![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাঝে মাঝে টুকিটাকি লেখার চেষ্টা করি। অন্যের লেখা পড়তে ভালো লাগে।
আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। সেদিন সকালে নীলিমা এসে আমাকে সতেরটা ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলো। বলেছিলো, সবগুলো ওষুধ পানিতে গুলিয়ে একবারে খেতে। অথবা আমি ইচ্ছে করলে মুড়ির মতো চিবিয়ে চিবিয়েও ওষুধগুলো খেতে পারি।
হাত থেকে ওষুধগুলো নিয়ে আমি অবাক হয়ে ওঁর চোখের দিকে তাঁকিয়ে ছিলাম। সেই চোখে আমার জন্য বিন্দুমাত্র মমতা ছিলো না।
.
অথচ অবস্থাটা ঠিক এইরকম ছিলো না। বছরখানেক আগেও আমরা একসাথে ন্যাশনাল পার্কে হেটে বেড়াতাম। পার্কের সবুজ ঘাসের উপর বসে হয়তো কোনো কোনোদিন চকবার আইসক্রিম খেতাম। দশ টাকার ফুচকা একটা প্লেটে নিয়ে দুজনে ভাগাভাগি করে খেতাম।
.
নীলিমা ছিলো সিটি কলেজের ছাত্রী। তাঁর রুপ ছিলো। কিছু গুণও ছিলো। আমার মতো বেকার ছাত্রের কখনও অটো রিকসার ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হতো না। কলেজ ছুটি হলে আমরা এক অটোতে উঠে বসতাম। যাত্রার সময়টুকু জমিয়ে গল্প করতাম। আর অটো থেকে নামার সময়, নীলিমা হাসি হাসি মুখ করে বলতো, "দোস্ত, তুই যা। তোর ভাড়াটা আমি দিয়ে দিবো নি।"
.
কলেজে আমি একেবারেই বখাটে টাইপের ছাত্র ছিলাম। কলেজে উঠেই ধারনা হয়েছিলো- একেবারে খ্যাত টাইপের ছেলেরাই কলেজে লেখাপড়া করতে আসে। স্মার্ট ছেলেরা থাকবে লেখাপড়ার উর্ধ্বে।
যার ফলাফলও হাতে নাতে পেয়েছিলাম। কলেজের মিডটার্ম পরীক্ষায় আমি চার সাবজেক্টে ফেল করলাম।
.
রেজাল্টের ব্যাপারটা কিভাবে যেনো বাবার কানে গেলো। বাবার সাথে আমার সম্পর্ক এমনিতেই ভালো ছিলো না। এবারে বাবা একেবারেই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন।
.
প্রতিটি মেয়ের মধ্যেই একেকটি মা লুকিয়ে আছে। এজন্যই হয়তো বখাটে ছেলেদের প্রতি মেয়েদের একটু অন্যরকম দরদ থাকে। আমার এই দুরবস্থায় দুইজন নারী সবসময় আমার পাশে ছিলো। একজন আমার নিজের মা, অন্যজন নীলিমা রহমান।
.
বাবার কাছ থেকে আমার হাত খরচ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিলো। মা মাঝেমাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে কিছু টাকা পয়সা দিতো। কিন্তু তা ছিলো একেবারেই নগণ্য। রোজ চা, সিগারেটের মতো সামান্য খরচ গুলিও আমি নীলিমার ঘাড়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দিতাম।
.
এরকম অবস্থায় ভয়ে ভয়ে একদিন আমি নীলিমাকে প্রোপোজ করে বসলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে নীলিমা মুচকি হাসি দিলো। সে হাসির অর্থ একমাত্র যারা ভালোবাসতে জানে, তারাই বোঝে।
.
সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছিলো। হঠাৎ একটা দুর্ঘটনা ঘটলো।
আমাদের কলেজে প্রায়ই "ক্ষমতা আর টাকাপয়সা"র ভাগ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হতো। সেদিন আমি আর নীলিমা ক্যাম্পাসের পাশেই একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছি। হঠাৎ শুনি ক্যাম্পাসের ভিতরে শোরগোল হচ্ছে।
ব্যাপারটা জানতে আমি এগিয়ে গেলাম। নীলিমা পেছন থেকে আমার শার্ট টেনে ধরলো। কাতর স্বরে আমাকে ভিতরে যেতে নিষেধ করলো। আমি ওঁর হাত থেকে শার্ট ছাড়িয়ে নিয়ে ভিতরে চলে গেলাম।
কখন যে মারামারিতে নিজেও জড়িয়ে পড়লাম বুঝতেই পারলাম না। হঠাৎ একটি কাতর স্বর শুনে চমকে উঠলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি নীলিমা মাথায় হাত দিয়ে একটি দেয়াল ঘেঁষে বসে আছে। ওঁর হাতের ফাঁক দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে লাল রক্ত পড়ছে।
.
