নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

সাইয়িদ রফিকুল হক

আমি লিখি “দেশ, জাতি, মানুষ আর মানবতার” জন্য। আমার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমালোচনা আমার নিজস্ব ও মৌলিক রচনা। তাই, আমার অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো কপি বা নকল করা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা। জয় মানবের জয়।

সাইয়িদ রফিকুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাকির সাহেব এখন সুখীমানুষ (জীবনের গল্প)---"ছোটগল্প"

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪

জাকির সাহেব এখন সুখীমানুষ (জীবনের গল্প)
সাইয়িদ রফিকুল হক

মসজিদে মাগরিবের নামাজ-শেষে তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য জাকির সাহেব সবেমাত্র মসজিদের বারান্দা পর্যন্ত এসেছেন, এমন সময় তার ডান-হাতটা খপ করে ধরে বসলো তাবলীগ-জামাতের স্থানীয় আমীর।এতে জাকির সাহেব খুব ঘাবড়ে গেলেন।এবং এর হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মনে-মনে একটা উপায় খুঁজতে লাগলেন।আর উপায় তিনি একটা পেয়েও গেলেন।কিন্তু সেটা এখন প্রয়োগ করা ঠিক হবে কিনা তা তিনি আপনমনে কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিলেন।
আর আমীর লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ভাই, খুব অসুবিধায় আছি এখন।আজ আর মসজিদে বসতে পারবো না।” বলে তিনি নিজের হাতটা মাঝবয়সী আমীরের হাতের মধ্য থেকে অনেকক্ষণ ছাড়াবার চেষ্টা করলেন।কিন্তু পারলেন না।তিনি আরও কিছুক্ষণ লোকটাকে অনুরোধ করলেন।তবুও লোকটা তাকে ছাড়ছে না।একসময় আমীরের এই ব্যবহারে জাকির সাহেবের মনে ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠলো।কিন্তু ওই পর্যন্তই।তিনি আবার একনিমিষে একদম ঠাণ্ডা হয়ে গেলেন।আসলে, জাকির সাহেব সাংঘাতিক-রকমের ঠাণ্ডামানুষ।তার রাগ শুধু মনে-মনে।আর তিনি তার এই রাগ কখনও কারও ওপর প্রয়োগ করেন না।

তাবলীগ-জামাতের আমীর খোরশেদ মোল্লা কিছুতেই আজ জাকির সাহেবের হাত ছাড়তে রাজী হচ্ছে না।এতে কিছুটা বিচলিত হলেন জাকির সাহেব।কারণ, সময়মতো বাজার নিয়ে বাসায় ঢুকতে না পারলে তার কপালে আজ শনি আছে।
স্থানীয় আমীর লোকটা তবুও জাকির সাহেবের হাত ছাড়ছে না।এরা এমনই।এরা মানুষের আপদবিপদ সময়-অসময়, ভালো-মন্দ কোনোকিছুই বোঝে না।এরা নেশাগ্রস্ত-মানুষের মতো তাদের নেশার দিকে আহ্বান করতে থাকে।এটা একরকম ধোঁকাবাজি।এরা মানুষকে বশ করার জন্য মানুষের হাত-পা টিপতে থাকে।আরও কতোরকমের উপাচার যে এদের জানা আছে, তা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না।

কিন্তু জাকির সাহেব এখন ছাড়া পাওয়ার জন্য তার কাছে বহু অনুনয়বিনয় করতে লাগলেন।তবুও লোকটা তাকে ছাড়ছে না।শেষে তিনি বললেন, “ভাই, আমি একটু আগে অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি।নামাজ পড়েই এখন বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিলাম।আমাকে আজকের মতো ছাড়েন।”
তবুও সেই আমীর জাকির সাহেবকে বললো, “দ্বীনের মেহনত এরচেয়ে জরুরি।আর বিবি-বাচ্চার মহব্বত বেশি না করাই ভালো।এগুলো আখেরি জামানার বহুত ফিতনা-ফাসাদ।”
অথচ, তিনি নিজেও কিন্তু বিবাহ করেছেন, আর তার তিন মেয়ে, আর এক ছেলেও রয়েছে।আর খাওয়া-দাওয়ার সুবিধার্থে তার নিজের ঘরে ব্যবহারের জন্য দুই-দুইটা ফ্রিজও রয়েছে।আর সে-গুলো এখন তাজা-তাজা শাকসবজি, ফলমূলে ও মাছ-মাংসে একেবারে পরিপূর্ণ।
জাকির সাহেব তাদের সঙ্গে তাবলীগের কাজে চিল্লা-টিল্লা দেন না।তবুও তারা মাঝে-মাঝে এই নিরীহ লোকটাকে সবসময় জোর করে তাদের আসরে বসায়।আর জোর করে বয়ান শোনায়।এতে নাকি বহুত ফায়দা হবে।কিন্তু আজ তার বাড়াবাড়িটা একটু বেশি হচ্ছে কিনা, সেদিকে এই আমীর লোকটার কোনো খেয়ালই নাই।

