নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অচেনা সুর

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৮

একদিন ক্লাসের ফাঁকে পল্লবীকে দুম করে বলে ফেললাম, তুমি আমার বন্ধু হবে? ও তড়িৎ জবাব দিল, এভাবে কি বন্ধু হওয়া যায়? আমি বললাম তাহলে কিভাবে বন্ধু হওয়া যাবে? ও বলল, আমরা দু’জন একসাথে সারাদিন ঘুরব, খাবো, গল্প করব, তারপর সিদ্ধান্ত নিব আমরা বন্ধু হবো কিনা। সত্যি সত্যি পরের ছুটির দিনে সকালে দেখি পল্লবী আমার হলে হাজির! ও আমাকে ফোন করে রেডি হয়ে হলের বাইরে আসতে বলে। এরপর রিকশায় করে মোটামুটি দুপুর পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করে হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার ক্যাম্পাসে চলে আসি। ক্যাম্পাসে খেলার মাঠের এক কোনায় সবুজ ঘাসের ওপর বসে আমরা দু’জন গল্প করতে থাকি। এরপর সূর্যদেব যখন পশ্চিম দিগেন্ত হেলে পড়েছেন, সন্ধ্যার মায়াবী আভার আবেশে প্রৃকৃতি রঙিন সাজে সাজতে ব্যস্ত হচ্ছে ঠিক তখনি ও আমার দিকে অপলক দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আলতো করে আমার হাতটা ধরে বলে ওঠে, ‘আজ থেকে আমরা কিন্তু বন্ধু হয়ে গেলাম।’ আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় সচকিত হয়ে আমাদের বন্ধুত্বকে কুর্নিশ করলো।
ও ছিল একেবারে সাদামাঠা, সাজতে পছন্দ করত না। আমি ওকে একদিন বলি ও কপালে লাল টিপ দিয়ে আসলে ওকে খুব সুন্দর দেখাবে। পরদিন দেখি ও সত্যি সত্যি কপালে লাল টিপ দিয়ে এসেছে। ওই মুহুর্তে পল্লবীকে আমি অন্যভাবে আবিষ্কার করি। ওকে দেখে আমার মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতির জন্ম হয়, কিন্তু আমি সেটা প্রকাশ করতে পারিনি। আমরা দু’জন অপেক্ষা করে থাকতাম কখন ক্লাস শেষ হবে। ক্লাস শেষ হলেই আমরা দু’জন কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাঁটতে বের হতাম। কোনোদিন চলে যেতাম সবুজ ধানক্ষেতের আল ধরে। দু’পাশে সবুজ ধানক্ষেত, মৃদুমন্দ বাতাস এসে সদ্য প্রস্ফুটিত ধানের শীষে হালকা দোলা দিয়ে যাচ্ছে আর আমরা দুই অবোধ বিমলানন্দে হেঁটে চলেছি। এরপর কোনো কোনো দিন আমরা চলে যেতাম নদীর ধারে। বিশেষত বিকেল বেলা কুলকুল শব্দে বয়ে চলা নদীর জলধারার সাথে সাথে ঝিরঝিরে বাতাসের হালকা অনুরনন যে মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করত সেটি আমরা দু’জন মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করতাম।একদিন ও প্রস্তাব দিল শেষ বিকেলে খোলা ডিঙি নৌকায় করে নদীর বুকে ভেসে ভেসে নদীর ঢেউয়ের আনাগোনা প্রত্যক্ষ করবে। ঠিকই একদিন বিকেলে ডিঙি নৌকা নিয়ে নদীর হালকা ঢেউয়ের তালে তালে ভেসে চললাম...এই ভেসে চলার মাঝে আছে এক অন্যরকম আবেশ...আমরা দু’টি অবোধ ভেসে চলেছি মাঝ নদীতে...চারপাশেই জনমানবের অস্তিত্ব কিন্তু আমাদের অনুভবের মাদকতায় আমরা উপভোগ করতে থাকি অসীমের অধিকার।
একদিন আমি ওকে বললাম, আমার খুব ইচ্ছে, একদিন ভোরে ওর সাথে সূর্যসণান করব। আর ভোরের শিশির ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে খালি পায়ে ওর হাত ধরে হাঁটব। ও রাজি হবে আমি ভাবতে পারিনি। ও আমাকে না বলে বান্ধবীদের সাথে হলে থাকে এবং আমাকে ভোরে সূর্য ওঠার মুহুর্তের কিছু পূর্বে ফোন দিয়ে খালি পায়ে হলের বাইরে আসতে বলে। আমি হতচকিত হয়ে যাই। এরপর সত্যি সত্যি খালি পায়ে হলের বাইরে চলে আসি। আমাদের হল থেকে কিছুদূরে হেঁটে গেলেই বিস্তীর্ন সবুজ প্রান্তর। আমরা দু’জন সেই বিস্তীর্ন সবুজ প্রান্তরে পৌঁছানোর পর ও সত্যি সত্যি আলতো করে আমার হাতটা স্পর্শ করে। আমার মধ্যে এক অন্যরকম শিহরণ অনূভূত হতে থাকে। আমি যেহেতু ভোরের নরম আলোয় সূর্যস্নান করতে চেয়েছিলাম, তাই ও প্ল্যন করে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে আমাদের যাত্রা শুরু করে। আমরা দু’জন পরস্পরের হাত ধরে পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে ধীর পদক্ষেপে যাত্রা শুরু করেছি, শিশির ভেজা নরম ঘাস যেন তার সর্বস্ব উজাড় করে যেন আমাদেরকে গার্ড অব অনার দিচ্ছে...আমরা হেঁটে চলেছি, দু’জন দু’জনকে যেন কতদিন ধরে চিনি, একে অপরকে সর্বতো ভাবে জানি, তারপরও একটা অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশ করা হয়নি। ভাবছি সূর্যদেব পুব আকাশে উদিত হওয়ার সাথে সাথে আমার অব্যক্ত অনুভূতিটি প্রকাশ করব। আমি মনে মনে কতকিছু ভাবছি, ওদিকে সূর্যদেব ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সমুদ্র মন্থন শেষে এক লহমায় উদিত হলেন পুব আকাশে। ধীরে ধীরে সূর্যের দীপ্তিময় আভা ছড়িয়ে যেতে লাগল চারিদিকে...ভোরের নরম আলোয় সূর্যস্নান হয়ে গেল আমাদের, মনটাও হয়ে উঠল পবিত্র। আমার সেই না বলা কথায় কোনো সুর বসাতে পারলাম না। প্রকৃতির অপরূপ সুরলহরীর কাছে আমার সেই অচেনা সুর অচেনাই থেকে গেল কে যেন আমাকে কানে কানে বলে গেল কিছু কিছু কথায় সুর বসাতে নেই সেটি আপনাআপনিই গান হয়ে যায়!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৬

হাসান মাহমুদ ১২৩৪ বলেছেন: কথাগুলো অনেক দারুণ ভাবে সাজিয়েছেন। ভালো লেগেছে।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৫৭

সুব্রত মল্লিক বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.