নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বিনির্মাণে যাঁরা দিয়েছেন নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ, আমরা তো কেবল তাদের পথের যাত্রী।

সৈয়দ তাজুল ইসলাম

সমাজের সন্তান

সৈয়দ তাজুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনাব সাইফুল ইসলাম স্যার

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:২০

তখনও আমাদের ধারাপাতের ক্লাস শেষ হয়নি। আমরা চাচাতো-ফুফাতো ভাইবোনগুলো একই সাথে একই ক্লাসে পড়তাম। পাঁচ থেকে ছ'জন ছিলাম আমরা। সমবয়সী হওয়ায় কাকারা আমাদেরকে একই ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছিলেন যে এমন না। বরং দু'একজন ছিলেন এমন, যারা অকৃতকার্য হয়ে আমাদের সঙ্গ নিয়েছিলেন। আমাদের অধিকাংশের কাছে এই ধারাপাতের ক্লাস ছিল সবচেয়ে কঠিন।

আমাদের কোন ক্লাস রুম ছিল না। বাহিরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে স্যার আমাদের ক্লাস নিতেন। পেট-সমান দেওয়ালের উপর আমরা বই রেখে দাঁড়াতাম। সেটা ছিল আমাদের ছেকন্দো ক্লাসের কথা। স্যারের মনমুগ্ধকর ক্লাস নেওয়ার পদ্ধতি আমাদেরকে আকৃষ্ট করত। ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে অথবা ক্লাস ফাঁকি দিতে চাইলে আমরা স্যারের ক্লাস শেষেই যা করার করতাম। স্যারকে আমরা খুব বেশি ভালবাসতাম। আমাদের মধ্যে ফুফাতো ভাই রিয়াজ ছিল সবচেয়ে চালাক। ধারাপাতের ক্লাস আসলে তাকে ক্লাসে পাওয়া যেত না। যারা ধারাপাত স্যারের পড়া শিখে আসত না তারা রিয়াজ এর মত ক্লাস ফাঁকি দিত। অথবা প্রস্রাবের বিরতিকালে লুকিয়ে চলে যেত বাড়িতে। আমি তখন ইংরেজিতে কাঁচা ছিলাম। আমার মা ইংরেজি কম জানতেন, তাই ইংরেজি ক্লাস শুরুর পূর্বেই আমি চলে যেতাম নিকটে থাকা বন্ধুদের বাড়ি৷ একেকদিন একেকজনের বাড়ি। সেই বন্ধুদের মধ্যে হাবিব নামের বন্ধুটি ছিল সবচেয়ে কাছের। (পরবর্তীতে আধুনিক হয়ে তার নাম জনি রেখেছে।) তার সাথে তাদের পুরাতন বাড়িতে ঘুরতে যেতাম। এমনিতেই। কোন প্রয়োজন ছাড়াই আমরা ঘুরে-বেড়াতাম গ্রামের সকল চিপা-চাপা। ওদের বাঁশ বাগানে বকের বাসা খোঁজতাম। জমিতে ওদের কাজের লোকদের জন্য খাবার নিয়ে যেতাম। জমিতে গিয়ে যখন আকষ্মিক ওর বাবাকে সেখানে দেখতাম তখন দু'কেআর (আমাদের অঞ্চলে ৩১ শতককে এক কেআর বলে) জমির দূরত্বে খাবারের পাত্র রেখে চলে আসতাম; ওর বাবার ভয়ে পাশে যেতাম না। তখন হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ব্যাথা হয়ে যেতো। তবু আমরা মনের সুখে ঘুরে বেড়াতাম। "ধান শুকায় নাড়াত, মানুষ শুকায় হাঁটাত"। হয়ত সেকারণেই পরবর্তীতে আমি তেমন মোটা হতে পারিনি। এই বিষয়ে আমার কোন আফসোস না থাকলেও আমার বোনদের খুব আফসোস ছিল। এই আফসোসটা আমার খালাতো বোনদেরকেও গ্রাস করতো। আর এইসব ঘুরেবেড়ানোর জন্য নির্ধারিত টাইম ছিল ইংরেজি স্যারের ক্লাস। ইংরেজি স্যারকে তখন আমরা ঘৃণা করতাম। উনি ছাত্রদের বেত্রাঘাত করতেন বলে। ধারাপাত স্যারও ক্লাসে বেত নিয়ে আসতেন, তবে ইংরেজি স্যারের মত এমন দয়ামায়াহীন ছিলেন না। আমি সেই বিদ্যালয়ে আট বছর পড়ালেখা করি। আমার দেখা অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখা ছাড়ার মূল কারণ স্যারের এই মারপিট। এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের ঘর জামাই হওয়া ও প্রেন্সিপালের ভাল রেজাল্টের উচ্চাকাঙ্খা এই মারপিট চালু থাকার মূল কারণ।

