![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অরূপকথার জাদুকর আমি!!
জামালের নাম কখন কিভাবে মাকরু হলো সেটা কেউ জানে না। জামালকে সবাই এখন মাকরু নামেই ডাকে। প্রথম প্রথম জামাল মাকরু ডাকে সাড়া দিতো না কিন্তু ধীরে ধীরে সে নিজেও এই নাম হজম করে ফেললো। এভাবে মাকরুর প্রবল দাপটে জামাল নামটা একসময় হারিয়ে গেলো। মাকরুর যে একটা পৈতৃক নাম আছে সেটা সবাই ভুলে গেলো। তবে তিন জন মানুষ জামালকে এখনো জামাল নামেই ডাকে। এই তিন জন মানুষের প্রথমজন হলো জামালের মা মনোয়ারা বেগম, দ্বিতীয় জন জামালের বাবা ইসমাইল হোসেন এবং তৃতীয়জন হলো জামালের মার্বেল খেলার সাথী ইমন।
প্রত্যেকটা মানুষ মায়ের পেট থেকে বের হওয়ার সময় বিশেষ একটা মেধা নিয়ে বের হয়। এই মেধা সে জন্মের পর চর্চা করে অর্জন করে না বরং চর্চার মাধ্যমে সেটাকে আরও ধারালো করে তোলে। ইমনের এমন একটা সহজাত মেধা হচ্ছে মার্বেল খেলা। শুধু মার্বেল খেলা বললে ভুল হবে ফুটবল, ক্রিকেট, ক্যারাম সব খেলায় সে সমান পারদর্শী। জন্মের পর থেকেই সে ভালো খেলছে। তবে ইমন মার্বেলেই খেলে। মার্বেল খেলতে সে সুখ পায়-- বলতে গেলে মার্বেল খেলা তার নেশা। স্কুল ফাঁকি দিয়ে শিমুল গাছের তলায় সে মার্বেল খেলে সারাদিন। স্কুল ব্যাগ অদূরে অসহায় হয়ে পড়ে থাকে গুল্মঝোপের নিচে। ঠিক স্কুল ছুটির সময় ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে বাড়িতে ফেরে। মাঝে মাঝে তার এই স্কুলচুরি ধরা পড়ে। যেদিন ধরা পড়ে সেদিন সন্ধ্যা বেলায় তার পীঠের ওপর ভারী শিলাবৃষ্টি ঝরে। পীঠের ওপর দিয়ে বৃষ্টি ঝড় যতোই বয়ে যাক ইমন তার মার্বেল খেলা ছাড়ে না। সে অপরিবর্তিত তবে প্রতিবার ধরা পরার পর মার্বেল খেলার জায়গা পরিবর্তিত হয়। সর্বশেষ সে শিমুলতলায় ধরা পড়েছে এক সপ্তাহ আগে। সেদিন মার্বেল খেলা চলছিলো যথারীতি জামালের সাথে। হঠাৎ জামালের বাবা ইসমাইল হোসেন কোথা থেকে যেনো আবির্ভূত হলেন চুপিচুপি। জামালকে ধরে ফেললেন খপ করে। এরপর টেনে নিয়ে গেলেন মারতে মারতে। ইমনকে কড়া কিছু কথা শুনিয়ে গেলেন। ইমন নিজে একটা খারাপ ছেলে পাড়ার অন্য ছেলেদেরকেও সে খারাপ করছে। পৃথিবীতে আর কি মার্বেল খেলার কেউ নেই। জামালকেই কেনো ডাকাডাকি। এরপর থেকে সে যেনো জামালকে আর তার সাথে মার্বেল খেলায় না ডাকে। ইসমাইল হোসেন শুধু এটুকুতেই ক্ষান্ত হলেন না সন্ধ্যা বেলায় ইমনের বাবার কাছে গিয়ে নালিশ করলেন। ইমনের পীঠের ওপর দিয়ে এবার বড়সড় একটা টর্নেডো বয়ে গেলো। টর্নেডোর আঘাতটা এখনো মুছে নি। জামালও ইমনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোয় বেশ ব্যথিত। ব্যথার ফলাফলস্বরূপ তারা দু’ জনে এখন আরও মহা উদ্যমে মার্বেল খেলায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছে। ইমন মনে মনে ইসমাইল হোসেনকে একটা শাস্তি দেয়ার ফন্দি এঁটে ফেলেছে। ইসমাইল হোসেনের অতি প্রিয় একটা জিনিস আছে। সেই জিনিসটা চুরি করার ফন্দি। ফন্দিটা জামালের বেশ পছন্দ হয়েছে। কারণ তার বাবা ইসমাইল হোসেনের প্রিয় জিনিসটার প্রতি সে নিজেও ভয়ানক রুষ্ট। কাজেই চুরির ভারটা সেই নিলো। চুরিটা হবে আজই। জামাল অপেক্ষায় আছে। ইসমাইল হোসেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা।
প্রতিদিন সকাল ঠিক দশটার সময় ইসমাইল হোসেন দেড় প্লেট ভাত খান। গরম ভাত। ঘড়িতে এখন সময় সকাল দশটা। ইসমাইল হোসেন খাওয়ার টেবিলে বসেছেন। তাঁর সামনে একটা সোনালী রঙের প্লেট। পিতলের প্লেট। এই পিতলের প্লেটই হচ্ছে ইসমাইল হোসেনের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। প্লেটটা একান্তই তাঁর। তিনি ছাড়া অন্য কেউ এই প্লেটে হাত দিতে পারেন না। ইসমাইল হোসেন কাউকে হাত দিতে দেন না। এই প্লেটটা একসময় তাঁর দাদার দখলে ছিলো। দাদা থেকে বাবার হাত ঘুরে এখন তাঁর হাতে এসে পড়েছে। তাঁর হাত থেকে একসময় এই প্লেট