নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শক্তের ভক্ত নরমের যম

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১৮

ভান্ডারিয়াতে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেছে। প্রথম কয়েক দিন সবাই হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল। প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তারাও প্রথম কিছুদিন প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এখন এমন কড়া এবং তানা প্যাঁচানো ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছেন যে দেখে মনে হচ্ছে হতভাগ্্য ঐ স্যার পা ধরে মোটেও নতুন কোনো কাজ করেন নি বরং এধরণের কাজ হরহামেশাই চলতে থাকে। এক্ষেত্রে ঘটনাটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়াতেই যত বিপত্তি ঘটেছে এবং উনাদের পা ধরাবার সংস্কৃতি ফাঁস হওয়াতে উনারা ভবিষ্যতে এই পা ধরাবার সংস্কৃতি থাকবে কিনা সেটি নিয়ে চিন্তিত। উনারা এখন ঐ ঘটনাকে জায়েজ করার জন্য নানা রকমভাবে অবিরত লিখে যাচ্ছেন যেন সবাই এটা বুঝতে পারে যে ঐ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কোনো দোষ ছিল না যত দোষ ঐ নন্দ ঘোষের। আর এ ঘটনা যত তাড়াতাড়ি ধামাচাপা দেওয়া যাবে ততই মঙ্গল তত দ্রুত পা ধরাবার সংস্কৃতি আবার চালু করে আত্মপ্রাসাদ লাভ করা যাবে। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। প্রতি বছরই এইইচএসসি পরীক্ষা আসলে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের দ্বারা শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হেনস্থা হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এখন সরকারি কলেজগুলোতে এসে ম্যাজিস্ট্রেটরা কি করেন সেটি এখটু দেখি। উনারা পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছু পর কলেজে আসেন। আসার পর রুমে রুমে দুই থেকে তিন মিনিটের জন্য অবস্থান করেন। এইচএসসি পরীক্ষার হলে যারা ডিউটি করেছেন তারা ভালো করে জানেন যে একটা রুমে ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য দুই জন শিক্ষক থাকেন। এখন এই দুইজন শিক্ষকে খাতা স্বাক্ষর করা, হাজিরা পত্রে রোল নম্বর তোলা, ওএমার শিটের নম্বর হাজিরা পত্রে তোলা, ওএমআর শিটে স্বাক্ষর করানো, অবজেক্টিবের প্রশ্নপত্র বিতরণ, অতিরিক্ত পেজ দেওয়া সবকিছু মিলিয়ে একজন শিক্ষক দম ফেলার সময় পান না। এর মধ্য থেকেও অধিকাংশ শিক্ষক যথাযথভাবে দ্বায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন। আর সরকারি কলেজগুলোতে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা ডিউটি করলেও রুম ইনচার্জের দ্বায়িত্বে থাকেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরাই। সে ক্ষেত্রে প্রভাষক থেকে শুরু করে সহযোগী অধ্যাপক পর্যন্ত ডিউটিতে থাকেন। অধিকাংশ ম্যাজিস্ট্রেট যখন রুমে প্রবেশ করেন তখন রুম ইনচার্জের সাথে সৌজন্যের খাতিরে তার সাথে নিজের পরিচয় দেয়া কিংবা রুমে ঢোকার অনুমতিটুকু নেওয়ার জন্য তোয়াক্কা করেন না। ম্যাজিস্ট্রেটের যেহেতু আলাদা কেনো পোশাক নেই তাই আপনাকে তার আ্যটিচিউড দেখে বুঝে নিতে হবে উনি একজন ম্যাজিস্ট্রট। এরপর তার মুখের অভিব্যক্তি হয় দেখার মতো। রাশভারী আর গম্ভীর মুখ নিয়ে ঘুরতে থাকেন। দুই তিন মিনিট ঘোরার পর কিছু কিছু রুমে সামান্য এদিক ওদিক হলে দেখে রুমের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককে অর্ডার করবেন অমুক খাতাটা নিয়ে দশ মিনিট রেখে