![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিডিয়া বা গন-মাধ্যমকে বলা হয়ে থাকে জনগনের দর্পণ। জনগন বা দেশের বর্তমান অবস্থা, মানুষের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরা, তাদের দাবী আদায় করাই হচ্ছে গন-মাধ্যমের কাজ। কিন্তু এখন দেখছি গন-মাধ্যম আর জনগনের পক্ষে বা জনগনের মঙ্গলে নেই। তাদের উদ্দেশ্য আজ বদলে গিয়েছে। জনগনের দর্পণ আজ "ব্যবসায়ই মূল লক্ষ্য" নিতিতে চলছে। কিছু ক্ষেত্র তারা জনগনের পক্ষ বাদ দিয়ে বিপক্ষ এমনকি তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে ঘৃণিত ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত হয়ে গিয়েছে।
ব্যবসায় সফল হতে হলে প্রথম প্রয়োজন হচ্ছে ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন। সাধারনত, ভোক্তারা ব্যতিক্রমী জিনিষে আগ্রহী হয় বেশি। আর খবরের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম খবরের চাহিদা সব চাইতে বেশি। কারন সংবাদ গুড়া-মশলা বা টমেটো সসের মত জিনিষ নয় যে পরিচিত বা সাধারনত বেশি ভোক্তা যে ব্রান্ডের পন্য ব্যাবহার করে, সেটা অন্যরাও ব্যাবহারে আগ্রহী হবে।
ঠিক একারনেই এখন কোন হত্যা বা ধর্ষন হলেই এখন শিরোনাম হয়ে দাড়ায় "খ্রিষ্টান ব্যবসায়ী হত্যা", "মসজিদের মুয়াজ্জিন হত্যা", "সমকামী হত্যা", "অমুক ধর্ষন", "তমুক পাচার"।
"অমুক ধর্ষন", বা "তমুক চুরির" ব্যাপারে এখানে কিছু বলবো না। এখন শুধু এটা নিয়ে কথা বলবো যে, "মসজিদের মুয়াজ্জিন হত্যা" "খ্রিষ্টান ব্যবসায়ী হত্যা", "সমকামী হত্যা" বা "হিন্দু পুরোহিত হত্যা" এই শিরোনাম গুলোতে "মসজিদ", "মুয়াজ্জিন", "খ্রিষ্টান", "সমকামী", "হিন্দু", "পুরোহিত" এই শব্দ গুলো কেন আসছে? এই শব্দগুলোর যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা দিয়ে কি এটাই বুঝাচ্ছে না যে, সে ব্যক্তি মসজিদের মুয়াজ্জিন, খ্রিষ্টান, সমকামী বা হিন্দু পুরোহিত হওয়ার কারনেই খুন হয়েছে?
লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে প্রতিটা শব্দই ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত। এই ধরনের শিরোনামধারী খবর গুলো পড়ে দেখবেন যে এই হত্যা গুলোর পিছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে "মুসলিম জঙ্গি" বা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সম্পৃক্তার কথা বলা বা বোঝানো হচ্ছে। আমি আবারও বলছি "মুসলিম জঙ্গি" বা কোন ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সম্পৃক্তার কথা বলা বা বোঝানো হচ্ছে।
কিন্তু আসলেই কি খুনের পিছনে সে অমুসলিম বা ইসলাম বিরোধী জাতীয় কোন কারন থাকে? এবং একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি ইসলাম ধর্মতত্ত্ব বা রীতি বা আইন অনুযায়ী সে খুনটা করে?
একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের নানা কারনে শত্রুতা থাকতে পারে, জমিজমা সূত্রে, পারিবারিক সূত্রে, লেনদেনের সূত্রে। সেই শত্রুতার সূত্র ধরে একজন মানুষ বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুন হয়ে যেতেই পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুন হতেই পারে কেন বলছি সে ব্যখ্যা না দিয়ে বরং প্রশ্ন করি, কোন কারনে এখন মানুষ খুন না হচ্ছে? ছোট্ট কাজের মেয়ে ঠিক মত কাজ না করা থেকে শুরু করে পুলিশকে চাঁদা না দেয়া, একজনকে খুন করার সময় দেখে ফেলা, সাময়িক উত্তেজনা বসত ধর্ষন করে তারপর মামলার ভয়ে এমনকি মাত্র কয়টা টাকা ঋণ পরিশোধ না করার জন্যেও আজ মানুষ খুন হচ্ছে। আর ভদ্রবেশী খুনীদের কথা না হয় না ই বললাম।
তার অর্থ হচ্ছে, সব পেশা, ধর্ম, বয়সের মানুষই বিভিন্ন কারনে খুন হতে পারে। এবং সেই সাথে খুনিও যে কোন পেশা, ধর্ম, বয়সের হতে পারে।
মুসলমান বাদে অন্য ধর্মাবলম্বী কোন খুনিকে নিয়ে আমি এখানে কিছু বলবো না কারন তাদের ব্যাপারে কোন ষড়যন্ত্র আমার চোখে পড়েনি।
দাড়ি রেখে টুপি পরে একজন লোক মুসলিম সাজলো, আর তারপর সে একজনকে খুন করলো, আপনি তাকে খুনি বা জঙ্গি বলতেই পারেন, কিন্তু আপনি তাকে মুসলিম জঙ্গি বা খুনি কেন বলবেন? ধর্ম-কর্ম আমরা কতটুকু করি? দাড়ি রেখে টুপি পরে কিংবা ইসলামিক নামধারী একজন খুন করলেই কি সে "মুসলিম জঙ্গি" হয়ে গেল? জঙ্গি সে তো জঙ্গি, তার আবার ধর্ম কিসের?
এখানে জঙ্গি বা খুনির আগে মুসলিম উল্লেখ করা মানে কি মুসলানদের হেনস্তা করার কূটকৌশল নয়? এটা যে নিছকই কূটকৌশল তা আরও পরিস্কার হয়ে যায় যখন মিডিয়াতে একমাত্র তখনই খুনির ধর্ম উল্লেখ করা হয়, যখন খুনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী হয়।
একটু ভেবে দেখুন, এধরনের শিরোনাম বা খবর ছাপিয়ে একজন সাংবাদিক বা সংবাদ সংস্থা খুনের ঘটনার পরপরই কিন্তু খুন হওয়ার পিছনে লুকিয়ে থাকা কারন প্রকাশ করে ফেলে। অথচ তত পরবর্তীতে, পুলিশ বাহিনী বা গোয়েন্দা বাহিনী বছরের পর বছর তদন্ত করে সেই হত্যার পিছনে সেই একই কারন খুঁজে পায় যে, "খ্রিষ্টান হওয়ার কারনেও তাকে হত্যা করা হয়েছিল, কিংবা সমকামী হওয়ার কারনেই তাকে হত্যা করা হয়েছিল। সাংবাদিক বা সংবাদ সংস্থা যদি হত্যার সংবাদ পাওয়া মাত্রই হত্যার কারন বলে দিতে পারেন, তাও আবার শিরোনামে তবে তদন্ত করার কি দরকার? আর যদিও তদন্ত করা হয়, তবে তদন্ত কর্মকর্তাও কি সেই খবরের শিরোনাম দিয়ে প্রভাবিত হয়ে ভূল-ভাল তদন্ত করবে না?
ব্যতিক্রমী শিরোনাম দিয়ে দর্শক আকর্ষন করার উদ্যেশেই হোক আর ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের উদ্দ্যেশেই হোক, মিডিয়ার উচিত এই ধরনের শিরোনাম এবং শুধু টিকটিকির লেজ দেখে সেটাকে সাপ বানিয়ে খবর প্রচার না করা। নয়তো একদিকে মিডিয়া যেমন গ্রহনযোগ্যতা হারাবে, অন্যদিকে মুসলিম জাতী সত্বার প্রতি ঘৃণিত ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত মাসুলও গুনতে হবে।
সারাংশ করে বলবো, খবর সেটুকুই প্রকাশ করুন যেটুকু গ্রহনযোগ্য। খবর পড়তে মানুষকে আকর্ষন করার জন্য কোন বিভ্রান্তি মূলক খবর প্রকাশ করবেন না এবং এমন কোন খবর তো নয়ই যা মানুষকে ভূল জিনিষ ভাবতে বাধ্য করে
তানভির ইসরাক
১৬ ই জুন, ২০১৬
লেখাটি ফেসবুকে দেখতে পারেন এখানে Click This Link
©somewhere in net ltd.