![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার শহর,
শৈশবের শহর,
ঠিক যেন শহর নয়, আবার গ্রামও নয়,
স্নেহ করে লোকেরা একে মফস্বলও ডাকে,
আমি সেই যে প্রাইমারির পর ছেড়ে চলে এসেছিলাম, ফিরেছি উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যাকে মনের টানে শৈশবের সূত্রে নিজের বলে দাবি করি, পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে নয় কভু।
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে এখনও পল্লী বিদ্যুতের দপ্তরটি নিজ অবস্থানে অনড় আছে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে একটা অংশে ক্ষুদ্র পরিসরে ফসলি জমিও ছিলো, বর্তমানে সেই পরিসর গৃহয়ান প্রকল্পের নিমিত্তে বিলুপ্ত,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে একটা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও মাটির ঘর ছিলো,
দুপুরে সেখান থেকে লাকড়ি পোড়া গন্ধ আর মাছ তরকারির গন্ধ ভেসে আসতো,
এতো বছর পর গিয়ে দেখি, কোথায় বা সেই মাটির ঘর, কোথায় সেই লাকড়ি,
দালান উঠেছে সেথায়, দালানের দেয়ালের এক কোনায় ঝোলানো শীততাপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র, জানিনা এর পিছে আছে কোন মন্ত্র!
শৈশবের শহর থেকে মুহুর্তের জন্য ফিরে যাই এক ঘটনায়,
একদা এক মসজিদ, দেখেছিলাম, আগাগোড়া মাটিতে তৈরী, মাস তিনেক পর দেখি, কই গেলো সেই মাটির ঘর! দালান উঠেছে চারিপাশে, একটা শীততাপনিয়ন্ত্রক যন্ত্রও সযত্নে ঝুলছে দেয়ালে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে বর্তমান বিলুপ্ত ফসলের জমি, আমাদের খেলার মাঠ ছিলো ফসলের মৌসুম না হলে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে প্রতিদিন রাশেদ মামার দোকানে ৫ টাকার বনরুটি অমৃত লাগতো,
মোল্লার হোটেলের পুরি আর শুকুর মিয়ার চায়ের দোকানের চিনি দেওয়া দুধের মালাই,
ইশতিয়াকের দোকানের নানরুটি,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যেখানে একট ঈদগাহ ছিলো যাকে ঘিরে স্থানীয় বাজার ছিলো,
মোশতাকের দোকানে গ্রোসারি কিনতে গেলেই আমার হাতে চকোলেট ধরাইয়া দিতো,
একদা আব্বুর পকেটে ৩০০ টাকাই ছিলো সিলেট যাওয়ার খরচ হিসেবে, মোশতাক মামা চকোলেটটা আমার হাতে দিয়ে টাকা নেন নি, আব্বুর হাতটা খালি শক্ত করে ধরেছিলো,
সেই বাকি চকোলেটের মূল্য কি আব্বু পরিশোধ করেছিলো! হয়তো,
এখন নিজের টাকায় যেই চকোলেট পছন্দ, সেটা কিনতে পারি, কিন্ত, মোশতাক মামার জোর করে দেওয়া চকোলেট, সে তো আলাদা,
রাশেদ মামার সেই দোকানে এখন রাউটার বিক্রি হয়, মোল্লা মারা গেছে, ইশতিয়াকের দোকানের জায়গাটায় বিল্ডিং উঠেছে,
শুকুর মিয়ার চায়ের জায়গায় বসেছে ফলের দোকান, মোশতাক মামা দোকান বেচে দিয়ে কই যে গেছে কোনও ইয়ত্তা নেই,
ঈদগাহটা জায়গা মতোই আছে, আছে বাজারটাও, দোকানের সংখ্যাটা একটু বেড়েছে, বহুবার যাতায়াত করা বন্ধন লাইব্রেরি নামের স্টেশনারি দোকানটি এখনো আছে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
এসে দেখি এখানে সেখানে দোকান আর দোকান,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
যে বাসায় আমরা থাকতাম, তার ছাদে ঢালাই দিয়ে রেলিং করা হয়েছে, অপুর্বের মা যেদিন আত্মহত্যা করে সেদিনের পর থেকে আমার আর ছাদে যাওয়া হয় নি,
প্রতিবেশী বান্ধু সাহেবের বাসাটা একই রকম আছে, কয়েকটা শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্র খালি যুক্ত হয়েছে,
রহমান সাহেবের বাসাটা একতলা থেকে চারতলা হয়েছে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
এলাকার একতলা টাইলস মসজিদ তিনতলা হয়েছে,
ইমাম সাহেবের জুলফিতে পাক ধরেছে,
মসজিদের সামনে ভদ্র পোশাক পড়া এক লোক হাসিমুখে টাকা চাইতো, আমরা সুখি মানুষ ডাকতাম, তাকে মনে মনে খুজে পাইনি, পাওয়ার কথাও নয় অবশ্যই,
শৈশবে টাকা না থাকায় আমি জুমার নামাজের পর ভিক্ষুকদের জিলিপির ভাগ দিতাম, আচ্ছা! মসজিদে কি এখনো জিলিপি দেয়?
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
আমার বাসায় সাব্লেট থাকা পরিবারের পিচ্চি মেয়েটি আজ অনেম বড় হয়ে গেছে, বিয়ে হলো বলে শুনলাম,
ও হো, সেই পিচ্চিকালের ভালোলাগার প্রিয়দর্শিনী আয়েশার কথা! তার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম, শুনি তারও বিয়ে হয়ে গেছে,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
আমার স্কুলটি ঠিক জায়গামতোই আছে, খালি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের চুলগুলো হয়েছে পাতলা ধূসর,
আমি ফিরে এসেছিলাম এই শহরেই,
কিন্তু কোথায় সেই শহর, কোথায় আমার সেই মফস্বল, কোথায় আমার সেই ছেলেবেলা!
সবই আমার স্মৃতিতে, আমার কল্পনায়, আমার নস্টালজিয়ায়,
শহরেরা ভাঙে, গড়ে, আবার গড়ে, কিন্তু শহরের ভিন্ন রূপ গুলো অমর হয়ে থাকে নস্টালজিয়ায়।
ছবি: ইনটারনেট
২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:২৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আহা পুরোনো সে দিন মনে পড়ে যায়.......
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
আশিকি ৪ বলেছেন: মারহাবা আপনের পুষ্টুখানি ১৪৮৩ বার পঠিত হয়েছে। আজ চাঁদ আর নুর নেই বলে কেউ একটা মন্টব্য করলনা। ১৪৮৪ বার হিট হওয়া একটা পুষ্টে কেউ মন্টব্য করলনা।
গ্লপ ভাল্লাগছে।