নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

সাইয়িদ রফিকুল হক

আমি লিখি “দেশ, জাতি, মানুষ আর মানবতার” জন্য। আমার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমালোচনা আমার নিজস্ব ও মৌলিক রচনা। তাই, আমার অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো কপি বা নকল করা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা। জয় মানবের জয়।

সাইয়িদ রফিকুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখন বুদ্ধিজীবী-নামধারী দালালদের খপ্পরে! জাতি এর থেকে মুক্তি চায়।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৬

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখন বুদ্ধিজীবী-নামধারী দালালদের খপ্পরে! জাতি এর থেকে মুক্তি চায়।
সাইয়িদ রফিকুল হক

আগে দেখতাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে, বিশেষ করে ঢাকার গুলিস্তানে একটা জায়গায় কিংবা কয়েকটা জায়গায় মানুষের খুব ভিড়। মানুষের জটলা। মানুষগুলো উৎসুক-দৃষ্টি মেলে চারদিকটা ঘিরে দাঁড়িয়েছে। আর সেখানে একজন লোক টেপরেকর্ডার নিয়ে বা টেপরেকর্ডার বাজিয়ে কিছু ছবি দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সে মুখে কিছুই বলছে না। শুধু মাঝে-মাঝে আঙ্গুলের ইশারায় বিভিন্ন ছবি দর্শকদের দেখিয়ে দিচ্ছে। আর টেপরেকর্ডারে একজন খুব বিজ্ঞের মতো কথা বলছে। আর মনে হচ্ছে: এই লোকটি দুনিয়ার সবচেয়ে জ্ঞানী। আর সে সবজান্তা। মানুষগুলো বোকার মতো তার কথা খুব মন দিয়ে শুনছে। ওই লোকটির আসল উদ্দেশ্য কিন্তু বিভিন্ন যৌনবিষয়ক বা স্বাস্থ্যবিষয়ক ট্যাবলেট-ক্যাপসুল-গাছগাছড়ার ঔষধ ইত্যাদি বিক্রয় করা। আর এইসব বিক্রয় করার জন্যই তো সে এতো-এতো লেকচার দিচ্ছে। আর মানুষকে জোর করে সে-ই লেকচার গুলিয়ে খাওয়াচ্ছে। এভাবেই একসময় আমাদের দেশের ফুটপাতের হকার বা ক্যানভাসাররা বিভিন্ন কায়দায় নতুন-পুরাতন কবিরাজীঔষধ বিক্রয় করতো। এইসব হকারদের প্রশিক্ষণ দিতো বিভিন্ন রকমের “ফোর-টোয়েনটি-কোম্পানী”। এরাই তাদের বাতিল-মাল সহজ-সরল-ভালোমানুষদের গলায় গছিয়ে দেওয়ার জন্য হাটে-বাজারে, শহরে-বন্দরে, গুলিস্তানে ক্যানভাসার নিয়োগ করতো।
কালের বিবর্তনে এগুলো এখন অনেক কমে গেছে। আস্তে-আস্তে হয়তো এগুলো একসময় শেষ হয়েই যাবে। কিন্তু শিক্ষকদের আবার এই কাজে নিয়োজিত করা হবে নাতো! সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে: “মাল্টিমিডিয়া-ক্লাস-রুমের” নামে শিক্ষকদের মুখটি বন্ধ করে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে কারও-কারও প্রেসক্রিপশন। আর তা-ই দেখে ক্লাসরুমে শিক্ষক পড়াবেন।
শিক্ষা কোনো পণ্য নয়। এখানে ক্যানভাসের কোনো প্রয়োজন নাই:
একসময়কার হকাররা নিজেদের পণ্যবিক্রয়ের জন্য রাস্তা-ঘাটে আবোলতাবোল, আজেবাজে, আলতুফালতু ও চটকদার কথা বলতো। আর নিজেদের স্বার্থেই তাদের এতো কথা বলতে হতো। এগুলো ছিল ধোঁকাবাজি। চাপাবাজি। ধাপ্পাবাজি। চালবাজি। কিংবা ফেরেববাজি। বর্তমানে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে এই ফেরেববাজি আক্রমণ করেছে। আর তাই, “ডিজিটাল-ক্লাস-রুম” বা “মাল্টিমিডিয়া-ক্লাস-রুমের” নামে শিক্ষার্থীদের যন্ত্রনির্ভর করে গড়ে তোলার চক্রান্ত হচ্ছে। এখানে ছবি বা চার্ট প্রদর্শন করার জন্য খুব বেশি বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। আর ভাবখানা এমন যে, ছবি বা চার্ট দেখালেই একজন শিক্ষার্থী রাতারাতি বা একদিনেই লাটসাহেব হয়ে যাবে! আর-কিছু বুঝি লাগবে না?
