজেদের পুতুল সরকার বসিয়ে গোটা দেশটিকে একটি যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে তোলার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। বস্তুত গত আট বছরে অশান্ত ইউক্রেনের গৃহযুদ্ধের কোন খবর ওয়েস্টার্ন মিডিয়ায় তুলে ধরা হয় না। গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষ যাতে মূল ঘটনাগুলি না জানতে পারে। তার জন্য খবরে সেনসর করা চলতে থাকে। আর অন্যদিকে ক্রমাগত ফেক নিউজ প্রচার করে রাশিয়াকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে তুলে ধরার কাজ চলতে থাকে। বক্তব্য পরিস্কার। রাশিয়া ইউক্রেনের দখল নিতে চায়। এই একটি খবরই আমাদের কাছে তুলে ধরা হতে থাকে। এই বছরের জানুয়ারী মাসের পুরো তিন সপ্তাহ ধরে নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট আর ওয়ালস্ট্রীট জার্নাল রাশিয়া বিরোধী প্রচার চালিয়ে যেতে থাকে। তাদের মূল বক্তব্য রাশিয়ার হাত থেকে মুক্ত পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে ইউক্রেনকে ন্যাটগোষ্ঠীর দখলে নিয়ে আসতে হবে। আর সেটি করতে হলে ইউক্রেনকে ন্যাটোগোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সদস্য করতে হবে। যাতে রাশিয়ার সীমান্তে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভার বসিয়ে দেওয়া যায় স্থায়ীভাবে। মার্কিন শক্তির বহু বছরের অধরা স্বপ্ন সফল হয় তাহলে। আর তাহলেই কেল্লাফতে। রাশিয়াকে চিরদিনের মতো বোতলবন্দী করে ফেলা যাবে। মস্কোর একেবারে ঘাড়ের কাছে পারমাণবিক মিসাইল বসিয়ে একের পর এক বাণিজ্যিক চুক্তিতে মার্কিন স্বার্থে রাশিয়াকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া যাবে।
না, রাশিয়ার মসনদে কে বসে রয়েছেন। সেটি তত বড়ো কথা নয়। সেখানে পুতিন না অন্য কেউ, সেটি বিশেষ বিষয় নয়। তিনি যদি অন্তত দেশপ্রেমিক রাশিয়ান হন। এবং নিজের দেশের নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতিতে শপথ নিয়ে থাকেন। তবে নিজের দেশের নিরাপত্তার জন্য তাঁকে এগিয়ে আসতেই হবে। কোন না কোন সময়ে। পুতিন দীর্ঘদিন রাশিয়ার মসনদ দখল করে রেখেছেন। ঠিক কথা। রাশিয়ানদের ভিতরে পুতিনকে নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। কোন সন্দেহ নাই। সেটাই স্বাস্থ্যের লক্ষ্মণ। না থাকাটাই যে কোন দেশের পক্ষে বিদপজনক। কিন্তু পুতিন যদি এখন নিজে দেশের নিরাপত্তা জলাঞ্জলি দিয়ে মসনদে বসে আয়েস করতে থাকেন। তবে রাশিয়ার ইতিহাসই তাকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে না। মার্কিন অপশক্তি যখন তাঁরা ঘাড়ে চড়ে বসতে চাইছে। তখন তো তাঁকে ময়দানে নামতেই হবে। আর তিনি ঠিক সেটাই করেছেন। লুহান্সক আর ডনেৎস্ক রিপাব্লিককের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়ে। পুতিনের কাছে এটাই ছিল শেষ অপশান। রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই যদি ইউক্রেনকে রাশিয়া মার্কিন দখলদারী থেকে মুক্ত করতে না পারে। একবার যদি ইউক্রেনকে ন্যাটো নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। তাহলে যুদ্ধটা সরাসরি শুরু করতে হবে ন্যাটোর সাথে। যেটা গড়িয়ে যেতে বাধ্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে। ফলে মার্কিন শক্তি রাশিয়াকে ততটাই কোনঠাসা করেছে। যতটা করলে এই মুহুর্তেই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে বাধ্য হয়।
