নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

সাইয়িদ রফিকুল হক

আমি লিখি “দেশ, জাতি, মানুষ আর মানবতার” জন্য। আমার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমালোচনা আমার নিজস্ব ও মৌলিক রচনা। তাই, আমার অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো কপি বা নকল করা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা। জয় মানবের জয়।

সাইয়িদ রফিকুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

লোকদেখানো ও জোর করে বাংলা-প্রেম ছেড়ে দিন। আর এখনও সময় আছে ‘বাংলিশ’ ছেড়ে ভালো হয়ে যান!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩১



লোকদেখানো ও জোর করে বাংলা-প্রেম ছেড়ে দিন। আর এখনও সময় আছে ‘বাংলিশ’ ছেড়ে ভালো হয়ে যান!
সাইয়িদ রফিকুল হক

প্রাক-কথন:
ফেব্রুআরি মাস এলেই কিছুসংখ্যক অমানুষ ঋতুমাফিক ‘বাঙালি’ হয়ে যায়! আর এরা পরিধান করে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি! আর এদের মুখে কী সুন্দর হাসি! এরা সদ্যোফোটা-বাঙালি হয়ে একেবারে লোকসমাজে গলে পড়ে। এদের চেহারাসুরত দেখলে মনে হয়: এরা বুঝি বাঙালি। আসলে, তা নয়। মহান ভাষা আন্দোলনের মাস বলে এরা নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য ‘বাঙালি-পদে’ জোর করে অভিনয় করছে। এরা দেশের ‘রঙ্গনাট্যশালা’র স্থায়ী সদস্য। এদের বুকের ভিতরে এখনও বাঙালি-চেতনা নাই। এদের চিন্তাধারা-স্বপ্নে-মননে-চিন্তনে ‘বাঙালি-চেতনা’র কোনো ছাপ নেই। তবুও এরা ভাষার মাস ফেব্রুআরির বিশাল ডামাডোলে মিশে গিয়ে একদিনের জন্য হঠাৎ করে লোকদেখানো বাঙালি হয়ে ওঠে। এরা জোর করে ‘বাংলা-প্রেমে’র ভান করছে।

বায়ান্নোর ভাষাআন্দোলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য:
১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানী-জারজ-সরকারের ‘জারজ-১৪৪ধারা’ অমান্য করে এই দেশেরই কিছুসংখ্যক সূর্যসন্তান। তাঁরা ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুআরি রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে এই বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য জীবন দিয়েছেন। এঁরা হলেন: রফিক, জব্বার, বরকত, সালাম, শফিউর প্রমুখ।
এই কি আমাদের ইতিহাস? বছরের-পর-বছর পেরিয়ে একই ভাঙ্গা-রেকর্ড বাজানো হচ্ছে। কিন্তু কেন? কার স্বার্থে এসব করা হচ্ছে। ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুআরি আমাদের পূর্বপুরুষেরা কেন জীবন দিয়েছিলেন? এর জবাবে বলতে হয়: রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আমাদের পূর্বপুরুষেরা পাকিস্তানীসামরিকজান্তা নামক একটি জালিমগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অকুতোভয়চিত্তে লড়াইসংগ্রাম চালিয়ে ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আর এখানেই কি সবকিছু শেষ? আমাদের এখন করণীয় বলে আর-কিছু নাই? আর আমরা কেন ২১-এ ফেব্রুআরিকে শুধু ‘শহীদদিবস’ আর ‘আন্তর্জাতিক-মাতৃভাষাদিবস’ বলে চিৎকার ও চেঁচামেচি করছি?
আমাদের বায়ান্নোর ভাষাআন্দোলনের সংগ্রামী-বীরসেনানীরা শুধু মুখে-মুখে এই দিবসপালনের জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেননি। তাঁরা সর্বস্তরে ও সর্বকাজে বাংলাভাষা চালু করার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। তাই, আজ আমাদের শুধু লোকদেখানো ও আনুষ্ঠানিক ভক্তি-শ্রদ্ধাকে প্রাধান্য না দিয়ে ‘সর্বস্তরে বাংলা চালু’ করার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। আর সবারই শহীদমিনারে ফুল দিয়ে নিজেদের বাঙালিপ্রমাণের চেষ্টার পাশাপাশি সবচেয়ে বড় কাজ ও দায়িত্বপালন-সহকারে ‘সর্বস্তরে রাষ্ট্রভাষা বাংলা’র প্রচলন ঘটাতে হবে।

