![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। সমাজ পরিবরতনে প্রত্যয়ী, দিকভ্রান্ত বাম রাজনীতির বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে, প্রতিবেশ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছি। মুনাফা নয় জীবন আগে, পরিবেশ বাচঁলে জীবন বাচঁবে। জীবন কে অর্থবহ করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রণয় কান্তির বৈঠক।
কবি ও শিক্ষক প্রণয় কান্তি চলে গেলেন ।
কার্সিনোমার সাথে যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়েছেন। ডা: হাবিবুর রহমান সহ অনেকেই অনেক চেষ্টা করলেন। শেষের তিন দিন তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। আগে তার কন্ঠ শক্তি শুনে আমি একবার বলেছিলাম স্যার - আপনার কন্ঠ শুনে কেউ আপনার অসুস্থতা বুঝতে পারবে না। খুব পরিস্কার করে শব্দ উচ্চারন করতেন। মিনমিন করে কথা বলা মানুষকে তিনি পছন্দ করতেন না।
মানুষ তার মত প্রকাশ করার ক্ষমতা হচ্ছে প্রথম স্বাধীনতা। আর বেশীর ভাগ মানুষ তা উপভোগ করতে জানে না। মানুষের হ্যা এবং না বলার ক্ষমতা বা মানসিকতা তাকে উন্নত করে। ঝামেলা মুক্ত করে। তিনি যা জানতে চাইতেন তা জানবার সর্বোত্তম চেষ্টা তিনি করতেন। কার্সিনোমা নিয়ে তার ছিল বিশদ পড়াশুনা। ডাক্তার কে তিনি তার রোগ নিয়ে যেভাবে বলতেন খুব।সহজেই ডাক্তার বুঝতেন। এই রোগীর জন্য আমার কিছু করার নেই কারন ইতিমধ্যে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ধাপ অতিক্রম করে মনোদোহিক গবেষনা ও শরীরের সাথে এক সুক্ষ্মদর্শী আদানপ্রদান নিয়মনীতি তৈরি করেছেন। একবার তিনি আমাকে বললেন স্বপন আমি বিরায়ানি খাব।আমি বললাম স্যার - আপনার শিক্ষা "তোমার খাবার কে তোমার ঔষধে পরিণত কর"
বিরায়ানী খাওয়াটা কি ঠিক হবে। তিনি বললেন শরীর একটা পরীক্ষা চাচ্ছে। তাকে তা করতে দাও।
এভাবে নিজের শরীরের সাথে মনঃসংযোগ প্রক্রিয়ায় তিনি বাঁচবার পদ্ধতি আবিস্কার করতেন।
মৃত্যু জ্ঞান তার কাছে তুচ্ছ ঘটনা মাত্র। প্রণয় কান্তি দেহ দান প্রসঙ্গ বললেন। আমার দেহ তো মেডিকেল ছাত্রদের কোনো কাজে আসবে না। জীর্ণশীর্ণ অন্ত্রহীন এই দেহ তাদের কে বিরক্ত করবে। আমি আমার মায়ের পাশে শুতে চাই। প্রকৃতি আমার দেহ সম্পদ আগেই কেড়ে নিয়েছে আর বাকী টুকু নিয়ে প্রকৃতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে চাই।
তার শেষ ইচ্ছে নিয়ে আমরা ডোমাখালির নাথ পাড়ায় পৌছলাম তখন গভীর রাত। সাথে আছে তার প্রিয়তমা স্ত্রী কবি অনুপমা তার আদরের মামনি আর শিষ্য ডা: আকাশ।
সুনসান সেই রাতে প্রকৃতি আমাদের প্রচন্ড অসহায় করে তুলেছে -নিথর আমাদের প্রণয় স্যার কি হাসছেন -না আমাদের ভালবাসা উপভোগ করছেন - আমি বেশকিছুদিন অনিত্যতায় ভুগছি - একদিন বললেন অনিত্যতার মধ্যে নিত্যতা ,অস্তিত্ব্বের মধ্যে অনিত্যতার অনস্তিত্ব, যেন তিনি বললেন - প্রাকৃতিক নিয়মের অনুবর্তিতায় ফিরে যাচ্ছি ।
অখন্ড ইচ্ছার সাথে নিজের খন্ড ইচ্ছার সরলরৈখিক মিলন ।