মার্কিন শক্তির নতুন একজনকে খলনায়ক হিসাবে তুলে ধরার খুব দরকার ছিল। না হলে তাদের মিলিটারি ইণ্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স নতুন করে অস্ত্রের বাজার বৃদ্ধি করতে পারছিল না। লক্ষ্মণীয়, মার্কিন দখল মুক্ত করতে রাশিয়ার সৈন্য ইউক্রেনে প্রবেশের তিন দিনের ভিতরেই জার্মান সরকার তাদের ডিফেন্স বাজেট বিপুল পরিমাণে বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে। সাথে রাশিয়ার কাছ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্য নবনির্মিত পাইপলাইন চালুর বদলে গ্যাস আমদানিই বন্ধ করার কথা বলে। ফলে জার্মানদের এখন নির্ভর করতে হবে মূলত মার্কিনদের উপরে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের পুত্র হান্টার বাইডেনের সংস্থা এই গ্যাস রপ্তানীর বাণিজ্যের অন্যতম মালিক। ফলে চারগুন বেশি মূল্যে জার্মান সরকার হান্টার বাইডেনের কাছে থেকে এবারে গ্যাস আমদানি করতে শুরু করবে। যার মূল্য শোধ করবে সাধারণ জার্মান নাগরিক। পুতিনকে কোণঠাসা করে ইউক্রেন আক্রমণে প্ররোচিত করতে না পারলে হান্টার বাইডেনের গ্যাস রপ্তানীর বিপুল মুনাফা নিশ্চিত হতো কি? না, শুধু সেই কারণেই পুতিনকে খলনায়ক বানানো হয়নি। আগেই বলেছি। বিশ্বজুড়ে অস্ত্র বাণিজ্যের বাজার বৃদ্ধির রোডম্যাপ। জার্মান সরকার যে পথটা দেখিয়ে দিয়েছে শুরুতেই। ফলে ন্যাটোগোষ্ঠী ভুক্ত প্রতিটিদেশেরই ডিফেন্স বাজেটে বিপুল ব্যায়বরাদ্দ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যার মুনাফা ঘরে তুলে নেবে আমেরিকা ইজরায়েলের কয়েকজন ধনকুবের।
ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার ঢাক ও ঢোল যত বাজবে। পুতিন ততই খলনায়ক হিসাবে বিখ্যাত হয়ে উঠবে। গোটা বিশ্ববাসীর নজর পুতিনের দিকে আবদ্ধ রেখে, ইউরোপে ন্যাটোকে আরও প্রাসঙ্গিক আরও শক্তিশালী করে তোলা যাবে। অস্ত্র বাণিজ্যের সম্প্রসারণে আরও বেশি মুনাফা ঘরে তোলা যাবে। ইউরোপ সহ বাকি বিশ্বে রাশিয়ার বর্তমান বাণিজ্য বাজারের দখল নিয়ে নিতে পারলে। মার্কিন অর্থনীতি আরও বেশি পরিমাণে ফুলে ফেঁপে উঠবে। এখন রাশিয়ার সেই বাজারটিকে দখল নিতে হলে। রাশিয়াকে বাজার থেকে হঠানো দরকার। কি সেই মেকানিজম? সেই মেকানিজমের নামই স্যাংশন। তার উদ্দেশ্য একটাই। রাশিয়ার দখলে থাকা বাণিজ্যের বাজারের দখল নেওয়া। যদি কোন দেশ রাশিয়ার সাথে থাকে। তবে তাকেও স্যাংশানের আওতায় নিয়ে আসার ভয় দেখাও। সেও তার বাজার মার্কিন অপশক্তির জন্য খুলে দেবে। ঠিক এই কারণই ভারতকে চোখরাঙাচ্ছে ওয়াশিংটন। ভারতের ছাপ্পানো ইঞ্চির ছাতির যা মাপ। তাতে ভারত আর কয়টা দিন মার্কিন চোখরাঙানো এড়িয়ে থাকে সেটাই দেখার। মার্কিন শক্তি খুব ভালোই জানে। ইউক্রেনকে কখনোই সরাসরি ন্যাটোর দখলদারিতে নিয়ে আসা যাবে না। তাই তারা এতদিন প্রক্সি ওয়ার চালিয়ে এসেছে রাশিয়ার সাথে। কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য বিশ্বের বাজার দখল। আপাতত রাশিয়াকে সেই বাজার থেকে হঠানোর এমন সুবর্ণ সুযোগ তৈরী করাই ছিল, মার্কিনশক্তির ইউক্রেন পলিসি। পরবর্তী পলিসি চীনকে বিশ্ব বাজার থেকে হটানো। সে গল্প শুরু হবে পরে। সলতে পাকানোর পর্ব শুরু হয়েছে উইর্গিঝ দিয়ে। সামনে আছে হংকং আর তাইওয়ান। রাশিয়াকে বিশ্ব বাজার থেকে হটানোর পলিসি আপাতত একশো ভাগ সফল। মার্কিনশক্তির পাতা ফাঁদে পুতিন পা দিয়ে ফেলেছে। সেই ফাঁদে পা না দিয়েও রাশিয়ার কোন উপায় ছিল না। এখন গোটা পরিস্থিতি মার্কিনদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে ইউক্রেন চালেই ওয়াশিংটন চেকমেট দিয়ে দিল রাশিয়াকে।