১৯৭১ সালে দেশস্বাধীন হয়েছে মাত্র নয়টি মাসে। আজ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছে। তবুও আমরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে পূর্ণপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। এখানে, বাংলাভাষা শুধুই নামকাওয়াস্তে রাষ্ট্রভাষা। দিনের-পর-দিন ইংরেজি ভাষার দৌরাত্ম্য ও অপতৎপরতা যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে বাংলাভাষা একসময় কোণঠাসা হয়ে পড়বে নাকি? একটি দেশবিরোধীচক্র বাংলাভাষার বিরুদ্ধে সেই কাজটিই করছে। এখন এই দেশে পাকিস্তানীহায়েনারা নাই। কিন্তু এখনও কেন বাংলাভাষার মর্যাদা ও গৌরব বৃদ্ধি পাচ্ছে না। স্বাধীন দেশে দিনের-পর-দিন বাংলাভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আর মুখে-মুখে বাংলা-প্রেমের নাটক জমছে। এই দেশে এখন ভণ্ডামির একশ’-একটা নয়, একলক্ষ-একটা মেগাসিরিয়াল চলছে!

বসন্তের কোকিলরা বাংলাভাষার শত্রু:
ফেব্রুআরি মাস এলেই কিছু-কিছু বসন্তের কোকিলের গায়ে দেখি সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি! আর এরাই বুদ্ধিজীবী সেজে মঞ্চমাতিয়ে বেড়াচ্ছে! আর একেকটা বুড়ো হাবড়া হয়ে গেছে তবুও এরা একবারের জন্যও ‘প্রধান অতিথি’র আসন ছাড়ছে না। এদের কথা সেই একই সুরে গাঁথা: বাংলাকে মর্যাদা দিতে হবে... সর্বত্র বাংলাভাষার ব্যবহার চাই... বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা! ইত্যাদি-ইত্যাদি। আর এভাবে, তারা গালভরাবুলিতে কোনো যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ‘জাতীয় অধ্যাপকের খেতাব’খানা বাগিয়ে নিচ্ছে! সবখানে এখন চলছে নোংরা-রাজনীতি। এই দেশে এখন তৈলবিশারদগণ মহাসমারোহে নিজেদের গৌরবজনক জীবনযাত্রা পরিচালনা করছে। আর ফেব্রুআরি মাস এলেই গৎ-বাঁধা কথা শুনি তাদের মুখে: ‘বাংলা ভাষার সার্বজনীন ব্যবহার চাই। সবখানে বাংলা দেখতে চাই’! কিন্তু কে তোমাদের বাধা দিচ্ছে? তোমরা তো ইচ্ছে করলে একদিনেই এদেশে বাংলাকে তার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারো! কিন্তু কেন করছো না, হে বুদ্ধিজীবীনামধারী তৈলবিশারদগণ? আসলে, তোমরা কি বাংলাকে ভালোবাসো? বায়ান্নোর ভাষাআন্দোলনে বাংলা-প্রেমিকদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে আদায় করা রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রতি তোমাদের আস্থা আছে?