যাবে জামালের হাতে। পরম্পরা। ইসমাইল হোসেনের দাদা শক্ত হাতে এই পরম্পরা শুরু করেছিলেন। পরম্পরা তখন থেকেই শক্ত হাতে চলে আসছে। ইসমাইল হোসেনের হাতে এসে বরং সেটা আরও শক্তিশালী হয়েছে। দিনে দিনে পিতল প্লেটের মর্যাদা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তবে ইসমাইল হোসেন তাঁর এই পৈতৃক পিতল প্লেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ সন্দিহান। জামাল যে এই পিতল পরম্পরার পায়ে কুড়াল মারবে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। ইতোমধ্যে ইসমাইল হোসেনের এই প্লেটটা সে কয়েকবার গুম করার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু ইসমাইল হোসেনের অতি সতর্কতার কারণে শেষমেশ সে সফল হতে পারে নি। পিতল প্লেট স্বমহিমায় টিকে আছে এখনও। ইসমাইল হোসেন পিতল প্লেটে খাওয়া শেষেই সেটাকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। ঠিক তার খাওয়ার সময় পিতল প্লেট আবার বেরিয়ে আসে তালামুক্ত হয়ে।
ইসমাইল হোসেন খাওয়া শেষ করে এগারোটার সময় ব্যাগ হাতে বের হলেন। পিতল প্লেট তালাবদ্ধ করতে ভুললেন না। এই কাজটা শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত অবশ্য তিনি কোনদিন ভুলেন নি। বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি সোজা ইমনদের বাড়িতে এলেন। ইমন বাড়িতেই আছে। ইসমাইল হোসেনকে দেখে সে ভেতরে ভেতরে ভয় পেলো ভীষণ। ইসমাইল হোসেন তো কখনো এই সময় তাদের বাড়িতে আসেন না। তাহলে কি জামাল ধরা পড়লো? ইসমাইল হোসেন বাড়িতে ঢুকেই ইমনের খোঁজ করতে লাগলেন। ইমন অবস্থা বেগতিক দেখে বাহির দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলো বাইরে। বাইরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকলো। ইসমাইল হোসেন চলে যাওয়ার পর আবার ফিরে এলো বাড়িতে। বাড়িতে বাবা নেই কাজেই মাকে যদি ইসমাইল হোসেন কোন নালিশ দিয়ে থাকেন তাহলে সেটাকে বাবার কানে যাওয়া থেকে বিরত করতে হবে। ইমন ভীরু পায়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়ালো। ইমনের মা হাসলেন। বললেন, কিরে কই লুকাইছিস? তোর নামে নালিশ করেন নি। দ্যাখ তোকে কি দিয়ে গেছেন। ইমন দেখলো ইসমাইল হোসেন তাকে শরৎচন্দ্রের দু’ তিনটা বই-- এর মধ্যে একটা বই আকারে বেশ বড়, অনেকগুলো চকলেট আর একটা ফুটবল দিয়ে গেছেন। ইমন জিনিসগুলো দেখেই বাড়ি থেকে ছুটে পালালো। ইমনের মা ইমনের এমন অদ্ভুত আচরণে বেশ অবাক হলেন। ইমন বাড়ি থেকে বের হয়েই সোজা শিমুলতলায় চলে এলো। শিমুলতলায় এসে দেখলো জামাল ইতোমধ্যে এসে হাজির। জামালের হাতে কোন প্লেট নেই। ইমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বললো, কিরে কখন এলি? জামাল কখনের উত্তর না দিয়ে দাঁত বের করে বললো, প্লেট পাওয়া গেছে। ইমন বিরক্ত কণ্ঠে বললো, কই? কিভাবে পাইলি? তালা ভাঙ্গছিস না-কি? জামাল গুল্মঝোপের নিচ থেকে সোনালী পিতল প্লেট বের করে ইমনের হাতে দিয়ে বললো, না তালা ভাঙ্গিনি। তালা খুলছি নকল চাবি দিয়ে। ইমন একটু আশ্বস্ত হলো। তালা ভাঙলে ঘটনা প্যাঁচ লেগে যেতো। সে পিতল প্লেট চারিদিকে নেড়েচেড়ে দেখে বললো, এরই মধ্যে চাবি চুরি করে নকল চাবি তৈরি করে ফেলছিস। শাবাশ! তোকে দিয়ে হবে। জামাল গলে গেলো। বললো, এখন কি করবো এটার? ইমন বললো, কিছুই করতে হবে না। তুই যেভাবে গোপনে প্লেটটা নিয়ে এসেছিস ঠিক সেভাবেই আবার আগের জায়গায় রেখে আয়। কোন প্রশ্ন করবি না। দ্রুত রেখে আয়, কথা আছে। আসার সময় চাবিটা নিয়ে আসিস। উল্টাপাল্টা কিছু করিস না। জামাল ইমনের এমন পরিবর্তনে ব্যাপক বিস্মিত হলো, কিন্তু সে কোন প্রশ্ন করতে পরলো না। ইমনের কথার সে চুল পরিমান এদিক সেদিক হতে পারে না। এটা তার মনের দুর্বলতা-- ইমন তাকে জামাল বলে ডাকে হয়তো সেজন্যই। পিতল প্লেট স্বস্থানে রেখে জামাল ফিরে এলো শিমুলতলায়। ফিরে এসে সে নকল চাবিটা ইমনের হাতে সমর্পণ করলো। ইমন চাবিটা তৎক্ষণাৎ ঝোপের পাশের দীঘির জলে নিক্ষেপ করলো সজোরে। ইমনের চাবি নিক্ষেপে জামালের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো এবং তার ভেতরকার এই দীর্ঘশ্বাসের ক্ষীণ শব্দটুকু মুহূর্তেই দীঘির শান্ত কালো জলে বেজে উঠলো টুপ করে।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১৮