শিক্ষকদের কার্যক্রম সংকুচিত হলে দেশে অসৎ-নাগরিকের সংখ্যা আরও বাড়বে:
আমাদের দেশে আগে বিজ্ঞানী ছিলেন। বড়-বড় সাহিত্যিকও ছিলেন। আর এখন সবই শূন্য মনে হয়। এখন যারা আছে তারা আত্মমহিমাপ্রচারে সদাসর্বদা ব্যতিব্যস্ত। গায়ের জোরে একজন সচিবও এখন রাতারাতি কবি হয়ে যায়। গায়ের জোরে তার কবিতা-অখাদ্য এখন পাঠ্যতালিকায় স্থান পায়। কিন্তু সাধারণ পাঠক তার কবিতা পড়েও না। এমনকি একবার চেখেও দেখে না। এরা এখন সরকারের উচ্চপদস্থ সরকারি-কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে বড় কবি! এরা বাঘ নয়, কাগুজে বাঘ! এরা কবি নয়, অকবি। তবুও এতেই তাদের তৃপ্তি!
দেশের স্বার্থপর-সচিবগুলো সব ব্যাপারে নাক-গলাচ্ছে। এদের যে-বিষয়ে পড়ালেখা নাই, কিংবা এরা যা জানে না, তাও এরা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এইসব উদ্ভট-জাতের সচিব ও তৈলবিশারদ-অধ্যাপক সাহেবরা কখনও নিজেদের মতো করে, আবার কখনও বিদেশীফর্মুলা মোতাবেক দেশের শিক্ষাকে মোয়া-মুড়কি বানাচ্ছে, আবার কখনও ঝালমুড়ি বানিয়ে ফেলছে। তাদের ভাবখানা এই: তারা যা বলবে, আর যা ভাববে তা-ই সবাই মানতে বাধ্য। এরা নিজেরা কতোটা যে গাধা, তা এরা আজও জানে না। আর এদের হাতেই এখন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। একবার ভাবুন, এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কী? তাদের হাতে শুধু সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিলেই বুঝি জাতির দায়িত্ব শেষ! তাদের আর-কিছু লাগবে না? এইসব অর্বাচীনের হাতে পড়ে দেশের ছাত্রসমাজ ও শিক্ষকসমাজ উভয়েই অতিষ্ঠ। এইসব আঁতেল-মার্কা শিক্ষাবিদ ও সচিবরা জাতির জীবনে অশনী সংকেত ডেকে আনছে। এরা নিজেদের বস্তাপচা ও উদ্ভট সৃজনশীলপদ্ধতির শিক্ষার নামে জনজীবনে এক বিরাট অভিশাপ ডেকে এনেছে। আর তাই, এখন যে-কেউ পরীক্ষা দিলেই এ+! আর চিন্তা কী?