যারা বাংলাভাষাকে ভালোবাসে না। যাদের পরিবারে বাংলাভাষার চর্চা নাই। তারাই এখন বাংলাভাষার জন্য মিছামিছি দরদ দেখিয়ে গলা ফাটাচ্ছে। আর এদের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাভাষার মান-মর্যাদা রক্ষার গুরু দায়িত্ব! এ যেন ইঁদুরের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ‘ইঁদুর-মারা’র বিষ! আর বাংলাভাষার জন্য এদের মায়াকান্না দেখলে সত্যি-সত্যি মনে হয়: মাছের মায়ের পুত্রশোক! এরাই তো বাংলাভাষাকে ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত। এইসব আঁতেলশ্রেণী বাইরে বুদ্ধিজীবী আর ঘরে-ভিতরে-সবখানে বাংলাবিরোধী-পণ্ডিত। আর এরাই তো শিয়ালের যুক্তি উত্থাপন করবে! আর এই পাপিষ্ঠশ্রেণী এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করে পাকিস্তানীদের দৃষ্টিভঙ্গী সমানে লালনপালন করে চলেছে। বাংলাভাষার প্রতি বিমাতাসুলভ-আচরণপ্রদর্শনকারী শাসকগোষ্ঠীও এদের কাছে টেনে বাংলাভাষার উন্নয়ন ঘটাতে চায়! সর্ষের ভিতরে ভূত থাকলে সর্ষে কখনও ভূত তাড়াতে পারবে না। বাংলাভাষার জন্য মায়াকান্না-প্রদর্শনকারী এইসব পাষণ্ডকে বাতিল করে সত্যিকারের বাংলাপ্রেমী মানুষের হাতে ‘সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনে’র গুরুদায়িত্ব তুলে দিতে হবে।

বাংলা একাডেমী বর্তমানে শুধু একটি সরকারি-প্রকাশনাসংস্থা:
বাংলা একাডেমী বর্তমানে দালালবেষ্টিত একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে, সর্বস্তরের দালালের জমায়েত। এরা গবেষণার নামে বাংলাভাষাকে আরও বেশি দুর্বোধ্য ও জটিল করে তোলার কাজে ব্যস্ত। এরা বাংলাভাষার জন্য কোনো অবদান রাখছে না। সরকারি টাকায় বই ছাপিয়ে জনগণের পকেট কেটে ব্যবসা করছে। আবার ভাষার মাসে মানহীন-আজেবাজে প্রতিষ্ঠানকে বইমেলায় সুযোগ দিয়ে টাকা কামাচ্ছে। এখানেও আঁতেলশ্রেণী বাংলাভাষার মান-মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করার কাজে ব্যস্ত। আজ পর্যন্ত বাংলা একাডেমী বাংলাভাষার উন্নয়নে একটি কাজও করেনি। আর যা হয়েছে তা কিছুসংখ্যক মহৎপ্রাণ মানুষের প্রচেষ্টায়। বাংলা একাডেমী এখন প্রভুদের মনোরঞ্জন করার অভিলাষীপ্রতিষ্ঠান। দেশের শীর্ষস্থানীয় তৈলবিশারদ না হলে এখন এর মহাপরিচালক হওয়া যায় না। অথচ, একজন ভালোমানুষ ডক্টর নীলিমা ইব্রাহিমকে আমাদের বঙ্গবন্ধু একদিন এর কর্ণধার নিযুক্ত করেছিলেন।
সমাজে অনেক ভালোমানুষ এখনও আছে। কিন্তু তারা এখন একশ্রেণীর পেশাদার-দালাল ও তৈলবিশারদের কারণে সবখানে পরাস্ত হচ্ছেন। সত্যিকারের ভাষাপ্রেমী-মানুষেরা এখন কোনো দায়িত্ব পান না। তোষামোদকারী আর চাটুকারে ভরে গেছে দেশ। আর তাই, দেশ, মানুষ, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির চেয়ে অনেক নামকাওয়াস্তে পণ্ডিতের কাছে বড়-একটা-চাকরি বেশি লোভনীয়। বাংলা একাডেমী এখন কুক্ষিগত করে রেখেছে: সমাজের আঁতেল, অর্বাচীন, ভূঁইফোঁড়, পাঁড়, আর স্বঘোষিত একশ্রেণীর পণ্ডিত! এরা এখানে, শুধুই চাকরি করছে। মোটা বেতনে আমলাদের মতো দেশসেবা করছে! আর বাংলাভাষার জন্য এরা রাতদিন কত কুম্ভিরাশ্রু-বর্ষণ করে চলেছে। এইসব চাকরিজীবী আর গবেষক-নামধারী প্রতিভাহীন মানুষের জন্য বাংলা একাডেমী আজও জাতির বিবেক কিংবা বাংলাভাষার আইনানুগ-অভিভাবক হয়ে উঠতে পারেনি। অদূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও বাংলা একাডেমী ‘সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলনে’র ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। আর তাই, এরা বছর-বছর কিছু বই ছাপিয়ে ভাবছে: তাদের দায়িত্ব শেষ!

বাংলাভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা সবসময় এককাট্টা:
বাংলাভাষার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্রকারীগোষ্ঠী রয়েছে। এরা সবসময় দালালি করে, আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ফলে অযাচিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে এরা বাংলাভাষাবিরোধী চক্রান্তসমূহ বাস্তবায়ন করে থাকে। এরা কখনও চায় না: এই দেশে সার্বজনীনভাবে বা সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলন হোক। এরা মনে করে: বাংলা বুঝি এই দেশে ঐচ্ছিক-ভাষা! তাই, যার ইচ্ছে সে এটি ব্যবহার করবে, আর যার ইচ্ছে করবে না সে এটি ছেড়ে দিবে! এভাবে দিনের-পর-দিন বাংলাভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আমরা চোখবুজে সয়ে যাচ্ছি। জানি, আমাদের বিবেকশক্তি আস্তে-আস্তে লোপ পাচ্ছে। নইলে, বাংলা-নামের দেশে বাংলাভাষা এখনও কেন পরাধীন থাকবে?

জ্বী, হ্যাঁ, বাংলাভাষা এই স্বাধীন দেশে পরাধীন অবস্থায় রয়েছে। শহীদ রফিক-জব্বার-বরকতের রক্তে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা বাংলা আজকে বাংলাদেশে ‘সর্বস্তরে ব্যবহারে’র অনুমতি পায়নি। আর নামকাওয়াস্তে যে-আদেশপত্র আছে তা-ও হয়তো পোকায় কেটে ফেলেছে। স্বাধীন দেশে বাংলাভাষার কপালে ভয়ানক শনির দশা! আজকাল এর কোনো মর্যাদাই দেওয়া হচ্ছে না। শুধু কয়েকটি দিবস গুনে-গুনে কর্তাব্যক্তিরা বাংলার কথিত-গুণগান বর্ণনা করে নিজেদের ইমেজ-বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। আর এই শ্রেণীটি সর্বক্ষেত্রে অভিনয়ে খুব পারদর্শী। যাদের হাতে এই বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তারা নিজে বাংলাভাষা ভালোবাসে কিনা? তাদের বাসায় কিংবা বাড়িতে বাংলাভাষার চর্চা আছে কিনা? নাই। নাই। এবং নাই। এদের সন্তানসন্ততি ‘ইংলিশ-মিডিয়ামে’ পড়ে এখন একেকজন ইংরেজ কিংবা আধা-ইংরেজ! আর এদের হাতেই বুঝি বৃদ্ধি পাবে আমাদের মহান বাংলাভাষার গৌরব! ভূতের মুখে রাম-নাম! আর এইসব ভণ্ডামি এই দেশে আগেও ছিল আর এখনও আছে।