পরবর্তীতে ধারাপাতের ক্লাসগুলো শেষ হওয়ার পূর্বেই ভালোবাসার এই স্যারকে আমাদের কাকারা আমাদের বাড়ীতে লজিং-এ নিয়ে আসেন। আর এতে করে ধারাপাতের ক্লাসগুলোর শেষ হলেও আমাদের শৈশব জীবন থেকে ধারাপাতের আর বিদায় হয়নি। একেবারে কৈশরের মধ্যভাগ পর্যন্ত স্যারকে আমরা সাথে পাই। ছয় পরিবার নিয়ে গঠিত আমাদের সৈয়দ বাড়িতে মহল্লার একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ আছে। আমাদের ধারাপাত স্যার সেই মসজিদের ইমাম ছিলেন। 'সুন্দরপুর পাঞ্জেগানা মসজিদ' নামের সাথে মিলিয়ে বাস্তবে আমরা সুন্দর মনের একজন ইমাম পেয়েছিলাম। যিনি একই সাথে ছিলেন আমাদের ধারাপাত স্যার, ইমাম, অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমি হয়ে উঠার পেছনে যে মানুষগুলোর আপ্রাণ চেষ্টা কাজ করেছে (ধারাপাত স্যার) জনাব সাইফুল ইসলাম সাহেব তাদের মধ্যে একজন।

আজ এতো বছর পর হঠাৎ করে স্যারের কথা খুব মনে পড়ছে। স্যারের সাথে যোগাযোগের কোন সুযোগ নেই। তাই মনের কষ্ট দূর করতে এই ব্লগ লেখা। প্রিয় ধারাপাত স্যার, যেখানেই থাকুন পরিবার সহ ভালো থাকুন ও সুস্থ থাকুন এই কামনা করি। মানুষ গড়ার এমন সব কারিগরদের প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও শুভকামনা থাকলো।


১১:১৮
২৮/০১/২২
অভাদা, অ্যালেজান্দ্রিয়া।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:১৬

কুশন বলেছেন:



স্যারের বাড়ী থেকে আপনাদের বাড়ীর দুরত্ব কতদুর ছিলো?

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:২৫

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: শ্রদ্ধেয় স্যারের বাড়ি নরসিংদীতে আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূর।
ধন্যবাদ।

২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:২৯

কুশন বলেছেন:



পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব হলো ২ লাখ ৪০ হাজার মাইল; 'অনেক দুর' কোন ধরণের উত্তর হতে পারে না।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩৫

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: আমাদের বাড়ি সিলেটে। দেশে থাকাকালীন সময়ে খুব একটা যে কথা বলতাম তেমন না। তবে প্রায়ই চেষ্টা করেছি কিন্তু পেরে উঠতে পারিনি। এখন দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে মহব্বতও বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্যারকে খোঁজতেছি। দেখি কোথাও পাই কিনা।

৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫২

খায়রুল আহসান বলেছেন: শিক্ষককে স্মরণ করেছেন, তাঁর স্মৃতিকে স্মরণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি লিখেছেন, ভালো লেগেছে। আমিও আমার শিক্ষকদেরকে প্রায় সময়ই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকি। তাদের অবদান অমূল্য আমার জীবনে।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৮

