নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটদের ভবিষ্যত নির্ধারকদের কাছে ক্ষুদ্র নিবেদন

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪০

একটু বড় লেখা লিখলাম এজন্য প্রথমেই কষ্ট করে পড়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমার ভাগ্নির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে গত কয়েকদিন ধরে উদ্বিগ্ন অভিভাবক এবং হতাশাগ্রস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়েছে। বিশেষত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর যখন পরীক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে এসে বাবা কিংবা মায়ের সাথে পরীক্ষা কেমন হলো সেই আলাপচারিতা করে আমি অবজারভেশন মেথড ফলো করে খুব মনোযোগ দিয়ে সেটি শোনার চেষ্টা করতাম। এবার কিছু নমুনা পেশ করি। এক মেয়ে হল থেকে বেরিয়ে তাঁর মাকে বলছে ‘ মা ফিজিক্স খুব কঠিন হয়েছে আর আমি সব সূত্র ভুলে গেছি।’ তখন মেয়েটির মা বলছেন, ‘ তোমার তো সেই ক্লাস নাইন থেকেই ফিজিক্সের সমস্যা! পাশে আরেক স্টুডেন্ট বলছে আম্মু কেমিস্ট্রের রিয়াকশানগুলো কেমন যেন আমার ভালো লাগেনা আর এখানে রিয়াকশানই বেশি এসেছে। আমার ভাগ্নি বের হয়ে বলছে, মামা আমার ম্যাথ খুব খারাপ হয়েছে, এই ম্যাথের জন্য আমার কোথাও চান্স হবে না। আরেকটি ছেলেকে কমার্সের পরীক্ষা দেওয়ার পর বলতে শুনলাম ওর একাউন্টিংয়ে সমস্যা ভালো বোঝে না একাউন্টিংয়ের জন্য ও কোথাও চান্স পাবেনা। এক মেয়ে রাজশাহীর চারুকলা পরীক্ষা দেওয়ার পর তার মাকে বলছে, আম্মু আমার চারুকলায় চান্স হয়ে যাবে, আর আমার ড্রয়িং অনেক ভালো লাগে।তখন ওর আম্মু বলছে, চারুকলা পড়ে কি করবি ওতে কোন ভাত নেই।এই হলো আলাপচারিতার নমুনা।
আচ্ছা যে মেয়ে ফিজিক্স দেখলে ভয় পায়, ফিজিক্সের সূত্র মনে রাখতে পারেনা, কেমিস্ট্রি কিংবা ম্যাথ দেখলে ভয় পায় তাকে জোর করে বিজ্ঞান পড়ানো কি খুব জরুরী? পড়ালেখা কিংবা যেকোনো ক্ষেত্রে ভালো করার পূর্ব শর্ত হলো সেই বিষয়টি ভালোলাগা, বিষয়টিকে ভালোবাসা। এখন ভালোলাগা কিংবা ভালোবাসা না থাকলে সেখানে ভালোকিছু করা অসম্ভব। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের একটা সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম, যে আমাদের দেশের বাবা-মা রা এককজন পুত্রঘাতি রুস্তম। যে ছেলেটির ভালো একজন লেখক কিংবা শিল্পী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বাবা তাকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন। অথচ তার অসাধারণ একটা সম্ভাবনাকে নষ্ট করে ফেলা হয়। আমি একটা অদ্ভূত বিষয় খেয়াল করেছি, যে বাবা-মা হয়তো ছোটবেলায় ম্যাথ কিংবা ফিজিক্স দেখলে ভয় পেতেন, তিনি চান তাঁর উত্তরসূরী যেন ম্যাথ কিংবা ফিজিক্সে চ্যাম্পিয়ন হয়। ছেলে-মেয়েটি ম্যাথ কিংবা ফিজিক্সে ভালো করতে না পারলে বলে ওঠেন এই সহজ বিষয়টি তুমি পার না! আবার যে বাবা ইংরেজি দেখলে ভয় পেতেন তিনি চান তাঁর ছেলে কিংবা মেয়েটি ইংরেজির জাহাজ হোক। আসলে প্রত্যেক বাবা-মা তারা যেটা করতে পারেননি কিংবা যেটাতে ভয় পেতেন তাাঁরা চান তাদের ছেলে-মেয়ে তাদের সেই সুপ্ত আশা পূরণ করুক তাও আবার যেনতেন ভাবে না একেবারে নায়োকচিত ভাবে। তাই তার সামর্থ্য থাকুক আর নাই থাকুক। একটা মাছকে উড়তে বললে যেমন অবস্থা হয় এই ছেলে-মেয়েগুলোর অবস্থা ঠিক ততটাই ভয়ানক হয়ে পড়ে। এর সাথে যোগ হয়েছে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করার অসীম বাসনা। সব বাবা-মা চান তাদের ছেলে-মেয়েকে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে নইলে জীবনই বৃথা, তাদের সামাজিক মর্যাদা কমে যাবে। এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতির বিকাশের ফলে পেশার অনেক বৈচিত্র্য এসেছে আর প্রতিভা থাকলে সব জায়গা থেকেই সমাজের বেঁধে দেওয়া মানদন্ডে সফল মানুষ হওয়া সম্ভব। যে ভালো ছবি কিংবা কার্টুন আঁকে তাকে দিন না ছবি কিংবা কার্টুন আঁকার অবারিত স্বাধীনতা দেখবেন আপনার ঘর থেকেই একজন শিশির ভট্টাচার্য, রফিকুন্নবী কিংবা এসএম সুলতান বের হচ্ছেন। যে ভালো ফটোগ্রাফি করে তাকে জোর করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার না বানিয়ে ওর পছন্দ মতো পড়তে দিন দেখবেন ও আপনার জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার নিয়ে আসছে, যার মাঝে উদ্যোক্তা হওয়ার ঝোঁক আছে তাকে সেভাবে পড়তে দিন দেখবেন ও ঠিকেই ভালো একজন উদ্যোক্তা হবে। যার শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাসের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ আছে তাকে মানবিক বিভাগে পড়তে দিন দেখবেন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে ঠিকই ভালো একটা পেশা বেছে নিতে পারবে। ( আামার সাথেও এরকম করা হয়েছিল, আমার বিজ্ঞান ভালো লাগত না ফিজিক্স, ম্যাথ, কেমেস্ট্রি দেখলে ভয় পেতাম, তাই ইন্টার পাশ করার পর জোর করে বাবা-মায়ের সাধের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে মানবিকে চলে আসি এবং মানবিকে পড়ে আমি মহা খুশি, আমি এখন আনন্দের সাথে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন নিয়ে পড়ে থাকতে পারি)। স্বামী বিবেকানন্দ একটা অসাধারণ কথা বলেছিলেন, ‘ পশ্চিমা বিশ্বে বলা হয়, যারা ধর্ম পালন করে না তারা হলো নাস্তিক, আর আমি বলি যারা আত্মার অসাধারণত্বে বিশ্বাস করে না তারাই হলো নাস্তিক।’ আসলে প্রত্যেকের মাঝেই অসাধারণত্ব লুকিয়ে আছে, আমরা সচরাচর সেটা দেখতে পাই না কিংবা আমাদের সুপ্ত বাসনা চরিতার্থ করতে গিয়ে সেই অসাধারণ সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করে ফেলি। তাই যারা ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন কিংবা অন্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্বে থাকেন তাদেরকে বলি আপনারা স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায় নাস্তিক না হয়ে ওদের আত্মার অসা্ধারণত্বে বিশ্বাস করে একটু আস্তিক হন দেখবেন আপনার ঘর একেকজন সুখী সমৃদ্ধ মানুষের কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.