![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..
আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভ জন্মদিন। জন্মদিনে কবিকে সশ্রদ্ধ প্রণাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মনে পড়ে গেলে আজ ২৫ বৈশাখ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এমনই এক দিনে এই ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। যিনি তাঁর সৃষ্টিকর্ম দ্বারা মিশে আছেন আমাদের চৈতন্যে, মননে। আজ সকাল থেকে বসে বসে ভাবছি রবি ঠাকুর আমাকে কি দিয়েছেন? আর আমার চৈতন্যজুড়ে রবি ঠাকুরের স্থানই বা কতটুকু? ভাবনার গভীরে ডুব দিতেই দেখি অসামান্য সব মণিমুক্তোর সন্ধান। আমার অন্তরের প্রদোষে যে সামান্য আলোর সন্ধান পেয়েছি তার অধিকাংশই রবি ঠাকুরের দান। এবার একটু রবির আলোর ভূবন থেকে ঘুরে এসে কবিকে জন্মদিনের অর্ঘ্য নিবেদন করি।
রবি ঠাকুর প্রথমে আমার ক্ষেত্রে যে কাজটি করেছেন তা হলো তিনি আমাকে বৈরাগ্য থেকে মুক্তি দিয়ে দেখা ও জানার আগ্রহটাকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিভাবে? সেটি কবির ছিন্ন পত্রাবলী থেকেই উৎসরিত হয়েছে। রবি ঠাকুর বলছেন, “ আমাদের পূর্বে কোটি কোটি লোক এই সূর্যালোকে, নীলাকাশের নীচে, জীবনের পান্থশালায় মিলেছে এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে বিস্মৃত হয়ে অপসৃত হয়ে গেছে। এরকম ভেবে দেখেলে কোনো কোনো প্রকৃতিতে বৈরাগ্যের উদয় হয়, কিন্তু আমার ঠিক উল্টোই হয়; আমার আরো বেশি করে দেখতে, বেশি করে জানতে ইচ্ছে করে। এই-যে আমরা কয়েকজন প্রাণী জড়মহাসমুদ্রের বুদবুদের মতো ভেসে এক জায়গায় এসে ঠেকেছি, এই অপূর্ব সংযোগটুকুর মধ্যে যত বিস্ময় যত আনন্দ তা আবার শত যুগে গড়ে উঠবে কি না সন্দেহ।”
রবি ঠাকুর আমাকে শিখিয়েছেন জীবনে আনন্দের উপলক্ষ্য খুব কমই আসে তাই জীবনের কাছে আসা ছোট ছোট আনন্দগুলিকে উপভোগ করতে। রবি ঠাকুরের ভাষায়, “ বড়ো বড়েো দুরাশার মোহে জীবনের ছোটো ছোটো আনন্দগুলিকে উপেক্ষা করে আমাদের জীবনকে কী উপবাসী করেই রাখি! এর পরে এমন একটা দিন আসতেও পারে যখন মনে হবে, যদি আবার জীবনটা সমস্ত ফিরে পাই তা হলে আর কিছু অসাধ্য সাধন করতে চাই নে, কেবল জীবনের এই প্রতিদিনের অযাচিত ছোটো ছোটো আনন্দগুলি প্রতিদিন উপভোগ করে নিই!”
রবি ঠাকুর আমাকে প্রকৃতির সাথে একটি মেল-বন্ধন ঘটিয়ে দিয়েছেন। উনি শিখিয়েছেন প্রকৃতির প্রত্যেকটি অনু-পরমানুর মধ্যে জড়িয়ে আছে সৌন্দর্যের নান্দনিকতা। আর এই নান্দনিকতা উপভোগ করতে যে মননশীলতা দরকার সেটি রবি ঠাকুর গড়ে দিয়েছেন তাঁর লেখনির মধ্য দিয়ে।“আমি প্রায়ই এক সময়ে ভাবি, এই যে আমার জীবনের প্রত্যহ একটি একটি করে দিন আসছে-কোনোটি সূর্যোদয়-সূর্যাস্তে রাঙা, কোনোটি ঘনঘোর মেঘে স্নিগ্ধনীল, কোনোটি পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় সাদা ফুলের মতো প্রফুল্ল, এগুলি কি আমার কম সৌভাগ্য! এবং এরা কি কম মূল্যবান!এ কথা ভালো করে ভাবলে পৃথিবীর দিকে আবার ভালো কের চেয়ে দেখতে ইচ্ছে করে; ইচ্ছে করে জীবনের প্রত্যেক সূর্যোদয়কে সজ্ঞানভাবে অভিবাদন করি এবং প্রত্যেক সূর্যাস্তকে পরিচিত বন্ধুর মতো বিদায় দিই।এমন সুন্দর দিনরাত্রিগুলি আমার জীবনে থেকে প্রতিদিন চলে যাচ্ছে, এর সমস্তটা গ্রহণ করতে পারছি নে!
এই সমস্ত রং, এই আলো এবং ছায়া, এই আকাশব্যাপী নিঃশব্দ সমারোহ, এই দ্যুলোক-ভুলোকের মাঝখানের সমস্ত-শূন্য-পরিপূর্ণ করা শান্তি এবং সৌ্ন্দর্য, এর জন্য কি কম আয়োজনটা চলছে! কত বড় উৎসবের ক্ষেত্রটা! আর, আামাদের ভিতরে ভালো করে তার সাড়া পাওয়াই যায় না!”
রবি ঠাকুর আর একটি কাজ করেছেন, সেটি হলো সংকীর্ণতার কানিগলি পেরিয়ে এই মানব জীবনকে উপভোগের মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছেন। পরকালের লোভে এই জীবনকে কিছু অযাচিত নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করে না কাটিয়ে বরং বহমান সমাজের সাখে তাল মিলিয়ে চলতে শিখিয়েছেন। “ উপবাস করে, আকাশের দিকে তাকিয়ে, অনিদ্র থেকে, সর্বদা মনে মনে বিতর্ক করে, পৃথিবীকে এবং মনুষ্যহৃদয়কে কথায় কথায় বঞ্চিত করে স্বেচ্ছারচিত দুর্ভিক্ষে এই দুর্লভ জীবন ত্যাগ করতে চাই নে। পৃথিবী যে সৃষ্টিকর্তার একটা ফাঁকি এবং শয়তানের একটা ফাঁদ তা না মনে করে একে বিশ্বাস করে, ভালোবেসে, ভালোবাসা পেয়ে, মানুষের মতো বেঁচে এবং মানুষের মতো মরে গেলেই যথেষ্ট।”
পরিশেষেও কবির ভাষায় বলি-
“ব্যর্থ চোখের জলে
আমি লুটাব না ধূলিতলে, লুটাব না।
বাতি নিবায়ে যাব না, যাব না যাব না
জীবনের উৎসবে।”
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:০৮
জেন রসি বলেছেন: সবার জীবন উপভোগ্য হোক।