![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অরূপকথার জাদুকর আমি!!
তাহসিনুল ইসলাম তরুণ লেখক হলেও তাঁর সাহিত্য রচনাশৈলী দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না। সমকালিন চিন্তা চেতনাকে কিছুটা অতিক্রম করে তিনি তাঁর উপন্যাস নীল নির্বাসনে ফুটিয়ে তুলেছেন উত্তর আধুনিক চিত্রকল্প। শব্দের সাথে শব্দকে চমৎকার ভঙ্গিমায় গেঁথে তৈরি করেছেন এক ভিন্ন ধরণের গল্প ভাবনা যা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সুউচ্চ লেখকের মর্যাদায়। নীল নির্বাসনে আমরা দেখি উপন্যাসের নায়ক শরিফের প্রিয় রঙ নীল। নীল রঙটার প্রতি শরিফের রয়েছে এক ভয়ঙ্কর দুর্বলতা। সে নীল রঙে এতোটাই আচ্ছন্ন যে সূর্যের সাতরঙ যেনো তাকে আর স্পর্শ করতে পারে না। লেখক ব্যাপারটা বলেছেন এভাবে-- ‘সূর্যটাও দিন দিন একরঙা হয়ে যাচ্ছে। নীল রঙা। নীল রঙটা যেনো অদৃশ্যের মতো সব জিনিসের গায়ে লেপটে যাচ্ছে ক্রমাগত।’ লেখক শরিফের চোখে এই নীল রঙ লেপটে যাওটাকে বলেছেন-- নীল রঙা রোগ। একটু অদ্ভুত বটে। কিন্তু উপন্যাসের মাঝপথে শরীফ যখন তার এই নীল রঙা রোগের কারণ ব্যাখ্যা দেয় তখন সেটাকে আমাদের কাছে আর অদ্ভুত লাগে না। লেখক বেশ লজিকের সাথে সেটা ব্যাখ্যা করেছেন। শরিফের এই নীল রঙা রোগকে কেন্দ্র করে লেখক পাঠককে টেনে এনেছেন এক স্বপ্নিল জগতে। এই জগতে একবার পা রাখলে পুরোটা পরিভ্রমণ না করে আর বের হওয়ার উপায় থাকে না। আমি নিজেও যখন এই উপন্যাসে ঢুকেছি পুরোটা পরিভ্রমণ না করে বের হতে পারিনি। উপন্যাসের বর্ণনাভঙ্গি এতোটাই অপরূপ, সাবলীল এবং আনন্দমধুর যে উপন্যাসটাকে আমাকে টানতে হয়নি বরং উপন্যাসেই আমাকে টেনে নিয়ে গেছে শেষ অবধি। পুরোটা সময় উপন্যাসে আমি আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম এক অন্যরকম মন্ত্রমুগ্ধতায়। উপন্যাসের প্রত্যেকটা চরিত্র জীবন্ত। লেখক ছোট ছোট চরিত্রগুলোকেও বেশ দরদ দিয়ে এঁকেছেন। তাই একরাশ মন্ত্রমুগ্ধতা নিয়ে যখন আমি উপন্যাসটা শেষ করি তখন রিক্সাচালক ইয়াসিন আলী, ফুলবিক্রেতা কেরামত কিংবা সাইকিয়াট্রিস্ট পারভেজ হায়দার আমার বেশ আপন হয়ে উঠে। এছাড়া উপন্যাসের আরেকটা অদ্ভুত চরিত্র কৈতর মানবী আমেনা বেগম। লেখক এই চরিত্রটাকে বেশ মজাদার করে এঁকেছেন। কৈতর মানবী তো আমার মাথার ভেতর দু’দিন আসন গেঁড়ে ছিলো। মাথা থেকে কৈতর মানবীর প্রবল রেশ কেটেছে দু’ দিন পর। এটাই হচ্ছে তাহসিনুলের লেখার সার্থকতা। সে চরিত্রকে এতো নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলে যে পাঠক সে চরিত্রের সাথে একাকার হয়ে যায়। কৈতর মানবী ছাড়াও উপন্যাসের প্রায় প্রত্যেকটা চরিত্র যেমন রেবু, শরিফ, জাহানারা বেগম, পারভেজ হায়দার, আজমল হোসেন সবার মাঝে আমরা একপ্রকার