শেষে জাকির সাহেব কোনো উপায়অন্তর না-দেখে একটু কড়াভাবে বলতে বাধ্য হলেন যে, “আমাকে এখন বাজারে যেতেই হবে।আপনি আমার হাত ছাড়েন।”
এতে লোকটা একটু দমে যায়।আর জাকির সাহেবের হাত ছেড়ে দিয়ে কোনো-কথা না-বলে একদিকে চলে গেল।এতে জাকির সাহেব এবার খুশিই হয়েছেন।
জাকির সাহেব যেন অক্টোপাসের হাত থেকে ছাড়া পেলেন।তিনি আর কালবিলম্ব না করে দ্রুত মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলেন।ভয়ে আর কোনোদিকে তাকালেন না।আবার কেউ যদি তাকে এসে ধরে!

বাজারে ঢুকে জাকির সাহেব স্বস্তি পেলেন না।তিনি শাকসবজি যাও বা সহজেই কিনতে পারলেন, কিন্তু মাছ কিনতে দেখা দিলো বিপত্তি।এখানটায় অন্ধকার।ভালোভাবে তেমনকিছু যেন দেখা যাচ্ছে না।আর এই সুযোগে মাছওয়ালারা তাকে পচামাছ ধরিয়ে দিতে পারে।তিনি দেখেশুনে মাছ-বাছতে শুরু করলেন।শেষে একজনের কাছে কিছু গুঁড়া-চিংড়ি ও বড় পুঁটিমাছ দেখে তার কাছে ভালো মনে হওয়ায় তিনি তা কিনে ফেললেন।তারপর কারও সঙ্গে কোনো কথা বলে, লোকচক্ষুর দৃষ্টিকে এড়িয়ে সোজা বাসার দিকে রওনা হলেন।
তিনি সরকারি চাকরি করেন।তাই, বহুকষ্টে একটা সরকারি-বাসা “অ্যালোট” করাতে পেরেছেন।এই বাসাটা সুন্দর হলেও জাকির সাহেবের মনে আনন্দ কম।

বাসার সামনে এসে তিনি সব জিনিস সঙ্গে আছে কিনা দেখে নিয়ে দরজার কড়া নাড়লেন।দরজা খুলে দিলো তার কনিষ্ঠপুত্র।তিনি একটা ব্যাগ ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাকীটা নিজের হাতে রেখে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়লেন।আর এখন তার মনে একটা আতঙ্কভাব বিরাজ করতে লাগলো।