শিক্ষার মূলউদ্দেশ্য:
শিক্ষার মূলউদ্দেশ্য হলো: মানুষকে মানুষ হতে সাহায্য করা। আর মানুষকে মানুষের মতো করে গড়ে তোলা। আর এই গুরুদায়িত্ব যিনি পালন করবেন, তিনিই শিক্ষক। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের অধিকার দিতে হবে। আর তাদের সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে। আর সমাজের দুই-একজন শিক্ষক-নামধারী নরপশু কোনো অনৈতিক কাজ করলে তার জন্য গোটা শিক্ষকসমাজকে কোনোভাবেই দায়ী করা যাবে না।
একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে মন-খুলে পড়াবেন। পড়ানোর বিষয়টিকে আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী করতে তিনি তার হাতের কাছে পাওয়া সহজ-উপকরণ ব্যবহার করবেন। এটিই যথেষ্ট। একটি ক্লাসের সময়সীমা মাত্র ৪০-৪৫ মিনিট। এখানে, যদি একজন শিক্ষক ভিডিও বা ছবি প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে শিক্ষার্থীরা উক্ত শিক্ষকের পাঠসংশ্লিষ্ট আলোচনা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই, শিক্ষাবিস্তারের নামে অতিরিক্ত শিক্ষা সহজলভ্য করার জন্য সর্বক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া-ধারণাটি বাদ দিতে হবে। আর মনে রাখতে হবে: এখানে শিক্ষক কোনো হকার না। তিনি শুধু রাতদিন ইন্টারনেট থেকে নানারকম ছবি ও ভিডিও ডাউনলোড করে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করলেই তারা মানুষ হয়ে যাবে! এধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। দেশের কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী-নামধারী টাউট-বাটপাড় আর বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের নামধারী অর্বাচীন-বুদ্ধিবিক্রেতারা যে “সৃজনশীলপ্রশ্নপদ্ধতির” ধারণা দিয়েছেন, তা একেবারে ভ্রান্ত। এই সৃজনশীলপ্রশ্নপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি বই-বিমুখ হচ্ছে। এখন পড়ালেখা না করেও ভালো নম্বর কিংবা অতিসহজে এ+ পাওয়া যায়! কারণ, বর্তমান সৃজনশীলপ্রশ্নপদ্ধতিটি একেবারে ভ্রান্ত। এখানে, যে-ধরনের উত্তর লেখার নিয়ম চালু করা হয়েছে তা খুবই সহজ। আর বহুনির্বাচনী বা অবজেকটিভ প্রশ্নের যে ৩০-৪০ নম্বর রাখা হয়েছে, তাও ভ্রান্ত।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা রচিত হবে দার্শনিকস্তরের বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা। যাঁরা সত্যিকারের শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, দার্শনিক, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী তাঁদের সমন্বয়ে গঠিত হবে “কারিকুলাম-কমিটি”। দেশের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি তাঁরাই তৈরী করবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এখানে এইজাতীয় ব্যক্তিত্বের পরিবর্তে পা-চাটা-দালাল ও দালাল-স্তরের পাপিষ্ঠ-পামরদের দ্বারা দেশের শিক্ষাক্রম প্রণীত হচ্ছে। এরা এদের ইচ্ছেমতো, মনমতো, সুবিধামতো শিক্ষাক্রম তৈরী করছে।
