নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

সাইয়িদ রফিকুল হক

আমি লিখি “দেশ, জাতি, মানুষ আর মানবতার” জন্য। আমার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমালোচনা আমার নিজস্ব ও মৌলিক রচনা। তাই, আমার অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো কপি বা নকল করা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা। জয় মানবের জয়।

সাইয়িদ রফিকুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা পরী-দেখার খুব শখ হয়েছিল আমার (প্রথম পর্ব)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২

ধারাবাহিক উপন্যাস:
একটা পরী-দেখার
খুব শখ হয়েছিল আমার
***(প্রথম পর্ব)***


সাইয়িদ রফিকুল হক

একটা পরী-দেখার খুব শখ হয়েছিল আমার। ছোটবেলায় আমার নিকট-আত্মীয়া-মহিলাদের কাছে বসে গালগল্প শুনতে-শুনতে খুব ইচ্ছা হয়েছিল যে, একটা পরীকে দেখবো।আর আমি তখন শুনেছিলাম, পরী নাকি দেখা দেখা যায়!আর পরী নাকি খুব সুন্দর!এইসব কথা শুনতে-শুনতে কানটা আমার প্রায় ঝালাপালা হয়ে গিয়েছিল।আর একরকম মুগ্ধ হয়ে সেই সময় আমার সেইসব আত্মীয়াদের কথা শুনতাম। তারপর আরও অনেকের মুখে এই পরীর কথা শুনেছি।তবে একটা কথা সত্য যে, সেই সময় পরীর কথা শুনতে-শুনতে আমার মনের ভিতরে পরী-সম্পর্কে একটা দৃঢ়-বিশ্বাস জন্মেছিল। আর আমি সবসময় ভাবতাম, পরী আছে। পরী মানুষের কাছে আসে। আর একদিন আমার কাছেও একটা পরী আসতে পারে। এই স্বপ্নে তখন আমি ছিলাম বিভোর। আর-একটু বড় হয়ে আত্মীয়-পুরুষদের মুখেও শুনেছি, পরী আছে। আর পরীরা খুব সুন্দর হয়!সেই থেকে আমার পরী-দেখার খুব শখ। আর এই শখটা আমাকে একেবারে পেয়ে বসেছিল। কতদিন ভাবতাম, একটা পরী কেন আমার কাছে আসে না। আর এখনই কেন আসে না।

কতোদিন, আর কতোদিন আমি ভেবেছি, একটা পরী একটা-রাতে আমার কাছে এসে আমাকে খুব ভালোবেসে ঘুম-ভাঙাবে।তখন আমি ভালোবাসার কোনো মানে বুঝতে শিখিনি। তবে একটা ব্যাপার বুঝতে পারতাম, পরীরা সুন্দর ছেলেদের খুব আদর করে, আর তাদের খুব ভালো বন্ধু হয়। আমার একজন ভালো-বন্ধুর খুব প্রয়োজন ছিল। তাই, আমি প্রায় রোজ-রাতে একজন পরীর স্বপ্ন দেখতাম। একজন পরী আমার কাছে আসবে। আর সে আমাকে খুব আদর করে দূরে কোথাও নিয়ে যাবে। আর সে আমার সকল দুঃখ বুঝবে। শুনেছিলাম, পরীরা নাকি রাতে চলাফেরা করে থাকে। দিনে তারা বের হয় না। তাইলে নাকি তারা মানুষের নজরে পড়ে যাবে।আর তারা হঠাৎ কোনো মানুষের নজরে পড়ে গেলে নাকি আর পরী থাকতে পারবে না। তারা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ হয়ে যাবে। তবে পছন্দের কেউ-একজন তাকে বারবার দেখলেও তার কিছু হবে না। এইসব আমার শৈশবে দেখা মানুষজনেরা আলাপ-আলোচনা করতো। আমার শৈশবে আমি তাদের মুখ থেকে যা শুনতাম তা-ই বিশ্বাস করতাম। আর এর পিছনে আসলে কোনো যুক্তিতর্ক আছে কিনা তা আমার তখনকার অতটুকু বয়সে কোনোপ্রকার ভাবনার উদ্রেক করেনি। আমি তখন সরল বিশ্বাসে একজন পরীর সান্নিধ্য চেয়েছি। আর একজন আপন-বন্ধু চেয়েছি।

আমার শুধু বারবার মনে হতো, পরী খুব সুন্দর! আর তাকে দেখতে হবে। আর তাকে ধরতে হবে। তারপর তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। এইসব ভাবতে-ভাবতে আমি কত রাত না ঘুমিয়ে ঘরের খোলা জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকতাম। আমার পায়ের দিককার দুটো জানালাই খোলা থাকতো। বিছানায় শুয়ে-শুয়ে আমি গভীর রাত পর্যন্ত এই জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকতাম। আর ভাবতাম: কখন পরী নামবে। আর কখন একটা পরী আমার কাছে আসবে! এমন অনেককিছু ভাবতে-ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম, তা আমার জানা হতো না। খুব ভোরে জেগে মনে হতো: পরী হয়তো এসেছিল। আর আমাকে ঘুমন্ত দেখে পরীটা হয়তো চলে গেছে। আর এজন্য মনে মনে আমার খুব আফসোস হতো। আসলে, আমার কোনো ভালো-বন্ধু ছিল না। আর আমি শৈশব থেকে আজ অবধি মানুষের ভালোবাসা পাইনি খুব একটা। মানুষের কর্কশ ও রূঢ় ব্যবহার আমাকে সবসময় মনমরা করে রাখতো। তাই, আমি একটু ভালোবাসার আশায় একটা পরীর জন্য এতোটা উন্মুখ হয়ে উঠেছিলাম। আর শুধু ভাবতাম: কবে একটা পরীর দেখা পাবো। আর সে কবে আমাকে একটুখানি ভালোবাসবে! আর সে আমাকে ভালোবেসে তাদের রাজ্যে নিয়ে যাবে!

