নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সাথে সবসময়

"জীবন হয়তো বা আমাকে দুঃখ পাওয়ার ১০টি কারন দেখায় কিন্তু আমি জীবনকে উপভোগ করার ১০০টি কারন দেখাই"

তানভীর৪২৭

পুরো নাম: তানভীর হোসাইন জন্ম: ২৭ এপ্রিল , ১৯৯১। শখ : ফটোগ্রাফি। লেখাপড়া : এম.বি.বি.এস (4th year) । নিজের মধ্যে ভালো লেখার চেষ্টা সবসময় থাকে..... আমি সবসময় আশা করি আমার কোন ভুল হলে সবাই আমাকে অবগত করবে.... আমার কোন ভুল যদি কেউ বলে এতে আমি অনেক বেশী খুশী হই এবং তা সংশোধনের চেষ্টা করি.......

তানভীর৪২৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজধানীতে বিএনপির মিছিলে পুলিশের বেপরোয়া গুলি : নিহত ১ আহত ৫০০০ : গণহত্যা চালিয়ে পতন ঠেকানো যাবে না - ফখরুল

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০০

এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জে আহত হয়ে দলটির খিলগাঁও থানার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ খান হাসপাতালে ভর্তির পর মারা যান। এছাড়া দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গুলিবিদ্ধ হন কমপক্ষে ১৫ জন। প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ কর্মীরা ১০-১২টি গাড়ি ভাংচুর ও চারটিতে অগ্নিসংযোগ করে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে নয়াপল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ ও মগবাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গুলির শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। গতকাল পৌনে পাঁচটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করে। সংঘর্ষের পর থেকে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় পুলিশ-র্যাব অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

রাতে গুলশান কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ ও তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা দলের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর গুলি ও বোমা মেরে হামলা চালিয়েছে। এতে বিএনপির জাতীয় নেতাসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হয়। এছাড়া শ’ শ’ নেতাকর্মীকে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গণহত্যার প্রতিবাদ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দাবিতে গতকাল বিকালে নয়াপল্টন থেকে মগবাজারগামী মিছিলের মধ্যভাগে মৌচাকে হামলা চালায় পুলিশ। লক্ষাধিক মানুষের এ মিছিলে দেশ টিভির সামনের একটি ভবন থেকে অজ্ঞাত কেউ ককটেল ছুড়লে মিছিলকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আশপাশের দোকান ও গাড়িতে ভাংচুর শুরু করে তারা। তাত্ক্ষণিক টিয়ারশেল ও গুলি শুরু করে পুলিশ। কয়েকশ’ রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়। মিছিলের সম্মুখভাগ মগবাজার, মধ্যভাগ মৌচাক ও মালিবাগ এবং পেছনে শান্তিনগর মোড় থেকে মুহুর্মুহু গুলি চালায় পুলিশ। সামনে ও মধ্যভাগে টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেট ছুড়লেও পেছনের অংশ থেকে শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। মিছিল এবং আশপাশ এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে। পল্টন ও রমনা থানায় বেশ ক’জনের আটকের কথা স্বীকার করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়নি।

মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হতেই মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল ও মগবাজারে লাঠি মিছিল বের করে সরকারি দল। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়।

মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি স্লোগানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেন। তিনি বলেন, আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু আন্দোলন থামাতে সরকার দেশে গণহত্যা শুরু করেছে। এবার সরকার পতনের একদফার আন্দোলন শুরু হলো। একটিই স্লোগান— ‘একদফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি’। নিজের জীবন রক্ষার্থে মঙ্গলবার দেশব্যাপী হরতাল পালন করতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। আর দলের মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা শাহবাগিদের ‘জনগণবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রতিরোধের ঘোষণা দেন।

এদিকে মিছিলে হামলার পর নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, লাখো জনতার মিছিলে গুলি প্রমাণ করে এ সরকার স্বাধীনতাবিরোধী। নিজেদের জীবন রক্ষার তাগিদে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, গণহত্যার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে মিছিলে বোমা হামলা করেছে। নির্বিচারে পুলিশ গুলি চালিয়েছে।

