![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- আপনার স্ক্রিপ্ট ভালো, প্ল্যানিংটাও আমার পছন্দ হইছে। তয় কথা হইলো গিয়া মার্কেটে এইসব চলতো না। ফাবলিকে (পাবলিক) ইডি খায় না। আপনার মুভি হইলো গিয়া পাইনসা হওয়া আখ। আর বর্তমানে চলে রসালো আখ। ওই যে রাস্তায় দেখেন না, মেশিনে দিয়া গেন্ডারি চাইপা রস বাইর করে, মার্কেটে এগুলিই চলে। আপনে এই রস ঢালেন ছবিতে। রস ছাড়া কিছুই চলে না।
- আপনি যা বললেন, সেগুলো হচ্ছে ব্যাবসায়িক ছবি। কিন্তু সবসময় পাব্লিকের কথামতোন চললে ত হবে না, পালিককেও তো কিছু ধাক্কা দিতে হয়। তাই না।
- হ, কিন্তু এমনিতেই ইন্ডাস্ট্রি শেষ। তার উপর এই রিস্ক লইয়া ট্যাকা ঢাললে আমার শেষ বয়সে রাস্তায় নামান লাগবো।
- কিন্তু,
- শুনেন প্রবোধদা, আপনের এই বা*ছাল কোনো সিনেমাই না, আমি বুঝি না আপনে আর আপনের মতো কিছু পাগল ছাগল কেরে হুদাই এসব বানায়। পরিচালক পাবলিকের পালস আর হলের অবস্থা বুইঝা তারপর বানাইবো সিনেমা। আর আপনের মতো আছে কতডি, খেলেরাম খেলে যা টাইপের। নিজে যা ভালো বুঝবো হেইডিই করবো হুদাই। আপনের সিনেমা এখানে হবে না। এইডা কোনো গল্প! গল্প বানাইবেন, চীন থেইকা এক পোলা আইয়া বাংলাদেশি নায়িকার প্রেমে পরসে, নায়িকাও হইতে হবে প্লাস ফিগারের আর আপনার নায়িকার ফিগারের যে বর্ননা, এডি করলে সিনেমা লাটে উঠবো।
কদিন আগে প্রবোধ শীল টিভিতে দেখেছিলেন কাপিল শর্মা শোতে ভোজপুরি আর্টিস্টরা গেস্ট হয়ে এসেছে। তিনি খুব অবাক হয়েছিলেন। ভোজপুরি সিনেমা নিয়ে ইউটিউবে সার্চও দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্রাহীন অশ্লীলতা ব্যাতীত কিছুই খুজে পাননি। আজ এই প্রডাকশন হাউজে এসে তিনি অনুধাবন করলেন ভোজপুরি ইন্ডাস্ট্রির মার্কেটের কারন।
প্রবোধ শীল পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞানের টিচার। সিনেমার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা থেকেই তিন বছরে একটু একটু করে নির্মাণ করেছিলেন নিজের প্রথম চলচ্চিত্র। বলা বাহুল্য সেটা ব্যাবসা সফল ছিলো না। কিন্তু সমালোচকদের নজর কেড়েছিলো। একে একে সাতটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন যার মধ্যে মুক্তি পেয়েছে মাত্র তিনটা। চারটা বক্স অফিসে আটকে আছে কোনও এক অজানা কারনে।
যেই সিনেমার নিমিত্তে প্রডাকশন হাউজে এসেছিলেন, সেটা তিনি লিখেছেন স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তীকে কেন্দ্র করে। গল্প লিখতে সময় নিয়েছেন দেড় বছরের মতো। প্রবোধ শীল এমনিতে ছাপোষা মানুশ হলেও সিনেমা নিয়ে তার জ্ঞান অসীম। নিজেই সিনেমার চিত্রনাট্য, সংলাপ লিখেন এবং আবহ সঙ্গীতও করেন। তার সিনেমায় রাশিয়ান ছাপ খুবই স্পষ্ট। তার আইডল রাশান পরিচালক আন্দ্রেই তারকোভস্কি। এক পত্রিকার সাক্ষাতকারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, “পদার্থেবিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েও সিনেমাওয়ালা কিভাবে হলেন?” উত্তরে তিনি বলেছিলেন,”ভুল বললেন, সিনেমাওয়ালা হয়েও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েছি সেটাই অবাক হওয়ার মতো বিষয়।"
সিনেমাকে বাজেট ফ্রেন্ডলি রাখতে গল্পকে গুরুত্ব দেন। যে কারনেই গল্প লিখতেই তার অনেক সময় লাগে। নিজেই অল্প অল্প করে ফান্ডিং করে সিনেমার কাজ এগোন। কিন্তু তিনি চাছিলেন সুবর্ণ জয়ন্তীর সিনেমাটা সবাই দেখুক। নতুন একটা প্রজন্মকে ভিন্ন কিছুর সাথে পরিচিত করতে চেয়েছিলেন। যেই কারনে তিনি বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউজের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তবে তিনিও রবি ঠাকুরের একলা চলোরে নীতিতে বিশ্বাসী। কেউ সাহায্য না করলে সিনেমার মার্কেটিং উনি নিজেই করবেন।
হঠাৎ করেই ফোন আসলো প্রবোধ কুমার শীলের। উনি দ্রুত পা চালালেন।