এখনও যে-কোনো অফিস-আদালতে-ব্যাংকে-মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে, আর নিয়মরীতির বাইরে প্রতিষ্ঠিত একশ্রেণীর আগাছাস্বরূপ ‘প্রাইভেট-বিশ্ববিদ্যালয়ে’ গেলে ইংরেজির ছড়াছড়ি। এরা যেন বাংলাভাষাকে চেনে না। আর এদের এতো অহংকার যে, এরা বাংলাভাষাকে পাত্তাই দিতে চায় না। প্রাইভেট-সেক্টরে দিনের-পর-দিন চলছে এই জুলুমবাজি। আর এরা মনে করছে: ইংরেজি শিখলেই জাতি শিক্ষিত হবে! মূর্খের দল কোথাকার! শিক্ষিত মানে কি তা-ই তো এইসব রাষ্ট্রবিরোধী বিকলাঙ্গ-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীরা জানে না। এরা শুধু নিজেদের অবৈজ্ঞানিক পাণ্ডিত্য জাহির করতে ব্যস্ত। আর কীভাবে বাংলাভাষাকে দাবিয়ে রাখা যায়, তা-ই এদের একমাত্র ভাবনা।
দেশের হাতেগোনা দুই-একটি ‘প্রাইভেট-বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যতীত সকল ‘প্রাইভেট-বিশ্ববিদ্যালয়ে’র নাম ইংরেজি-ভাষায়! এদের ইংরেজি-শব্দ এতো ভালো লাগে। অথচ, এইসব ‘প্রাইভেট-বিশ্ববিদ্যালয়ে’ কখনও কোনো বিদেশী পড়তে আসে না। এরা ‘ইংরেজি-নামে’ দেদারসে ব্যবসা করে বাঙালির পকেট কেটে টাকা বের করে নিচ্ছে। আর আমাদের মহান সরকারগুলো তা-ই দুচোখভরে দেখছে। এই দেশের ‘প্রাইভেট-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে’ সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই।

এই দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণীর ভণ্ডশিক্ষক যেমন স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, তেমনিভাবে এই দেশে বাংলাভাষাবিরোধী একটি অপশক্তিও রয়েছে। আর এতে সর্বদলীয় ‘ভণ্ড-ষণ্ড আর পাষণ্ড’ জোটবদ্ধভাবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে তাদের বাংলাভাষাবিরোধী অবস্থানের পরও। আর বাংলাভাষাবিরোধী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকগণ সবসময় লাল, নীল, গোলাপি, সাদা, হলুদ, বেগুনী, সবুজ, আকাশি সব রঙ মিলেমিশে এক হয়ে যায়। এরা বাংলাদেশের কায়েমীস্বার্থবাদী। এরা এই দেশে ‘সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের ক্ষেত্রে’ সবসময় এককাট্টা। এরা আজও পাকিস্তানীঅপশক্তির মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসে আছে। আর সুবিধাবাদীশাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক সমীকরণে লাভ-লোকসানের হিসাব কষে এদেরই মাথায় তুলে নাচছে! এদের জন্য আজও বাংলাভাষা রাহুমুক্ত হতে পারেনি। তবুও দেশে কারও বুঝি টনক নড়বে না? আর তাই, বারংবার আর বছরের-পর-বছর এভাবে দিবস গুনে-গুনে ‘বাংলা-প্রেমে’র নাটক মঞ্চস্থ হতে থাকবে!

বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান শত্রু এফএমরেডিও:
দেশের কিছুসংখ্যক ভূঁইফোঁড় ও অর্বাচীনের চিন্তাচেতনার পাপের ফসল এই এফএমরেডিও। জন্মলগ্ন থেকে এরা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ও ধৃষ্টতার সঙ্গে বাংলাভাষাকে বিকৃত করার অপচেষ্টায় নিয়োজিত। এদের কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি নাই। এরা কিছু চটকদার আইটেম নিয়ে সস্তা-সিনেমার ‘আইটেম-সং’-এর মতো নেতিবাচক অপকাণ্ডে নিয়োজিত। আর এদের রয়েছে একশ্রেণীর ‘রেডিও জকি’। এরা সবসময় বাংলাভাষাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে। আর এই বিকৃতির সঙ্গে ক্রমাগত একেকজন নগ্নভাবে পাল্লা দিয়ে বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে ‘বাংলিশ’ নামক শয়তানী-ভাষারীতি আবিষ্কার করেছে। আর একশ্রেণীর মূর্খ এদের এই ‘বাংলিশ’ নামক ঘৃণ্য ধ্বনিরীতির শ্রোতা।
দেশে এখন যার যা-খুশি তা-ই করছে! তাই বলে বাংলাভাষার বিরুদ্ধে এভাবে নগ্নআগ্রাসন! আর বেআদবির একটা সীমা আছে। সবখানে বেআদবি প্রশ্রয় দেওয়া সমীচীন নয়। আমাদের এই ভাষা বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া। আর এ যে অনেক দামি। এর মূল্য আজ সবাইকে বুঝতে হবে। আর এব্যাপারে সবার আগে সতর্ক হতে হবে আমাদের সরকার বাহাদুরকে! ভাষার এই বিকৃতি আর সহ্য করা যায় না।

