![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০ ফেব্রুয়ারি। সকালের আলো ফুটে উঠেছে। পাখির কলকাকলিতে প্রকৃতি মুখরিত। মিষ্টি সুবাতাস বইছে। এ বাতাসের মধ্যে মিষ্টতার সাথে হালকা স্নিগ্ধতাও রয়েছে। সুন্দর, আরামদায়ক, ঠাণ্ডা বাতাসের ছোঁয়া যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
প্রকৃতি জেগে উঠছে ধীরে ধীরে।সাথেসাথে অনেক মানুষও জেগে উঠছে।তবে অনেকেই অনেক আগে থেকেই জেগে ছিল। তারা কাটিয়েছে নির্ঘুম রজনী।
নির্ঘুম মানুষের দলে আছে অনেক মানুষ। তাদের মধ্যে তৃপ্তি নামের একটি মেয়েও আছে। যাকে নিয়েই এই গল্প।
১.
তৃপ্তির ঘুম আসছে না। রাত সাড়ে ১১টা থেকেই আসছে না। তার চোখে ঘুমের বদলে জায়গা করে নিয়েছে অশ্রু।যে অশ্রুর ফোঁয়ারা কয়েকদিন ধরেই তার চোখ বেয়ে বেয়ে পড়ছে। সে তা মুছে ফেলছে না। কারণ, তাতে কোনো লাভ হবে না। অবশ্য মুছে না ফেলেও যে খুব লাভ হচ্ছে তা নয়।
তার মাথার নিচে রাখা বালিশের একটি অংশ চোখের পানিতে ভিজে গেছে। তার কানের কিছু অংশ এখনো ভেজা। কিন্তু সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তার দৃষ্টি সিলিং-এ নিবদ্ধ। যদিও অন্ধকার রুমে সিলিং স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
তৃপ্তি চোখের পলক খুব কমই ফেলছে। তবে যখনই ফেলছে, তখন চোখের পাতাগুলোকে কিছুক্ষণ চেপে রাখে সে। তাতে পুরনো অশ্রুর পথ বেয়ে নবঅশ্রু নামতে থাকে।
বাথরুমের কলের শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। সম্ভবত মা জেগে উঠেছে। সম্ভবত বললে ভুল হবে, বরং নিশ্চিতভাবেই মা জেগে উঠেছে। অন্যান্য মায়েদের মত তৃপ্তির মাও 'early riser'।
তৃপ্তি উঠবে না। সে জেগে থাকবে। তার রুটিন হচ্ছে সে সকাল ন'টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকবে আর তার মা ঠিক ন'টা পাঁচের মধ্যে তাকে জাগিয়ে তুলবে। এভাবেই চলে আসছে এতদিন। শুধু পরীক্ষার দিনগুলোতে একটু আগেই তাকে উঠতে হয়।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে যে, আগের সেই তৃপ্তি এখন আর নেই। সে রাতে ঘুমায় না। দিনে তার পনের-বিশ মিনিটের মত ঘুম হয়। তবে তার মা তো এতসব খবর রাখেন না। তিনি ন'টা থেকে ন'টা পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাকে জাগিয়ে তুলবেন।
তৃপ্তি পাশ ফিরল। ঘুমোনোর চেষ্টা। সে জানে এতে কোনো লাভ হবে না।চোখ বন্ধ করতে সে পারছে না। চোখ খোলা রাখতে মন চাইছে তার। সাথে মন চাইছে চোখের পাতাগুলো কেটে ফেলতে, তাতে চোখ আর বন্ধ করা হবে না।
২.
