নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বতঃস্ফূর্ত সুমিত

স্বতঃস্ফূর্ত সুমিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

আধুনিক সমাজ গঠনে \'ঈশ্বর\' এর ভূমিকা

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩



আজকের সবচেয়ে সাকসেসফুল ধর্মগুলোর মধ্যে একটা জিনিস কমন। সেটা হল মোরালাইজিং গড যা মানুষ একে অপরের সাথে কিরকম আচরণ করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখে এবং সেলফিশ ও ক্রুয়েল পারসোনালিটির মানুষজনের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে। কিন্তু হিউম্যান হিস্টোরির বেশিরভাগ অংশেই এই "বিগ গডস" এর কনসেপ্ট একটি ব্যতিক্রম। কয়েক হাজার বছরের মানব ইতিহাস থেকে দেখা যায় আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেসব ডেইটিতে বিশ্বাস করত তারা মানুষের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিল। আমরা ভাল কি খারাপ কাজ করি এব্যাপারে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপই ছিল না।

এখন, কিভাবে ও কেন মানুষেরা সারা পৃথিবীতে এখনকার মোরালাইজিং গডে বিশ্বাস করতে শুরু করল এটা বের করতে রিসার্চারগণ একটি নোভেল টুল ব্যবহার করেছেন। আর তার নাম হল সাইন্টিফিক মেথড। এক্ষেত্রে ল্যাবরেটরি এক্সপেরিমেন্ট, ক্রসকালচারাল ফিল্ডওয়ার্ক, হিস্টোরিকাল রেকর্ড এনালাইসিস ইত্যাদির সাহায্য নেয়া হয়। একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি টিম সাজেস্ট করেছিল, এরকম জাজমেন্টাল ডেইটিতে বিশ্বাসই একটি বড়, টেকসই ও জটিল সমাজ তৈরিতে যে কোঅপারেশন দরকার তার জন্য অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আর একবার যদি বিগ সোসাইটিটে "বিগ গড" (মোরালাইজইং বা নৈতিক ঈশ্বর) এক্সিস্ট করে তাহলে এই মোরালাইজিং ডেইটির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা রেলিজিয়নগুলো বিশ্বাসীদের বিভিন্ন গ্রুপ দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। এর দ্বারা এটা আরও বেশি কোঅপারেটিভ ও আরও বেশি সফল হয়। আবার অনেক ক্রিটিক বলেন, মোরালাইজিং ডেইটিগুলো সোশ্যাল কমপ্লেক্সিটিজ এর কারণ নয়, বরং এটা সোশ্যাল চেঞ্জের একটি বাইপ্রোডাক্ট। এই ডিবেটটি সেটেল করার জন্য গবেষকগণ অনেক ডেটা ও হিস্টোরিকাল রেকর্ড নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন।

এবার আসি সম্প্রতি হওয়া একটি নতুন স্টাডিতে যেটা এই ক্রিটিকদেরকেই সমর্থন দিচ্ছে। অর্থাৎ এটা সাজেস্ট করছে, আধুনিক সমাজ গঠনে এরকম "বিগ গড" এর কোন প্রভাব ছিল না। আমরা জানি, সকল মানবসমাজেরই গড়ন হয়েছে ধর্মের দ্বারা। নেতৃস্থানীয় সাইকোলজিস্টদের প্রশ্ন এটা কীভাবে হল। আর কিভাবেই বা বিশেষ ধরণের বিশ্বাস বিবর্তিত সোশ্যাল স্ট্রাকচারের বিভিন্ন বিষয়কে প্রভাবিত করল। "বিগ গড" বা big God দ্বারা একটি সর্বশক্তিমান, শাস্তিমূলক ডেইটি বোঝায় যাকে আমাদের সকল কার্যাদির নৈতিক বিচারকর্তা বলে ধরা হয়। একটি নতুন দৃষ্টিকোন অনুযায়ী বিগ গডে বিশ্বাস আমাদের হিউম্যান কালচারে সোশ্যাল ও পলিটিকাল কমপ্লেক্সিটি তৈরির কারণ বলে ভাবা হত।

