নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার জমিরউদ্দীন স্যার

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪

তখন সবে প্রা্থমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে পদার্পণ করেছি। আমার স্কুলের শিক্ষককে ডিঙিয়ে বাবা ঠিক করে দিলেন তাঁর সহকর্মী জমিরউদ্দীন স্যারের কাছে আমাকে ইংরেজি পড়তে যেতে হবে। আমার সব বন্ধুরা আমাদের স্কুলের স্যারের কাছে পড়তে যাচ্ছে আর আমি যাচ্ছি অন্য স্কুলের স্যারের কাছে! খুব অভিমান এবং বিরক্তি নিয়ে প্রথম দিন হাজির হলাম স্যারের বাড়ি। সৌম্য দর্শন, হাসিখুশি ফর্সা মানুষটি আমাকে দেখেই বললেন, ‘তুই সুব্রত? তা খাওয়া দাওয়া করিস না-এত শুকনা কেন? আজ থেকে বেশি বেশি খাওয়া দাওয়া করবি। শরীরে জোর না থাকলে লড়াই করবি কিভাবে? তোকে সবাইকে ডিঙিয়ে শীর্ষে পৌঁছাতে হবে!’এই এক কথার পর স্যারকে আমার খুব আপন মনে হল..বুঝলাম বাবা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। এরপর শুরু হলো আমাকে ঘষে মেজে গড়ে তোলার পালা..স্যার আমাকে তাঁর ভান্ডারের সব জমানো জ্ঞান আমার জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। স্যার যেহেতু গ্রামের মানুষ আর শিক্ষকতায় ওরকম স্বচ্ছলতা নেই, তাই স্যারকে দুপুরে স্কুল থেকে ফিরেই ক্ষেতে কাজ করতে যেতে হতো আর মাঝে মাঝে বাড়ি আসতে দেরি হতো। আমি স্যারের ওয়াইফকে কাকিমা বলে ডাকতাম। আমার একটা অভ্যাস ছিল, স্যারের আসতে দেরি হলেই আমি বারান্দায় রাখা খাটে ঘুমিয়ে পড়তাম আর কাকিমা এসে ঠিকই আমার মাথার নীচে পরম মমতায় একটা বালিশ দিয়ে যেতেন। স্যার মাঠ থেকে এসে মাঝে মধ্যেই দেখতেন আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, স্যার খুব আস্তে করে আমাকে ডেকে তুলে বলতেন যা টিউবওয়েল থেকে চোখে-মুখে পানি দিয়ে আয়। আমি চোখ মুখ ধুয়ে পড়তে বসতাম। স্যার ইংরেজি গ্রামারের প্রত্যেকটি বিষয় ধরে ধরে আমাকে শেখাতেন, আমার ফ্রি হ্যান্ডের লেখা যেন আরো ভালো হয় সেজন্য আমাকে প্রচুর বিভিন্ন বিষয়ে লিখতে দিতেন। বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার সময় বুঝেছিলাম স্যার কতটা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন! স্যারের গাছের পেয়ারা কিংবা আমে আমার ছিল একছত্র অধিকার। এমনও হয়েছে স্যার আমার জন্য পাকা পেয়ারা রেখে দিয়েছেন, পরদিন আমাকে প্রথমে সেই পেয়ারা খেতে দিয়ে তারপর পড়াতে বসাতেন। স্যার আমার জন্য যে কাজটি করেছেন সেটি হলো চোখে চোখ রেখে লড়াই করা শিখিয়েছেন। স্যার প্রায়ই বলতেন জীবনে কোনো বাঁধাকে ভয় পাবি না, কাূউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে নিা করে তোর কাজ তুই করে যাবি। তুই যত শিখবি তত তোর লাভ। আর সবসময় এটা মনে রাখবি তোকে অনেক বড় হতে হবে। আমি বিসিএসএ শুধুমাত্র একটাই চয়েস শিক্ষা ক্যাডার কেন দিয়েছিলাম এটা নিয়ে আমার বন্ধুরা প্রায়ই অনুযোগ করে। কিন্তু আমি জানি আমার ভেতরে শিক্ষকতার বীজটা বপন করে দিয়েছিলেন স্যার আপনি। আপনাের সান্নিধ্যে পেয়ে আমি অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে হয়েও নিজেকে পরিশীলিত করতে পেরেছি, বুকে সাহস নিয়ে সামনেে এগিয়ে যাওয়ার মহামন্ত্র পেয়েছি। স্যার আজ এই দেশে শিক্ষকতার সেইরকম কদর নেই, এখন আর কেউ শিক্ষক হতে চায় না। আর রাষ্ট্রও চায় না ভালো শিক্ষক তৈরি হোক আর তাই শিক্ষকের মর্যাদা কমাতে এতটুকু দ্বিধা করেনা। কিন্তু সব না পাওয়ার মাঝেও আমার জীবনে আপনার প্রভাবের কথা যখন কল্পনা করি তখন সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যাই। আমি সবসময় চেয়েছি আপনার মতো শিক্ষক হতে। কতটুকু পেরেছি জানি না তবে সারাজীবন চেষ্টা করে যাব আপনার মতো একজন ভালো মানুষ এবং আলোর পথের দিশারি হওয়ার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.