নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Every story I create, creates me. I write to create myself.\n- Octavia E. Butler\n\n

সুমাইতা মেহজাবীন

সুমাইতা মেহজাবীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছিন্নমুকুল

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৭

ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম। অল্পবয়সী(বয়স ১২/১৩ হবে) গাড়ির কন্ডাক্টর সবার কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছিল।নতুন নিয়মে সব পরিবহণের ভাড়া বেড়েছে,গাড়ির এক বয়স্ক ভদ্রলোক এই ব্যাপারটা বিশ্বাসই করছিলেন না। কারণ তিনি শেষবার এই পথের ভাড়া দিয়েছিলেন আগের নিয়মে। এই নিয়ে অল্পবয়সী ছেলেটা বেশ বাঁকা বাঁকা স্বরে চামড়ায় লাগার মতো করে লোকটাকে কিছু কথা শুনালো। আমি বড়দের সামনে বা সাথে অভদ্রতা জিনিস্টা একদমই নিতে পারি না। কঠিন একটা ধমক লাগাতে যাবো ছেলেটাকে, তখন আমি আটকে গেলাম!। কি বলবো ওকে? যে- বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখো নাই?'
আমি বলতে পারিনি। কিছু না বলে ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকালাম। ১২/১৩ বছর বয়স মাত্র। এই অল্পবয়সে কতো কিছু দেখে ফেলেছে এই ছেলে। বুঝে গেছে পেট চালাতে হলে কাজ করতে হবে।বুঝে গেছে ভদ্রতা নয়,'যেভাবেই হোক' টাকা আদায় করতে হবে নাহলে মালিক মজুরি দিবে না। 'ভদ্রতা' শব্দটা ওদের জন্যও তো কেউ কখনো ব্যাবহার করেনি,ওরা কোত্থেকে শিখবে,কেনই বা অন্যের জন্য ব্যাবহার করবে? ওরা বুঝে গেছে ওরা সমাজের এক বিচ্ছিন্ন জাতি যাদের বেশিরভাগকে তাদের বাবা-মারাও জন্মের পরপর ছেড়ে দিয়েছে!
ছেঁড়া-ঢিলা জিন্সের প্যান্টটা একটা মিষ্টির প্যাকেট বাঁধার রশি দিয়ে বাঁধা। গায়ে বহুদিন পড়ে থাকায় রঙ বদলে কালচে হয়ে যাওয়া একটা কমলা শার্ট। বয়ঃসন্ধিকালের প্রভাব ছেলেটার গলার স্বরে।কাছাকাছি বয়সের আমার আদরের ছোটভাইটার কথা মনে পড়লো- আচ্ছা,ও কি পারতো এভাবে গাড়িতে ঝুলে ঝুলে গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে, দৌড়ে চলন্ত বাসে উঠতে? জীবনের বাস্তবতা এই ছেলেকে এইসব শিখিয়েছে।ছেলেটাতো নিজে তার এই জীবন বেছে নেয়নি।......
ইচ্ছা করছিলো ছেলেটাকে ভালো কিছু জামা-কাপড় কিনে দিই।অন্তত একবেলা খাওয়াই। আমি এমন কিছুই করতে পারিনি। "এই চল,আজ তোকে খাওয়াই" - গাড়িভর্তি মানুষের সামনে এই কথা বলতেও একটু সাহসের দরকার হয়।আমার মধ্যে সংকোচ জিনিসটা অনেক বেশি। আমার গলা দিয়ে অনেক ইচ্ছায়ও কোন আওয়াজ বের হয়নি। আমি কিছুই বলতে পারিনি।

নেমে যাওয়ার সময় ছেলেটার হাতে একটা নোট গুঁজে দিয়ে বললাম-এই টাকাটা তোর জন্য। শুধু তোর। মালিককে এর থেকে ভাগ দেয়ার দরকার নাই!" বড় বড় চোখগুলো হয়তো রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে পিছন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,কিন্তু ফিরে তাকাতেও আমাকে সংকোচ জেঁকে ধরলো। তবে সে সংকোচে অস্বস্তি নয়, অদ্ভুত স্বস্তি ছিল।আমি সামনে হেঁটে চলে আসলাম।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি হয়তো মানুষ হওয়ার পথে।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৯

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: আপনার শব্দচয়নে আরেকটু মাধুর্য আনা আবশ্যক। শুনতে মনে হচ্ছে এতদিন অমানুষ ছিলাম! হয়তো আপনি এমনটা বোঝাতে চাননি কিন্তু আপনার কমেন্টটা তেমনই শোনাচ্ছে!