খামখেয়ালীপনা দেখতে পাই যদিও খামখেয়ালীপনাটা বেশি দেখা যায় উপন্যাসের নায়িকা রেবুর চরিত্রে। মজার ব্যাপার হলো-- এই খামখেয়ালীপনাটাকে কিন্তু আমাদের কাছে কখনও অযৌক্তিক মনে হয় না বরং এটা উপন্যাসটাকে বেশ মজাদার করে তুলেছে, যদিও শেষের দিকে রেবুর বিয়েতে মাত্র নয়টা কার্ড ছাপার ব্যাপারটাকে কেমন একটু বিদঘুটে মনে হয়। তবুও এই ব্যাপারটাকেও যুক্তিসঙ্গত করে তোলার মতো অনেক উপাদান লেখকের হাতে আছে। আরেকটা লক্ষণীয় ব্যাপার হলো যে, নায়িকার বয়স সবসময় নায়কের চেয়ে কম থাকে। এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় যা বাংলাদেশের সাহিত্যে বা সিনেমা নাটকে আমরা দেখে আসছি যুগ যুগ ধরে। কিন্তু নীল নির্বাসনে তাহসিন খুব দারুণভাবে সুনিপুণ দক্ষতায় নায়িকার বয়স নায়কের চেয়ে তিন বছর বেশি বেঁধে দিয়েছেন। এই কাজটা কিন্তু সহজ না। এটা কেবল দুঃসাহস থাকলেই করা যায়। নীল নির্বাসনে দেখি নায়ক অবলীলায় নায়িকাকে তুমি বা তুই সম্বোধন করে কিন্তু এতে নায়িকা মোটেই ক্ষিপ্ত হয় না। পাঠক বা লেখক নিজেও হয়তো চাইবে না যে তাঁর জীবনে তিন বছরের বা পাঁচ বছরের বড় কোন স্বপ্নকন্যা আসুক। কতোটা প্রবল মানসিক জোর থাকলে এমন একটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রেমের উপন্যাস লেখা যায় তা শুধু তাহসিনুল ইসলাম দেখাতে পেরেছেন দুর্দান্ত সাহসে। নীল নির্বাসনের চরিত্রগুলোতে তাহসিনুল একদিকে যেমন বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গিমায় রস ঢেলে দিয়েছেন অন্যদিকে উপন্যাসের ভাষাটাকেও নিয়ন্ত্রণ করেছেন সুদক্ষ হাতে। তাহসিনুলের বর্ণনার মাঝে রয়েছে একটা অভিনবত্ব যা পাঠককে চমকে দেবে। সে যখন বলে, ‘কান্নার মৌলিক দাবী নির্জনতা। নির্জনতায় কান্না নির্লজ্জের মতো ঝরে পড়ে অবাধে।’ কিংবা, ‘সুগভীর সাগরের সুনীল শূন্য বুকে যখন কেউ ভাসতে থাকে উপায়হীন তখন একটা ক্ষুদ্র কাঠের টুকরাই তাকে জীবনের আশা দেখায়।’ তখন আমরা একটু নড়েচড়ে বসি বটে। সামান্য ব্যাপারগুলোকেও তিনি তাঁর লেখায় বেশ মজাদার করে তুলেছেন। যেমন আবুল বাশার তার বিবি কৈতর মানবী আমেনা বেগমের হাতের রান্নায় মুগ্ধ। তার ধারণা এই মহিলাকে রান্নায় নোবেল পুরুস্কার দেয়া উচিত। তার বিবির হাতের রান্না যে একবার খায় সে চৌদ্দ জনম তার স্বাদ ভুলতে পারে না। আবুল বাশার তাই তার বাড়িতে সবাইকে আমন্ত্রণ করে তার বিবির হাতের কৈতরের মাংস খাওয়ার জন্য এবং দেখা যায় সত্যি আমেনা বেগমের কৈতর মাংস অসাধারণ। আবুল বাশারের বাড়িতে আমন্ত্রিত একজন লেখক কৈতর মাংস খেয়ে এতোটাই মুগ্ধ হয়ে পড়েন যে তিনি পরবর্তীতে পত্রিকায় লেখকের স্মৃতি পাতায় একটা আর্টিকেল লিখেন কৈতর মানবী শিরোনামে। তাহসিনুল সেটা বেশ মজাদার