সব কিছুরই একটা উপসংহার থাকে। রাশিয়া এই চেকমেট সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল না’কি? নিশ্চয়ই ছিল। অত্যন্ত ভালোভাবেই ছিল। ছিল বলেই, ১৯৯৯ সালে ন্যাটোর পোলাণ্ড হাঙ্গেরি চেচিয়া দখলের সময় থেকে ২০১৪ সালে মার্কিনদের ইউক্রেন দখল। সব কিছুই চুপ করে দেখে গিয়েছে। দেখতে বাধ্য হয়েছে। অপেক্ষা করেছে। পরীক্ষা দিয়েছে সহ্যশক্তির। কিন্তু সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে। রাশিয়া আজকে সেই লিমিটকে আর ক্রস করতে দিতে রাজি হয়নি। রাশিয়া এর পরিনাম সম্বন্ধে খুব ভালো ভাবেই ওয়াকিবহাল। কিন্তু আমরা এখনো জানি না। রাশিয়া তার ডিফেন্স কিভাবে সাজিয়ে রেখেছে। সামরিক ডিফেন্সের কথা নয়। অর্থনৈতিক ডিফেন্সের কথা। সেই ডিফেন্সে চীনের অংশীদারী কতটা থাকবে। গোটা বিশ্বের ভবিষ্যত কিন্তু তার উপরেই ঝুলছে। ফলে ওয়াশিংটনের আজকের চেকমেট পরবর্তীতে বুমেরাং হয়ে যাবে কি যাবে না। সেই হিসাব রয়েছে রাশিয়া ঠিক কিভাবে তার ডিফেন্স সাজিয়ে মাঠে নেমেছে। আর সেই ডিফন্সে চীনের ভুমিকা কতবড়ো।
৪ঠা মার্চ’ ২০২২
কপিরাইট শ্রীশুভ্র কর্তৃক সংরক্ষিত
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৩৮
রিফাত হোসেন বলেছেন: আপনি সুন্দর করেই উপস্থাপন করেছেন। তবে partially কিছু ব্যাপার চেপে গিয়ে ব্যক্তি ধারণাকে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
জার্মান গ্যাসের উপর নির্ভরশীল কেনই হয়েছে, এর আলাদা কারণ আছে। তাদের সামরিক বাজেট এতদিন অল্প ছিল বড় দেশ হিসেবে, আয় হিসেবে।
রাশিয়ার প্রভাব বিস্তার, প্রাকৃতিক সম্পদ,আন্তর্জাতিক রাজনীতি সব জড়িত।
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২২ রাত ১১:৩২
গরল বলেছেন: আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করেছে কে, সোভিয়েত। ইরাক ইরান যুদ্ধ কার সৃষ্টি, সোভিয়েত কারণ দুপক্ষের কাছেই অস্ত্র বিক্রি। ইরাক কার মদদে কুয়েত দখল করেছিল, রাশিয়া। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ কার মদদে শুরু হয়েছিল, রাশিয়া, সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের কাছেই অস্ত্র সরবরাহ করেছে রাশিয়া। এমন কি সিরিয়া সরকার তার নিজের দেশের জংণের উপর গ্যাস বোমা মেরেছিল, সেগুলো দিয়েছিল কে? এর পরেই না ন্যাটো সেখানে গিেছিল। যুগোশ্লভিয়াতে সার্বিয়া কার মদদে যুদ্ধ শুরু করেছে? ন্যাটো অগ্রসর না হলে তো বসনিয়ান বলে কোন জাতি আজ পৃথিবীতে টিকে থাকত না। পৃথিবীর যত সন্ত্রাসী গোষ্ঠি তার ৯৯ ভাগ ব্যাবহার করে একে-৪৭, এগুলো সরবরাহ করে কারা?
৪| ০৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:০৫
নীল আকাশ বলেছেন: দুর্দান্ত লেখা। আমি কিছুদিন আগেই ঠিক এটা নিয়ে লিখেছিলাম। রাশিয়াকে বাধ্য করা হয়েছে। ইউক্রনের বর্তমান সরকার সরাসরি আমেরিকার এজেন্ট।
পুতিন একদম ঠিক কাজ করেছে। বাড়াবাড়ির একটা লিমিট থাকে সব সময়।
৫| ০৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ২:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: আমেরিকা খুব শ্রীঘই রাশিয়াকে একটা ধাক্কা দিবে। ইউক্রেন সেই অপেক্ষাতে আছে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৫৮
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: বুইড়া বাইডেন দেখি পাক্কা খেলোয়ার!