মিনিটখানেক পর তার স্ত্রী ভিতর রুম থেকে বেরিয়ে এসে সব জিনিসপত্র দেখেশুনে-বুঝে নিচ্ছিলো।এমন সময় মাছের ব্যাগটা খুলে সে বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠলো।আর স্বামীর উদ্দেশ্যে চিৎকার ও চেঁচামেচি জুড়ে দিলো।মুখঝামটা দিয়ে বলতে লাগলো, “এইসব মাছ তুমি কুটবা।আমি এখন মাছ কাটতে পারবো না।রাতে আমি মাছ কাটি না।এসব তো তোমার জানার কথা।এমনিতে সারাদিন রান্নাবান্না করতে-করতে আমার জীবনটা প্রায় শেষ!আমি...।”
জাকির সাহেব তাকে বাধা দিয়ে শান্তকণ্ঠে বললেন, “না, তোমাকে মাছ কুটতে হবে না।আচ্ছা, আমিই মাছ কুটবো।বলে তিনি রান্নাঘর থেকে বটিটা খুঁজে নিয়ে ডাইনিং-স্পেসে বসে সত্যি-সত্যি মাছ কুটতে শুরু করে দিলেন।এরকম প্রায়ই-আজকাল তাকে মাছ কুটতে হচ্ছে।বউটা দিন-দিন কেমন যেন বদরাগী হয়ে উঠছে।আগে যে খুব একটা ভালো ছিল তাও জাকির সাহেব ভাবতে পারলেন না।তবে ইদানীং সে যেন একটু বেশি বেপরোয়া।দিনের বেলায়ও সে এখন মাছ কুটতে চায় না।ছুটির দিন হলে সে হম্বিতম্বি করে জাকির সাহেবকে দিয়েই মাছ কুটাতে বাধ্য করে।আর জাকির সাহেবও সংসারের শান্তি বজায় রাখতে অম্লানবদনে স্ত্রীর এইসব অনাচার-অত্যাচার মুখবুজে সহ্য করছেন।
জাকির সাহেব মাছ কুটছেন।তবুও তার স্ত্রী পাশ দিয়ে বারবার হাঁটছে আর নানারকম আজেবাজে কথা বলছে।জাকির সাহেব যে এই দুনিয়ার একনাম্বার বোকামানুষ, তা তার স্ত্রী এইমাত্র মুখঝামটা দিয়ে অন্তত বিশ-পঁচিশবার বলে ফেলেছে।তারপরও সে থামছে না।
জাকির সাহেব এর কোনো মানে খুঁজে পেলেন না।তিনি জানেন, দুনিয়ার সব মানুষের বউই বদরাগী না হলেও মিষ্টিভাষী নয়।তবে তার বউটা যে বেশি বদরাগী, তাতে তার মনে কোনো সন্দেহ নাই।অনেক সময় জাকির সাহেবকে রান্নাও করতে হয়।এইতো কিছুদিন আগে জাকির সাহেবের এক ফুপাতো ভাই গ্রাম থেকে এলো।কয়েকদিন এখানে থাকবে।তার নাকি একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে।এতে জাকির সাহেব খুশিই হলেন।হাজার হলেও আপন-ফুপাতো ভাই।তাকে কি অস্বীকার করা যায়?কিন্তু বিপত্তি বাধলো তার স্ত্রীকে নিয়ে।সে কিছুতেই সেই ছেলেটিকে বাসায় থাকতে দিবে না।আর সে বাসায় থাকলেও তাকে রান্না করে খাওয়াবে না।অগত্যা জাকির সাহেব নিজেই তার ফুপাতো ভাইকে রান্না করে খাওয়ালেন।তিনি কিন্তু এজন্য কখনও বাসায় চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি।
আজও জাকির সাহেব মনোযোগ দিয়ে মাছ কুটছেন।এমন সময় তার স্ত্রী একটা মোড়া টেনে তার সামনে বসলো, আর তাকে নানারকম সাজেশন দিতে লাগলো।আর মাঝে-মাঝে জাকির সাহেবকে বারবার বর্তমান সমাজের একজন অচল মানুষ হিসাবে অভিহিত করতে লাগলো।তা-না-হলে এই সংসারে এসে সে কতবড় পাপ করেছে!তার মতো মহিলার নাকি এই সংসারে মানায় না।শুধু তিনটি ছেলে-মেয়ের জন্ম দিয়েছে বলে নাকি রক্ষা!নইলে সে কবে চলে যেতো এই ভূতুড়ে-সংসার ছেড়ে।এরকম সে আজকাল প্রায়ই বলে থাকে।

