নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Rahul

রাউল।।

রাউল।। › বিস্তারিত পোস্টঃ

আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালার ভূমিকম্প

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:৫০

হিন্দুকুশে,ভূকম্প,মৃত ২০০
আফগানিস্তান,পাকিস্তানে বড় ক্ষতি : কেঁপে উঠলো ভারতও
কাবুল, ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লি, ২৬শে অক্টোবর- এপ্রিল-মে মাসে নেপাল। এবার জোরালো ভূমিকম্পের ধাক্কায় কেঁপে উঠলো আফগানিস্তান থেকে নয়াদিল্লি। আফগানিস্তানেই এই ভূকম্পের উৎকেন্দ্র ছিলো। বড় আকারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে-দেশে এবং পাকিস্তানের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাংশে। সোমবার দুপুরের এই ভূকম্পে দু’দেশ মিলিয়ে অন্তত ২০০জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে এদিন রাত পর্যন্ত। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতের কাশ্মীরে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভূকম্পের ধাক্কায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ভাঙলেও তেমন বড় কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে পাঁচ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে।

কাশ্মীরে এ-সময়ে পর্যটকদের ভিড়। উৎসবের মরসুমে দেশের নানা প্রান্ত থেকেই পর্যটকরা গিয়েছেন সে-রাজ্যে। ফলে দ্রুত উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। কিন্তু পর্যটকদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই জানা গেছে।

৭.৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎকেন্দ্র ছিলো আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ২৫০কিলোমিটার উত্তর–পূর্বে জুর্মে। হিন্দুকুশ পর্বতমালার সানুদেশে থাকা গোটা অঞ্চলেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে খবর। ৫০জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও দুর্গম এবং যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির আরো খবর পাওয়া যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাখারের তালুকান শহরে প্রবল ভূকম্পে আতঙ্কিত হয়ে স্কুল ছেড়ে পালানোর সময়ে পদপিষ্ট হয়ে ১২জন ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সকলেই শিশু। কাবুলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, বিপর্যয়ের জায়গায় টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। খবর পাওয়াই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাদাখশান প্রদেশের গভর্নর জানিয়েছেন, বিপুল পরিমাণ ধ্বংস হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এক হাজারের বেশি বাড়ি ভেঙে গেছে।

পাকিস্তানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং কেন্দ্রশাসিত উপজাতি এলাকা। এই দুই জায়গায় অন্তত ১২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পাঞ্জাবে মারা গিয়েছেন ৫জন। খাইবার পাখতুনখোয়াতে ৯৫৬জন এবং দেশজুড়ে এক হাজারেরও বেশি মানুষ জখম হয়েছেন। সোয়াত, চিত্রাল, শাঙলা, দির, বুনের জেলায় বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। দেশের পার্বত্য এলাকাগুলি থেকে ধসের খবর পাওয়া গেছে। করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, পেশোয়ার, কোয়েটা, কোহাতে ভূমিকম্পের ধাক্কা লাগে। চল্লিশ মিনিট পরে দ্বিতীয়বার ভূকম্প টের পাওয়া গেছে। ইসলামাবাদে বাড়িঘর রীতিমতো দুলতে দেখা গেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিপর্যয়ের স্থানে গেছে।

চিত্রাল থেকে সাংবাদিক গুল হাম্মাদ ফারুকী রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমি রাস্তার এক পাশ থেকে ছিটকে অন্য পাশে পড়ে যাই। আমার বাড়ি ভেঙে গেছে। জীবনে এইরকম কোনো ঘটনা দেখিনি।’ বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। চিত্রালে অন্তত ২০জনের প্রাণহানি হয়েছে।

