নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুনন্দ জেভিয়ার

সুনন্দ জেভিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'\'আমি দোষ করিনি কিন্তু কষ্ট আছে আমার\'\'

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০১

হ্যাঁ, বইয়ের শুরুতেই লেখা কথাটা। তাকে আমরা অনেকেই চিনি। তার সফটকোর মাসালা মুভি কে না দেখেছে। জৈবিক আনন্দ যে এড়িয়ে যাওয়া দায়! ব্যস, অতটুকুই। এর বেশি জানতে চাই নি তাকে। জানার প্রয়োজনও যে নেই খুব একটা। আঁধার রাতের জোনাকি পোকা নিয়ে কে আর দিনের আলোয় মাতামাতি করে! সমাজের চোখে যে নাম গুলো মুখে আনাও পাপ সেদিকে আড়চোখে সকলেরই তো চোখ যায়। তবুও কি একটু জানা যায় না তার কষ্টের কথাগুলো?


পুরো নাম শাকেলা বেগম। জন্ম ৭১ এর নভেম্বরে, ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে। তাকে বলা হয় ভারতীয় সফটকোর নায়িকা ''সিল্ক স্মিতা''র যোগ্য উত্তরসূরি। চিনতে পেরেছেন কোন ''সিল্ক স্মিতা''র কথা বলছি? বছর কয়েক আগে বলিউড বক্স অফিস কাঁপানো বিদ্যা বালানের ''ডার্টি পিকচার'' মুভির কথা মনে আছে? সেই মুভিতে বিদ্যার নাম ছিল ''সিল্ক''। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন ''সিল্ক স্মিতা''র জীবনের উপরই নির্মিত হয়েছিল ''ডার্টি পিকচার'' মুভিটা।

শাকেলার কথা গুলো তার মুখেই জেনে নিই। তিনি তার জীবনী লিখেছেন মালায়াম ভাষায়। মালায়াম থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ''শাহিনা কেকে''। আমি সেই ইংরেজির কিছু অংশ বাংলায় তুলে দিচ্ছি।

--------------------------------------------------------------------------------

শুরুটা করেছেন এভাবে ---''''আমি জীবনী লিখব কেন? আমার কাছ থেকে কি কিছু শেখার আছে? পাবলিশার যখন আমাকে বই লেখার কথা বলল প্রথমে ''না'' করে দিয়েছিলাম। আমি মাদার তেরেসা নই। আমার জীবনটা ফিল্মের মতই আর্টিফিশিয়াল। তবে কেন এমন বই লিখব? প্রথম দিকে এমনটাই ভাবছিলাম। পরে আমার মন পরিবর্তন করলাম। অন্য সকল মেয়ের মতই আমি ভালবাসতে চাই, ভালোবাসা পেতে চাই- একটা সুখের জীবন যাপন করতে চাই। কেউ জানে না আমি কে আর কিসের ভেতর দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। কেউ জানে না কিভাবে আমার নাম হয়েছে অশ্লীলতার সমার্থক। এসব ভেবেই আমি বই লিখতে শুরু করলাম কারণ মানুষ জানুক কিভাবে ''শাকেলা''র জন্ম আর ভেসে যাওয়া।

একবার সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় এক সাংবাদিক আমায় বলেছিল যে আমিই নাকি মালায়াম যুবাদের যৌনতার দেবী। যখন কেউ ক্ষুধার্ত থাকে, তাকে খেতে দিতে হয়। অন্য কিছু তাকে খুশি করবে না। আমার সিনেমাগুলো আমার শরীরের যৌন আবেদনময়ী দৃশ্যায়ন ছাড়া আর কিছুই নয়। কেউ আমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখেই নি, অভিনয়শিল্পীটাকে খোঁজে নি। একটা সময় আমি শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীদের চেয়েও বেশি সম্মানি পেতাম। বিভিন্ন লোকেশনে যেতাম বিমানে চেপে। দিন রাত ছবির কাজ করতাম। এমনও সময় গেছে সারাদিনে ঘণ্টা কয়েক সময় পেয়েছি ঘুমানোর জন্য। মানুষ ভেবেছে আমি হয়ত অর্গাজমের দৃশ্যে অভিনয় করছি অথচ আমি তখন ঘুমিয়ে গেছি। সকলের কাছে আমি একদলা মাংস পিণ্ড ছাড়া কিছু নই। কেউ আমার অভিনয় প্রতিভা খুঁজতে যায় নি।''''