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: জি ভাই,
লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র। প্রকৃত অর্থে এটা ঐরকমের লেখা হয়ে ওঠেনি। যেখানে স্যারের সম্পর্কে আরো তথ্যাদি ও স্যারের কিছু উক্তি থাকার প্রয়োজন ছিল। কিছুই তুলে আনতে পারিনি। তবে চেষ্টা করবো সময় করে একবার স্যারকে নিয়ে আরেকটা পোস্ট দিতে। যা স্বল্প হলেও যেন শ্রদ্ধাঞ্জলি হয়ে ওঠতে পারে।
আমার জীবনে স্যারদের স্মৃতি সবসময়ই অটুট হয়ে থাকবে। তাদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। ঋণি হয়েই বেঁচে থাকবো এই জগতে।


আমিও আমার শিক্ষকদেরকে প্রায় সময়ই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকি। আপনার শিক্ষককে নিয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলেন। আমি সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছি খায়রুল আহসান ভাই।

আপনার নিকট কৃতজ্ঞ। অনেক অনেক ভালোবাসা জানবেন।

৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০২

তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: শিক্ষার জন্য এসে সেবার জন্য বেরিয়ে যাওয়া ছাত্ররা শিক্ষকদের মনে রাখতে পারে না , তাদের খোজ রাখে না ।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:২৬

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: এটা ছাত্রের ব্যর্থতাই দায়ী। আমার মত হয়তো কেউ ব্যস্ততাকে দায়ী করবে। কিন্তু মোটেও তা সত্য নয়। সত্য হওয়া উচিত শিক্ষকের অগ্রাধিকার।

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:২৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: সুন্দর স্মৃতিচারণ । স্যারকে মনে রেখেছেন , আমারও একজন প্রিয় স্যার আছে আনিস স্যার ওনার সাথে বাড়িতে গেলে মাঝে মাঝে দেখা হয় , কথা হয় । ভালো থাকুক সকল শিক্ষাগুরুরা ।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:২৯

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: আপনার আনিস স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলবো, স্যারের খোঁজখবর রাখবেন সবসময়। স্যারদের কিন্তু আমাদের কাছে কোন প্রাপ্তির আশা থাকে না। আমাদের উচিত সন্তানের মতই তাদের পাশে থাকা। আপনার থেকে শুনা আপনার শিক্ষকের সাথে মাঝেমধ্যে দেখা হওয়ার কথাটি আমায় ঈর্ষান্বিত করছে। আপনার শিক্ষকের জন্য শুভকামনা থাকলো।

ভালো থাকুক সকল শিক্ষাগুরুরা।

৬| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:১৩

নীল আকাশ বলেছেন: আজকাল এত উত্তম শিক্ষকদের আর পাওয়া যায় না।
আল্লাহ উনাকে উনার ভাল কাজের জন্য উত্তম প্রতিদান দান করুন, আমীন।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ২:৩১

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: আমীন।

নীল আকাশ ভাই, আমি আমার সারের কাছে ঋণী। আমি উনার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না জানি, তবে একটু পাশে থাকার সুযোগ খোঁজছি। দু'আ করবেন।

৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রথমেই শ্রদ্ধেয় সাইফুল ইসলাম স্যারের প্রতি আমার সালাম ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। অনেক সুন্দর লিখেছেন, খুব নস্টালজিক হলাম।

শৈশব থেকে শিক্ষাজীবনের শেষ ধাপ পর্যন্ত যত শিক্ষক পেয়েছি, তাদের মধ্যে সবাই ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার পাত্র, যাদের নিয়ে এখনো আমরা অনেক স্মৃতিচারণ করি। আমার একটা বই সেই শিক্ষকদের নামে উৎসর্গ করেছি, অনেক লেখালেখিতে শিক্ষকদের নামও চলে এসেছেন। আমাদের কাছ থেকে 'ঘৃণা পাবার যোগ্য' কোনো শিক্ষককে আমি পাই নি। অনেক শিক্ষকের কথা মনে পড়লে অনেক একাকী সময়ে চোখও ভিজে ওঠে। সেই ভালোবাসাময় সোনালী উজ্জ্বল মুখরিত দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার জন্য মন খুব ছটফট করে, অস্থির হয়। কিন্তু জীবন তো রিওয়াইন্ড করা যায় না, ওয়ান-ওয়ে পথের পথিক আমরা সবাই।

ভালো লেগেছে লেখাটা। প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী।

৮| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:১০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা স্যারের প্রতি। সম্মানিত লোক স্মরণ করা উচিত

৯| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: স্যারকে খুঁজে পেলে কি করবেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.