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত। ভালো থাকবেন।
২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯
নেক্সাস বলেছেন: গল্পের বিষয় বেশ ভাল লেগেছে। লিখার হাতও ভালো। বাক্য চয়ন ও উপমা চয়নে আরো একটু যত্নবান ও সাজানো হলে হলে বেশ সমৃদ্ধ গল্প হতে পারে। লিখা চালিয়ে যান...
০৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:২৪
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১
তুষার কাব্য বলেছেন: ভালো লেগেছে গল্প..
হ্যাপি ব্লগিং...
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ অশেষ, তুষার কাব্য। ভালো থাকবেন।
হুম হোপ সো
৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৪
মামুন রশিদ বলেছেন: দারুণ লিখেন আপনি । খুব ভালো লেগেছে গল্পটা । জীবন থেকে তুলে আনা গল্পটা সাজিয়েছেন অপরুপ ভাবে ।
ভালোলাগা++
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১১
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: থ্যাংকস @ মামুন রশিদ ভাই। আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইলো।
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৬
অপ্রতীয়মান বলেছেন: দুরন্ত শৈশবের একাংশ গল্পে তুলে নিয়ে এসেছেন।
ভালো লেগেছে গল্পটি।
শুভ কামনা জানবেন।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৪
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগলো শুনে। ধন্যবাদ অশেষ। ভালো থাকবেন @ অপ্রতীয়মান ।
৬| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৪১
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লাগলো খুব ভ্রাতা।
শৈশবের এমনই কাছাকাছি কিছু ঘটনা আছে।
অনেক শুভকামনা।।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ অশেষ, অপূর্ণ রায়হান। ভালো থাকবেন। আপনার জন্যও রইলো অনেক শুভকামনা।
৭| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
কাবিল বলেছেন: ভালো লাগলো + + +
০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:০৪
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
৮| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৪
নীল আতঙ্ক বলেছেন: ইমনের চাবি নিক্ষেপে জামালের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো এবং তার ভেতরকার এই দীর্ঘশ্বাসের ক্ষীণ শব্দটুকু মুহূর্তেই দীঘির শান্ত কালো জলে বেজে উঠলো টুপ করে।ইমনের চাবি নিক্ষেপে জামালের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো এবং তার ভেতরকার এই দীর্ঘশ্বাসের ক্ষীণ শব্দটুকু মুহূর্তেই দীঘির শান্ত কালো জলে বেজে উঠলো টুপ করে।"
চমৎকার গল্প ভাইয়া।
++++++++++++++
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৫৯
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, নীল আতঙ্ক।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা রইলো।
৯| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০০
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লেগেছে।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৪
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই @ হাসান মাহবুব।
ভালো থাকবেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪১
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: এক নিঃস্বাশে পড়ে শেষ করলাম । ভালো লাগলো ।