হোসনে আরা তৃপ্তি। তৃপ্তির পুরো নাম। ঢাকার একটি নামকরা স্কুলের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার ছাত্রী সে। পড়ালেখায় সে খুবই ভালো।
এই গুণের পাশাপাশি তার আরো অনেক মেয়েলি গুণ রয়েছে। তার ক্লাসে তার কয়েকজন সুন্দরী সহপাঠিনী রয়েছে। তাদের থেকেও সে দ্বিগুণ, কিংবা বলা যায় আরো কয়েকগুণ বেশি সুন্দরী।ক্লাসে এমন কোনো মেয়ে নেই যে তার রূপের প্রশংসা করেনি কিংবা তার অলক্ষ্যে তার ব্যাপারে মন্দ কিছু বলেনি।
তৃপ্তি রূপে এবং মেধার গুণে অন্যান্যদের ঈর্ষার পাত্রী হলেও তার কিছু সহপাঠিনী তাকে অহংকারী বলেই মনে করে।
একদিন তার এক নেকাব পরা বান্ধবী তাকে একান্তে বলেছিল,
- 'তৃপ্তি, আমার বোন, তোমাকে আল্লাহ পাক সৌন্দর্য্য এবং মেধা দুই-ই দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এসব এজন্যে দেননি যে তুমি এ নিয়ে মিথ্যে অহংকার করো। তুমি মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর, কিন্তু এই সৌন্দর্য্য ঢেকে রাখাটা তোমার কর্তব্য। তুমি কি জান না আল্লাহ কী বলেছেন নারীদের ব্যাপারে। তিনি বলেছেন...'
তৃপ্তি তাকে থামিয়ে দিয়ে সামনে থেকে চলে গেল। মনে মনে সেই 'নেকাবওয়ালি'কে হাজারো গালাগাল দিতে লাগল। তার ধারণা, এসব ব্যাকডেটেড মেয়েদের বোকামির জন্যেই আজ এদেশের পুরুষেরা মেয়েদের নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ায়।ধর্মকে তারা শুধু মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে।
৩.
তৃপ্তির স্কুলটি দুই শিফটে বিভক্ত। মর্নিং শিফটে মেয়েরা, এবং ডে শিফটে ছেলেরা পড়ে। ছেলেদের মহলে তৃপ্তির অনেক নামডাক- এমনটিই সে শুনেছে তার এক বার্তাবাহক বান্ধবীর কাছ থেকে।
সেই বার্তাবাহক তাকে আরো জানিয়েছে যে, ক্লাস নাইনে একটি ছেলে নাকি নতুন ভর্তি হয়েছে। দেখতে নাকি খুব ড্যাশিং, হ্যান্ডসাম অ্যান্ড অসাম। লম্বা, পারফেক্ট বডি শেইপের অধিকারী সেই ছেলেটির নাম রায়হান ইমতিয়াজ। সে নাকি তৃপ্তির ব্যাপারটা শুনে তার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।
তৃপ্তি এমন অনেক অফার পেয়েছে ছেলেদের কাছ থেকে। কিন্তু তাদের কাউকেই তার পছন্দ হয়নি। প্রথম দেখাতেই সে তাদের 'অফ' করে দিয়েছিল। এবারও সে খানিকটা বিরক্ত হয়েই রাজি হল দেখা করবার জন্যে।
বিকেলবেলায় কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়েই তৃপ্তি গিয়ে দাঁড়ালো স্টেশনারি শপের পাশের খালি জায়গায়। তার সেই বান্ধবী তাকে এখানেই দাঁড়াতে বলেছে। সে নাকি ছেলেটিকে আনবে।
কিছুক্ষণ বাদে তৃপ্তির বান্ধবী এলে তার ২-৩ মিনিট বাদেই একটি স্কুল ইউনিফর্ম পরা, কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো একটি ছেলে তাদের সামনে আসে।
বার্তাবাহক বান্ধবীর বর্ণনায় তৃপ্তি ছেলেটিকে যেরকম কল্পনা করেছিল, তার চেয়ে হাজারো গুণ সুন্দর সেই ছেলেটি। গায়ের রং খুবই ফর্সা, লম্বা-চওড়া, মুখে স্মিত হাসি, হাতে একটি কার্ড।
ছেলেটি কার্ডটি তৃপ্তির দিকে এগিয়ে দিল।তৃপ্তি সেটি হাতে নিল। সেটি খুলে সে দেখল মুক্তোর মত হাতের লেখায় একটি অনুরোধ তাকে করা হয়েছে;
"Will you be my Valentine? :-)
-Imtu. "
সেদিন ভ্যালেন্টাইন'স ডে ছিল না। তবে এমন সুন্দর একটি ছেলের এমন সুন্দর হাতের লেখায় করা এমন সুন্দর একটি অনুরোধ কি ফেলে দেয়া সম্ভব? তার উপর ছেলেটির সৎ সাহস দেখে তৃপ্তি মুগ্ধ এবং সাথে আনন্দিত।
তৃপ্তি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে তার বিখ্যাত টোল পড়া মুচকি হাসি হেসে তাকে ইশারায় জানাল, "Yes, I will."
