![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মতিন মোড়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। প্রতিবারই জোরে টান দিয়ে ফুসফুসে অনেকক্ষণ ধরে রাখছে নিকোটিন ভরা ধোঁয়া। এই সময়টায় মতিন চোখ বন্ধ করে রাখে; নিকোটিনের কুন্ডুলী পাকানো সাপ ফুসফুস আর হৃদপিণ্ডে কেমন ছোবল দিচ্ছে কল্পনা করতে চেষ্টা করে। তারপর আস্তে আস্তে ধোঁয়াটা ছেড়ে দিতে দিতে চোখ খুলে। ধোঁয়ার রঙটাই তখন বদলে যায়। মতিনের কাছে মনে হতে থাকে ধোঁয়ার রঙ নীল! যেন মস্ত বড় আকাশের এক টুকরো তার নাক মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেখানে নাই কোন মেঘ, নাই কোন ঝড়।
শেষ যেবার রানুর সাথে দেখা হয়েছিল, অই একবারই দেখেছিল, তখন খুব রৌদ্র তপ্ত দিন ছিল। সেলুন থেকে চুল কাটিয়ে সবে ঘরে ঢুকছে আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মাকে বলছে, 'পানি আছে তো? গোসল করব'। মতিনের মা শুকনো লঙ্কা রোদে দিয়েছেন। বসার ঘর পেরিয়ে নিজের ঘরে যাবার পথেই রানুকে তার দেখা। অই একবারই দেখেছিল রানুকে মতিন। রানু কে কি তার বৃত্তান্ত- সে কথা আজ থাক। এতটুকু বলা যায় মতিন কখনই রানুর প্রেমে পড়েনি। এই সব প্রেম টেমের ধার ধারে নি কোনোদিন মতিন। শুধু একটা উজ্জ্বল স্নিগ্ধ চেহারা মায়া ভরা চোখ- মতিনের ভেতরটাই নাড়িয়ে দেয়।
অই দিনের পর রানুকে নিয়ে যে খুব ভেবেছে মতিন ঠিক তেমনও নয়। তবে মাঝে মাঝে সপ্নে দেখত রানুকে। খুবই সাদামাটা স্বপ্ন। কাউকে বলার মতও নয়। আর কি ই বা বলবে! রানুকে নিয়ে তো তার ভাবনা ছিল না। কোনদিন তাই জানতেও চায় নি কে এই মেয়েটি। জানার কোন আগ্রহও বোধ করেনি কোনোদিন। মতিন খুব অবাক হত এই ভেবে কেন তাকে বার বার সপ্নে দেখে! সে তো সারাদিন ওকে নিয়ে ভাবে না। এভাবেই দিন গেল অনেকগুলা। ঠিক দিন নয়, বছর গেল কয়েকটা। মতিন ডিগ্রি পাস করল, একটা ছোট চাকরি ধরল, তার মা মারা গেলেন, ছোট বোন শিউলির বিয়ে হল, তার মাথার চুল পড়ে গেল আর হাজার নদীতে লক্ষ কিউসেক জল গড়াল।
রানু যে শিউলির ফুপাত বোন ছিল এটা মতিন জেনেছিল অনেক পরে। শিউলি মতিনের বাবার দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে ছিল। আর মতিনের বায়লজিকাল মা তার সাত বছর বয়েসের সময় আরেক লোকের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। অই মহিলার সাথে আর কারুরই যোগাযোগ থাকেনি। মতিন কিছুটা বড় হলে পরে যোগাযোগের কিছু চেষ্টা চলেছিল কিন্তু মতিন কেন যেন তা করেনি কখনই। সে যাক গে; তো শিউলির যে ফুপাত বোন ছিল রানু এটা মতিন জানল শিউলির বিয়ে ঠিক হবার পরে। না, কোন আক্ষেপ বা কষ্ট বুকে দলা পাকিয়ে ওঠে নি। এমনকি রানুর বিয়েতেও মতিন যায় নি। কোন খারাপ লাগার আশু আশঙ্কায় যে যায় নি তা কিন্তু নয়। শুধুই যায় নি। ঠিক যেভাবে সে শুধু শুধুই অনেক কিছু করে কিংবা করে না। তো শিউলির বিয়ে হল এক স্কুল শিক্ষকের সাথে। বছর ঘুরতে একটা মেয়েও এল তাদের কোল জুড়ে।
যা থেমে থাকল না তা হল রানুকে মতিনের স্বপ্নে দেখা। কদিন পর পরই এমনটা ঘটত। মতিন অবাক হয়ে পারেন না। কোন হিসেবও যেন মিলতে চায় না। মজার কথা হল কোনদিন রানুর সাথে কথাও হয় নি মতিনের। মানে মোবাইলে কথা বলার ব্যাপারটা বলছি আরকি। অদ্ভুত একটা ঘটনা। সব চলছে সবকিছুর মত স্বাভাবিক, কোন বাড়তি আহ্লাদ নেই, কিছু নেই, কিছুই নেই- কিন্তু ঘুমের ভেতর কথা হচ্ছে তাদের। তারা একসাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাসছে, গাইছে, অভিমানে মুখ গোমড়া করে রাখছে- কত কিছু। একসময় স্বপ্ন ব্যাপারটা নিয়েও মতিন বেশ পড়াশোনা শুরু করল। নাহ! তেমন কিছু বুঝে নি তাতে।
আজকে সকালে এত বছর পর দ্বিতীয়বারের মত রানু এসেছে মতিনদের বাসায়। একাই এসেছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে রানুকে দেখেই মতিন ঘর থেকে বেরিয়েছে। মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। অপেক্ষা করছে। মেয়েটার সাথে একটু কথা বলা দরকার। কিন্তু কি বলবে ভাবতে ভাবতেই ৫ খানা সিগারেট শেষ করে ফেলেছে। ভাগ্যিস আজ ছুটির দিন; না হয় অফিস কামাই দিতে হত। সে না হয় দিতই। একটু কথা বলা দরকার। রানুকে যে সে কদিন পরপরই স্বপ্নে দেখে এটা কি রানুর জানা উচিত না? তাকে তো সে ভালবাসে না। নাকি বাসে? নাহ! মতিন মাথা নাড়ে। কোনোভাবেই ভালবাসার কথা নয়। তবে কেন তার এতটা জুড়ে থাকবে রানু? আচ্ছা রানুর কি কোনোদিন কিছু বলার ছিল তাকে?
একটা রিকশা ছুটে আসছে। মনে হচ্ছে রানু তাতে বসা। হ্যাঁ, রানুই তো! দোকানটা ছেড়ে রাস্তার পাশে এসে দাড়ায় মতিন। আজকেও বেশ রৌদ্র। ঝকঝকে আলোর ছুটোছুটি। মতিন দ্রুত ভাবছে। কি কথা বলবে রানুর সাথে? অথবা কিই বা বলবে রানুকে? শেষ যে নিকোটিন ভরা ধোঁয়া ছাড়ল তাতে নীল রঙ খুঁজে পেল না মতিন। সহজ সরল সাদা ধোঁয়া! মতিনের ইচ্ছে করছে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে মিলিয়ে নিতে নীল ধোঁয়া বেরোয় কিনা। কিন্তু রানুকে নিয়ে ছুটতে থাকা রিকশা তার প্রায় কাছেই চলে এসেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫০
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: মন্দ নয়।