![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্তর্হিত সংস্রাব
সেদিন ডায়েরী পড়া শেষে যখন কান্না চাপিয়ে একটার পর একটা ফোন দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন শেষবারের মত ফোনের ওপাশে কান্নায় জড়ানো তোমাকে কাঁদতে কাঁদতে একটা কথাই বলেছিলাম 'এমন তো হওয়ার কথা ছিল না'।
কি করে কি হয়ে গেলো বুঝে উঠার আগেই যেন সব ঝাপসা হয়ে গেলো,বিলীন হয়ে গেলো।সেদিনের পর থেকে আর কোনদিন আমি কাঁদি নি,কখনো কখনো খুব কাঁদতে ইচ্ছা করে কিন্তু আমার কান্না আসে না।
আমি তো ভালোবেসেছিলাম।
বিকেল বেলার রোদটা আমারো ভালো লাগতো, স্তিমিত আলোতে নিজেকে হারিয়ে ঘরে ফিরতে কখনো ইচ্ছা হত না। মনে হত শুধু রাতেই বাঁচবো,রাতটাই যেন আলো,আশা-ভালোবাসা সবকিছু। সেই দুপুর উঁকি সকালের নাস্তা থেকে অবেলার লাঞ্চ কিংবা ডিনারের সঙ্গী হয়ে তুমি তখন ছিলে; একসাথে বিসমিল্লাহ্ বলে শুরু করাটা ঘুম ভাঙা আড়মোড়ার মত হয়ে গিয়েছিল, স্ক্রীনের এপার-ওপারে হলেও সবটাতেই কেমন যেন মায়া ছিল,ভালোবাসা ছিল। এই ভালোবাসা যেন অনেকদিনের কোন অভ্যাসের আদলে গড়ে ওঠা বদঅভ্যাস। অভ্যাস ছাড়া থাকা যায় কিন্তু বদঅভ্যাস না। তাইতো তুমি এখনো রয়ে গেছ 'জীবন' এর প্রতি অক্ষরে-অক্ষরে।
হঠাৎ করেই পরিচয়; অপরিচিতা-অভেদ্য কোন এক নিশানা হয়ে। সেই পরিচয় পর্ব থেকেই কেমন একটা টান ছিল,অনেকটা মৃত্যুর মুখে জীবনের মত। তোমার বাঁকা দাঁতের হাসি আর ঠোঁটের উপরের সেই কালো তিল'টাতে আমার ভালো থাকা-মন্দ থাকা বাঁধা পড়ে গেলো। তোম্মার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো নিয়তির পরিহাসে। ছাব্বিস দিনের সেই বন্ধুত্বে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হয়ে ওঠা আর ঠিক সাতাশ দিনের মাথায় স্বীকার করে ফেললাম তোমাকে ভালোবাসি; তুমি তো সায় দিয়েছিলে,তুমি কাছে টেনে নিয়েছিলে। সেই দিন থেকে আমি ভালোবাসা বুঝি নি,সবটাই মায়া ছিল।
সেদিন যখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার চোখে চোখ চেপে ধরেছিলাম আর হ্রদয় যন্ত্রটা অস্বাভাবিক লাব-ডাবে মজেছিল আর তুমি বললে আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে, তখন; তোমার নেশায় ডুবে বুঁদ হয়ে বুঝেছিলাম ভালোবাসা কি! সেদিন বুঝেছিলাম তোমাকে ছাড়া আর চলবে না,নাহ-একটা দিন ও না। তোমার সাথে থাকা সময়টা যেন আরব্য রজনীর কোন দৈত্যের মত উড়ে যেত, সময় আমাদের হারিয়ে দিত। সেই সময়! সেই নিষ্ঠুর সময় যেন এখন কাটতেই চায় না। এখন আমি বুঝি প্রকৃতির নির্মম সামঞ্জস্যতা।
সেদিন,পনরো সালের ৩১'শে ডিসেমম্বর সারাটা দিন একসাথে ছিলাম আমরা; একটা ডায়েরী আমার ব্যাগে ভরে দিয়ে বললে ১২ টার পর খুলতে। সেদিন বাসায় পৌঁছে হ্রদয়পটের নতুন বছরের ক্যালেন্ডারে প্রতিটা পাতার প্রতিটা দিন তোমার নামে বরাদ্দ করে চোখ খুলেই স্বপ্ন দেখছিলাম,ঠিক ১১:৫৯ মিনিটের শেষ দশকের সেকেন্ডে যখন তোমার ফোন বাজলো তখন আমি তোমার ডায়েরীটা হাতে নিয়ে বসে আছি ১২:০১ এর অপেক্ষায়; প্রায় এক মিনিট পর তুমি বিদায় জানিয়ে ডায়েরীটা খুলতে বললে।
ডায়েরী পড়া শুরু করলাম। আমাদের সেই পরিচয় পর্ব থেকে শুরু করে ২৬ দিনের সব তুমি আটকে ফেলেছিলে কয়েকটা পাতায়। তারপর 'এখন একটা ভিন্ন পথ চলার গল্প....' লিখে শুরু করলে সাতাশ নম্বর দিন থেকে তোমার সাথে কাটানো প্রায় ছয় মাসের কথা। তারপর? তারপর বললে ' তোমার রাগটা খুব বেশি, হয়তো কোনদিন রেগে গিয়ে আমার গায়ে হাত তুলবে। আমরা কিছু সময় ভালো থাকি তার মানে এই না যে সব সময় ভালো থাকবো। তোমার সাথে কাটানো দিনগুলো আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো সময় ছিল। আমার জীবনে আর নতুন কেউ আসবে না কিন্তু তুমি থেমে থেকো না; যে আসবে তাকে আসতে দিও,দেখবা আমার চেয়ে অনেক সুন্দরী বঊ পাবা। সে তোমাকে আমার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসবে,তোমাকে তোমার মতই ভালোবাসবে। তার হাতটা আলতো করে ধরো,রাগটা কমিও। তোমাকে সামনাসামনি এই কথাগুলো বলার সাহস আমার নাই,তাই লিখে জানালাম।ভালো থেকো,পারলে আমাকে ক্ষমা করো'
সময় থমকে গেলো,আমি আটকে রইলাম সেখানেই-তোমাতে।
©somewhere in net ltd.