নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Every story I create, creates me. I write to create myself.\n- Octavia E. Butler\n\n

সুমাইতা মেহজাবীন

সুমাইতা মেহজাবীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমাজনামা- বিয়ে‬

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০




এক সব্জি বিক্রেতা অনেক কষ্ট করে একটা পটল চাষ করেছেন। মৌসুম শেষে সে পটল নিয়ে বাজারে এসেছে এবং অনেক উঁচু দর হাঁকছে। তার যুক্তি হল এতো কষ্ট করে পটল চাষ করেছে এখানে তার কত্ত খাটুনি! সে কিছুতেই কম দামে বেচবে না। ক্রেতা কিনবো না কিনবো না করেও সে পটল কিনে। ভালো, ফ্রেশ পটল বলে কথা!

ছেলে উচ্চশিক্ষিত/ অশিক্ষিত ব্যাবসা করে। স্বভাব চরিত্র যেমনই হোক, ছেলে বলে কথা। ছেলের বিয়ে দিতে গেলে ছেলের পরিবার সিনা ফুলিয়ে মেরুদন্ড টানটান করে রাখেন যে মনে হয় আরেকটু হলেই কশেরুকাগুলো পটাশ করে ফেটে যাবে। ছেলের বাবা ছেলের দাম হাঁকেন। এতদিন এতোযত্নে ছেলেকে সে বড় করেছে। সেই পটল দোকানদারের মতো সেও চায় তার পটল, i mean তার ছেলে উঁচা দরে নিলাম হবে। নিলাম শুনতে খারাপ লাগে তাই সমাজ আদর করে নাম দিয়েছে "যৌতুক"।
আদরে যত্নে মেয়েটাকেও মেয়েটার বাবা-মা বড় করেছে। যে বয়সে ওই ছেলে ড্যাংড্যাং করে ঘুরত সেই বয়সেও মেয়েটাকে শেখানো হয়েছে ঘর গুছানো, তরকারী কাটা, রান্না করা, সংসার সামলানো। কারণ একদিন তাকে পরের ঘরে যেতে হবে। এই পরের ঘরে আসা-যাওয়ার আইনগত প্রক্রিয়া অর্থাৎ বিয়ে, একটা ছেলের কাছে যতটা আনন্দের, একটা মেয়ের কাছে ততটাই ভয়ের। মা-বাবা, চেনা সংসার ছেড়ে অচেনা একটা পরিবেশে যাওয়া, মানিয়ে নেয়া। সব একেবারে নতুন। নতুন একটা বাসায় একটা ছেলেকে ছেড়ে দিলে সে জড়সড় হয়ে বসে থাকবে, সেখানে ছোট বয়স থেকে একটা মেয়েকে তৈরি করা হয় এসবের জন্য,মাথায় ঢুকানো হয় 'তোমাকে এসবই করতে হবে'। যাই হোক, তো যা বলছিলাম। ছেলের বাবা যখন পটল বেচছিলেন তখন সর্বগুণে গুনান্বিতা মেয়ের বাবা ধমনীতে রক্তের প্রচণ্ড গতি কন্ট্রোলের চেষ্টা করছেন। শেষে পটলের গুন বিবেচনায়(!) ওই দামে কিনতে রাজি হন।

এতো আগের দিনের কথা। যুগ পাল্টে গেছে। এখন আর কেউ 'যৌতুক' বলে না। এখন মানুষ খুব সুন্দর করে কথা বলে শিখেছে। খুব সুন্দর করে বলে " যৌতুক? ছিঃ, নাউজুবিল্লাহ। যৌতুক আমরা নিব না। তবে মেয়ের সুখের জন্য যদি আপনি মেয়েকে এক ঘরের ফার্নিচার , কয়েক ভরি গহনা আর ছেলের ফ্যামিলির জন্য গিফট দিতে চান তাহলে আমরা কিছু বলব না। আপনার মেয়ে, আপনার একটা দাবি আছে না? আপনি যা ভালো মনে করেন তাই দিবেন!'

