নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে মানুষ টার আশা ছিল কবি হবার, তাইতো আজও স্বপ্ন দেখে শিকল ভাঙ্গার, বাকি জীবন বাউল হয়ে পথে হাটার ।

তানভীর আহমেদ সম্রাট

যদিও এখন শীতকাল, তাই বলে কি বসন্ত খুব বেশী দূরে!

তানভীর আহমেদ সম্রাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

পার্কের বেঞ্চ

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

“পার্কের বেঞ্চ”, কংক্রিটে বাঁধানো এক জীবনের আয়না। প্রতিদিন কতো কতো মানুষ আর তাদের চাওয়া না পাওয়ার গল্পের সাক্ষী। রোজ তাকে জেগে উঠতে হয় খুব ভোরে। শেষ বয়সে সুস্থ ভাবে বাচার আশায় যারা মর্নিং ওয়াকে বের হয়, তাদের ক্লান্ত শরীর এলিয়ে পড়ে এখানে এসে। দুই বৃদ্ধ প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে এই বেঞ্চে এসে বসে। দুজন দুজনের অতীতের গল্প করে। একজনের মেয়ে দেশের বাইরে থাকে, আরেক জনের ছেলে বউ নিয়ে আলাদা ফ্ল্যাটে। মৃত স্ত্রীর কথা মনে করে বিষণ্ণ হয় তারা। সেই কবে রান্না করা কৈ মাছের পাতুরির স্বাদ ভুলতে পারেনি এখনও। কৈশোরের গল্প হয়, গ্রামের কথা। এরপর রোদ একটু কড়া হলে দুজনে বাড়ী ফিরতে শুরু করে।
স্কুল পালানো ছেলেরা আসে একটু পড়ে। এরা দল বেধে ঘোরে। মনের মধ্যে কেমন যেন একটা বড় হয়ে গেছি ভাব। দুই একজন পকেট থেকে সিগারেট বের করে টানে, খুক খুক করে কাশি দিয়ে পাশের জনকে দেয়। ক্রিকেট, সিনেমা, গেমস প্রসঙ্গ পাল্টাতে থাকে ঝড়ের গতিতে। বেশীক্ষণ একজায়গায় বসতে পারেনা তারা। দুরন্ত কৈশোর টেনে নিয়ে যায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়।
১১টার দিকে আসে প্রেমিক প্রেমিকারা। হয়তো এখনও ছাত্র বা পাশ করে বের হয়েছে। তাদের চোখে মুখে স্বপ্ন। যেন এক রাজ্যের গল্প জমে আছে দুজনের। ছেলেটা সবজান্তার মতো হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলে যায়, মেয়েটা মাথা নিচু করে মুখ টিপে হাসে। একটু পড়ে পরেই মান-অভিমানের খেলা। দুজন দুদিকে তাকিয়ে থাকা, তারপর আবার হাত ধরা। দশ টাকার বাদাম কিনে অল্প অল্প করে মুখে ফেলা। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় ঢোকার আগে স্বপ্নের আকাশে শেষ ডানা ঝাপটানো।
ভর দুপুরে ফাকা হয়ে যায় জায়গাটা। তখন শুধু হতাশাবাদিদের আনাগোনা। অনেক ঘুরেও সেলসের টার্গেট মিলাতে পারছেনা যে যুবক বা মাঝ বয়সী লোকটা, গত সপ্তাহে চাকরী চলে গেছে যার। মাসের শেষে বাসায় টাকা পাঠাতে হবে, মেয়ের পরিক্ষার ফিস দেয়া হয়নি এখনও, ছোট ছেলেটাকে ডাক্তার দেখাতে হবে অথচ জানেনা কিভাবে বেবস্থা হবে টাকার! জীবন যুদ্ধে পরাজিত আর আহত যোদ্ধারা দুপুরের খাবার যোগাতে না পেরে পার্কের বাতাসে পেট ভরে।
আস্তে আস্তে বিকেল হয়, সামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হয়ে উঠে পার্কের বেঞ্চ। পথ শিশুদের স্কুল, সমবায় সমিতি, অমুক জেলা, অমুক কলেজ, কল্যাণ সমিতি সবার আলোচনা আর মিলনের কেন্দ্র।
সন্ধ্যায় আসে নিজেকে সৃজনশীল আর প্রতিভাবান ভাবার দল। এই দলে যেমন আছে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী, তেমনি আছে চাকুরীজীবী-শিক্ষক-ব্যেবসাহী। সবার উদ্দেশ্য ও পরিচয় এখানে অভিন্ন । আলো থেকে দূরে, অন্ধকার আর নিরিবিলি এই বেঞ্চে বসে ড্রাগ নেয় তারা। ঘোরের মধ্যে থেকে সৃষ্টিশীলতার স্বপ্ন দেখা মানুষগুলো রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত থাকে এখানে।
মাঝ রাতে সব লোকজন চলে গেলে আসে শাড়ী আর প্রসাধনে মোড়ানো খালি পায়ের রহস্যময় মেয়েগুলি। অন্ধকারে তাদের চোখের পানি দেখা যায়না, শুধু মিথ্যে হাসির শব্দ শোনা যায়। পার্কের এই বেঞ্চ তখন তাদের কান্নার ভর বহন করে। কালো আকাশের রুপালী চাঁদটা যখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে, ঘরে ফিরে যায় তারা।
দুপুরে ঠেলা গাড়ী নিয়ে বের হওয়া চালক তার ১০বছরের ক্লান্ত বাচ্চাটাকে নিয়ে প্রায় টলতে টলতে শেষ রাতে এই বেঞ্চের উপরে এসে শোয়। গায়ে জড়িয়ে রাখা চাদরটাকে কাথার মতো করে টেনে নিয়ে বাপ-বেটা ঘুম দেয়। রাতের অন্ধকারে সোডিয়াম লাইটের হলুদ আলো পার্কের সবুজ গাছের উপর পড়ে এক অপার্থিব রঙের সৃষ্টি করে...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৫

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লাগল।
++++

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯

তানভীর আহমেদ সম্রাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.