![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্লান্তিতে মাথাটা এলিয়ে দিয়েছিলাম বাবুর কাঁধে। সেই সকালের কলেজ ড্রেস ঘামে ভিজে রয়েছে।শরীর ঘিন ঘিন করছিল।খুব ক্ষিধে পেয়েছিল। স্টেশনে বাবু কি সব খেতে দিয়েছিল, তা মুখে তোলা যায়নি। আর ষ্টেশনের বাথরুমের কথা কি বলব। এখনো গা গুলাচ্ছে। এটাই আমার লাইফে ফার্ষ্ট ট্রেন জার্নি। তবে এ পরিস্থিতেতে কোনো একসাইটমেন্ট কাজ করার কথা নয়। ট্রেনের দুলুনিতে মাঝে মাঝে চোখ বুজে আসছিল। তখন বাবার মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম। বাবার সবচেয়ে আদরের আমি। গত বছর তিনি সবাইকে একা রেখে চলে গেলেন পরপারে। ভাইয়া-ভাবি, আমি আর মাকে নিয়েই আমাদের সংসার। ভাইয়ার কাধেই সব দায়িত্ব। ভাবিও ভালোই ছিলেন। কিন্তু যেদিন থেকে আমার আর বাবুর রিলেশনের ব্যাপারটা টের পেলেন, সেদিন থেকেই জ্ঞান দিতেন। ভাবটা এমন, যেমন আমার ভালো আমার থেকে তিনিই বেশি বোঝেন। দুজন দুজনকে প্রচন্ড ভালবাসতাম। প্রায়ই কলেজ ফাকি দিয়ে যেতাম ধানমন্ডি লেকে। একটা সময় আমাদের অবস্থা এমন হলো যে, তিনঘনটার পরীক্ষার মধ্যেও আমি বাইরে বের হয়ে লুকিয়ে ওকে ফোন করে কথা বলতাম। এক দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাইয়াকে দেখা করার জন্য ফোন দেয়। ভাইয়া গেলে সেখানে তারা অভিযোগর ডালি খুলে বসে আমার নামে। বলল, আর এমন হলে আমাকে টিসি দিয়ে দেবে। বাড়িতে এসে ভাইয়া রাগে কাপছিলেন। আমাকে তার সামনে থেকে দূর হয়ে যেতে বলেন। বলেন, দুষ্টু গুরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো। তোর পেছনে মাসে কত খরচ হয় তার খেয়াল আছে? আর পারব না একটা কানাকড়ি দিতে। দেখি কে তোকে খাওয়ায়। ভাবিকে দায়িত্ব দিলেন আমাকে কলেজ থেকে নিয়ে আসার আর সকালে ভাইয়া নিয়ে যাবেন। আমার ফোন নিয়ে নিলেন। আমার ভেতর প্রচন্ড জেদ চাপল। আমার বান্ধবিরা বাবুকে সব জানালে সে আমকে তার কাছে চলে যেতে বলেছে। আমিও পালিয়ে চলে আসি কলেজের দেয়াল টপকে। তখন বুঝিনি কি অপমান আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
কি, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? ট্রেন চলে এসেছে, নামো এবার-বাবুর ডাকে ঘোর কাঠর আমার। আমাকে স্টেশনের এক জায়গায় দাড় করিয়ে একটু দূরে গিয়ে ওর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে কি যেন আলেঅচনা করল। তারপর আমরা তিনজন গেলাম কাজী অফিসে। কবুল বলার সময় কেমন যেন অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছিলাম। আমাকে নিয়ে যায় ওর চাচাতো ভাইয়ের নানাবাড়িতে। যেহেতু তিনি আমাদের বিয়ের সাক্ষী তাই তিনি তার মামাদের অনুরোধ করেন এক রাত আমাদের থাকতে দিতে। তারা ফুসে ওঠে, সালিমের পোলার এই কান্ড। ওরে তো ভাল বইলাই জানতাম। তারা কিছুতেই থাকতে দিল না। অবশেষে অনেক যুক্তিতর্ক আর অনুরোধের পর তারা রাজি হয়। এক মহিলা আমাদের কিছু খেতে দেয়। যেসব খাবার জীবনেও মুখে তুলিনি, তা-ই গোগ্রাশে গিলি। অপমানবোধটুকুও কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল সেদিন। রাত দশটা বেজে গেল, বাবুর আসার নাম নেই। এদিকে সারা দিন আমি চোরের মতো ঘাপটি মেরে খাটের কোনায় বসে ছিলাম। ওই বাড়ির এবং পড়শি মহিলারা এসে আমাকে দেখে গেল আর নানা কথা শোনাল-কেমন বাড়ির মেয়ে? কি শিক্ষা পেয়েছে? বাপ-মা এত কষ্ট করে বড় করল আর এই প্রতিদান দিল? ইত্যাদি ইত্যাদি কথা গুলো আমার কানে সিসার মতো ঢুকছিল। এদিকে বাড়ির বাচ্চা আর কিশো্রীদের আমারকাছে ঘেষা বারণ। এতে নাকি তারা খারপ হয়ে যাবে। অবশেষে বাবু এসে জানাল, মা ম্যানেজ হয়েছেন। কিন্তু বাবা বলেছেন আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করবেন। ওই বাড়ির মানুষ আজ আর রাখতে পারবে না আমাদের । উপায় না দেখে আমাকে নিয়ে সে রওনা দেয় ওর খালার বাড়ি। সেখানে আল্লাহর রহমতে আমাদের পক্ষে থাকেন খালা। তিনি সকালে আমাদের নিয়ে বাবুদের বাড়িতে ওঠেন। সেখানে আমাদের ঘরে ঢুকতে দেয়া হয় না। খবর পেয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে বাবুর বড় ফুপু হাজির। তিনি রাগ করে বাবুকে তো মারেনই, আমার গালেও চড় বসাতে দ্বিধা করেন না। অবস্থা বেগতিক দেখে বাবুর বাবা বলেন ঝামেলা করে লাভ নেই। মেয়ের বাড়ির লোককে খবর দাও।