দেশ এখন দালালে পরিপূর্ণ। চারদিকে দালাল। চারদিকে ভণ্ড। তাও খুবই উন্নতজাতের ভণ্ড এরা। এদের দাপটে-ভাষণে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। এই দালালশ্রেণী কখনও দেশের স্কুল-কলেজে-মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেনি কিংবা এই স্তরের শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতা-সম্পর্কে এদের কোনো ধারণা নেই। এরা দেশের প্রতিষ্ঠিত ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মস্বীকৃত-শিক্ষক। আর তাই, এরা প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য কীভাবে কালিকুলাম তৈরী করবে? এদের সারাদিন কাজ হলো: “লাল-নীল-গোলাপি-হলুদ-কমলা-সাদা-বেগুনী ইত্যাদি দল নিয়ে গবেষণা করা। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোরকমে ক্লাসটা শেষ করে খুব দায়িত্বের সঙ্গে “দি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি কোম্পানী লিমিটেডে” গিয়ে বিখ্যাত লেকচার দেওয়া। এই পামররা জাতির সঙ্গে তামাশা করছে, এরা শিক্ষার নামে ব্যবসা করছে, এরা শিক্ষক-পদবী ব্যবহার করে অর্থবাণিজ্যে আত্মনিয়োগ করেছে। এরা দালাল! আর এই দালালশ্রেণী কখনও শিক্ষাবিদ হতে পারে না। আর এদের রচিত কারিকুলাম কখনও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হতে পারে না। এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষকই দালালি করে, লবিং করে, সাবেক ছাত্রনেতার লোগো ব্যবহার করে, সাবেক ছাত্রসংগঠনের ক্যাডার নামে অভিহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকছে। এরা শিক্ষার নামে জাতিকে বারবার বিভ্রান্ত করেছে। এরা অনভিজ্ঞ, অযোগ্য, অদক্ষ, অথর্ব ও অকর্মণ্য। এদের দ্বারা এই জাতি-রাষ্ট্র কখনও উপকৃত হবে না। এরা রাতদিন শুধু নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে। এরা নতুন-ধারার শিক্ষার নামে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার ধারক-বাহক বর্তমান সরকারকে সবসময় ভুল-বুঝিয়ে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করতে চাচ্ছে।

কয়েকজন দালাল কোনোকিছু না-বুঝেই ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে সৃজনশীলপ্রশ্নপদ্ধতির নামে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থাসৃষ্টি করেছে। যারা বাংলাদেশে “সৃজনশীলপ্রশ্নপদ্ধতির” প্রয়োগ ঘটিয়েছে, তারা ২০০৭ সালে গঠিত এক-এগারোর “কথিত-তত্ত্বাবধায়ক-সরকারের” দালাল। এইসব দালাল মিলেমিশে বাংলাদেশে এই অপনীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছে। এরা মাঝে-মাঝে বিদেশসফর করে। আর বিদেশে নতুন একটাকিছু দেখতে পেলেই তারা সেটি এই দেশে বাস্তবায়ন করার জন্য একেবারে পাগল হয়ে যায়। এরা তো এমনিতেই আধপাগলা। এইসব দেখে তাদের পাগলামি আরও বেড়ে যায়। তাই, আমাদের দেশে এই অখাদ্য “সৃজনশীলপ্রশ্নপদ্ধতি” চালু করা হয়েছে। বলা হয়েছিলো, এতে নাকি শিক্ষার্থীরা বইমুখী হবে। আসলে, শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে বই কম পড়ে। কারণ, এই পদ্ধতিতে পাশ করাটা এখন ছেলের হাতের মোয়ার মতো। এখন পরীক্ষা দিলে কেউ ফেল করে না। স্কুল-কলেজগুলোতে পাশের হার খুব বেড়ে গেছে। আর মাদ্রাসাগুলো আরও এককাঠি সরেস! তারা পাশের হার দেখাচ্ছে ৯৪-৯৬ ভাগ! কী অবাক কাণ্ড! যে ছেলে বা মেয়ে নিজের নাম, বাপের নাম ঠিকমতো লিখতে পারে না, সেও এখন এ+!
শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে আরও আন্তরিক হয়ে শিক্ষার্থীদের সবসময় দেশপ্রেমে ও মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই রাষ্ট্র শিক্ষকদের মর্যাদা দিবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র শিক্ষকদের বিশেষ অধিকার প্রদান করবে। আর এই বিশেষ অধিকারগুলো হলো:
১. শিক্ষককে তার ক্লাসরুমে পড়াবার ক্ষেত্রে তাঁকে পূর্ণ অধিকার দিতে হবে। একজন শিক্ষক হবেন শ্রেণীকক্ষের রাজা। তিনি মন-প্রাণ-খুলে তার ইচ্ছেমতো পড়াবেন। আর তা অবশ্যই দেশের শিক্ষাবোর্ড-নির্ধারিত পাঠ্যসূচি-সংশ্লিষ্ট। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের কথা বলার স্বাধীনতা দিতে হবে। এখন ক্লাসরুমে Digital Content উপস্থাপনার নামে শিক্ষকদের ক্যানভাসার বানানো চলবে না।
২. শিক্ষকের পাঠদানপ্রক্রিয়া কখনও শিক্ষককেন্দ্রিক আবার কখনও শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক হতে পারে। তাই বলে সবসময় শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদান হলে চলবে না। একজন শিক্ষক প্রয়োজনমতো তার পাঠদানপদ্ধতি-প্রয়োগ করবেন। তিনি হবেন মার্জিত আর সুরুচির অধিকারী। আর তিনিই বুঝবেন, শিক্ষার্থীদের কীভাবে পাঠদান করতে হবে।
৩. শিক্ষক দেশ, জাতি ও মানবতার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের নমনীয়-সহনীয় শাসন করবেন। তাই বলে পাগলামন্ত্রণালয়ের গেজেট-প্রকাশ করে ছাত্রদের লাগামহীন ঘোড়ার মতো স্কুল-কলেজে-মাদ্রাসায় ছেড়ে দিলে হবে না। পাগলাঘোড়া কখনও মানুষ হবে না। কিছুদিন আগে পাগলামন্ত্রণালয় থেকে এক গেজেটপ্রকাশ করা হয়েছে যে, যদি কোনো শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করে কিংবা ক্লাসে তিনি বেত নিয়ে যান তবে তার অপরাধ হবে শাস্তিযোগ্য। বাঃ পাগলামন্ত্রণালয় বাঃ! বড়ই চমৎকার তোমাদের আইন। কিছুদিন পরে বুঝি তোমরা আইন করবে: ছাত্ররা যদি শিক্ষকের কাছে সিগারেট চায় কিংবা সিগারেট ধরাবার জন্য আগুন চায়, তবে তা শিক্ষক সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। বাড়াবাড়ি এবং প্রশ্রয়ের একটা সীমারেখা থাকা দরকার। যারা এইসব পাগলাআইন করে তারা কেউই দেশের কোনো সরকারি-বেসরকারি-প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেনি। কিংবা তারা কখনও দেশের কোনো হাইস্কুলেও শিক্ষকতা করেনি। এরা ঢাকার ফাইভস্টার হোটেলে বসে কিংবা ফাইভস্টার হোটেলের মতো মনোরম সরকারি বাসায় বসে কোনোপ্রকার কাজকর্ম না করে শুধু সরকারের দালালি করে শিক্ষার নামে যখন-তখন আজেবাজে নিয়মরীতি তৈরী করবে, আর জাতি বুঝি তা-ই মানতে বাধ্য?