২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:

আপনার অতীত তো জানা নেই, পোস্ট থেকে জানা শুরু; যেহেতু ভার্সিটিতে পড়েন, সেহেতু ধরে নিয়েছি, সমস্যা থাকা সম্ভব।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৭

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: ব্লগে ব্লক মারার কোন অপশন আছে কিনা জানাবেন তো। খুব দরকার।!

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


আছে।

আমাকে ব্লক করার কথা ভাববেন না; আমাকে যারা ব্লক করেছিল, তাদের সবাই ক্রমে উৎসাহ হারিয়ে ব্লগ ত্যাগ করেছেন।
আমার নামে অনেক নালিশও হয়েছিল, যারা করেছিলেন তাদের কেহই ব্লগে নেই, আমার খারাপ লাগে।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৪

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: ভয় দেখালেন? হাস্যকর পাবলিক।

৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

রাশেদ মহাচিন্তিত বলেছেন: তবুও এরাই আমাদের সমাজের একটা অংশ।

৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২২

চাঁদগাজী বলেছেন:

"লেখক বলেছেন: ভয় দেখালেন? হাস্যকর পাবলিক। "

-ভয় না, আমি চাই ব্লগারের সংখ্যা বাড়ুক। আমি জানি না, যারা আমাকে ব্লগ করেছেন, প্রায় সবাই পরে কেন নিরুৎসাহিত হয়ে গেছে; ওহ ভালো, "উড়োজাহাজ" নিক আমাকে ব্লক করেছিলেন; উনার অবস্হা দেখেন।

আমার কমেন্টের প্রতিবাদ করে, "মো: আনারুল ইসলাম" নামের একজন ব্লগার ২/৩ ঘন্টায় ১৬০ টি কমেন্ট পেয়েছিলেন। আজ আমার সাথে উনার কমেন্ট বিনিময় হয়েছে; আপনি আমার পোস্ট, " জেনারেল জিয়া মিথ্যা বলতেন না .." নামের পোস্টে উনার কমেন্ট দেখুন।

৬| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আপু, মাঝে মাঝে ওদেরকে সাহায্য করলে একটা আলাদা আনন্দ পাওয়া যায়। আপনি এই আনন্দটাই পেলেন। আরো পাওয়ার চেষ্টা করে দেখুন, দেখবেন ভালই লাগছে।

৭| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আপনার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ থেকে অনেক কিছু ভাবার আছেঃ

//'ভদ্রতা' শব্দটা ওদের জন্যও তো কেউ কখনো ব্যাবহার করেনি,ওরা কোত্থেকে শিখবে,কেনই বা অন্যের জন্য ব্যাবহার করবে? ওরা বুঝে গেছে ওরা সমাজের এক বিচ্ছিন্ন জাতি যাদের বেশিরভাগকে তাদের বাবা-মারাও জন্মের পরপর ছেড়ে দিয়েছে!//

আপনার মতো আমরা সবাই যদি নিজের আপন জনের সাথে মিলিয়ে চিন্তা করতাম, তবে মনে হয় সমাজটা আরও সুন্দর হতোঃ

//কাছাকাছি বয়সের আমার আদরের ছোটভাইটার কথা মনে পড়লো- আচ্ছা,ও কি পারতো এভাবে গাড়িতে ঝুলে ঝুলে গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে, দৌড়ে চলন্ত বাসে উঠতে? জীবনের বাস্তবতা এই ছেলেকে এইসব শিখিয়েছে।ছেলেটাতো নিজে তার এই জীবন বেছে নেয়নি।......//

লোক লজ্জার কারণে বলতে পারেননিঃ

//"এই চল,আজ তোকে খাওয়াই"//

কিন্তু সমব্যথী হয়ে, একটু স্বস্তির ছোঁয়া পেতে কিছু তো করা যায়ঃ

//নেমে যাওয়ার সময় ছেলেটার হাতে একটা নোট গুঁজে দিয়ে বললাম-এই টাকাটা তোর জন্য। শুধু তোর। মালিককে এর থেকে ভাগ দেয়ার দরকার নাই!"//

আপনি এগিয়ে যান, আশা করি কেউ কেউ আপনার সাথী হবেঃ

//আমি সামনে হেঁটে চলে আসলাম।//

ভাল থাকুন। সবসময়।

৮| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
ভাল থাকুন এভাবেই মানুষের পাশে থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.