পরদিন ভাইয়া এলেন। তিনি বেশ উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমার ছোট বোনকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে এসেছ ওই ছেলে। তারাও ছেড়ে কথা বলল না। আমাকে জ়্ররিয়ে আজেবাজে কথঅ বলল। তখন ভাইয়া বললেন বাবুর নামে মামলা করবেন। ওকে চৌদ্দ শিখের ভাত খাওয়াবেন। এ কথা শোনার পর একটু নরম হলো ওরা। বাড়ির ভেতরে মহিলারা আমাকে বোঝাল, কলঙ্কের কালি যা লাগার লেগে গেছে। তা আর মুছবে না। এখনবাবুকে ছেড়ে দিলে আমার পরিচয় হবে ডিভোর্সি। আমি ভাইয়াকে বললাম, আমি এখানে স্বেচ্ছায় এসেছি। অনুরোধ করি যেন মামলা না করে। আরো বললাম, আমি বাবুকে ছাড়তে চাই না। ভাইয়া এ কথা শুনে সেখান থেকে চলে যান। যাবার সময় আমাকে বলে যান, পুরো পাড়া তোর মৃত বাবার নাম নিয়ে বলছে অমুকের মেয়ে ভেগে গেছে । এই দুঃখে গত রাতে মার ষ্ট্রোক হয়েছে। মায়ের অবস্থা আরো খারাপ হয়।
আমি থাকতে পারিনি বাবুর বাড়িতে । বাধ্য হয়েই চলে আসি আমাদের বাসায়। আমার সঙ্গে কেউ তেমন কথা বলে না। আমি আমার রুমটায় বন্দি জীবন বেছে নিই। ছাদটা আমার খুবই প্রিয় ছিল। কিন্তু আমি ছাদে যাইনি। কারণ পাশের বাসার কেউ যদি কিছু বলে। বাসার বাইরে একটু বের হলেই সবাই আমার দিতে আড়চোখে চাইত আর নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করত। ধীরে ধীরে সব কিছু স্বাভাবিক হয়। শুধু পুরোপুরি সুস্থ হন না মা। একটা হাত অবশ হয়ে যায়।
বাবু আমাকে আবার তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। আমার শ্বশুর বাবুকে বলেন, তোমার বউকে আমরা খাওয়াতে-পরাতে পারব না। নিজে কামাই করে খাওয়াতে হবে। বাবু সারা দিন টিউশনি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমিও ছোট বাচ্চাদের পড়াই। আমি থাকি শ্বশুরবাড়িতে গ্রামে, আর বাবু ঢাকায়। কারণ ঢাকায় বাসা নিয়ে থাকার মতো সামর্থ ছিল না। ছোটবেলা থেকে শহরে বড় হওয়া আমার স্বাভাবিকভাবেই গ্রামে থাকাটা ছিল কষ্টকর। তার ওপর শ্বশুরবাড়ির নতুন পরিবেশ, নতুন সম্পর্ক।স্বামী পাশে নেই।
রাতে বিছানায় শুয়ে আমাদের দেখা স্বপ্নগুলো নিয়ে ভাবতাম। বিয়ের দিন মেরুন কালারে শাড়ি পরব, পার্সোনা থেকে সাজব, হানিমুনে যাব দার্জিলিং। আরো কত কি। সেসব আর হলো কই। বাবু প্রায় বলত, আমাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হবে। তাকে গান শেখাব। তবে বড় হয়ে সে ডাক্তার হবে। মেয়ের নাম ঠিক করা নিয়ে প্রায়ই আমাদের ঝগড়া হতো। এসব ভাবতে ভাবতে ভোরের আলো ফুটে যায়। সেদিন মা-বাবার কথা বেশি মনে পড়ে আমার। হঠাৎ মনে হয়, আমার মা-বাবাওতো চাইতেনআমি ডাক্তার হই। আর আজ কোন অবস্থায় আছি আমি । বেশি দূর ভাবতে পারি না। কেমন যেন কুকড়ে যাই। সারা দিন আমার ছোটবেলার স্মৃতি মনেহয়। অভাবের সংসারে প্রতি ঈদে মা-বাবা নিজেরা পোশাক নিনতেন না। আমার ড্রেসটা হতো সব সময় লেটেস্ট । মায়ের প্রিয় খাবার কি? জানি না তো। মা কিন্তু সব সময় আমারপ্রিয় খাবারটা তালিকায় আগে রাখতেন।