আরও অনেক আজব কথা শুনতাম ছোটবেলায়। গ্রাম্যজনেরা বলতো, সুন্দর ছেলেদের কাছে নাকি পরী আসে। কথাটা বলতে এখন আমার একটু সংকোচ ও লজ্জাবোধ হচ্ছে, আর তবুও বলতে হচ্ছে যে, ছোটবেলায় আমি দেখতে একটু সুন্দর ছিলাম। একদম ফর্সা ছিলাম আমি। আর দোহারা গড়ন ছিল আমার। তাই, পরী দেখার বিশ্বাসটা আমার একদম বেড়ে গিয়েছিল। আমি খুব বিশ্বাস করতে লাগলাম যে, একটা পরীর সঙ্গে আমার একদিন দেখা হয়ে যাবে। আর আমি তো না-দেখেই পরীদের ভালোবেসে ফেলেছি। তারাও হয়তো আমাকে একদিন ভালোবাসবে। একদিন একটা পরী আমার কাছে আসবে। আর আমাকে একটুখানি ভালোবাসবে।

এইসব ভাবতে-ভাবতে আমি একদিন হাইস্কুলে উঠে গেলাম। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়, আমি একদম পাড়াগাঁয়ে ছিলাম। আর তখন গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে অবাধে মিশেমিশে আমার খুব মাছধরার নেশা হয়ে গিয়েছিল। এমনকি গ্রাম্য-ছেলেদের কুসঙ্গে মিশে আমি জেলেদের মতো জাল বুনতে পর্যন্ত শিখেছিলাম। তখন এইসব করতে আমার খুব ভালো লাগতো। আর তখন থেকেই আমি স্কুলফাঁকি ও পড়াশুনায় বড় ধরনের ফাঁকি দিতে শিখেছিলাম। আর কাজটা যে ভুল ছিল, এখন তা হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছি।

মাছধরার নেশাটা যে এতো বাজে, তা আগে বুঝিনি। আর এটা এমন একটা বাজে-নেশা যে, এর পাল্লায় পড়ে যে-কোনো মানুষ অনায়াসে গোল্লায় যেতে পারে। আমার হয়েছিল সেই দশা। তখন আমি মাছের নেশায় রাত-বিরাতে যেখানে-সেখানে অনায়াসে চলাফেরা করতাম। আর নিজেকে ভাবতাম বিরাট-কিছু। ভূতের ভয় পর্যন্ত তখন আমার ভাঙ্গেনি। কিন্তু এই মাছধরার নেশায় পড়ে আমি সেসব পর্যন্ত ভুলে গেলাম। আর মাছের নেশা আমাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াতো।

আবারও বলছি, আমি তখন দেখতে একটু সুন্দর ছিলাম। পাড়ার অনেকে তা-ই নিয়ে অনেক বলাবলি করতো। আর তা শুনে আমি খুব লজ্জা পেতাম। আমি একটু মুখচোরা-স্বভাবের ছিলাম তখন। তা-ই পরীদেখার বিষয়টা আমি তখন কাউকে জানতে দেইনি। কিন্তু পরীদেখার নেশাটা আমাকে তখন মারাত্মকভাবে পেয়ে বসেছিল। আর একটা পরীকে দেখার জন্য আমি খুব উন্মুখ হয়েছিলাম। আর এই মাছের নেশায় পড়ে আমার সেই ভাবনাটা আরও পেয়ে বসলো।
রাতে মাছধরাটা কম হলেও কিছু-কিছু উপায়ে শুধু রাতেই মাছধরা যায়। আমি সেই পন্থাটা বেছে নিলাম। বড়-বড় বড়শি দিয়ে বড়-বড় শোল-গজার-বোয়াল ইত্যাদি ধরার চেষ্টা করতে লাগলাম। আর এই সুযোগে রাতে যখন-তখন ঘরছেড়ে বাইরে এসে দাঁড়াতাম। কতো রাতে আমি বোকার মতো বর্ষাকালে, একদম পানিতে চারদিকটা থৈ-থৈ করা অবস্থায় ঘরছেড়ে অনেক দূর চলে আসতাম। আর মাছের নেশায় সবকিছু ভুলে যেতাম। তবে এই সময় ভয় তেমন করতো না। কারণ, আকাশে একটু-না-একটু চাঁদের আলো থাকতো। আর খুব অন্ধকার হলে সেক্ষেত্রে একটা পেন্সিল টর্চ নিয়ে বের হতাম। অনেক সময় টর্চের ব্যাটারি না থাকলে আমি হ্যারিকেন নিয়েই বেরিয়ে পড়তাম। সে যে কী এক নেশা, তা বলে-বলে আমি আপনাদের বোঝাতে পারবো না। চারদিকটা অন্ধকারে একেবারে ঘুটঘুট করছে। আর এর ভিতরেই সামান্য একটা লণ্ঠন জ্বেলে আমি মাছের সন্ধানে। এখন তা ভাবলেও ভয়ে আমার গা শিউরে ওঠে!


(চলবে)


সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.