৪.
তাদের ভালোবাসার আদান-প্রদানের প্রায় ৩০ দিন হতে চলল।এখন তারা মুক্ত বিহঙ্গ। রিকশায় করে যেখানে খুশি সেখানে তারা ঘুরতে যায়। হাতে হাত ধরে অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে। বাদাম খায়, খই খায়। সপ্তাহান্তে ইমতুর গাড়ি করে স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে চলে যায়।
ইতোমধ্যে তৃপ্তির ক্লাসের অধিকাংশই তার এই সম্পর্কের ব্যাপার জেনে গেছে। অনেকেই তাকে বাহবা দিতে লাগল। একজন তাকে জড়িয়ে ধরে তার সফলতার উপহার দিল। আরেকজন ইমতুকে ধন্যবাদ কার্ড দিল তৃপ্তির মাধ্যমে। তাতে লেখা ছিল;
"আমার সুনয়না, সুবর্ণলতা, সুকেশী, সুকণ্ঠী, এবং সুবন্ধু 'তৃপ্তি'কে নিজের ভালবাসার পাখি হিসেবে বেছে নেয়ার জন্যে ইমতু ভাইয়া তোমাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদান্তে....."
তৃপ্তি এ চিঠি পড়ে যখন লজ্জায় লাল হয়ে উঠছিল, তখন তার হাত ধরে কে যেন হালকা করে আড়ালে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। সে ছিল সেই 'নেকাবওয়ালি', 'ব্যাকডেটেড' বান্ধবীটি।
"তৃপ্তি, আমি এসব কী শুনছি! তুমি নাকি একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছ? বোন, এটা খুবই ধ্বংসাত্মক ব্যাপার। তুমি এখনই এসব থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে ফেল। নইলে ভবিষ্যতে খুব বিপদ হবে তোমার, তুমি বুঝতে পারছ না।"
তৃপ্তি তার পোশাকের দিকে তাকিয়ে ঝামটা মেরে বলল,
"তোমার সমস্যাটা কী! আমি কি তোমাকে কোনো সময় ঘাঁটাই? তোমাকে কি কখনো বলি যে বোরকা-ফোরকা পরে এসো না? তুমি বারবার আমার সাথে এভাবে কেন কথা বল! আসলে তুমি আমাকে ঈর্ষা করো। আমার সৌন্দর্য্যে তুমি রেগে যাও। তুমি চাও না যে কেউ আমাকে দেখুক। তুমি নিজেও তো অসুন্দর, তাই তো সারা শরীর ঢেকে রেখেছ। Even একটা মাস্কও পরেছ! কী, কেউ অ্যাসিড মেরেছে নাকি?"
'নেকাবওয়ালি' আর কথা বাড়ায়নি। তার অনুভূতি বুঝা যায়নি, কারণ তার মুখটা মুখোশে ঢেকে রাখা।
৫.
দেখতে দেখতে ১৪ই ফেব্রুয়ারি চলে এলো। 'Valentin's Day' বা বাংলায় প্রচলিত 'ভালবাসা দিবস'। তৃপ্তি এই নামের ইতিহাস জানতে চেয়েছিল ইমতুর কাছে। ইমতু নাকি ভালো করে জানে না। তবে এটা জানে যে এদিনে নাকি প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরকে 'I love you' বলে, এবং উভয়ই খুব আনন্দঘন মুহূর্ত কাটায়।
ইমতু তৃপ্তিকে বলে রেখেছিল যে এদিনে তারা কোথায় কোথায় যাবে। অনেক অনুষ্ঠানই ছিল তার শিডিউলে। তবে সবার আগে ইমতু ঠিক করল সে নিজের বাসায় তৃপ্তিকে নিয়ে যাবে এবং মাম্মি-ড্যাডির সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেবে।
তৃপ্তি একথা শুনে অনেক বেশি খুশি হলো। ইমতুর সাহস আছে বলে সে জানত।তবে তার সাহস যে আসলেই কত শক্তিশালী, তা এবার সে জানল।
ইমতু খুব কমই তার ড্রাইভার সাথে নিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হত। আজ সে অবশ্য গাড়ি আনবে বলে ঠিক করে রেখেছিল, কিন্তু তৃপ্তি মানা করে দিল। সে আজ রিকশা নিয়ে ঘুরবে। এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত জায়গায় সে যাবে, রিকশা নিয়েই যাবে- একথা ইমতুকে জানিয়ে দিল সে।
