নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ব্লগের সমস্ত লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ব্যাতীত এই ব্লগের লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।

মুহাম্মদ তামিম

মুহাম্মদ তামিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্পঃ ফোয়ারা

১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০৬

ফোয়ারা

টেকো ভুটিওয়ালা গোলগাল আকারের একটা লোক, পরনে হাফ হাতা শার্ট আর লুঙি।
এই ধরনের দৈহিক বৈশিষ্ট্য কার্টুনিস্টদের কাছে হটকেকের মতো। এই ধরনের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে হাস্যকর চরিত্র তৈরির বিষয়টা কার্টুনিস্টদের কাছে অনেকটা পাঠ্যবই এর বিষয়বস্তুর মতো।

লোকটির জীবনকেও বিধাতা বোধ হয় এনিমেশন সিনেমা ভেবে সাজিয়েছেন। লোকটির ঘরের চাল ডালের অবস্থা বাদই থাক, তার বড় ছেলের এস এস সি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু এই করোনায় পড়ালেখার পাট চুকিয়ে চায়ের দোকান দিয়েছে যে, সেই ট্রাজেডিকেও কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যাই, তার ছোট মেয়েটি দুপুর থেকেই জিজ্ঞাসা করছে, "বাবা গরু কই আমাদের!" , এক কথার পুনরাবৃত্তি সহ্য করতে না পেরে মেয়েটিকে ধমক মেরে দুপুরে না খেয়েই বাইরে চলে এসেছেন। লোকটির চাকরি ব্যাবসার অবস্থার বিশদ নাহয় অনুমান করেই নিন আপনারা। বিধাতার উপহাসের জিনিস উনার আর ওই লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক। আমরা আর আফসোস না বাড়াই।

লোকটি, এই মুহুর্তে একটি রেস্টুরেন্ট এর সামনে দাড়িয়ে। কাল কোরবানির ঈদ। আজ চাদরাত। তারপরও রেষ্টুরেন্ট চলছে। রেস্টুরেন্ট এর আশেপাশে পানির ফোয়ারা। লোকটি অদ্ভুত এক শিশুর মতো দৃষ্টিতে পানির ফোয়ারা দেখছে। লোকটি ছোটবেলায় ফিরে যায়। বর্ষায় পানি উঠলেই মাছ ধরতে নেমে যেতো বন্ধুদের সাথে। লোকটি কি ফোয়ারার মধ্যে মাছ দেখছে?

কিছু কিছু মানুষের জীবন এই ফোয়ারার পানির মতোই, পুরাটাই অপচয়। এই লোকটির জীবনটিও সেরকম। কিন্তু এইরকম জটিল দার্শনিক এবং কিঞ্চিৎ বর্ণবৈষম্যমূলক কথা লোকটির মাথায় ঢুকবে না। তিনি মনযোগ দিয়ে ফোয়ারা দেখছেন। আশেপাশে প্রচুর লোকজন যাচ্ছে আসছে। কারওরই ফোয়ারার দিকে তাকিয়ে থাকা লোকটির দিকে তাকানোর অবসর নেই, নইলে দেখতে পেতো, একটি লোক শিশুর মতো কৌতূহল নিয়ে পানির ফোয়ারা দেখছে। এই ধরনের দৃশ্য একটু খেয়াল করলেই এর গভীরতা বোঝা যায়। খুব একটা ভাবুক হওয়া লাগে না।

রাত বাড়ে, একসময় লোকটি বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। দুপুর থেকে মনে জমে থাকা মেঘ উড়ে গেছে। বিকেলে এক বৃদ্ধ মহিলাকে দেখেছেন। এক বাসা থেকে পুরোনো বাসি তরকারি দেওয়া হয়েছে। বলে দেওয়া হয়েছিলো বাসায় নিয়ে হালকা গরম করে খেতে। বৃদ্ধ মহিলা কেদে কেদে বলেছিলেন তার কোনও বাসাই নেই। বস্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি ওভার ব্রিজের নীচে রাত কাটান। এক অসহায় বৃদ্ধা, যার মাথার উপর ছাদও নেই, তার তুলনায় লোকটির অবস্থা যে অনেক ভালো সেটা তিনি ঠিকই অনুধাবন করলেন।

উনার টাক মাথার জন্য অনেকেই মজার ছলে বলেন, টাক মাথার লোকেরা টাকাওয়ালা হন। উনি এই কথা বিশ্বাস না করলেও নিজের প্রতি প্রচুর আত্মবিশ্বাস রাখেন। তিনি জানেন, তার পরিবারের রিজিকে মাংস থাকলে তা আসবেই। আজ ফোয়ারার পুরনো পানির স্রোতকে নতুনভাবে স্রোতে ফিরতে দেখে নিজের প্রতি হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন। তিনিও জীবনের মূলস্রোতে ঠিকই ফিরবেন।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার! + +
গল্পের ইতিবাচক সমাপ্তি ভালো লাগল। প্রেরণাদায়ক।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো লাগলো অনুগল্প। হতাশা থেকে এসব মানুষ বের হয়ে আসুক

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩৭

প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: আপনার মধ্যে সম্ভাবনা আছে । চালিয়ে যান ।

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১১

মরুর পথে বলেছেন: ভালো লাগলো ।

৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: সব অসহায় দরিদ্র মানুষের গল্প গুলো প্রায় একই রকম। আমাদের দেশটা এত দরিদ্র কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.