একদিন বিকেলে আমার শাশুড়ির মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি আর গল্প করছি। এক সময় বলি, আচ্ছা, মা আপনার কার জন্য টান বেশি-আপনার মা, নাকি মেয়ে? এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে প্রথমে অবাক হলেন, তারপর একটু লাজুক হেসে বললেন, সত্যি বলতে কি নিজের পেটেরটার জন্যই বেশি পরান পোড়ে। কথাটা ভাবায় আমাকে । সত্যিই হয়তো তাই। আমি আর বাবু মা-বাবা হইনি।কিন্তু যদি ভাবি আমাদের সন্তান কোনো কষ্ট পাচ্ছে, তা সহ্য করতে পারা অসম্ভব. হঠাৎ অন্য একটা কথা মনে হয়, আর সেই সন্তান যদি কষ্ট দেয়? এটা তো মাথায়ই আসেনি কখনো। কিন্তু আমি কি করে পারলাম? নিজেকে খুব ঘেন্না করছে আমার।আমার জন্যই আজ মায়ের এ অবস্থঅ।বাবুর মা-বাবাও কম অপমানিত হননি। আর ভাবতে পারছিলাম না। মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছিল। খুব ইচ্ছে করছিল মাকে ফোন করে বলি, মা, আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি।একটা ভূল করে ফেলেছি।কথাটা বলতে পারলাম না।বাবা হসপিটালে আমায় বলেছিলেন লক্ষ্মী হয়ে থাকতে.তার শেষ কথাটও আমি রাখতে পারলাম না।
এর মাঝে বাবু একটা ব্যবসা শুরু করে।আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।একটা সাবলেট বাসায় থাকি আমরা।স্বপ্নের মতো দিন না কাটলেও খারপ কাটে না।আমি আমার প্রথম সন্তানের আগমনী বার্তা টের পাই।আমার শরীরের অবস্থা খারপ হতে থাকে।সন্তান ধারণযে এতটা কষ্টের, তা ধারণ না করলে বুঝতাম না।বাবু ব্যবসার উন্নতির জন্য উঠে পড়ে লাগে।কারণ একন তার সন্তানের ভবিষ্যতের প্রশ্ন।সে সপ্তাহে এক দিন গ্রামে গিয়ে টাটকা মাছ, সবজি নিয়ে আসে।তার অনাগত সন্তান যেন ফরমালিনে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়,তাই।ইদানিং মায়ের কথা খুব বেশি মনে পড়ে, খুব ভয় হয় আমার।আমার সন্তানও যদি আমার মত...
২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ জাফরুল মবীন
২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:১৯
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: +++++++++++
বাস্তব গল্প । চমৎকার লেখা ।
ভালো থাকবেন
২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: বলেছেন: সবসময় উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা অপূর্ণ রায়হান
৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:১৬
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: গল্প ভাল লেগেছে। ভাষার উপস্থাপনা খুবই চমৎকার।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ইমতিয়াজ ১৩
৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:২১
একলা ফড়িং বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম
আপু, মন্তব্যের উত্তর দেয়ায় একটু ভুল হচ্ছে। উত্তর দিতে গিয়ে নতুন আরেকটা মন্তব্য করা হয়ে যাচ্ছে। এভাবে দিলে যার মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছেন সে কোন নোটিফিকেশন পাবে না। তাই যার মন্তব্যের উত্তর দেবেন, তার মন্তব্যের উপরে দেখুন একটি সবুজ তীর চিহ্ন দেয়া আছে, ওখানে ক্লিক করলে একটা বক্স আসবে, সেখানে আপনার জবাবটা লিখুন।
প্রথমদিকে একই ভুল আমিও করেছিলাম! নাকি মোবাইল ফোন থেকে উত্তর দিচ্ছেন?
হ্যাপি ব্লগিং
২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: thanks a lot api
সবসময় এভাবে পাশে চাই। ভাল থাকবেন আবারো ধন্যবাদ
৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:০৭
বাংলার নেতা বলেছেন: অনেক ভাল লাগল! লেখিকার প্রতি শুভকামনা.......!
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:১১
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন
৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৩৪
ডি মুন বলেছেন: বেশ ভালো লেগেছে গল্পটা।
আরো ভালো লিখে চলুন। শুভেচ্ছা।
০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২১
জাফরুল মবীন বলেছেন: বাস্তবতায় ঠাসা চমৎকার লেখনি।খুব ভাল লাগল গল্পটি।ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি উপহার দেওয়ার জন্য।