কিন্তু Austronesia (মাদাগাস্কার থেকে ইস্টার আইল্যান্ড পর্যন্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রের নেটওয়ার্ক) এর রেলিজিয়াস সিস্টেমের একটু নতুন এনালাইসিস এই থিওরিটি পরিবর্তন করে দিয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে পলিটিকাল কমপ্লেক্সিটি আসার পূর্বে একটি সধারণ সুপারন্যাচারাল পানিশমেন্টে বিশ্বাস করা হত। কিন্তু সুপ্রিম ডেইটিতে বিশ্বাস এসেছে কমপ্লেক্স কালচার তৈরি হয়ে যাবার পরে।

নিউজিল্যান্ডে University of Auckland এর কালচারাল ইভোল্যুশনের স্পেশালিস্ট Joseph Watts "বিগ গডস" কি করে বড় সমাজের ইভোল্যুশনকে চালনা ও রক্ষা করে তা নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন এবং এভিডেন্স খুঁজছিলেন। ক্যানাডার ভাঙ্কুভারের University of British Columbia এর সাইকোলজিস্ট Ara Norenzayan সাজেস্ট করেন, মোরালাইজিং হাই গডে ( moralizing high gods (MHGs)) বিশ্বাস অন্যায়কারীদের পাপ কেউ না দেখলেও শাস্তির ব্যবস্থা দিয়ে তাদের থ্রেটেনিং করে সমাজের নৈতিক নিয়ম রক্ষার সীমাবদ্ধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

মোরালাইজিং হাই গড বা MHGs এর ধর্মগুলোর সাধারণ উদাহরণ হল ক্রিশ্চিয়ানিটি ও ইসলাম। এই ধর্মগুলো তুলনামূলক ভাবে আধুনিক এবং অবশ্যই কমপ্লেক্স সোসাইটি তৈরির অনেক পরে এসেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল পূর্বের MHGs যেমন ব্রোঞ্জ এজ সিভিলাইজেশন এই সোশিওপলিটিকাল কমপ্লেক্সিটি তৈরি করেছে নাকি এখান থেকে সোশিওপলিটিকাল কমপ্লেক্সিটির জন্ম।

সোশ্যাল কমপ্লেক্সিটি এবং রেলিজিয়াস বিলিফস এর স্ট্যাটিস্টিকাল এসোসিয়েশন খোঁজার চেয়ে, রিসার্চারদের কাছে এর কজ এফেক্টের জটিলতা ছাড়ানো অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। Watts বলেন, "প্রিমডার্ন সোসাইটির ধর্মের বিবর্তন সংক্রান্ত থিওরিগুলো টেস্ট করার জন্য এস্ট্রোনেশিয়ান কালচারগুলো আমাদের আদর্শ স্যম্পল দান করে। কারণ তারা বিশ্বের আধুনিক ধর্মগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছিন্ন। আর তাদের সুয়ারন্যাচারাল বিশ্বাস ও আচারগুলোও খুব ভালভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।"

ওয়াটস ও তার কলিগেরা ৪০০টি পরিচিত অস্ট্রোনিয়ান কালচার থেকে বাছাই করে ৯৬টি কালচার সিলেক্ট করেন। বাকিগুলো আব্রাহামিক রেলিজিয়নগুলোর সংস্পর্ষে এসেছে কিংবা বাইরের প্রভাবে বিকৃত হয়েছে। এদের মধ্যে পলিথেস্টিক বিলিফ বা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাস করা নেটিভ হাওয়াইয়ান থেকে শুরু করে সুপ্রিম গডে বিলিভ করা মাদাগাস্কারের মেরিনা পিপল সহ অনেকেই আছেন।

দলটি ধর্মের দুটো শ্রেণীবিভাগ করেন। একটি হল MHGs। আরেকটি হল সামাজিক পাপের জন্য কোন সুপারন্যাচারাল শাস্তিতে বিশ্বাস (BSP)। BSP এর মধ্যে পড়ে পূর্বপুরুষের আত্মায় বিশ্বাস কর্মফলে বিশ্বাস ইত্যাদি। যদিও কোডস অব মোরাল কনডাক্টের ক্ষেত্রে দুই ধরণের বিশ্বাসেই রেলিজিয়াস ও সুপারন্যাচার এজেন্ট দেখা যায়, BSP তে কোন মোরাল কন্ডাক্ট সম্পর্কে নজরদারি করার জন্য কোন সিংগেল সুপ্রিম ডেইটি আছে বলে ধরা হয় না।

