নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

সাইয়িদ রফিকুল হক

আমি লিখি “দেশ, জাতি, মানুষ আর মানবতার” জন্য। আমার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমালোচনা আমার নিজস্ব ও মৌলিক রচনা। তাই, আমার অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো কপি বা নকল করা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা। জয় মানবের জয়।

সাইয়িদ রফিকুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্প: সত্য বলা অপরাধ

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১২



রম্যগল্প:
সত্য বলা অপরাধ

সাইয়িদ রফিকুল হক

গ্রামের দুই মহিলার গল্প।
এরা একইপাড়ায় খুব কাছাকাছি দুই বাড়িতে থাকে।
দুইজনে আগে থেকে এমনিতে খুব খাতির। তারউপরে আবার সই পেতেছে অনেকদিন হলো। সেই থেকে ওদের মধ্যে ভীষণরকমের খাতির জমেছে। কেউ কাউকে ছাড়া বেশিক্ষণ যেন থাকতে পারে না!
একজনের নাম জোবেদা খাতুন। আরেকজনের নাম রাহেলা বেগম।
জোবেদা প্রায়ই রাহেলার বাড়িতে যায়। আর রাহেলাও নিয়মিত জোবেদার বাড়িতে যাতায়াত করে থাকে।
একদিন জোবেদা ও রাহেলা নিজেদের পাড়ায় নিজেদের বাড়ির মাঝামাঝি একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে গল্পসল্প করছিল। ওদের সামনেই ছিল একটা ছোট মাঠের মতো জায়গা।
সেখানে পাড়ার বারো-তেরো বছর বয়সী কয়েকটি ছেলে একত্রে খেলাধুলা করছে। এদের মধ্যে একটা জোবেদার ছেলে। বয়স তেরো কি চৌদ্দো হবে।
আর ওদের খেলা দেখছিল রাহেলার ছেলে। সে মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে এখন খেলছে না। ওর বয়সও তোরো কি চৌদ্দো।
খেলতে-খেলতে ছেলেদের মধ্যে হঠাৎ লেগে গেল মারামারি। একটি ছেলের সঙ্গে জোবেদার ছেলের ভীষণ মারামারি বেঁধে গেল।
তাই দেখে মারামারি ছাড়াতে ঘটনাস্থলে ছুটলো দুই বান্ধবী।
জোবেদার ছেলেকে মেরেছে অন্যপাড়ার একটি ছেলে। ছেলের কান্না শুনে জোবেদা খুব কষ্ট পেয়েছে। সে দৌড়ে এসেছে তাই। সেখানে গিয়ে নিজের ছেলেকে বুকে টেনে মারামারিতে লিপ্ত অপর ছেলেটিকে আচ্ছামতো গালিগালাজ করলো সে খানিকক্ষণ। আর বললো, “আমার ছেলের কোনো দোষ নাই। সব দোষ তোর। পাজী-বদমাইশ!”
অন্য ছেলেটি তখন মিনমিন করে বলছিল, “খালা, আপনার ছেলেরই সব দোষ। সেই আগে আমাকে...।”
তবু কে শোনে কার কথা। জোবেদা ও রাহেলা মিলেমিশে ওই ছেলেটাকে খুব গালমন্দ করতে লাগলো। আর পারলে তাকে ধরে পেটায় আরকি!
তখন ছেলেটা বাঁচার জন্য বললো, “অন্য মাইনষেরে জিগান—তারা কী কয়?”
তখন জোবেদা তাকিয়ে দেখে ওদের পাশে আছে রাহেলার ছেলে। সে একদম কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর হয়তো ঘটনার সবটা দেখেছেও।
সে তার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুই বল্ তো বাবা, কার দোষ?”
রাহেলার ছেলে কিন্তু কোনো কথা বলে না।
সে তো জানে, কার দোষ বেশি। আর কে দায়ী। সে চুপ করে রইলো।
এটা দেখে মনে মনে ভীষণ রেগে গেল রাহেলা। সেও ছেলের কাছে এগিয়ে এসে বললো, “বল্ তো বাবা, কার দোষ? কে আসল অপরাধী?”
তবু রাহেলার ছেলে কোনো কথা বলে না। আগের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
এটা দেখে জোবেদা মনে খুব কষ্ট পেল। আর রাহেলাও।
শেষমেশ ওই ছেলেটাকে আরও কিছুক্ষণ বকাঝকা করে মনের ঝাল মিটিয়ে খুব মনখারাপ করে জোবেদা সইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।

