![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..
আচ্ছা বাবারা এত সহজ-সরল আর বোকা হয় কেন? এই পৃথিবীতে তার রক্তের উত্তরসূরী আসার পর থেকেই এই বাবাগুলো যেন অতি বোকা হয়ে যায়। একরত্তি মাংসপিন্ড হয়ে ওঠে তাঁর সকল মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। এই মানুষটা তাঁর বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেন ঐ একরত্তি উত্তরসূরীর মঙ্গল কামনায়। কাক ডাকা ভোরে সকলের আগে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয় মানুষটির ছুটে চলা। যখন পরিবারের আর সকলে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, তখন মানুষটি ছুটে চলেছেন উপার্জনের নেশায়। ঘর্মাক্ত শরীরে রুটিন মাফিক কাজ সেরে পেটে দুটো দানাপানি দিয়ে আবার ছুটছেন আরো কিছু অতিরিক্ত আয়ের খোঁজে। ছেলে-মেয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আর সাথে বাড়তে থাকে মানুষটির ব্যস্ততা। সকালে উঠে শরীর খারাপ, তারপরেও ছেলেকে বাজার করতে পাঠাবেন না, পিছে ছেলেটির পড়ালেখায় ক্ষতি হয়। নিজে অসুস্থ শরীর নিয়ে যাবেন বাজারে। বাজারে গিয়ে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি যে মাছ খুব পছন্দ করে সেটি পেয়েছেন। কিন্তু পকেটে অত টাকা নেই। তারপরও চিন্তা নেই, ঠিকই ধার-দেনা করে সেই মাছ কিনে আনবেন! কেন আনবেন? ঐ যে তার আদরের ধন ঐ মাছটি খেতে ভালোবাসে। এরপর মাছটি এনে মাকে বলবেন, শোন আজ এভাবে মাছ রান্না করবে, আর খুকীকে মাছের মাথাটি দিবে। ও মাছের মাথা খেতে খুব ভালোবাসে। নিজের জন্য কিছু না থাকলেও চলবে। এই মানুষটি বাজারে যাবেন কেনাকাটা করতে, সকলের জন্য সাধ্যের বাইরের বাজেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ছেলে বলছে বাবা, আমার ক্যাটস আইয়ের এই শার্টটি পছন্দ হয়েছে কিন্তু দামটা একটু বেশি। বাবা বলবেন, আরে দাম কোনো ব্যাপার না তুই কিনে নে। মেয়েটি বলবে বাবা আমার এই থ্রি পিচ টি খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু বাজেট ফেইল। বাবা বলবেন, ধূর পাগলি তোর বাজেট নিয়ে এত চিন্তা কিসের? টাকাতো আমি দিব, পছন্দ হয়েছে কিনে নে। এরপর মায়ের শাড়ি কিনে দেওয়ার পর বাবার পকেট গড়ের মাঠ হয়ে গেছে। তখন মেয়েটি বলবে, বাবা তোমার জন্য এই শার্টটি খুব পছন্দ হয়েছে কিনে নিই। বাবা তখন প্রাইস ট্যাগ দেখে বুঝে যাবেন পকেটের অবস্থা। আর তখন স্মিত হাসি হেসে বলবেন, আরে পাগলি আমি বুড়ো মানুষ এই শার্ট পরলে তো ছেলেমানুষি হয়ে যাবে। তখন খুঁজে খুঁজে দোকানে থাকা সস্তা জামাটি নিজের জন্য কিনবেন। পায়ের জুতোটি রং উঠে যাচ্ছে, মেয়ে তাগাদা দিবে বাবা নতুন জুতো কেন। বাবা বাজার থেকে রং করিয়ে নিয়ে এসে হাসি হাসি মুখে বলবেন, এই দ্যাখ কত ঝকঝক করছে এখনই জুতো কেনার দরকার কি? এই মানুষটি কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে খাবারের প্যাকেট পেলে আগেই ভেবে নিবেন কি করে খাবারের প্যাকেটটি বাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। আর যদি না নিতে পারেন তাহলে ধার করে হলেও সেই খাবার কিনে নিয়ে তারপর বাড়িতে আসবেন। ছেলে-মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেদিন চান্স পাবে সেদিন এই মানুষটির বুক বিশ হাত চওড়া হয়ে যাবে। নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে ছেলে-মেয়ের ভালো থাকার ব্যবস্থা করবেন। নিজে একটা পুরোনে মোবাইল সেট ব্যবহার করেন যেটি বাটন টিপতে টিপতে এখন অন্য বর্ণের হয়ে গেছে। কিন্তু ছেলে-মেয়ের জন্য ঠিকই দামী স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ কিনে দেবেন। তাঁর দেনার পরিমাণ একটু একটু করে বাড়তে থাকবে, রাতে ঘুম কমতে থাকবে, কিন্তু ছেলে-মেয়েকে সেটা বুঝতে দেবেন না। ছেলে-মেয়ে ফোন করে পাঁচ হাজার টাকা চাইলে ঠিকই সাড়ে পাঁচ হাজার পাঠিয়ে দেবেন। তার জন্য আবার দেখা গেল ধার করা লাগছে। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। ঐ যে ছেলে-মেয়ে ভালো থাকবে। আচ্ছা বাবারা তোমরা এত বোকা হও কেন? তোমরা যার জন্য তোমার রক্তের তেজ একটু একটু করে ক্ষয় করো, তোমাদের শরীরে জীর্ণতাকে আশ্রয় করার সুযোগ করে দাও। তারা যখন তোমার কষ্টের উল্টো প্রতিদান দেয়, তার পরও তোমরা এতটা নির্লিপ্ত থাকো কিভাবে? তোমাদের কি তখন এক কথা মনে হয় না যে, সব কষ্ট আজ বৃথা হয়ে গেল।না আমার তা মনে হয় না, কারণ তোমরা তো সহজ-সরল, বোকা মানুষ। আর বোকা মানুষগুলো কষ্টটাকে আপন মনে করে অপরের মঙ্গল কামনা করে। তোমরা কি জান বাবা, তোমরা এতটা বোকা বলেই পৃথিবীর সব সন্তানেরা আজ এতটা ভালো আছে! আমাদের বোকা বাবারা।
©somewhere in net ltd.