জাকির সাহেব ছেলে-মেয়েদের দিকে চেয়ে স্ত্রীকে কিছু বলতে পারেন না।কারণ, এই অবিবেচক মহিলা যদি তার সন্তানদের ফেলে চলে যায়, তাহলে হবে আরেক বিপত্তি।তাই, তিনি এই উটকো ঝামেলা পোহাচ্ছেন।আর তাকে ভীষণ ঠাণ্ডামানুষ পেয়ে তার স্ত্রী সময়ে-অসময়ে তার পিঠের ছাল ছাড়িয়ে নিচ্ছে।সবকিছু সয়ে জাকির সাহেব বাইরে হাসেন, আর ভিতরে শুধু কাঁদেন।
জাকির সাহেবের মেয়েটি বড়।তারপর দুই ছেলে।মেয়েটি সরকারি স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে।সে এখন সবকিছু বোঝে।আর সে তার বাবাকে খুব ভালোবাসে।আর এজন্য তার মা তাকে সারাক্ষণ গালমন্দ করতে থাকে।
জাকির সাহেবের চোখে তার মেয়েটি দুনিয়ার সেরা মেয়ে।তার নাম তাপসী।আর সে কাজেকর্মেও যেন তাপসী।তার ব্যবহার খুব সুন্দর।
মেয়েটি বাবার মাছ কুটা দেখে মনে-মনে খুব কষ্ট পাচ্ছে।তাই, সে পড়াটা বন্ধ করে বাবার কাছে এসে বললো, “দাও বাবা, আমি মাছ কুটি।তুমি একটু বিশ্রাম করগে।”
কথাটা শোনামাত্র রওশনআরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো, “ইস বাপের জন্য দরদ কতো!বোকা মেয়ে!পড়া ফাঁকি দিয়ে কাজ করতে এসছে।যাঃ ভাগ।পড়গে যাঃ।
মেয়েটি তবুও যায় না।বাপের দুঃখ দেখে সেখানেই সে অটল-পর্বতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।আর তার জলভরা চোখ দুটি ছল ছল করতে থাকে।
পুনরায় মায়ের কড়া ধমকে মেয়েটি আর কিছু বলতে পারলো না।সে জানে, তার মা এইব্যাপারে কতদূর যেতে পারে।শেষে বাবাকে আরও বেশি গালমন্দ করবে।
তাই সে ধীরে-ধীরে আবার পড়ার রুমে চলে গেল।
জাকির সাহেবের দুঃখ এখন কিছুটা কমে এসেছে।মেয়েটি যে তাকে ভালোবাসে।আর সে যে তার কষ্ট দেখে ছুটে এসেছে।তা দেখে তিনি মাছ কুটতে-কুটতে মেয়েটির জন্য দোয়া করতে লাগলেন।আর তিনি মনে-মনে আশীর্বাদ করলেন, মেয়েটি যেন তার মায়ের মতো না হয়ে তার দাদীর মতো হয়।
একসময় জাকির সাহেবের চোখে জল চলে আসে।তিনি বহু কষ্টে তা সংবরণ করলেন।
তার এখন ভালো লাগছে।ছেলে-মেয়েগুলো মায়ের মতো হয়নি।সবাই দোয়া করে সন্তানেরা মায়ের মতো হোক।আর জাকির সাহেব দোয়া করেন, ওরা যেন কখনও ওদের মায়ের মতো না হয়।

জাকির সাহেবের মাছ কুটা একসময় শেষ হয়।তিনি সব মাছ সুন্দরভাবে ধুয়েও ফেললেন।আর সেখান থেকে রান্নার জন্য কিছু রেখে বাকীগুলো ফ্রিজে ভরে রাখলেন।
এই সময় তার স্ত্রী টিভি ছেড়ে মনের আনন্দে “ছায়াছবির” গান শুনতে লাগলো।
জাকির সাহেব কোনো-কথা না-বলে চুলায় ভাত চাপালেন।তিনি বুঝলেন, রাগে সে আজ ভাতও রাঁধবে না।তাই, তার আশায় না থেকে তিনি নিজেই এই কাজটি করলেন।আর তিনি ফাঁকে-ফাঁকে ছেলে-মেয়েদের পড়া দেখিয়ে দিতে লাগলেন।