দিন। এখন একজন সিনিয়র স্যার থাকলেও তাকে ভাই বলে ডাকবেন। যেমন ভান্ডারিয়াতে দেখা গেছে যে ২৯ তম বিসিএসএর একজন নবীন কর্মকর্তা ২৪ বিসেএসএর একজন সহকারী অধ্যাপককে ভাই বলে সম্বোধন করছেন। উনাদের অনেকেই আবার অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়কে প্রিন্সিপাল সাহেব বলে সম্বোধন করেন। স্যার বলতে উনাদের মান সম্মানে বাধে। আচ্ছা এই একই ঘটনা যদি আপনাদের বেলায় ঘটত তাহলে কেমন হতো একবার ভাবুনতো । আপনার কর্মস্থলে গিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের একজন নবীন কর্মকর্তা আপনাদের সিনিয়র স্যারকে ইউএন্ও সাহেব কিংবা ডিসি সাহেব কিংবা ভাই বলে সম্বোধন করত তখন নিশ্চই আপনাদের মাথায় আগুন ধরে যেত!!!! এক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে আপনাদের উদ্ধত আচরণের কারণেই আপনাদের প্রতি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এখন আপনরা ঐ দুই কিংবা তিন মিনিটে এমন কিছু দেশ উদ্ধার করেন না যে পরীক্ষা হলের সকল অনিয়ম দূর হয়। কারণ বাকি ২ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট কিন্তু ঐ শিক্ষরাই কর্তব্য পালন করেন।
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। ফেইসবুকে প্রশাসনের অনেক নবীন কর্মকর্তাদের দেখলাম এই বলে সাফাই গাইতে যে আপনার আইন অনুযায়ী কাজ করতে যান কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের লোকজন আপনাদের কাজে বাঁধা দেয়। সব দেখেশুনে এই অভিজ্ঞতা হলো যে আপনাদের আইনের প্রয়োগ দুর্বল জায়গার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন আপনারা আইন দেখান ছোটো কলেজগুলোতে, বড় কলেজের ধারেও যান না আইন দেখাতে। আবার এসপি সাহেব ডিসি সাহেবের কথা শোনেন না সেখানে আপনারা আইন দেখাতে পারেন না। পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া গুলি চালাতে পারবে না কিন্তু পুলিশ সেটা মানে না সেখানে আপনরা আইন দেখাতে পারেন না। দুদকের কর্মকর্তার সাথে কিংবা ইনকাম ট্যাক্স অফিসারের সাথে আপনারা আইন দেখাতে পারেন না। আপনারা যেখানে সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারেন কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন কিংবা অন্য কোনো সংগঠনের ক্ষেত্রে আইন দেখাতে পারেন আপনারা ভেজাল বিরোধী অভিযানে ছোটো দোকানদারকে জরিমানা করতে পারেন কিন্তু যেসব রাঘব বোয়ালরা ঐগুলো মজুদ করে তাদের কেশ্ও সম্পর্শ করার ক্ষমতা রাখেন না। তখন আপনাদের আইন প্রয়োগ বেঘোরে কেঁদে মরে। আপনাদের যত আইন প্রয়োগ ঐ দুর্বল জায়গায়। এখন এত এত জায়গায় আইন প্রয়োগ করতে না পেরে যখন হাত নিশপিশ করে তখন পাবলিক পরীক্ষার সময় ছোটো কলেজগুলোতে আইন প্রয়োগ করতে আসেন। বড় কলেজগুলোতে আইন প্রয়োগ করতে যান না কারণ সেখানে বাধা পাওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে। তাই বলি আইন যদি প্রয়োগ করতে চান সব জায়গায় প্রয়োগ করুন। আর সব সমস্যার মূলে হলো আ্যটিচিউড। বিসিএস এর ২৮ টি ক্যাডারের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট দ্বায়িত্ব আছে। এখন আপনরা অন্যের দ্বায়িত্বকে সম্মান করতে শিখুন আর নিজেকে বড় ভাবতে গিয়ে অপরকে ছোট করার মানসিকতা ত্যাগ করুন দেখবেন অনেক সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যাবে। পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা দেশটাকে অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.