মায়ের কাছে দেহ দান কেন দাদা ? বললেন - মায়ের ভালবাসা সন্তানের প্রতি শুধুই দেহকেন্দ্রিক । তবে নিরবয়ব প্রেম অবয়ব তৈরি করে ।অবয়াবকৃতিই আমাদের জাগতিক প্রেম । শক্তির আকর্ষনে যুক্ত আবার বিকর্ষনে বিযুক্ত । এই শক্তির ঘনিভুত রুপ হচ্ছে প্রেম । তখন সে যা করে তাই ভালো লাগে । আমার মা বৈষ্ণব হয়েছিলেন । কৃষ্ণ বিলাপে ব্যাস্ত থাকতেন । আমি প্রচলিত ধর্ম বা আচার মানি না তা তিনি জানেন কিন্তু তিনি আমাকে ভালবাসেন কারন আমি তার দেহ ।
সেই নাথ পাড়ার উঠোনে পরে আছেন প্রণয় নাথ । বড় অনাদরে । তেমন কোনো আয়োজন নেই । সাড়া বাড়ী জুড়ে তেমন কোনো বিলাপ নেই । কবি পত্নী বিছানায় শুয়ে থাকা প্রাণ পতি কে ধরে কাঁদছেন ।ঠিক যেন কান্না নয় - অনেক জিজ্ঞাসা - অভিমান - কেন চলে গেলে কিছু না বলে । তাদের পারিবারিক বন্ধু হওয়ার কারনে জানতাম প্রণয় কান্তি ছিলেন তার কাছে জ্ঞানগুরু, প্রাণ নাথ ।
নরসিংধির সভ্রান্ত নাথ পরিবারের মেয়ে অনুপমা দেবনাথ সাধারন হিন্দু মেয়ে হয়েই তার ঘরে এসেছিলেন ।তাকে তিনি গড়ে তুলেছেন অনুপমা অপরাজিতায় ।
আলাপচারীতায় বলে ছিল প্রণয় কান্তির কাছেই তার চিন্তার পুর্নজন্ম।
তিনি বলতেন - বেশীর ভাগ মানুষ সমাজে লতার মত জড়িয়ে থাকে ।সে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না ।এবং লতার কান্ড হয় না ,তাই তার কান্ডজ্ঞানো হয় না ।
তুমি একটা গাছ হও ।তোমার কান্ড থাকবে । ডালপালা থাকবে ।যে দিকে আলোকরশ্মি সেই দিকেই তুমি বাড়তে থাকবে । তোমার ডালেই বসবে নানান পাখি ।
অনুপমা অপরাজিতার সেই প্রান পাখি প্রণয়নাথ নিথর দেহ নিয়ে কাদামাটির ঊঠোনে পড়ে আছে ।বৃষ্টি পড়েছে । বিছানার চাদর দিয়ে মোড়ানো প্রনয়দার বড় শখ ছিল বৃষ্টিতে ভেজা । তার কবিতায় তাই পাই-
বৃষ্টি এলে ভিজে নিয়ো
গাছেদের মতন
বৃষ্টি এলে সভ্যতা ফেলে
ভিজে হয়ো একাকার
রাঙ্গিয়ে নিয়ো অবুঝ মন
সবুজ তুলিতে -
ভালবাসা পেতে চাও
তো বৃষ্টিতে ভিজে নাও
আমি বৃষ্টিতে ভিজতে চাই
ঐ এলো বৃষ্টি - আমি তবে যাই
বৃষ্টিতে ভিজতে চাই ।
প্রকৃতির কাছে তার চাওয়া অপুর্ণ রইলো না । মিষ্টি বৃষ্টিরা তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে ।
ইতিমধ্যে কানাঘুষায় বুঝতে পারলাম - প্রণয় কান্তি ও তার স্ত্রী ধর্মকর্ম মানে না বলে নাথ পাড়ার সমাজ ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ বলছে স্ত্রীর হাতে শাঁখা সিধুর নেই স্বামীর সৎকাজ হবে কি করে- শুধুই মায়ের কাছে আসার জন্য নাথ পাড়ার অনাথদের এতো সুযোগ । এতো হট্টগোল দেখে মনে হলো প্রণয় বাবু নিজেই বলে উঠলেন ।
আমি কিছু বলতে চাই
আমার ক'টি কথা শুনুন
আহত বিক্ষত
বিস্মিত বিপন্ন
এক অদ্ভুত অস্তিত্ব আমি ।
আমায় একটু শান্তি দিন - বড় ক্লান্ত আমি - আমি জীবম্মৃত হয়ে আমার প্রিয়তমার শাঁখা সিধুর খুলে নিয়েছি - গেয়েছি -
আমি তোমারো সংগে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাধনে ।
তুমি জান না ,আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে ।।
©somewhere in net ltd.