হে মহান কর্তাব্যক্তিগণ:
আপনাদের যদি বাংলাভাষার প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকতো, তাহলে, এতোদিনে ‘সর্বস্তরে বাংলাভাষার ব্যবহার’ চালু হয়ে যেতো। আমরা জানি, এইব্যাপারে আপনাদের কোনো আন্তরিকতা নাই। আপনারা শুধু ‘বাণী’র মধ্যে আপনাদের ভাষাপ্রেমকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন! স্বাধীন বাংলাদেশে এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে?

শেষকথা—সাধারণ একটি উপদেশ:
আপনারা লোকদেখানো বাংলা-প্রেম এখনই ছেড়ে দিন। আর জোর করে আপনাদের বাংলাভাষাকে ভালোবাসতে হবে না। বাংলার জন্য এখনও শহীদ হতে অনেকেই প্রস্তুত। সুতরাং, আপনাদের ভণ্ডামি বিসর্জন দিয়ে আপনারা আজ-এক্ষুনি সত্যিকারের ভালোমানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন। আপনাদের এই অভিনয় দেখতে-দেখতে আজ আমরা একেবারে বীতশ্রদ্ধ। ভাষার মাসে আপনাদের নির্ধারিত কথা শুনতে-শুনতে আমাদের কান একেবারে ঝালাপালা! আপনাদের লজ্জা নাই। কিন্তু আমাদের তো লজ্জা আছে। আর নিজেদের মাতৃভাষা বাংলার বিরুদ্ধে এই উলঙ্গ-অসভ্যতা আর কত সহ্য করা যায়!

বাংলাভাষা যাদের ভালো লাগে না, তাদের এই দেশে না থাকাই ভালো। যারা ইংরেজি এতো বেশি ভালোবাসেন তারা সরাসরি ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকায় চলে যান। আমরা গরিব মানুষ! শুধু বাংলাভাষা শিখেছি, আর বাংলাই জানি। আর বাংলাই ভালোবাসি। আর আপনাদের সমস্ত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও আমাদের রবীন্দ্রনাথ বাংলাভাষায় অসামান্য গ্রন্থরচনা করে নোবেল-পুরস্কার-লাভ করলেন। বাংলাভাষায় এরকম আরও প্রতিভাধর ব্যক্তি এখনও রয়েছেন। এদের ভাষা ও দেশের সেবা করার সুযোগ দিন। আর বন্ধ করুন, আপনাদের মতো আঁতেলদের বাংলাভাষাবিরোধী ষড়যন্ত্র। এবার আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন। আর আপনারা ভালো হয়ে যান। বাংলার ভিতরে ইংরেজি মিশিয়ে আর ‘বাংলিশ’ তৈরি করবেন না। এখনও সময় আছে ভালো হয়ে যান। পরে আর সুযোগ নাও পেতে পারেন। এই বাঙালি একদিন জাগবেই। সেদিন আপনাদের পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না। বাস্তিল-দুর্গের মতো ভেঙ্গে পড়বে আপনাদের বাংলাভাষাবিরোধী সমস্ত শয়তানীষড়যন্ত্র।

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।


মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: ভালো লাগা রেখে গেলাম, ভ্রাতা।
চমৎকার লিখেছেন,

