নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে মানুষ টার আশা ছিল কবি হবার, তাইতো আজও স্বপ্ন দেখে শিকল ভাঙ্গার, বাকি জীবন বাউল হয়ে পথে হাটার ।

তানভীর আহমেদ সম্রাট

যদিও এখন শীতকাল, তাই বলে কি বসন্ত খুব বেশী দূরে!

তানভীর আহমেদ সম্রাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপমহাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস (পর্ব - ১)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১৩


সিপাহী বিদ্রোহ, নতুন দিনের মিছিল…

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন করার পূর্বে আমরা আরও একবার স্বাধীন হয়েছিলাম । কিন্তু বাঙ্গালির দুর্ভাগ্য রাজনীতিবিদদের ভুল নীতির কারনে শিকল ভাঙ্গার দিনে আবার আমরা নতুন করে পরাধীনতার বেরি পায়ে পরেছিলাম। যারফলে সারাজীবন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে আসা মহাত্মা গান্ধী চোখের সামনে, মুহাম্মদ আলী জিন্নার মুসলমানদের জন্য আলাদা ভূমির দাবীর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন। শের এ বাংলার যুক্তফ্রন্টের প্রতি কংগ্রেসের উদাসীনতা যুক্তফ্রন্ট কে মুসলিম লীগের সাথে যেতে বাধ্য করলো। ভারতবর্ষের বহু মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা যখন জাতি তত্তের ভিত্তিতে দেশ ভাগের বিরধিতা করলো, তখন বাঙালি মুসলমান “হাত মে বিড়ি মুখ মে পান, লারকে লেঙে পাকিস্থান” স্লগান ধরলো । ব্রিটিশদের মনোবাসনা পুরন হল, যার ফলে ১৯৪৭-এ ভারতবর্ষের সবচেয়ে সাহসি দুই জাতি পাঞ্জাব আর বাংলাকে ভাগ করে জন্ম নিল ভারত ও পাকিস্থান নামের দুইটা নতুন দেশ । তবে শাপে বর পাওয়ার মতো, উল্টো পথে চলাটা হয়তো বাঙালির জীবনে আশীর্বাদ হয়েই এসেছে, বাঙালি তার নিজের জন্য একটা স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছে।

১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তে উপমহাদেশের স্বাধীনতার যে সূর্যটা অস্তমিত হয়েছিলো ঠিক একশ বছর পর ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রহের মাধ্যমে সেই সূর্যটাকেই ছিনিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়, যেই লড়াইটা চলে পরবর্তী নব্বুই বছর……
উপমহাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম নেতা বিঠরের নানা সাহেব। লর্ড ডাল হউসির আমলে বন্দুকের বুলেটে গরু ও শুয়রের চর্বি মেশানো হতো, এতে করে হিন্দু মুসলিম ও শিখ তিন ধর্মের মানুষেরই ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত লাগত, এরফলে ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে উঠলো সিপাহীরা। অন্যায় ভাবে বিষয় সম্পত্তি কেড়ে নেয়ার জন্য দেশীয় রাজারাও হয়ে উঠলো ক্রুদ্ধ। নানা সাহেব বিভিন্ন রাজা ও নবাবদের সাথে চিঠি লিখে ও দেখা করে সবাইকে সঙ্গবদ্ধ করলেন। শেষ মোঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের প্রতি জানানো হলো আনুগত্য। ঠিক হলো ৩১ শে মে ১৮৫৭ সালে সারা দেশে একযোগে শুরু হবে লড়াই।

কিন্তু নির্দিষ্ট দিনের আগেই কলকাতার ব্যারাকপুরে চৌত্রিশ নাম্বার রেজিমেন্টের এক সিপাহী বাঘের মতো গর্জন করে ইংরেজ শক্তির বুকে লাথি মারলো। ২৯শে মার্চ, প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপাহীরা রোজকার মতো জমায়েত হয়েছে, হঠাৎ গুলিভরা বন্দুক হাতে মঙ্গল পাণ্ডে ডাক দিলেন স্বাধীনতার। বন্দুক হাতে খতম করলেন সার্জন হিউসন ও এক লেফটেন্যান্ট কে। যুদ্ধ করতে করতে শেষ পর্যন্ত ধরা পরলেন পাণ্ডে। ৮ই এপ্রিল ফাসির মঞ্চে উঠে সে পেয়ে গেলেন ভারতবর্ষের প্রথম শহীদের সম্মান।

মঙ্গল পাণ্ডের জ্বালানো আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। সেই আগুনে যথাসর্বস্ব নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন নানা সাহেব, রাও সাহেব, বালা সাহেব পেশোয়ার, তাতিয়া টোপী, রানী লক্ষিবাই, মউলভী আহমেদ শা, বাবু কুমার সিং, বাবা সাহেব নরগুন্দ এবং আরও নাম না জানা হাজার হাজার সিপাহী। দেখতে দেখতে বাংলা, পাঞ্জাব উত্তর প্রদেশে ছড়িয়ে পড়লো লড়াই । ১০ই মে মিরাট দখল হয়ে গেলো। বিজয়ী সৈন্যরা ছুটল দিল্লীর দিকে। ১১ই মে দিল্লী মুক্ত, বাহাদুর শা আবারো স্বাধীন ভারতবর্ষের সম্রাট। কিন্তু তখন সারাদেশে পাতা হয়েছে নতুন রেল লাইন। ঘোড়ার চেয়েও দ্রুত গতিতে ইংরেজ সৈন্যরা চলে আসতে পারে এক শহর থেকে অন্য শহরে। দিল্লী উদ্ধার করতে না পারলে যে তাদের সমগ্র এশিয়া থেকেই বিদায় নিতে হবে, ব্রিটিশরা এটা খুব ভালভাবেই জানে।

১৩৩ দিন মুক্ত ছিল দিল্লী নগরী। দিল্লী পতনের পর বাহাদুর শা জাফর আশ্রয় নিয়েছিলেন হুমায়ুনের সমাধি ভবনে। ইংরেজ সেখান থেকে টেনে বের করে আনল ৭৮ বছরের বৃদ্ধকে। পাতলা কাপড় দিয়ে ঢাকা একটা বড় থালা তার সামনে রেখে ব্যেঙ্গ করে বলল, এই নিন জাহাপনা আপনার নজরানা। কম্পিত হাতে বৃদ্ধ সেই কাপড়ের ঢাকনা সরালেন। দেখলেন, সেখানে রয়েছে তার দুই ছেলের কাটা মুণ্ডু। দু হাতে মুখ ঢাকলেন ভাগ্যহীন সম্রাট। পাশ থেকে এক ইংরেজ দালাল বললো, অনেক বকবকানি হয়েছে, এবার নিজের জান বাঁচানোর চেষ্টা করো। হিন্দুস্তানের তরোয়াল ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।

মুখ থেকে হাত সরিয়ে বাদশা তাকালেন সেই অর্বাচীনের দিকে। তারপর তিনি যা বললেন, পরবর্তী ৯০ বছর ধরে সমগ্র স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সে কথা মনের মধ্যে গেথে রেখেছে। তিনি বলেছিলেন, “যতদিন দেশের প্রতি এতোটুকো শ্রদ্ধা অবশিষ্ট থাকবে মানুষের, ততদিন পর্যন্ত আমাদের তরোয়াল লন্ডনের দিকে চলবেই……” ( চলবে )

(বিঃদ্রঃ এখানকার সম্পূর্ণ লেখাই ইতিহাসের বিভিন্ন বই থেকে ধার করে নেয়া। )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.