কালচারগুলোর ৬টিতে MHGs, ৩৭টিতে BSP ছিল। এবং ২২টা কালচার পলিটিকালি কমপ্লেক্স ছিল। রিসার্চারগণ পূর্বের লিংগুইস্টিক রিলেশনশিপের মাধ্যমে কালচারগুলোর মধ্যে ইভোল্যুশনারি কানেকশন এর ট্রি তৈরি করে ব্যবহার করেন। কিভাবে সমাজগুলো নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে এবং ধারণার আদানপ্রদান করে এটা বের করার জন্য তারা এটা করেছিলেন। এটা তাদেরকে MSGs ও BSP সম্পর্কিত হাইপোথিসিজগুলো টেস্ট করার সুযোগ করে দিয়েছিল।

গবেষকগণ বলেন, "যদিও MHGs এর বিলিফগুলো পলিটিকাল কমপ্লেক্সিটির সাথে একই সাথে বিবর্তিত হয়, আসলে বিলিফগুলো পলিটিকাল কমপ্লেক্সিটিকে চালনা করেনি বরং জটিল রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরির পরে তৈরি হয়েছে। আবার BSPs এর ক্ষেত্রে মনে হয় বিলিফ বা বিশ্বাসগুলো পলিটিকাল কমপ্লেক্সিটি বা রাজনৈতিক জটিলতা তৈরিতে সহায়তা করেছিল যদিও খুব বেশি গ্যারান্টি দেয়া যায় না।"

ইভোল্যুশনারি বায়োলজিস্ট Mark Pagel বলেন, "সমাজ রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়েছে ব্যাবসা ও রেপুটেশনের নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে, ধর্মের কারণে নয়।" তাহলে MHGs এর ভূমিকাটা কী? Pagel বলেন্, "এর মাধ্যমে রেলিজিয়নের হর্তাকর্তাগণ সমাজে তাদের ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করেছেন। যখনই একটা বড় সোসাইটি তৈরি হবে, সেটা প্রচুর মালামাল ও সার্ভিস জেনারেট করা শুরু করবে। আর তখনই এই সম্পত্তি কোন ক্ষমতাধারীরর দ্বারা ব্যবহৃত হবে। আর এটা করার সবচেয়ে দ্রুত রাস্তা হল নিজেকে কোন সুপ্রিম ডেইটির সাথে এলাইন করা, মানুষ কি করতে পারবে কি পারবে না তার একটা লিস্ট তৈরি করা। আর এটাই যখন সোশ্যাল বিহ্যাভিওরে বা সামাজিক আচরণে প্রয়োগ করা হয় তখন তা মোরাল হয়ে যায়।"

যুক্তরাজ্যের University of Cambridge এর এনথ্রোপলজিস্ট Hervey Peoples বলেন, "MHGs সমাজে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক জটিলতা তৈরিতে কোনরকম চালিকাশক্তি ছিল না এর যথেষ্ট ভাল রকমের এভিডেন্স আছে। তারা সামাজিক জটিলতাকে প্রভাবিত করা ও স্ট্যাবলাইজ করতে পারে মাত্র। স্টাডিটি ইম্প্রেসিভ এবং ইনোভেটিভ কিন্তু জেনারালাইজ করা কঠিন হতে পারে।"

Norenzayan বলেন, "অস্ট্রোনেশিয়াতে সোশ্যাল ও পলিটিকাল কমপ্লেক্সিটি সীমাবদ্ধ। এখানে চিফডম (প্রধান) থাকলেও কোথাও একক স্টেট লেভেল সোসাইটি নেই। তাই বিগ গডস এখানে কোন সেন্ট্রাল রোল প্লে করে নি, এটাতে বেশি অবাক হবার কিছু নেই। এরকম গড অনেক বড়, স্টেট লেভেল সোসাইটির সাথে কোইভল্ভ হয়েছিল (যেমনটা ইউরেশিয়া অঞ্চলে হয়েছিল)। বিগ গডস আইডিয়াটি সব জায়গায় সত্য হতেই হবে এমনটা নয়।"

http://rspb.royalsocietypublishing.org/content/282/1804/20142556

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.