মেয়েটি বুদ্ধিমতী হওয়ায় জাকির সাহেব খুবই আনন্দিত।আর এজন্য তিনি বেশি-বেশি আল্লাহতাআলার শুকরিয়া আদায় করেন।এই মেয়েটি তার অন্য দুই ভাইকে আদর করে পড়ালেখা দেখিয়ে দেয়।আর এজন্য জাকির সাহেবকে প্রাইভেট শিক্ষক রাখতে হচ্ছে না।ওদের সবকিছু এই মেয়েটি দেখছে।এতে জাকির সাহেব ভীষণ নিশ্চিন্ত।আর তার মাঝে-মাঝে মনে হয়, এই মেয়েটি যেন তার মা।আর নয়তো তার মা হয়েই এই মেয়েটি তার ঘরে এসেছে।
স্ত্রীর অনাদর-অত্যাচার এই মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়েই তিনি নীরবে সহ্য করেন।আর এই মেয়েটি যেন তার সারাজীবনের তপস্যা।
ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ভালোভাবে চলছে।তবুও জাকির সাহেব সবাইকে উৎসাহ দেন।এতে ওরা যেন আরও ভালোভাবে পড়ালেখা করতে পারে।তিনি সবসময় মন থেকে চাচ্ছেন: ওরা মানুষ হোক।ওরা বিনয়ী হোক।আর ওদের সবারই ব্যবহার হোক মধুর মতো।

রাতে খাবারের সময় জাকির সাহেবের স্ত্রী রওশনআরা চেঁচিয়ে উঠলো, “ছিঃছিঃ কী ভাত রান্না করেছে, এই অপদার্থ লোকটা।এ-কি মানুষ খেতে পারে?কেমন নরম!মনে হচ্ছে যেন পায়েস-টায়েস।”
কিন্তু ছেলে-মেয়েরা কেউ তার সঙ্গে সুর-মেলালো না।বরং তাপসী বললো, “মা, ভাত তো সুন্দর হয়েছে!একেবারে ঝর-ঝরে না হোক, অনেক সুন্দর ভাত!”
আর জাকির সাহেব নীরবে খেয়ে যাচ্ছেন।রাতে তিনি কম খান।আর তিনি খুব আস্তে-আস্তে খান।তাই দেখে তার স্ত্রী ফোঁড়ন কেটে বলতে লাগলো, “পুরুষ মানুষ মহিলাদের মতো খাবে কেন!তারা খাবে তাড়াতাড়ি।নইলে আবার পুরুষ কীসের!”
এবার মেয়েটি বললো, “মা, তুমি আর-একটি কথাও বলবে না।তুমি সবসময় বেশি কথা বলো।আর বাবার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করো।এটা ঠিক না।তুমি যদি আবার এরকম করো, তাহলে আমরা তিনজনে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো।”
মেয়েটির উত্তেজিত-ভাব দেখে রওশনআরা আর-কিছু বলার সাহস পেলো না।তবে ওদের দিকে চেয়ে বেআদব বলে গালাগাল দিতে লাগলো।আর সবশেষে সে খাওয়া ছেড়ে উঠে একদিকে চলে গেল।

জাকির সাহেবের ছেলে-মেয়েরা মনমরা হয়ে খাচ্ছিলো।মায়ের চলে যাওয়া দেখে তাপসী আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো।জাকির সাহেব তা দেখে হাত তুলে ইশারায় মেয়েকে আর-কিছু বলতে নিষেধ করলেন।তার চোখে প্রায় জল এসে গেছে।তিনি ভাবছেন: মেয়েটি তাকে কতো ভালোবাসে!
জাকির সাহেব এবার ধীরে-ধীরে তাপসীকে বললেন, “শান্ত হও মা, শান্ত হও।তোমাকে অনেক বড় হতে হবে।আজ আমার সমস্ত দুঃখ তুমি দূর করে দিয়েছো।আজ থেকে আমার আর-কোনো কষ্ট থাকবে না।আমি এই জীবনে তোমার মতো একজন মা পেয়েছি।আমার সারাজীবনে এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কী আছে?”

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০১

চলেপথিক বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন , বাস্তব অর্থে সমাজে জাকির সাহেবদের মত প্রচুর মানুষ রয়েছে আবার খুরশেদ মোল্লাদেরও মত মানুষদেরও আভাব নেই ।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৭

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আর আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৩

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: আহা বেচারা নির্যাতিত পুরুষ ।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: সুন্দর মতপ্রকাশের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। আমার ব্লগে আপনাকে সুস্বাগতম।

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪

মিথুন আহমেদ বলেছেন: মুস্কিল হল এই ধরণের মহিলাদের উত্তম মধ্যম দিয়ে লাইনে আনতে চাইলে জেলের ঘানি টানতে হয়।

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০২

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। আপনার মন্তব্য সুন্দর হয়েছে। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সঙ্গে থাকছে একরাশ শুভেচ্ছা। আর শুভকামনা আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.