রিকশা এসে থামল বিরাট আট তলাবিশিষ্ট ফ্ল্যাটের সামনে। ইমতু নেমে গেল। তৃপ্তি রিকশা থেকে নামতে নামতে উপরে দেখে নিল। ফ্ল্যাটের আলিশান বারান্দাগুলো চোখে পড়ার মত।
'সিক্সথ ফ্লোর' বলে হাসল ইমতু। এই হাসি তৃপ্তির পছন্দ।
লিফটের সুবিধা আছে ফ্ল্যাটটিতে। উপরে যতই লিফট উঠতে থাকে, ততই তৃপ্তির হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে।
লিফট থেকে বের হয়ে তারা 'সিক্সথ ফ্লোর'-এর '6B' নম্বরবিশিষ্ট দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
ইমতু এগিয়ে গিয়ে লক খুলতে লাগল।
'মাম্মি-ড্যাডি বাসায় নেই। উনারা একটু বাইরে গেছেন মনে হয়। I think আমরা একটু আগে আসলে তাঁদের পেতাম।'
লক খুলে ভেতরে ঢুকল। অন্যান্য রুমের দরজাগুলো বন্ধ।ড্রইং রুমটিতে একসেট সোফা, ফ্রিজ, একটি ২১ ইঞ্চি ফ্লাট টেলিভিশন, এবং সাথে একটি ডিভিডি প্লেয়ারও আছে। দেয়ালে ঘড়ি। তাতে ৩টা বেজে ৪০ মিনিট হয়ে স্থির হয়ে আছে।
'মাম্মিকে ফোন করছি, এক্ষুণি চলে আসবেন উনারা।তুমি মিল্কশেকটা খাও।'
ইমতু মোবাইল নিয়ে বাইরে চলে গেল।
তৃপ্তি মিল্কশেকের পাইপে চুমুক দিতে লাগল। তার হার্টবিট আগের তুলনায় স্বাভাবিক।তবে কিছুক্ষণ বাদে হয়ত আবারও বেড়ে যাবে।
মিল্কশেক শেষ করার দু'তিন মিনিট পর ইমতু রুমে ঢুকল। তার পেছনে পেছনে ব্যাগ কাঁধে নেয়া আরো ৩ জন ছেলে রুমে ঢুকল। তারা তৃপ্তিকে দেখে সালাম দিল। তৃপ্তি সালামের জবাব দিল।
'এই আমাদের হবু ভাবী? খুব সুন্দর!'- তাদের মধ্যে শ্যামল বর্ণের এক ছেলে তাকে দেখে বলল।
'ভাবী, আপনার শরীর ভাল তো? ' - ফর্সা করে এক ফ্রেঞ্চকাট দাড়ির ছেলে তার দিকে তাকিয়ে বলল।
'Please finish your task, I have to leave soon.' - অবশিষ্টজন বলল।
তাদের সাথে তৃপ্তির কিছুক্ষণ কুশলাদি বিনিময় হল। এদের মধ্যে তিন নম্বর ছেলেটা বাংলা বলতেই পারে না। সারাক্ষণ শুধু ইংরেজিতে বকবক করতেই আছে সে।
কিছুক্ষণ পর তারা নিজেদের ব্যাগ থেকে গ্লাস বের করতে লাগল। এরপর তারা বের করল একটি মোটা পেটের বোতল। যার উপরে স্পষ্টভাবে প্রিন্ট করা ছিল 'Heineken' নামটি।তৃপ্তি এই প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখেছিল কোনো এক স্পোর্টস চ্যানেলে। কিন্তু এটি আসলে কী, তা সে বুঝতে পারল না।
বোতলের সেই অজানা তরল পদার্থ তারা গ্লাসগুলোতে ঢালল। সেটি লাল বর্ণের পানীয় ছিল। এক অদ্ভুত রকমের গন্ধ পাচ্ছিল তৃপ্তি। তার খানিকটা মাথা ধরে যাচ্ছিল সেই গন্ধের তীব্রতায়।
তৃপ্তির মাথা ধরলেও তারা সেগুলো অনায়াসেই গিলে ফেলছিল। তাদের সাথে ইমতুও যোগ দিল।
৪-৫ বার করে করে প্রত্যেকেই কয়েক গ্লাস 'অদ্ভুত গন্ধের তরল পদার্থ'টি পান করেই চলল। একপর্যায়ে তাদের গলা তরল হয়ে আসলো।
তৃপ্তি খেয়াল করল ফ্রেঞ্চকাট দাড়ির সেই ছেলেটির রক্তবর্ণ চোখ তার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কুটিল সেই দৃষ্টিটি। যা দেখলে প্রত্যেক মেয়েই আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পারে।
অন্যদের তুলনায় ইমতু কম মাতাল ছিল। সে তৃপ্তির কাছে এসে বলল,
'তৃপ্তি, এখন তুমি একটু তোমার জামাকাপড়গুলো খু......'