রাহেলাও একসময় মনখারাপ করে বাড়ি ফিরে আসে।
বাড়ি ফিরে সে ছেলেকে বললো, “তুই সত্যি কথাটা বললি না কেন তখন? জোবেদার ছেলের পক্ষ নিলি না কেন? দোষতো ওই ছেলেটারই। সত্য বললে কী এমন হতো?”
এবার রাহেলার ছেলে ধীরে ধীরে বলতে লাগলো, “মা, আমি যদি তখন সত্যটা বলতাম তবে ঝগড়া আরও বেড়ে যেত। এমনকি প্রচণ্ড ঝগড়া লেগে যেত। আর তোমাদের দু’জনের সম্পর্কও খারাপ হয়ে যেত। তাই, আমি সত্য বলিনি। আসলে, এখন সত্য বলা যায় না। সত্য কেউ পছন্দও করে না। সত্য বললে বিরাটবড় দোষ হয়। আর সত্য বলা অপরাধ!”
রাহেলা এমনিতে ছেলের ওপর ভয়ানক রেগে আছে। তারউপরে ছেলের এমনতর তাত্ত্বিক কথাবার্তা শুনে আরও রেগে গেল। আর সে রেগে গিয়ে বললো, “কে বলেছে তোকে এসব আজেবাজে কথা। সত্য কে শুনতে চায় না? আমি তো সবসময় সত্য পছন্দ করি। আর সত্য কথা বলি।”
রাহেলার ছেলে ধীরেসুস্থে বলে, “মা, তুমিও সত্য পছন্দ করবে না। ওটা তোমার মুখের কথা। তুমিও সত্য সহ্য করতে পারবে না। এসব আমি জানি। তাই, চুপচাপ থাকি।”
রাহেলা এবার ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠলো, “এই বেআদব! তুই মায়ের সম্মান ধরে রাখতে জানিস না! আর জানিস না, আমি সত্য ছাড়া আর-কিছুই পছন্দ করি না! আমি কখনোই মিথ্যা বলি না। সত্য শুনলে আমি খুব খুশি হই। আমি তোকে সত্য বলা শিখিয়েছি না?”
ছেলেটা তবু বলে, “মা, রাখো এসব কথাবার্তা। তুমিও সত্য সইতে পারবে না। সত্য এমন কঠিন জিনিস!”
রাহেলা তখন আরও ক্ষেপে গিয়ে একেবারে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে বলে, “কেন? কেন? কেন আমি সত্য সহ্য করতে পারবো না? আর কোন্ সত্য আমি সহ্য করতে পারবো না? তুই একবার বলে দ্যাখ না। আর দেখবি, আমি সত্য শুনে চুপচাপ বসে থাকবো। আর তোকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করবো।”
ছেলেটা তবু বলে, “পারবে না মা। পারবে না।
রাহেলা এ-কথায় আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে বলে, “বল্-বল্! কোন্ সত্য তোর? বল্ এখনই বল্। আমি সব শুনবো।”
ছেলেটা খুব শান্ত হয়ে বলে, “বলবো মা? বলবো?”
রাহেলা এবার ভয়ানক ক্রোধে বলে “বল্-বল্। তাড়াতাড়ি বল্।”
তখন ছেলেটা বললো, “মা, মনে কষ্ট নিয়ো না কিন্তু। এই যে বাবা মারা গেছেন মাস কয়েক হলো। তুমি বাবার জন্য কোনো দোয়া-দরুদ তো পড়োই না। তারউপরে সকাল-বিকাল পাড়ার জওয়ান ব্যাটাদের সাথে গল্পগুজব করছো। আড্ডা জমাচ্ছ। তাদের সাথে চা-ও খাচ্ছো!..”
কথাটা শোনার সঙ্গে-সঙ্গে রাহেলা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বললো, “হারামজাদা। কু-সন্তান একটা। কী জন্যি তোর মতো কুলাঙ্গারকে আমি পেটে ধরেছিলাম। আগে জানলে তোর মতো শয়তানকে জন্মের পরপরই আমি বিষ খাইয়ে...।”
রাহেলা এরপর সমানে জুতা-স্যান্ডেল নিক্ষেপ করছিল ছেলেটার দিকে। আর ছেলেটা পালাচ্ছিলো বাঁচার জন্য।
তবে ছেলেটা কিছুদূর গিয়ে আবার থেমে বললো, “মা তোমার সইয়ের পেটে যে চার মাসের বাচ্চা—সেটা কিন্তু তোমার সইয়ের আপন-স্বামীর না। ওটা অন্য কোনো ব্যাটার। পাড়ার লোকে এসব বলাবলি করে। আমি সব জানি।”
রাহেলা এবার লাঠি হাতে তেড়ে গিয়ে বললো, “ভাগ হারামজাদা! ভাগ! তুই আর কখনো বাড়ি আসবি না। তোর জন্যি এ-বাড়ির ভাত চিরতরে বন্ধ।”
তপ্ত দুপুরে ছেলেটা পালাতে-পালাতে বলছিল, “মা, আগেই তোমাকে বলেছিলাম, সত্য বলা অপরাধ। কেউ সত্য শোনে না। আজকালকার দিনে সত্যের কোনো দাম নাই। সত্য শুনলে জগতসুদ্ধ ক্ষেপে যায়। সত্যের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। আর সত্য বললে...।”

[এরপর প্রাণভয়ে ছেলেটার ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রস্থান।]

ছবি: গুগল ও নিজস্ব এডিট

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: এই যুগে সত্য বলা মানে নিজের সর্বনাশ করা।

৩০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৫৬

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: জ্বি, দাদা। ঠিকই বলেছেন।
পাশে থাকায় কৃতজ্ঞ।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৪১

সোনাগাজী বলেছেন:



গল্পের মতো কিছু হয়নি।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৩৯

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: একটা বাংলা নাটক আছে। নাটকের নাম সত্য বালক। সময় পেলে দেখবেন নাটকটা।

৪| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৫:৪৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:




*আর সত্যি কথা বলবেন না আবুল কালাম আজাদ*

নাটোর-১ (লালপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ নির্বাচনে খরচ করা এক কোটি ২৬ লাখ টাকা তোলার ঘোষণা দিয়ে এখন তোপের মুখে। সংবিধান ও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তার শাস্তি দাবি করছেন অনেকে।

এ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমি যে কথা বলেছি তা সত্য এবং সরল বিশ্বাসে বলেছি। তবে এখন মনে হচ্ছে সব সত্য কথা এভাবে বলতে নাই। ভবিষ্যতে এভাবে সত্য কথা বলবো না।”

- ইত্তেফাক অনলাইন ও ড্য়চেভেলে জার্মানি।

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৪২

ভগবান গণেশ বলেছেন: দাদা, গল্পে +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.