তার অভিনয় জগতে আসাটা ছিল বেশ চমকপ্রদ। শাকেলা বলছেন---''''যে ফিল্ম দিয়ে আমার সিনেমার জগতে পথচলা শুরু তাতে ''সিল্ক স্মিতা'' প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তিনি ছিলেন আমার প্রেরনা। স্মিতার মত এত সুন্দর অভিনেত্রী আমি আর কখনো দেখিনি। তার সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য ছিল তার ''গভীর কালো চোখ''। ''প্লে গার্ল'' ছিল একটা যৌনশিক্ষাধর্মী মুভি যাতে আমি তার বোনের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলাম। মুভির ডিরেক্টর ছিলেন ''আর,ডি, শেখর'' আর প্রডিউসার ছিলেন ''উমাসঙ্কর''। উমাসঙ্কর আমাকে মুভিতে একটা ভালো রোল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন এ,ভি,এম, স্টুডিয়োতে গিয়ে যেন ডিরেক্টরের সাথে দেখা করি। এটা ছিল আমার স্বপ্ন পুরনের মত। কোনো স্ক্রিন টেস্ট ছিল না। ডিরেক্টর আমাকে দেখলেন, কিছু প্রশ্ন করলেন আর পরের দিন শুটিঙের জন্য তৈরি হতে বললেন।

পরে যখন উমাসঙ্কর আমায় বললেন যে মুভিতে আমি সিল্ক স্মিতার বোনের দৃশ্যে অভিনয় করতে যাচ্ছি, আমার প্রথমে বিশ্বাস হয় নি। আমি সে রাতে ঘুমাতে পারিনি। খুব কনফিউসড হয়ে গেলাম। আমি কি আসলেই এটা ডিজারভ করি? সিল্কের মত এত উঁচু মানের অভিনেত্রীর সাথে অভিনয় করার যোগ্যতা কি আছে আমার?

পরের দিন সকালে আমি স্টুডিওতে পৌঁছলাম। আমাকে কস্তিউম পরিবর্তন করতে বলা হল; দেয়া হল একটা মিনি স্কারট আর এক জোড়া মোজা। আমার ভালো লাগছিল না। আমি কম্ফরট ফিল করছিলাম না কিন্তু তখন না করিনি কারণ আমার অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। অভিনয় করার স্বপ্ন। বিস্ময়ে অভিভুত হয়ে যাই যখন দেখলাম প্রথম দৃশ্যটাই সিল্কের সাথে। শটটা ছিল এমন- স্মিতা রুমে প্রবেশ করলে আমি তার হাতে এক কাঁপ চা দিয়ে বলব ''এই নাও তোমার চা'' আর স্মিতা তখন আমাকে চড় মারবে। সবকিছু রেডি, ক্যামেরা চালু হল। আমি তার হাতে চা দিলাম আর যতটা ভালো করে পারা যায় ডায়লগটা দিলাম। স্মিতা আমাকে সাথে সাথে চড় দিলো। এত জোরে চড় দিলো যে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। গাল ফুলে গেল, অনেক কষ্ট করেও চোখে পানি আসাটা আটকাতে পারলাম না। ওইদিন আমার শুটিং ছিল অতটুকুই। একসময় আমি কাঁদতে শুরু করলাম, বাসায় ফিরে আসতে চাইলাম। স্মিতা আমার কাছে আসলো, আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো। আমার কাছে ক্ষমা চাইছিল আর বলছিল দৃশ্যের পারফেকশনের জন্যই সে এতোটা জোরে চড় মেরেছে। আমি যেন মন খারাপ না করি। কিন্তু আমি তার কথা মানতে পারছিলাম না। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল যে সে স্টার হওয়াতে আমার মত নবাগতার সাথে এমনটা করেছে। পরে আমার ভুল ভেঙ্গেছিল। স্মিতা ছিল খুবই ভালো মানুষ টাইপের মেয়ে। পরের দিন আমাকে তার বাসায় দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত দিলো। স্মিতা খুবই সময়ানুবর্তী আর কাজের প্রতি সৎ ছিল যা দেখে আমি অনুপ্রানিত হতাম। তার আত্মহত্যার খবর আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের স্মৃতি। আমি জানি না কেন সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল। রহস্যই থেকে গেল।''''