এখন কিছু কঠিন কথা বলি, একটা ছেলে যে নিজের বোনের জন্য ভালো ছেলে খুঁজে, যৌতুক আতংকে মায়ের চোখের জলে ভেজা আঁচল দেখে, বাবার হাই প্রেশারের ছটফটানি দেখে, আদরের বোনটার চোখে জন্মপাপের জল দেখে, যে ছেলে তাকে কেউ অপমান করলে ঘুষি মেরে চোয়াল ভাঙ্গে সেই ছেলে কি করে বসে বসে দেখে যে তার নিলাম হচ্ছে? তার দাম হাঁকা হচ্ছে, তাকে পন্য বিবেচনা করছে খোদ তার বাবা মা!
যে যার জায়গা থেকে শক্ত দেয়াল তৈরি করলে, নিজের আত্মসম্মানবোধের জন্য নিজেই লড়াই করলে এই জায়গাগুলো সমাজের কলংক হয়ে আর থাকবে না। একদিন সব ধুয়ে মুছে যাবে। ছেলে- ছেলের ফ্যামিলি অনেক টাকার বাহাদুরি না দেখিয়ে অনেকখানি ভালোবাসা নিয়ে মেয়েটাকে বরণ করবে। মেয়েটা আর বিয়ে করতে ভয় পাবে না। ছেলে- মেয়ে উভয়ের চোখে পরস্পরের জন্য থাকবে অনেকখানি সম্মান, শ্রদ্ধা। মেয়ে জন্ম নেয়ার পর থেকে আর কোন বাবা-মায়ের মনে আতংক থাকবে না, মেয়েটাকে
abort করতে চাইবে না, নিশ্চিন্তায় মেয়েটার বিয়ে দেবে...... এমন একটা সমাজের স্বপ্ন দেখি। আমি বিশ্বাস করি স্বপ্ন সত্যি হয়, চাইলেই হয়। দরকার শুধু একটু সদিচ্ছা।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২২

জুন বলেছেন: দরকার শুধু একটু সদিচ্ছা।
আপনার সম্পুর্ন লেখাটির প্রতিটি বাক্যের সাথে একমত সুমাইতা মেহজাবীন ।
+

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৯

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: :)

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৭

রাইসুল ইসলাম রাণা বলেছেন: আমাদের সামাজিক এবং ধর্মীয় রীতিতে বিবাহটা একদম নোংরামি লাগে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৬

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: ধর্মীয় রীতি সম্পর্কে আপনার ভিন্ন মত থাকতে পারে।তবে আমার এই সমাজরীতিতেই যত আপত্তি

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৭

মারুফ তারেক বলেছেন: ভালো লাগল
++

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



ভাল লিখেছেন।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার অভিমতের জন্য :)

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আজকাল কিন্তু মেয়েদের মা-বাবা নিজের মেয়েদের অমনভাবে ভাবতে শেখান, বড় করেন তার মেয়েটাও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, কোন বয়সে বিয়ে করবেন, কেমন ছেলেকে বিয়ে করবেন এবং কর্মজীবনে কেউ কেউ প্রচণ্ড রকম ভাবেই প্রতিষ্ঠিত। সেই সাথে কিছু কিছু করেও পুরুষরা এগিয়ে আসছেন ডাউরি সিস্টেমের বাইরে আসতে। নারী পুরুষের সম্মিলিত উদ্যোগে বিয়ের খরচ, কেনাকাটা , ফার্নিসড ফ্ল্যাট এরেঞ্জ নিজেদের খরচেই করেন। সময় লাগবে কিছুটা বা অনেক অনেক দিন কিন্তু এই ধরণের সমাজ বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে যদি নিজেদের সন্তান বা পরিবারের বা আত্মীয়ের সদস্যদের জন্য উদ্যোগটা আমরাই নেই।

ভালো থাকুন মেহজাবিন।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২০

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: একদিন সব কালিমা দূর হয়ে যাবে। সব ভালো হবে। সেই একদিন অবশ্যই আসবে :)
আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । আপনিও ভালো থাকবেন

৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৩

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:

সমাজ পালটাচ্ছে। চিন্তা ভাবনা বদলে যাচ্ছে। হয়তো ধীরে। তবুও। মেয়েরা আজ প্রতিনিধিত্ব করছে দক্ষতার সাথে। আলো আসবেই।
লেখা ভালো লেগেছে। +

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২২

সুমাইতা মেহজাবীন বলেছেন: আলো আসবেই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.