তবে পুলিশের এডিসি মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিএনপির মিছিল ঠিকমতই যাচ্ছিল। হঠাত্ করে মালিবাগ মোড়ে পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এ সময় আমরা মানুষের জানমাল রক্ষার্থে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেই।’

একজন নিহত : খিলগাঁও থানা বিএনপি সভাপতি ইউনুস মৃধা আমার দেশকে জানান, মালিবাগে বিএনপির মিছিলে পুলিশ ব্যাপক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে মিছিলে অংশ নেয়া খিলগাঁও থানা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ খান অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে সেখান থেকে নিকটস্থ খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি মারা যান। তার বাসা গোড়ান ২৫ নং ওয়ার্ডে। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায়।

আহত অর্ধশতাধিক : পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট এবং লাঠিচার্জে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। যুবদলের সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু, দারুসসালাম থানার জিয়া, তেজগাঁওয়ের বুলবুল, মোহাম্মদপুরের আলামিন, ছাত্রদলের রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আলমসহ কমপক্ষে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। আহতরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন। মিছিলের শুরুতেই যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল পা মচকে আহত হন। তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুলের ব্রিফিং : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শাহবাগের গণজাগরণকে সরকারের লেজুড়বৃত্তির আন্দোলন আখ্যা দিয়ে বলেন, শাহবাগ যা বলছে, সরকার তাই করছে। তাহলে সরকার চালায় কে— শেখ হাসিনা, না ডাক্তার ইমরান?

মির্জা ফখরুল গতকাল রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে দলটির মিছিলে হামলা পরবর্তী অবস্থা জানাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ প্রশ্ন রেখে জানান, খিলগাঁও থানা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ পুলিশের টিয়ারশেলে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে রাজধানীর খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিত্করা জানান, তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ ও তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা দলের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর গুলি ও বোমা মেরে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এতে বিএনপির জাতীয় নেতাসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হয়। এছাড়া শ’ শ’ নেতাকর্মীকে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তিনি বলেন, আমরা সরকারের এহেন বীভত্স ফ্যাসিবাদী আচরণের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তার দল। আমরা গণতন্ত্রের রীতি-নীতি পদ্ধতি অনুসরণ করে চলি। কিন্তু তাই বলে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট আচরণের জবাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকব না। এখন থেকে সরকারের সব অন্যায়-জুলুম-অত্যাচারসহ প্রতিটি আঘাতে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলের বিষয়টি পুলিশকে আগেই অবহিত করা হয়েছিল। সমাবেশ শেষে যে মিছিল শুরু হয়, তার পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। সমাবেশ শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে মিছিলটি মগবাজারের দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ আকস্মিকভাবে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। শান্তিনগর মোড়ের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় আওয়ামী ক্যাডাররাও মিছিলকে ঘিরে নানা দিক থেকে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। তিনি পুলিশ ও আওয়ামী পাণ্ডাদের এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করেন।

তিনি বলেন, সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। গণতন্ত্রের সব মৌল নীতিকে তারা মাটিচাপা দিয়েছে। মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার নিষ্ঠুর বুলেট ও বুটের তলায় পিষ্ট করে চলেছে। এরই এক চরম দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে সরকার আজকে বিএনপি’র মিছিলে নির্মম আক্রমণের মধ্য দিয়ে।

শাহবাগ নিয়ে প্রশ্ন : শাহবাগ আন্দোলনের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা সরকারের লেজুড়বৃত্তি করছেন বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি জামায়াতের হরতালে সমর্থন দিয়েছে বলে শাহবাগ আন্দোলনের নেতাদের বিবৃতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের নেতাদের সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শাহবাগকে যতটুকু গুরুত্ব দেয়া দরকার, আমরা ততটুকু দিচ্ছি না। দেশে কী সরকার আছে সেটিই এখন প্রশ্ন। সরকার কী শাহবাগ না-কি আওয়ামী লীগের সরকার। প্রধানমন্ত্রী কী শেখ হাসিনা না-কি ইমরান এইচ সরকার আমরা তা জানতে চাই।

পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপির বক্তব্য নেই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এতে সমবেদনা জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ যেভাবে লাখ লাখ মানুষের মিছিলে গুলি করছে, তাতে কিছু প্রতিক্রিয়া আসতেই পারে। মিডিয়া কিন্তু পাখিকে যেভাবে গুলি করে মারে সেভাবে মানুষ মারার সংবাদ প্রকাশ করছে না। তিনি বলেন, পুলিশের ভূমিকা জনগণ, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে নয়।

জামায়াত বিএনপির মিছিলে প্রবেশ করে হামলা চালিয়েছে—পুলিশের এমন বক্তব্য নাকচ করে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, পুলিশ তাদের বক্তব্য প্রমাণ করতে এসব বলছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নান, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুুস সালাম, মহিলা দল সভাপতি নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ হামলা—রিজভী : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাত্ক্ষণিক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই বিএনপির মিছিলে পুলিশ-র্যাব হামলা করেছে। তাদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররাও বোমা হামলা ও গুলি ছুড়েছে বলে তার অভিযোগ।

তিনি জানান, পুলিশের গুলিবর্ষণ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, ড. আবদুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, নির্বাহী কমিটির সদস্য খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু, যুবদলের সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলামসহ অর্ধশতাধিক নেতাই আহত হয়েছেন। আরও কয়েকশ সাধারণ কর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

রিজভী অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ-র্যাবসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে নির্বিচারে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আমি নিজেও ওই হামলার মৃত্যুকূপ থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে এসেছি।

আহত রিজভী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাঁজোয়া যানে চড়ে পুলিশ গুলি করতে করতে আমার দিকে ছুটে আসছিল। গণমাধ্যমের কর্মীদের কারণে আমি বেঁচে গেছি। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এভাবে হামলা ও গুলি করে জনগণের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।

যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পুলিশের এ হামলার প্রতিবাদের ভাষা আমার জানা নেই। এ হামলাকে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর হামলার সঙ্গে তুলনা করা যায়।

তিনি বলেন, আমরা সকাল থেকে পূর্বাভাস পাচ্ছিলাম, পুলিশ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। তারপরও আমরা বারবার পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজকের মিছিল সম্পন্ন করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা আমাদের কথাও দিয়েছিল, কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু যেভাবে পুলিশ এই হামলা চালিয়েছে, তাতে এটা প্রমাণিত হয়েছে, ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত। তিনি দাবি করেন, এই হামলায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

আহতরা কোথায় আছেন জানতে চাইলে রিজভী বলেন, আমরা এখনও পুরো খবর পাইনি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে একটি অজানা ফোনে কথা হয়েছে। তিনি আহতাবস্থায় আছেন। পুরো তথ্য জানার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।

পুলিশ বলেছে হামলা বিএনপি কর্মীরা চালিয়েছে এরকম প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, এটি পুলিশের মিথ্যাচার। পরিকল্পিতভাবে এই হামলা আড়াল করতে তারা এ ধরনের মিথ্যা কথা বলছে।

একটাই দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি-ফখরুল : মিছিল-পূর্ব সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। যে সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আমাদের একটাই দাবি, শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর ওপর আঘাত করা হয়েছে। শুধু এই অপরাধেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। সরকার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সমাবেশ ও মিছিলে আরও অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আসম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক এমএ মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থনৈতিক সম্পাদক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভূইয়া, সালাউদ্দিন আহমেদ, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।

ইসলাম অবমাননাকে সরকারের নতুন ভেলকি আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও সরকারের ব্যর্থতা এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের গণদাবি আড়াল করতেই এমনটা করছে সরকার।

