সুস্থ থাকার চাবি যোগাভ্যাস – "যোগে তাড়ন রোগ"

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২৯

প্রাকৃতিক ভাবেই মানব দেহের মেকানিজম বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন। যদিও জন্ম, খাওয়া, ঘুমানো, বংশ বিস্তার, মৃত্যু – এই বৃত্তটি সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে একই, কিন্তু মানবজাতি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃত্তের প্রতিটি ধাপ সচেতনভাবে করতে সক্ষম বলেই অন্য সকল প্রাণীর মধ্যে উত্তম। ভবিষ্যৎ কল্পনা করার মতন অসীম ক্ষমতা সম্পন্ন আমাদের মস্তিস্ক। মানব দেহের দুটি প্রধান দক্ষতার জায়গা হোল “শারীরিক” ও “মানসিক”। দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে জীবদ্দশায় এই দুই দক্ষতার জায়গার কোনটায় তেমন গুরুত্ত সহকারে আমরা অনেকেই দেখি না বা জানার প্রয়োজন মনে করি না। আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা এমন ভাবেই সাজানো যে, ছোট বেলা থেকেই আমাদের ছোট্ট মাথার ভেতরে প্রতিযোগিতার এক বিশাক্ত বীজ বুনে দেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতার নাম সাফল্য। আর এই সাফল্য মানেই - টাকা, বাড়ি, গাড়ি, খ্যাতি। অবচেতন মনেই ডাকা পড়ে যায় সৃজনশীলতা। অন্যকে ডিঙ্গিয়ে সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছাতে গিয়ে নিজেকে জানার ক্ষুধা কখনই উদ্ভূত হয় না আমাদের মাঝে। আর এভাবেই নিজের আপন গতিতে চলা জীবন এক সময় ইতি টানে।

পৃথিবীর বুকে অদ্যাবধি সবচেয়ে সুন্দর অথবা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর- যা কিছুই আমরা সৃষ্টি করেছি তার প্রথম অভিব্যক্তি পেয়েছে আমাদের চিন্তায়/ভাবনায় এবং পরবর্তীতে বাস্তুবায়ন হয়েছে পৃথিবীর বুকে। এটি কোন রকেট সাইন্স নয়, বাস্তবতা।

যোগাসন অনুশীলনে চিন্তা ধারার বিকাশ ঘটে আর সেই সাথে হিংসা, দ্বেষ ও উগ্রতাকে জয় করা যায় সহজেই। যোগাভ্যাস শারীরিক এবং মানসিক সক্রিয়তা বাড়ায় এবং সমতা ফিরিয়ে আনে। আমদের চিন্তাধারা, ভাবনা, কল্পনা – এসবের উপরি নির্ভর করছে কেমন হবে আমাদের আগামী দিনের পৃথিবী। যোগাভ্যাস একটি প্রযুক্তি- মানে, যে কেও এই প্রযুক্তি ব্যাবহার করলে উপকৃত হবে। এখানে ধর্ম, বর্ণ, জাতির কোন নিদিষ্টতা নেই। ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে বিশ্বসত্তা একত্র করে প্রশান্তি অর্জনের মাধ্যম হলো, যোগ বা যোগাসন। নিয়মিত ৩০ মিনিট যোগাভ্যাস এর মাধ্যমে যে কেও তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হবেন। যোগাসন বিচলিত–বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। এতে চিন্তা করার দক্ষতা বাড়ে এবং , নিজেকে অনুধাবনের পথ খুলে যায়। শরীরে জমে থাকা বিষ (টক্সিন) দূর করতে যোগাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাকৃতিক ভাবেই মানুষ সর্বদা চেষ্টা করে তার কর্মতৎপরতা প্রসার করতে। কিন্তু শারীরিক সক্রিয়তা সম্প্রসারণ ছাড়া কর্মতৎপরতা প্রসার কি কখন সম্ভব?

বর্তমানে আমরা বেশির ভাগ মানুষী স্থূলতায় ভুগছি। এক সময় মানুষ মারা যেত না খেয়ে, আর এখন মানুষ মরছে খেয়ে। এই কথাটি বর্তমান সময়ের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এর উৎস কথায়?- উৎস হোল আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং দৈনিক জীবনধারা । প্রযুক্তির মহানুভবতাই আমরা অনেকটাই অলস জীবন যাপন করছি । ডাক্তার ডায়বেটিক নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত হাঁটা, শরীর চর্চা, যোগাভ্যাস – কোন কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না আমাদের। খাদ্যাভ্যাস তো লাগামহীন। এক কথায় "চলছে গাড়ি যাত্রা বাড়ি" - অনেকটা এমনি আমাদের দৈনন্দিন জীবন। ফাস্ট ফুড আর প্রসেস ফুড এর উপরে তীব্র প্রবণতা আমাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। স্থূলত্ব কখনই আমাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে না , এটি সময়ের আগেই আমাদের সম্ভাবনা, যৌবন সবি কেড়ে নেয় । স্থূলতাকে না বলুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবন গ্রহণ করুন।
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে অনেক টাকা লাগে না, শুধু সচেতনতার প্রয়োজন হয়।
সঠিক সময়ে যদি আমরা সচেতন না হই তবে প্রকৃতি তার কঠোর ধারায় আমাদের সচেতন করবে।

৩ বছরের ঊর্ধ্বে যে কেউ যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। শিশুদের ক্ষেত্রে খেলাধূলার মাধ্যমেই যোগ করানো সম্ভব। ১২ বছরের নাবালক/নাবালিকা’দের জন্য হালকা যোগাসন ও প্রাণায়ম প্রয়োজনীয়। তবে তাদের কপালভাতি বা মুশকিল আসান-এর মতো ক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। গর্ভবতীদের জন্যও এই ধরনের ক্রিয়া অনুচিত। হার্টের রোগীদের যোগ শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হারনিয়া, হাঁটু, কোমরে ব্যথা-র ক্ষেত্রেও সামনে এবং পিছনে ঝুঁকে দাঁড়ানোর বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
নিয়মিত যোগাভ্যাস আমাদের লুকিয়ে থাকা সম্ভবনা গুলোকে সামনে নিয়ে আসে। শুদ্ধ দেহে শুদ্ধ মনে যোগাসন অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে দেহ- মন দু’এতেই পরমান্দ লাভ হয়।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।

----------- সানি মজুমদার
আবু ধাবি, ইউ এ ই
যোগাসন প্রদর্শিত চিত্র : শুভ্র মজুমদার

০ টি +০/-০