![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদিও এখন শীতকাল, তাই বলে কি বসন্ত খুব বেশী দূরে!
এক লোকের গাড়ি খুবই পুরান, মরমর অবস্হা। লোকটিকে জিজ্ঞেস করা হলো ভাই আপনার গাড়ীর কি অবস্হা ? লোকটি বলল “আমার গাড়ীর এতই খারাপ অবস্হা যে হর্ন ছাড়া আর সব অংশই শব্দ করে”!
বই না পড়তে পড়তে আজ আমাদের জাতিগত অবস্থাও এই গাড়ির মত এসে দাড়িয়েছে।
এক ড্রয়িংরুম-বিহারিণী গিয়েছেন বাজারে স্বামীর জন্মদিনের জন্য সওগাত কিনতে। দোকানদার এটা দেখায়, সেটা শোঁকায়, এটা নাড়ে, সেটা কাড়ে, কিন্তু গরবিনী ধনীর (উভয়ার্থে) কিছুই আর মনঃপূত হয় না। সবকিছুই তার স্বামীর ভান্ডারে রয়েছে। শেষটায় দোকানদার নিরাশ হয়ে বললে, ‘তবে একখানা ভালো বই দিলে হয় না?’
গরবিনী নাসিকা কুঞ্চিত করে বললেন, ‘সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।’
যেমন স্ত্রী, তেমনি স্বামী। একখানা বই-ই তাদের পক্ষে যথেষ্ট !
বাঙালী কে বই পড়া আর কেনার জন্য সৈয়দ সাহেবের মতো বকা, আর কেউ বোধ হয় দেয়নি !
প্রমথ চৌধুরী তার প্রবন্ধে বলেছিলেন, ‘বই পড়ার অভ্যাসটা যে বদঅভ্যাস নয় এ কথাটা সমাজকে এ যুগে মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দেওয়া আবশ্যক; কেননা মানুষে এ কালে বই পড়ে না, পড়ে সংবাদপত্র। এ যুগে সভ্যসমাজ ভোরে উঠে করে দুটি কাজ : এক চা-পান, আর সাংবাদপত্র পাঠ। অতিরিক্ত চা-পানের ফলে মানুষের যেমন আহারে অরুচি হয়, অতিরিক্ত সংবাদপত্র পাঠের ফলেও মানুষের তেমনি সাহিত্যে অরুচি হয়। আমরা দেশশুদ্ধ লোক আজকের দিনে এই মানসিক মন্দাগ্নিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।
তাইতো সৈয়দ সাহেব আক্ষেপ করে বলেছিলেন, পৃথিবীর আর সব সভ্যজাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো ঘোঁত্ ঘোঁত্ করি, আর চোখ বাড়াবার কথা তুলতেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমতঃ বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই পড়ার প্রবৃত্তি।
বই মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মানব জীবনের সুন্দর অভ্যাসগুলোর মধ্যে পাঠ্যাভাস অন্যতম। আপনার মন খারাপ? কিছুই ভালো লাগছে না। নিঃসঙ্গতার করাল গ্রাসে নিমজ্জিত? প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে জীবন কাটাতে হচ্ছে। জীবনে যখন এ ধরনের সমস্যা এসে হাজির হয়, যখন কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। তখন আপনার পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়াতে পারে বই।
একবিংশ শতাব্দীর স্যাটেলাইট যুগে ছেলেমেয়েরা টিভি দেখা ও আড্ডা দেয়ার প্রতি যতটুকু উৎসাহী, বই পড়ার প্রতি ততটা নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভির সামনে বসে সময় পার করে দিচ্ছে। আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু একটা বই হাতে নিলে ১০ মিনিট স্থির থাকতে পারছে না। আমরা আশপাশে তাকালে সেটাই দেখি। তবে আগামীতে একটা সুখী, সমৃদ্ধ এবং শিক্ষিত জাতি পেতে আজকের তরুণ প্রজন্মের হাতে বই তুলে দেয়ার বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্যের বিষয় দিন দিন মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। মানুষ এখন বইয়ের পরিবর্তে ফেসবুক, টিভি, সিনেমা আর আড্ডা দিয়েই অবসর কাটায়। বই কেনা ও পড়ার অভ্যাসে ভাটা পড়ছে। প্রযুক্তিনির্ভর মানুষ বইকে সময়ক্ষেপণ বলেই মনে করে। বই পড়ার প্রতি যে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম একটা কারণ। আমাদের জীবসত্তা জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই।
প্রকৃত বই প্রেমীর উদাহরণ দিতে গিয়ে সৈয়দ সাহেব বলেছিলেন,
মার্ক টোয়েনের লাইব্রেরিখানা নাকি দেখার মতো ছিল। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বই, বই, শুধুই বই। এমনকি কার্পেটের ওপরও গাদা গাদা বই স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকত। পা ফেলা ভার। এক বন্ধু তাই মার্ক টোয়েনকে বললেন, ‘বইগুলো নষ্ট হচ্ছে; গোটাকয়েক শেলফ জোগাড় করছ না কেন?’
মার্ক টোয়েন খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে ঘাড় চুলকে বললেন, ‘ভাই, বলেছ ঠিকই, কিন্তু লাইব্রেরিটা যে কায়দায় গড়ে তুলেছি, শেলফ তো আর সে কায়দায় জোগাড় করতে পারি নে। শেলফ তো আর বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় না।’ শুধু মার্ক টোয়েনই নন, দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই লাইব্রেরি গড়ে তোলে কিছু বই কিনে, আর কিছু বই বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ফেরত না দিয়ে। যে মানুষ পরের জিনিস গলা কেটে ফেললেও ছোঁবে না, সে-ই লোকই দেখা যায় বইয়ের বেলায় সর্বপ্রকার বিবেকবিবর্জিত।
আর কত বলব? বাঙালির কী চেতনা হবে?