করে উপস্থাপন করেছেন-- ‘ এ এক অদ্ভুত সন্ধ্যা। আমার ষাট বছরের জীবনে এমন অদ্ভুত সন্ধ্যা এর আগে কখনও আসে নি। সামান্য একটা কৈতরের মাংস। আ-হা এই কৈতরের মাংস পুরো সন্ধ্যার রূপ বদলে দিলো। কৈতর মাংস তো নয় যেনো আসমানের খানা। মান্না আর সালওয়া। কি অবাক কাণ্ড? আমার ষাট বছরের কৈতর ভক্ষন এক সন্ধ্যায় ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। ষোল আনাই বৃথা হয়ে গেলো।’ এছাড়া তাহসিনুলের নীল নির্বাসনে আরেকটা ব্যাপার যেটা লক্ষ্য করা যায় সেটা হলো তথ্যবহুলতা। লেখক উপন্যাসের গল্পের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। যেমন উপন্যাসের আরেকটি মজাদার চরিত্র জাহানারা খাতুনের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় ঘটে এভাবে-- ‘জাহানারা খাতুনকে বেশ ক্রোধান্বিত দেখাচ্ছে। জাহানারা খাতুন অতি উত্তেজিত। অতি উত্তেজিত অবস্থায় ব্রেনের মধ্যে বৈদ্যুতিক বিকিরণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। জাহানারা খাতুনের মস্তিষ্কেও বৈদ্যুতিক বিকিরণের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। জাহানারা খাতুনের মস্তিষ্কে ব্রেন ওয়েভ ফ্রিকুয়েন্সি এখন প্রতি সেকেন্ডে ২৭ সাইকেল থেকে ২৯ সাইকেল। গামা ব্রেন ওয়েভ। চূড়ান্ত লেভেল। জাহানারা খাতুন এখন চূড়ান্ত মানসিক উত্তেজনার মধ্যে আছেন।’ লেখকের বর্ণনার এই যে চমৎকার অভিনবত্ব সেটা দেখা মেলে পুরো উপন্যাস জুড়ে। তাহসিনুলের নীল নির্বাসন বাংলা সাহিত্যে একটা নতুন মাত্রা যোগ করলো যা বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের ইতোমধ্যে একটা নতুন স্বাদের আমেজ প্রদানে সক্ষম হয়েছে এবং হবে। লেখক এভাবে আমাদের আরও সুন্দর সুন্দর উপন্যাস উপহার দেবেন এই প্রত্যাশা রইলো।
http://www.rokomari.com/book/76984
নীল নির্বাসন (উপন্যাস)
প্রকাশনাঃ নন্দিতা প্রকাশ
প্রকাশকালঃ অমর একুশে বইমেলা- ২০১৪
# উল্লেখ্য ২০১৫ বইমেলায় জাগৃতি প্রকাশ থেকে আমার একটি রহস্য উপন্যাস প্রকাশিত হবে। নাম, ঘাতক। আশা করি উপন্যাসটা সকলের ভালো লাগবে।
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ অশেষ।
ভালো থাকবেন।
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৭
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ভালো থাকবেন।
শুভকামনা রইলো।
৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬
এহসান সাবির বলেছেন: ঘাতক টা কিনব আশাকরি। নীল নির্বাসন পড়ার চেষ্টা থাকবে।
শুভ কামনা।
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, এহসান সাবির।
ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৫০
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: শুভেচ্ছা রইলো।