এখন যা পড়বেন তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হন। প্রচণ্ড ধাক্কা খাবেন---''''আমার মাকে নিয়ে আমার কোনো ভালো স্মৃতি নেই। আমি কখনো তার কাছ থেকে যত্নআত্তি, ভালোবাসা পাই নি। আমার মাই আমার জীবনটাকে নষ্ট করেছে। ছোটবেলা থেকেই কেন যেন আমার মা আমাকে পছন্দ করত না। সে আমাকে এড়িয়ে চলত আর সময় অসময়ে অভিশাপ দিত। আমি বুঝতাম না কেন এমন হচ্ছে। কিন্তু একদিন মা হঠাৎ করেই আমার সৌন্দর্যের খুব প্রশংসা করল। সেটা ছিল আমার ষোলতম জন্মদিনের পরে পরেই। তারপর মা আমাকে বলল যে একটা লোক আমাকে নিতে আসবে। সেই লোকের সাথে একটা জায়গায় যেতে বলল যেখানে আমাকে একজন বিত্তশালী লোককে ''খুশি'' করতে হবে। ওই লোক তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। মা আমাকে বলল আমি যেন লোকের কথা মত চলি এবং যা করতে বলে তাই যেন করি। আমি আচমকাই হতভম্ব হয়ে গেলাম মায়ের কথা শুনে। মা কি বলতে চাইছে সেটা বোঝার যথেষ্ট বয়েস আমার হয়েছিল। লোকটা আমাকে নিতে এলো। আমার কিছুই করার ছিল না। আমি তার সাথে গেলাম। আমরা একটা হোটেলে পৌঁছলাম। সেখানে একটা চল্লিশ ঊর্ধ্ব লোক অপেক্ষা করছিল। আমি ভয়ে জমে গেলাম। লোকটা আমাকে নগ্ন করে ধর্ষণ করল। কিন্তু আমি বার বার বাধা দেয়াতে সে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না। শুরুটা হয়ে গেল। পরবর্তীতে এভাবেই আমাকে অনেক বিত্তশালীদের সাথে বিছানায় যেতে বাধ্য করা হয়েছে। চূড়ান্ত কষ্টের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে আনন্দও পেয়েছিলাম। ঠিক কোন সময়টাতে আমি সতীত্ব হারিয়েছিলাম বলতে পারবো না।

আমি যদি একজন মানুষকেও আমার এই বইটা বার বার পড়ার কথা বলতে চাই সে হল আমার বড় বোন ''নুরজাহান''। সে আমাকে পথের ভিখিরি বানিয়েছে। একটা সময় সাউথ ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমি ছিলাম সবচেয়ে বেশি সম্মানি পাওয়া অভিনেত্রী। আমার বোন আমার সকল টাকা চুরি করেছে। সে আমার ফিনান্সিয়াল একাউন্ট দেখভাল করত আর আমি তাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করেছিলাম। ছোটবেলা থেকেই সে আমার দেখাশোনা করেছে তাই আমি কখনো ভাবতে পারিনি ও আমার সাথে বেইমানি করবে। কিন্তু যখন বুঝলাম ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। জীবনের একটা পর্যায়ে আমি সিনেমা পাড়ার ব্যস্ততায় হাঁপিয়ে উঠছিলাম। এক লোকেশন থেকে আরেক লোকেশনে কেবল ছুটে বেড়ানোতে কোনো আনন্দ পাচ্ছিলাম না। জীবনটা একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছিল। আমি একটা ব্রেক নিতে চাইলাম। মাকে আর নুরজাহানকে বললাম আমার আর ভালো লাগছে না। আমি এবার বিয়ে করতে চাই, একটা সুখের ফেমিলি লাইফ চাই। আমার কথা শুনে তারা দুজনেই খুব অবাক হল। এমনভাবে আমার দিকে তাকাল যেন আমি বিশাল কোনো অন্যায় করে ফেলেছি। কয়েক মিনিট পরে নুরজাহান আমাকে বোঝাতে শুরু করল আমি যেন এভাবে বোকার মত কোনো সিদ্ধান্ত না নিই। আমি বুঝলাম ওরা আমার টাকা ভালোবাসে, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে ওদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার খুব ভয় হল। নুরজাহানকে বললাম আমার সকল টাকা-পয়সা ফেরত দিতে। হায়! আরও বাকি ছিল। নুরজাহান বলল সকল টাকা পরিবারের পেছনে খরচ হয়ে গেছে।''''