এর পরের অংশটি তৃপ্তি ঠিক যেন বাস্তবে শুনল না। তার কাছে মনে হলো যেন সে স্বপ্ন দেখছে।
'কী হল তৃপ্তি লক্ষ্মীটি! তাড়াতাড়ি কর। They are thirsty and hungry. '
তারা কি তৃপ্তির জন্যেই 'Thirsty' ও 'Hungry'? তৃপ্তির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল।
এক কুৎসিত ইংরেজি গালি দিয়ে ইমতু তৃপ্তিকে চড় মারল। এবং সাথেসাথে সেই কুটিল দৃষ্টিধারী বন্ধুটি তৃপ্তির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
সেদিন সেই চারজন নরপশুর পাশবিক অত্যাচারে তৃপ্তি জর্জরিত হলো। তাদের উল্লাসধ্বনির তীব্রতায় তৃপ্তির 'আল্লাহ, বাঁচাও, বাঁচাও' বলে আর্তচিৎকার চাপা পড়ে গেল।
পরিশিষ্ট
আজ ২০ শে ফেব্রুয়ারি। সকালের রোদ এসে তৃপ্তির ঘরে এসে পড়েছে অনেকক্ষণ হল। তৃপ্তি এখনো ডানপাশ হয়ে শুয়ে আছে। তার চোখ খোলা রাখা তার জন্যে কষ্টকর মনে হচ্ছে। চোখ ভেঙ্গে ঘুম আসছে তার। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই সেদিনের সেই ভয়াল সকালের কথা তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। সে ভাবতে পারছে না যে সে বেঁচে ফিরল কী করে।
তবে বেঁচে না থেকে বোধহয় মরে গেলেই তার জন্যে ভালো হত। এই কলঙ্ক নিয়ে কি বেঁচে থাকা যায়?
সেদিনের সেই ঘটনার পর তৃপ্তি স্কুলে যায়নি। স্কুলে যাবেই বা কীভাবে! সে যদিও কোনো অপরাধ করেনি, কিন্তু দিন শেষে তার উপরেই এসে বর্তাবে নানান অপবাদ।তাছাড়া ইমতুকে খুব প্রভাবশালী পরিবার থেকে আসা ছেলে বলেই মনে হয়।
তার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। চেহারার মৌলিন্যতা মিইয়ে গেছে।'সুকেশী' তৃপ্তির কেশ এখন উশকোখুশকো।
পরিশিষ্ট ২.
'নেকাবওয়ালি'র মুখ থেকে একদিন তৃপ্তি একটি বাক্য শুনেছিল। সেটিই এখন তার বারবার করে মনে পড়ছে।
" হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন।"
'নেকাবওয়ালি' একথা বলেছিল যখন তৃপ্তির বার্তাবাহক বান্ধবীটি তাকে ইমতুর ব্যাপারে বলেছিল।সে আরো বলেছিল এটি আল্লাহর কথা। কত সত্য কথাই না বলেছেন তিনি।
তৃপ্তি তার পথের সাথী বেছে নিতে ভুল করেছিল। তার মাশুল এখন সে পাই পাই করে পরিশোধ করছে।কেন যে সেদিন তৃপ্তি সেই 'নেকাবওয়ালি'র কথায় গুরুত্ব দেয়নি। নইলে হয়ত আজ.....।
(আয়াতটি আল-ক্বুর'আনের সূরা নূর (২৪)-এর ২১ নং আয়াতের বাংলা অনুবাদ।)
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১৫
তানসীরুল আলম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২১
বিজন রয় বলেছেন: লেখাটি ভাল লাগল।
++