*********
প্রবোধ শীলের ছেলে সুমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফেসবুকে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাঙা নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে মামলা খেয়েছে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত খাওয়ার। মাহবুব নামের স্থানীয় সরকারদলীয় ছাত্র নেতা বেশ কিছু সময় ধরেই সুযোগ খুজছিলো ছিলো। সুমনের কারনে স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের থেকে টাকা আদায় করতে পারতো না।
অবশ্য তেমন লাভ হয় নি। স্বরাস্ট্রমন্ত্রী নিজে ছিলেন প্রবোধ শীলের ছাত্র। কথাটা মন্ত্রী সাহেবের কানে যেতেই তিনি ব্যাবস্থা নেন। তাই জেলে খুব বেশিক্ষণ থাকা লাগে নি সুমনের। এমনকি মামলাও নিষ্পত্তি হয় দ্রুত। কিন্তু মাহবুব সোশ্যাল মিডিয়ায় সুমনকে নিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেয়। আর সেটা খুব দ্রুতই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরে। আর সুমন এবং তার পরিবার কার্যত একঘরে হয়ে পরে। বাজার না করতে দেওয়া থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে চা বা সিগারেট না দেওয়া।
প্রবোধ শীল একজন কলামিস্টও। ইদানিং তার কলামগুলো নিয়ে পত্রপ্ত্রিকাগুলো আপত্তি জানাচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষী শব্দগুলোকে কেটে দিতে বলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে উনি অনুভব করছেন উনার কলমকে ধীরে ধীরে আটকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এতোকিছুর ভীড়েও উনি লেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন সংখ্যালঘু আক্রমণের।
একদিন তার মেয়ে এসে কাদতে কাদতে জানায় জিন্সের প্যান্ট পরার কারনে এক অজ্ঞাত বোরখা পরা মহিলা বাশ দিয়ে তাকে খোলা রাস্তায় সবআর সামনে পিটিয়েছে। কেউ কিছুটি বলেনি।
প্রবোধ শীল বুঝতে পারেন, সুবর্ন জয়ন্তীর এক বছর বাকি থাকতে এই ঘটনা মানে কপালে দুঃখ আছে।
**********
অবশেষে চলে এলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। প্রবোধ শীলের সিনেমা মুক্তি পেতে চলেছে। তবে একে মুক্তি পেতে উনাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়ছে। আইনি লড়াই লড়তে হয়েছে। অবশেষে উনি পেরেছেন।
এই সিনেমায় উনার মূল অনুপ্রেরনা ছিলো অসাম্প্রদায়িকতা। আর এই কারনেই ইসলামী সংগঠনগুলো ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনতে থাকে সমানে। কিন্তু তিনি লড়াইটা চালিয়ে গেছেন।
আর এই সময়েই ঘটলো অঘটন। দুর্যোগ নেমে এলো প্রবোধ শীলের জীবনে।
************
ফেসবুক পোস্টকেই কেন্দ্র করে প্রবোধ শীলের এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়। বাসায় প্রবোধ শীলের বাবা সুধীর শীল ছিলেন। তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আরও বেশি করে আক্রমণ চালায়। স্বাধীনতার পরাজিত গোষ্ঠী। রাগ যে তাদের এদের উপরেই। হামলার এক ফাকে। প্রবোধ শীলের মেয়ে কথাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর.............
************
প্রবোধ শীলের মেয়ের অবস্থা আশংকাজনক। ঘটনার দুইদিনের ভিতরেই অপরাধী ধরা পরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দিয়ে দেখছেন।
আজ প্রবোধ শীলের সিনেমা মুক্তি পাবে।
কিছুদিন আগে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হরতাল ছিলো। আর সেখানে গন্ডগোলের ভিতরে কেউ একজন তাকে জিজ্ঞাসা করে পাচ কালেমা জানে কি না।
প্রবোধ শীল তার বাবার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছিলেন, রাজাকার এবং মিলিটারিরা এভাবে কালেমা ধরতো। অনেক ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কালেমা মুখস্ত করেছিলেন বাচার জন্য।
আজকের দিনের সাথে সেসব দিনের বৈসাদৃশ্য কি?
হাসপাতালের টিভিতে সুবর্ন জয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা দেখাচ্ছে।
প্রবধ শীল ভাবতে থাকেন, স্বাধীনতা উদযাপন বড় না কি নিজের কাছে প্রশ্ন করা যে আমি কতটা স্বাধীন! আমি কি আসলেই স্বাধীন?
২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫৪
নীল আকাশ বলেছেন: একজন ভাল মানুষ সাজানোর প্রাণান্ত চেষ্টা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: একদম বাস্তব গল্প।