তাও বুঝতুম, যদি বাঙালির জ্ঞানতৃষ্ণা না থাকত। আমার বেদনাটা সেখানেই। বাঙালি যদি হটেনটট হতো, তবে কোনো দুঃখ ছিল না। এ রকম অদ্ভুত সংমিশ্রণ আমি ভূ-ভারতে কোথাও দেখিনি। জ্ঞানতৃষ্ণা তার প্রবল, কিন্তু বই কেনার বেলা সে অবলা। আবার কোনো কোনো বেশরম বলে, ‘বাঙালির পয়সার অভাব।’ বটে? কোথায় দাঁড়িয়ে বলছে লোকটা এ-কথা? ফুটবল মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে, না সিনেমার টিকিট কাটার ‘কিউ’ থেকে?
থাক থাক। আমাকে খামোখা চটাবেন না। বৃষ্টির দিন। খোশগল্প লিখব বলে কলম ধরেছিলুম। তাই দিয়ে লেখাটা শেষ করি। গল্পটা সবাই জানেন, কিন্তু তার গূঢ়ার্থ মাত্র কাল বুঝতে পেরেছি। আরবোপন্যাসের গল্প।
এক রাজা তাঁর হেকিমের একখানা বই কিছুতেই বাগাতে না পেরে তাঁকে খুন করেন। বই হস্তগত হলো। রাজা বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে বইখানা পড়ছেন। কিন্তু পাতায় পাতায় এমনি জুড়ে গিয়েছে যে, রাজা বারবার আঙুল দিয়ে মুখ থেকে থুতু নিয়ে জোড়া ছাড়িয়ে পাতা উল্টোচ্ছেন। এদিকে হেকিম আপন মৃত্যুর জন্য তৈরি ছিলেন বলে প্রতিশোধের ব্যবস্থাও করে গিয়েছিলেন। তিনি পাতায় পাতায় কোণের দিকে মাখিয়ে রেখেছিলেন মারাত্মক বিষ। রাজার আঙুল সেই বিষ মেখে নিয়ে যাচ্ছে মুখে।
রাজাকে এই প্রতিহিংসার খবরটিও হেকিম রেখে গিয়েছিলেন কেতাবের শেষ পাতায়। সেইটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা বিষবাণের ঘায়ে ঢলে পড়লেন।
বাঙালির বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে মনে হয়, সে যেন গল্পটা জানে, আর মরার ভয়ে বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।
এত রাগের পরেও সৈয়দ সাহেব বাঙালিকে জাগাতে পেরেছেন কিনা প্রশ্ন থেকে যায় !
আজ পহেলা ফেব্রুয়ারী, আজ থেকে বাঙালির প্রানের বই মেলা শুরু হলো। আসুন আমরা সবাই মেলায় গিয়ে বই কিনি। যাদের আগে বই পরার অবভাস ছিল অথচ এখন আর সময়ের অভাবে বই পড়া হয়ে উঠেনা, তাদের কাছে অনুরোধ, আবারো বই পড়াটা শুরু করুন...
বন্ধুতালিকার অনেকেরই এবার নতুন বই বের হচ্ছে, তাই আসুন বিখ্যাত বই কেনার সাথে সাথে কিছু নতুন লেখকের ভালো বইও কিনি...
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১
তানভীর আহমেদ সম্রাট বলেছেন: কথাটা অনেকাংশেই সত্যি ! এরকম উদাহারন বেশ কয়েকটাই দেখেছি ।
২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৫
কঙ্কাল দ্বীপ বলেছেন: বই পড়া যতভাগ কমেছে এই যুগে, বই ছাপা এবং প্রকাশের সংখ্যা তার থেকেও বহুগুনে বেড়ে গেছে! তাই একজনকে বলতে শুনলাম, বইমেলায় দুই তিন হাজার নতুন ছাপা বইয়ের দুই-তিন লাখ অবিক্রিত/অপঠিত কপির চেয়ে দুই তিনশো বইয়ের বিক্রিত/পঠিত হাজার পঞ্চাশেক বই সমাজের জন্য উপকারী।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৫
তানভীর আহমেদ সম্রাট বলেছেন: এটা আসলেই একটা ভালো পয়েন্ট বলসেন, বেশীর ভাগ নতুন লেখকের বইই অখাদ্য। কোন রকম সাহিত্য যোগ্যতা না থাকার পরেও অনেকে বই বের করছে। কিন্তু তার বিপরীতে ভালো বইয়ের সংখ্যাওতো প্রচুর। তাই ভালো বই চিনে কেনাটা জরুরী।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২১
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বাঙালী বই কেনে না, তা' নয়। তবে পড়ার জন্য নয়। বাসায় আলমারি বা বুক সেলফে সাজিয়ে রাখার জন্য, যাতে বাসায় কেউ এলে গৃহকর্তা ও অন্যান্য সদস্যদের উচ্চ জ্ঞান ও রুচিবোধের পরিচয় পায়। জাস্ট স্ট্যাটাস। অবশ্য সব বাঙালী এরকম নয়। যারা এরকম নয় তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য।