একুশ নিয়ে আমার এ পোস্টটা পড়ার জন্য অনুরোধ রইল,
পোস্ট লিংক

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৭

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: সুন্দর মতপ্রকাশের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর সঙ্গে রইলো একরাশ শুভেচ্ছা।
আরও থাকছে শুভকামনা।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: আপনারা লোকদেখানো বাংলা-প্রেম এখনই ছেড়ে দিন।

ভুল অনেক। অবহেলা অনেক। আবার আবেগও অনেক।
স্নেহের আতিশয্যে বাচ্চারা বেয়াড়া হয়ে ওঠে। তেমনি হয়েছে। ভাষার মাঝে যে রক্তের দাগ তা সময়ের চাকায় লেপ্টেতো আছে তবে তার দিকে ফিরে তাকানোর সময় কই। বছরের কিছু গুটিকতক দিনেই প্রেম জ্বলে ওঠে। দাউ দাউ করে।

ভাষা নিয়ে আছে অহংকার। গৌরব। আর প্রেম। দেখানোর নয় উপলব্ধির।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: ভালোই বলেছেন। তবে আমরা বাংলাকে ভালোবাসার ব্যাপারে এখনও উদাসীন।
কবে যে আমাদের বোধোদয় হবে, তা-ই ভাবছি।
আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬

দ্যা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলেছেন: অ্যা ডেয়ার লিসেনাড়স, আপনাদেড় সবাইকে স্বাগতম আমাদেড় বুত এফএম এর এই পিসডে। আড় অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শুড়ু হয়ে যাবে আমাদেরড় সেই কাঙ্খিত প্রোগ্রাম। সো, কোত্থাও যাবেন না। শুনতে থাকুন সঙ্গে থাকুন, ফিড়চি অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই........ X((

কি ভাই, উপরের লেখাগুলো দেখে অবাক হচ্ছেন তাই না? ঐটা আমার কথা না, আমাদের সুনামধন্য রেডিও এফএমের আরজে দের কথা। ভাবতেও অবাক লাগে স্মার্টনেসের নামে কিভাবে এরা ওভার এ্যক্টিং করে।

তো এই হলো আমাদের বর্তমান প্রজন্মের বাংলা ভাষার ব্যবহার। তাহলে একবার ভাবুন, আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম আমাদের কাছ থেকে কি শিখবে!?

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ! শুভ কামনা জানবেন!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১১

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: সুন্দর বলেছেন, ভাই। এই এফএমরেডিও’র দৌরাত্ম্যে বাংলাভাষার আজ নাকাল অবস্থা। এব্যপারে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ। আর একরাশ শুভেচ্ছা। আর শুভকামনাও রইলো।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮

গেম চেঞ্জার বলেছেন: কিছুই করার নেই, সময়ের স্রোত। তবে সতর্ক করা যায়। এই আরকি।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: বাংলাভাষাকে বিকৃতি থেকে বাঁচাতে হবে। আর চেষ্টা আমাদের করতেই হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫

মহা সমন্বয় বলেছেন: পুরোপুরি হয়ত সম্ভব না- তবে রেডিও জকিদের একটু ঠিক করা যেতে পারে ওদের জন্যই আজকে এই অবস্থা।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: আসলে তা-ই। এফএমরেডিও পাপীদের জন্যই ভাষার আজ এই দুরবস্থা। এদের কঠোর হস্তে দমন করা প্রয়োজন।
আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। আর শুভকামনা।

৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এফেমের কথা তুলে এনেছেন দেখে ভালো লাগলো। একটা আইন হওয়া উচিৎ। এফেমে যদি কেউ ভাষার বারোটা বাজায় তার পুটুতে আগুন দেয়া হবে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: আসলে তা-ই করা উচিত। এফএমরেডিও পাপীদের জন্য আমাদের ভাষার অবনতি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এদের শায়েস্তা করাটা জরুরি।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর সঙ্গে রইলো আপনার জন্য শুভকামনা ও শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.