সোমবার রাত পর্যন্ত কাশ্মীরে তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বারামুল্লা শহরে ভূমিকম্পের সময়ে বাড়ি ছেড়ে পালানোর সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৬৫বছরের প্রৌঢ়া জুমা বেগম। প্রায় একই পরিস্থিতিতে অনন্তনাগে মৃত্যু হয়েছে ৮০বছরের বৃদ্ধা ফতিমার। রিয়াসি জেলায় পশু চরাতে গিয়ে ছিটকে আসা পাথরে মারা গেছে ১৬বছরের কিশোর মহম্মদ আশরাফ। তাঁর বাবাও গুরুতর জখম হয়েছেন। সোপোরে বাঙ্কারের ছাদ ধসে যাওয়ায় আহত হয়েছেন দুই সেনা জওয়ান। পুলওয়ামায় জখম হয়েছেন ছ’জন। ভয়ে ঘরের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে আহত হয়েছেন আরো একজন। শ্রীনগরে জাহাঙ্গির চকের ফ্লাইওভারে ছোটখাটো ফাটল ধরেছে। পোলো ভিউতে ম্যাপল গাছের ডাল ভেঙে পড়ে কয়েকটি গাড়ির ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের সচিবালয় আতঙ্কে ফাঁকা হয়ে যায়। কর্মীরা দৌড়ে বেরিয়ে পড়েন। রাস্তায় যানজটও তৈরি হয়।

শ্রীনগরে ডাল লেকের হাউসবোটে ছিলেন ধূপগুড়ি থেকে বেড়াতে যাওয়া সুজিত ঘোষ। টেলিফোনে গণশক্তিকে জানান, ‘দুপুরের খাওয়ার সময়ে হঠাৎ দারুণ ভাবে দুলে ওঠে বোট। ভয় পাওয়ার মতোই ঘটনা। তবে কোনো ক্ষতি হয়নি। বিকেলেও শহরে ঘুরে দেখেছি তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জীবনযাত্রাও স্বভাবিকই আছে। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকদের কারোর কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে শোনা যায়নি।’ কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা, হোটেল ও হাউসবোটের মালিকরাও জানাচ্ছেন, পর্যটকদের কোনো বিপদ হয়নি।

রাজধানী দিল্লি দুপুর আড়াইটের কিছু পরে প্রবল ভাবে কেঁপে ওঠে। সঞ্চার ভবন, শাস্ত্রী ভবন, নীতি আয়োগের মতো বড় সরকারি দপ্তরগুলি থেকে সকলকে সরিয়েও দেওয়া হয়। ভয়ে বাড়িঘর, অফিস ছেড়ে মানুষ বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। মোটের রেলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা বেরিয়ে আসেন ভূগর্ভ থেকে। কিছুক্ষণের জন্য মেট্রো পরিষেবা বন্ধও করে দেওয়া হয়। উত্তরাখণ্ডে ভূকম্পে কাঁপন ধরলেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গুজরাট, মধ্য প্রদেশের উত্তরাংশে ভূকম্প টের পাওয়া গেলেও তেমন জোরালো ছিলো না।

উত্তর প্রদেশের বিজনৌরে অবশ্য এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সংবাদসংস্থা ইউ এন আই জানিয়েছে, কিরাতপুর থানা এলাকায় এক নির্মীয়মাণ বাড়ির সিঁড়ি ভেঙে পড়ে ভূমিকম্পের সময়ে। তখনই চাপা পড়ে নিহত হন আহমদ নামের এক শ্রমিক। তাঁর আনুমানিক বয়স ৪০।

২৫শে এপ্রিল নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরে পরপর প্রায় ৫০বার অনুকম্প টের পাওয়া গেছে। মে মাসে আরেকটি জোরালো ভূকম্প হয় নেপালেই। তখনই ভূকম্প-বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, হিমালয় ও হিন্দুকুশে এইরকম ভূমিকম্প আরো হতে চলেছে। বস্তুত ১লা সেপ্টেম্বর থেকে হিন্দুকুশে রিখটার স্কেলের মাত্রায় ৫-এর বেশি এমন ১২টি ভূমিকম্প ঘটেছে। উত্তর ভারতে এর প্রভাবও টের পাওয়া গেছে।


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:১১

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: ভয় হয় রইলাম বাকি আমরা নাকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.