হাসপাতালে আমি অনেকবারই নীলিমাকে দেখতে গিয়েছি। কিন্তু কিছুতেই ওঁ আমার সাথে দেখা করে নি।
সুস্থ হবার পরও নীলিমা আর কলেজে আসে নি। ফোন করলেও ওঁ রিসিভ করে না।
.
একদিন এক বন্ধুর মুখে শুনলাম নীলিমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমার তখন মাথাখারাপ অবস্থা। অনেক কষ্টে ফোনে ওঁর সাথে যোগাযোগ করলাম। বললাম, অন্তত একবার আমার সাথে দেখা করতে। না হলে আমি আত্মহত্যা করবো।
.
সেদিন সকালে নীলিমা এসেছিলো। হাতে সতেরটি ঘুমের ট্যাবলেট। ওষুধগুলো আমাকে দিয়ে আত্মহত্যার জন্য অনুরোধ করেছিলো।
.
বিকেলে আমি আমাদের হিস্ট্রি স্যারের সাথে দেখা করলাম। স্যারকে বললাম, "স্যার, আমি আত্মহত্যা করতে চাই।"
স্যার অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর তাঁর স্বভাবসুলভ গম্ভীরমুখে আমাকে ইংরেজিতে একটা লম্বা লেকচার দিলেন। যার সারমর্ম এই যে......
.
"পৃথিবীতে নিজের জীবনটাই সবচেয়ে মুল্যবান বস্তু। প্রেম, ভালোবাসা এগুলো জীবনের অংশমাত্র। জীবনের একটা অংশের জন্য পুরো জীবনটা নষ্ট করে ফেলা বোকামি। আত্মহত্যা করার আগে একবার কি আমার নিজের মায়ের মুখখানার কথা মনে পড়ে না? কিংবা সেই বাবার মুখটা যে কিনা গায়ের রক্ত পানি করে আমাদের জন্যে অর্থ উপার্জন করছেন!"
.
ঐদিনই আমি উপলব্ধি করলাম, পৃথিবীতে আমার বাবাকেই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
.
পকেট থেকে সতেরটি ঘুমের ওষুধ বের করে স্যারের হাতে দিলাম। স্যার ওগুলি গ্রহণ করলেন না। মুচকি হেসে আমাকেই ফিরিয়ে দিলেন।
.
মাঝেমাঝে যখন খুববেশি অনিদ্রা রোগে ভুগি, তখন একটা করে ওষুধ খাই। আমি একরাতের জন্য শান্তির ঘুম চাই। চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চাই না।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৯
তরিকুল ইসলাম শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:০৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দুর্ভাগা প্রেমিক বটে!
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯
তরিকুল ইসলাম শোভন বলেছেন: ভাগ্যের লেখন না যায় খণ্ডণ ভাই
৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
প্রেমিক হিসেবে ভাগ্য খারাপ।
তবে, নীলিমা এত কেয়ার করা একটা মানুষ হয়ে ১৭টা ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে আত্নহত্যা করতে বলবে!!
এটা বেশ অদ্ভুত।
চরিত্রের বর্ণনার সাথে ঘটনাটা খাপ খাচ্ছে না।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫১
তরিকুল ইসলাম শোভন বলেছেন: নারী চরিত্র বোঝা খুব কষ্টসাধ্য ভাই
৪| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
জনৈক অচম ভুত বলেছেন: অভাগা প্রেমিকের গল্প হলেও শেষের উপলব্ধি ভাল লেগেছে।
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫২
তরিকুল ইসলাম শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৯
মুহাম্মদ তারেক্ব আব্দুল্লাহ বলেছেন: খুব ভালো লাগলো পড়ে, শুভেচ্ছা নিবেন...