তিনি বলেন, সারাদেশে পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের নির্দেশে নির্বিচারে নৃশংসভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। তার প্রতিবাদে এই প্রতিবাদ মিছিল। প্রতিবাদে আমরা কালো পতাকা ও ব্যাজ ধারণ করেছি। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে অনুরূপ প্রতিবাদ করে বিক্ষোভ মিছিল করা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই রক্তপিপাসু সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য সবাইকে রাজপথে নেমে আসার ডাক দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এখন বাংলাদেশের জনগণের একটাই দাবি ‘শেখ হাসিনা কবে যাবি’।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সরকার এ সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। বিরোধী দলের আন্দোলনকে নস্যাত্ করতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে। মঙ্গলবারের হরতাল সফল করতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, বর্তমান সরকার দেশে গণহত্যা চালাচ্ছে। দেশকে সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা বিশ্বজিতের খুনি ছাত্রলীগের কর্মীদের ডানে-বামে রেখে আরও অনেককে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পরিত্যাগ করে জনগণের আন্দোলনে একাত্মতা জানাতে তিনি শাহবাগিদের প্রতি আহ্বান জানান। জনগণের কাতারে না এলে প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় শাহবাগিদের প্রতিরোধ করার হুমকি দেন তিনি।

প্রতিবাদমুখর মিছিলে গণআওয়াজ : শনিবার বিএনপির মিছিলে আগত নেতাকর্মীদের মুখে ছিল গণআওয়াজ। সরকারের দুর্নীতি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে। হাতে কালো পতাকা ও মাথায় কালো কাপড় বেঁধে মিছিলে অংশ নেয় অধিকাংশ নেতাকর্মী। স্লোগান তোলে- ‘হ’ হাসিনা, তুই চোর। ‘র’ রেহানা, তুই চোর। ‘স’ সজীব ওয়াজেদ জয়, তুই চোর। আবার, শাহবাগের আদলে তারা স্লোগান দেয়- ‘ম’ মখা আলমগীর, তুই রাজাকার’ ‘ব’ বেয়াই মোশাররফ, তুই রাজাকার। আবার সরকারের উদ্দেশ্যে স্লোগান ছিল এমন— এক দফা এক দাবি, ফ্যাসিবাদ কবে যাবি। এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার কবে যাবি। দুর্নীতিবাজ কবে যাবি। জমায়েত, সমাবেশ ও মিছিলে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিশেষ করে স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ সব নেতা এতে উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি মিছিলের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়ে নেতৃত্ব দেন বিএনপির অঙ্গ দলের নেতাকর্মীরা। যুবদলের সভাপতি মিছিলের শুরুতেই আহত হলেও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক নেওয়াজ আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সরাফত আলী সফু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব নিজ নিজ নেতাকর্মীদের নেতৃত্ব দেন। তবে স্লোগানের নেতৃত্বে ছিল যুবদলের মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ইয়াছিন আলী, দক্ষিণের আহ্বায়ক রেজাউর রহমান রিপন, ছাত্রদলের উত্তরের সভাপতি আবুল মনসুর খান দিপক ও দক্ষিণের সভাপতি ইসহাক আলী।

হামলা-গুলির নিন্দা : বিএনপির মিছিলে হামলা ও গুলির নিন্দা জানিয়েছে ১৮ দলীয় জোটের নেতারা। এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ বীরবিক্রম ও মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও মহাসচিব খন্দকার লুত্ফর রহমান, মালয়েশিয়া বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলম শাহ প্রমুখ। এছাড়া যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পৃথক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, রাজপথেই এ হামলার জবাব দেয়া হবে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৬

রশিক রশীদ বলেছেন: বিএনপি জামাতের মত কটটেল নিয়ে মিছিল করে জানতাম না । আমি জানতাম বিএনপি জনপ্রিয়দল তারা জামাতের সন্ত্রাস পছন্দ করে না এবার দেখলাম তানা সব রসুনের পাছা একটাই । দুঃখ হয় যেসব মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি করে আর কোনঠাসা হয়ে থাকে তাদের জন্য।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৬

"চিত্ত যেথা ভয় শূণ্য, উচ্চ সেথা শির" বলেছেন: হা হা এ আর এমন কি প্রয়োজনে খ্যাপানো অস্ত্র ব্যবহার করা হবে গনতন্ত্র প্রতিষ্টা করতে।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১১

আনিসুর র বলেছেন: পুলিশ যা করছে তা খারাপ।

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১১

মাহির কাবির বলেছেন: jondis rugi der pitano hobe

৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:২৬

রেজা_সি.এস.ই_বুয়েট বলেছেন: হাহাহা ........... জামাতকে শেল্টার দিয়েও যুদ্ধাপরাধীদের বাচানো যাবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.