৪. দেশের বখাটে-ডানপিটে-বেআদব-মাত্রাতিরিক্ত দুষ্ট-পাজী-রংবাজ-আধারংবাজ-মাস্তান-পাতিমাস্তান জাতীয় পশুগুলোকে মানুষ করতে হলে শিক্ষককে অবশ্যই নমনীয়-সহনীয় শাসন করবার অধিকারটুকু দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সরাসরি শিক্ষকের পাশে দাঁড়াতে হবে। আর তা-না-করে অনন্যোপায় শিক্ষকের লঘু-বেত্রাঘাতের বিরুদ্ধে তাঁকে জেলের ভয় দেখালে, চাকরি থেকে বরখাস্তের পাগলাআইন-জারী করলে দেশের বখাটে-ডানপিটে-বদমাইশ শিক্ষার্থীরা আরও বেশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বেআদবির মাত্রা বাড়িয়ে দিবে। আমাদের মনে রাখতে হবে: বানরকে প্রশ্রয় দিলে মাথায় ওঠে। আর এভাবে চলতে থাকলে জাতির উচ্ছন্নে যেতে আর বেশি বিলম্ব হবে না। শুধু পাশ-পাশ করে শিক্ষার্থীদের কোলে তুলে, মাথায় তুলে নাচলে কোনো কাজ হবে না। এদের নৈতিক মানদণ্ড সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষককে এদের শাসর করার অধিকার দিতে হবে। আর নয়তো স্কুল-কলেজে-মাদ্রাসায় বেআদবদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫. রাষ্ট্র কখনও অন্যায় আদেশ দিতে পারে না। রাষ্ট্র মানুষের জন্য। আর যারা রাষ্ট্রবিরোধী, মানবতাবিরোধী, হত্যা-খুন-ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্মে জড়িত হয়, রাষ্ট্র তখন তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করে। কিন্তু কেন? কারণ, এদের শাস্তি না দিলে ভালোমানুষ টিকতে পারবে না, আর রাষ্ট্র বিপন্ন হবে। তাই, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে দেশের মানুষ গড়ার কারিগরদের বিরুদ্ধে এতোটা খড়্গহস্ত কেন? ও বুঝতে পেরেছি, কোনো পাগলাসচিব হয়তো এই যুক্তি দেখিয়েছে! আর তাই, দেশে এখন ছেলেমেয়েরা নয়ছয় করে পাশ করলেই হলো!
৬. শ্রেণীকক্ষ সিনেমা-হল নয়। এটি শিক্ষকের বক্তৃতার স্থান। তাই, একজন শিক্ষক এখানে মন-খুলে কথা বলে দেশ-জাতি ও মানবতার পক্ষে শিক্ষার্থীদের সবসময় উদ্বুদ্ধ করে তুলবেন। শুধু ইন্টারনেট থেকে ছবি ও ভিডিও ডাউনলোড করে “ডিজিটাল কনটেন্ট” তৈরী করলেই হবে না। এখনকার শিক্ষার্থীরা রাতদিন ইন্টারনেটেই পড়ে থাকে। তাই, তাদের আর ভিডিও-চিত্র দেখিয়ে লাভ নেই। ওদের এখন ভালোভাবে গাইড করতে হবে। আর প্রয়োজনে রাষ্ট্র এদের শাসন করবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের আদর্শবান গাইড হওয়ার সুযোগ করে দিবে রাষ্ট্র।
৭. ক্লাসে শুধু ছবি বা ভিডিও দেখালেই চলবে না। শিক্ষকদের সবসময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নীতি-নৈতিকতাবোধ গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আর এই বিষয়টি মাথায় রেখে এখন থেকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। আর আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে: এ+বেআদবের চেয়ে সি-গ্রেড পাওয়া মুআদ্দব, ভদ্র, চরিত্রবান ও শিষ্টাচারসম্মত নাগরিক অনেক বেশি কাঙিক্ষত।

যাক, বলছিলাম, ফুটপাতে দেখা সেই জটলার ভিড়ে চালবাজ লোকটির ছবিপ্রদর্শনের মতো যেন আমাদের “ডিজিটাল-ক্লাসরুম” গড়ে না ওঠে। এখানে শিক্ষক শুধু ছবি আর ছবি দেখাবেন! আর তাতেই সব পড়ালেখা জলের মতো শিক্ষার্থীদের মন ও মগজের মধ্যে ঢুকে যাবে! এধরনের বোকামি শুধু এই দেশেই সম্ভব। আর তাই, ডিজিটাল-শিক্ষার নামে মাল্টিমিডিয়া-ক্লাস-রুমগুলো যেন শুধু ভিডিও-ছবি প্রদর্শনের মিলনায়তন হয়ে না ওঠে, সেদিকে সবার দৃষ্টি রাখতে হবে।
দেশে শিক্ষার নামে এতো আয়োজন তবুও শিক্ষিত-মানুষের সংখ্যা বাড়ছে না। আমাদের আরও শুদ্ধ হতে হবে। আর আমাদের শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৬

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: ভাল

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৭

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা রইলো দাদা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.