শেষ দিকে এসে তার একটা সরল মূল্যায়ন দেখুন---''''মদ্য পান করার সময় আমি ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সঙ্গ বেশি পছন্দ করি। ছেলেরা কয়েকটা পেগ শেষ করার পরেই সঙ্গম করতে চায়। তারা ভাবে আমি তাদের সাথে বিছানায় যেতে চাই বলেই এতক্ষণ সঙ্গ দিয়েছি। হায়রে পুরুষ! তারা কিছুই ভাবতে পারে না। একটা জিনিসই বোঝে শুধু, সঙ্গম। তার চেয়ে বরং মেয়েদের সাথেই অনেকটা সহজে মেশা যায়। আমি মেয়েদের জড়িয়ে ধরি, তাদের সাথে নাচি। এটাই যদি আমি ছেলেদের সাথে করতাম তারা ভাবত আমি তাদেরকে বিছানায় নিয়ে যেতে চাইছি।

''যখন যৌন উত্তেজক দৃশ্যে অভিনয় কর তখন কি সত্যি সত্যি সঙ্গম করার ইচ্ছা জাগে?'' আমাকে অসংখ্যবার এই প্রশ্নটা করা হয়েছে। আমি অবাক হই! এটা কি লুকিয়ে ছাপিয়ে করা হচ্ছে? যখন সিনেমা ক্রুরা সবাই মিলে তোমায় দেখছে তখন কি সঙ্গম উপভোগ করা সম্ভব? সঙ্গম কোনো দৈহিক বিষয় নয় যেমনটা ভাবা হচ্ছে। যদি কোনো মানসিক যোগাযোগ নাই থাকলো তবে সেক্সকে এঞ্জয় করা যায় না। আমি যেটা করেছি সেটা অভিনয়। অভিনয়ের সময় আমি কখনোই উত্তেজনা অনুভব করিনি।''''

-------------------------------------------------------------------------------------------------------

চটি বইয়ের মত কিছু একটা হবে ভেবে বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম। যখন পড়ে শেষ করলাম চোখে জল ধরে রাখতে পারিনি। শাকেলা এতদিন আমার কাছে ইন্ডিয়ান সেক্স সিম্বল এক নষ্ট মেয়ের প্রতিকৃতি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সরল গনিত তাই তো বলে। কিন্তু জীবন কি আর মহাকালের পাতায় সুদ কষা আর লাভ ক্ষতির হিসেব মেলানো? এর বাইরেও অনেক কিছু থাকে। দেখেও না দেখার ভান করতে হয়। সুনিপুনভাবে এড়িয়ে যেতে হয়। এতে খুব যে দোষের কিছু আছে তা বলব না। আবার একেবারেই যে সাধু হয়ে গেলেন তেমন কিছুও নয়। আমার সরল স্বীকারোক্তি, গত দুদিন ধরে শাকেলার প্রতি আমার আকাশ সমান উঁচু শ্রদ্ধা বেড়েছে। জানি, অনেকেই কটু কথা বলবেন। জেনেই বলছি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: মর্মান্তিক এক আখ্যান।শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

সুনন্দ জেভিয়ার বলেছেন: তার অনেক গুলা সাক্ষাৎকার ইউটিউবে পাওয়া যায়। কিন্তু সব মালায়াম ভাষায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.