নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তারুন্যের তরে উৎসর্গীত আমি ।

আমৃত্যু তারুন্যের সাধনা করে যেতে চাই ।তারুন্যের ঝংকারে পঁচা-দুর্গন্ধময় সমাজের আবর্জনা দূর করে সুন্দর আগামী আমার অনুজদের উপহার দিতে চাই ।

তরুন তুর্কী

আমি মোঃ ইয়াসির ইরফান । সাহিত্য আমার ভাললাগা, ভালবাসা । সাহিত্য লিখতে, পড়তে ভাললাগে । তাই লিখি, পড়ি । জানি, আমার লেখার মান ভাল না । স্বীকার করতে কুন্ঠাবোধ করি না, ভাল লেখার  সে যোগ্যতাও আমার নাই । বস্তাপচা লেখায় কারো মন খারাপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়, সাহিত্যের অপমান করতেও চায় না । আমি তো শুধু আমার ভাললাগার, ভালবাসার কাজটাই করি । আমার অপরাগতা, অক্ষমতায় প্রতিমূহুর্তে ক্ষমা চেয়ে যাই, সাহিত্য ও সাহিত্যিক সমীপে । সসংকোচে, সংশয়ের ঘেরাটোপে, নিন্দিত হওয়ার ভয়ে সাহিত্য রচনার শুরুতেই 'তরুন তুর্কী' ছদ্মনামে সাহিত্যের বিশাল ভান্ডারে পা রেখেছি । সাহিত্যের এই বিরাট-অভিজাত জায়গার অতি ক্ষুদ্র কোনে আমার জায়গা হবে কি না, তা আমার জানা নাই । জানতে চাই না । আমি শুধুমাত্র আমার ভাললাগা প্রকাশে যদি কোন স্পর্ধা, কোন ত্রুটি হয়ে থাকে তার জন্য মার্জনা চাই । তারুন্য আমার অলংকার । অঙ্গে তারুন্যের উন্মাদনা বয়ে চলেছি, (জন্ম তারিখ - ০৯/০৪/৯২) সয়ে চলেছি আনন্দের সাথে । উচ্ছলতার সাথে সন্ধি করেছি তারুন্যের সূচনা লগন হতে । স্রষ্টায় ভীষন আস্থা আমার । জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্রষ্টার সাহচর্য, তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করি । বিশ্বাস করি, প্রতিক্ষনে প্রতি নিঃশ্বাসে তিনি আমার সাথেই আছেন । নিজেকে আমি মূল্যায়ন করি অতি সাধারন পর্যায়ের মানুষ রুপে । নিজের সম্পর্কে আমার উক্তি, Lower Clash Ass (LCA) বা নিম্ম স্তরের গাধা । যে স্তরের মানব সন্তানেরা ধরিত্রীর মানুষ, প্রকৃতি, প্রতিটি ধূলিকণা হতে ক্রমাগত উপকার গ্রহন করে কিন্তু প্রতিদান দিতে অক্ষম থাকে । বরং যতদিন বাঁচে ততদিনই গলার কাঁটা হয়ে থাকে, পরিবারের, সমাজের, দেশের, ধরনীর ।

তরুন তুর্কী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেডস

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৯


০১
রাহাতকে রেডি হওয়া অবস্থায় দেখেই রশীদ সাহেব বলে উঠলেন, যাও আব্বা এবার তোমার মাকে একটু সালাম করে আসো । প্রথম যে কোন কাজে যাওয়ার আগেই সালাম করে দোয়া নিতে হয় ।
রাহাত আম্মা, আব্বা, বড় ভাই, বড় ভাবী সবাইকে সালাম করল । তারপর রশীদ সাহেবের কাছে এসে বলল, আব্বা এবার আমার কেডস দেন । রশীদ সাহেব হাসি দিয়ে বলেন, পাবা আব্বা পাবা । তুমি মন দিয়ে লেখাপড়া করো । দ্যাখবা কলেজ থেকে এসে তোমার কেডস তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । হাঃ হাঃ হাঃ । ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠেন রশীদ সাহেব । যেন মজার কোন রসিকতা হয়ে গেছে ।
রাহাতের মুখে হাসি নাই । সে কিছুটা ক্রুদ্ধ হয়ে আব্বার দিকে তাকিয়ে থাকে । তারপর আস্তে আস্তে বলে, বলছিলেন, গোল্ডেন পাইলে কেডস দেবেন । দেন নাই । তারপর বললেন, ফার্ষ্ট ইয়ারে ভাল করলে দেবেন । এখন আমি সেকেণ্ড ইয়ারে ক্লাস করতে যাচ্ছি, ফার্ষ্ট ইয়ারে ভাল রেজাল্টও করছি । আর এখনও আমাকে ওই ফিতা ছাড়া স্যান্ডেল নিয়ে যেতে বলতেছেন ?
-আমি তো যাব না ।
রশীদ সাহেব মুখে হাসি ধরে রেখে বলেন, কেন আব্বা ? যাবা না ক্যান ? আমি নিজে তোমাকে দিয়ে আসার জন্য তৈরী হয়ে আছি । আজকে প্রথম ক্লাস বলে কথা ! আসো, তাড়াতাড়ি আসো ।
-না, আব্বা আমি যাব না । যতক্ষন আমি কেডস পাচ্ছি না, ততক্ষন যাচ্ছি না ।
রশীদ সাহেব ছেলেকে ভালই চেনেন । এই জেদও তাঁর চেনা । ঘরের সবাই অনেক বোঝাল, সে তবু যাবে না । শেষবারের মত জিজ্ঞেস করলেন তিনি, তাহলে তুই সত্যিই যাচ্ছিস না ?
– না ।
চিন্তিত মুখে অফিসের পথে বেরিয়ে পড়েন রশীদ সাহেব । ছেলেটা বেশ রাগী হয়েছে । ছোট থেকে আদরে আদরে মানুষ হচ্ছে তো, তাই । অবশ্য ছেলেটার রাগ করা দোষের কিছু নয় । প্রতিমাসেই তিনি বলেন, ‘এই দ্যাখবি এই মাসেই তোর কেডস চলে আসছে । এক্কেবারে উড়তে উড়তে আসতেছে । শুধু ল্যান্ড করবে এখানে’ । কিন্তু আসে না । সংসারে খরচ সামলে ভাল এক জোড়া কেডস তিনি কিনতে পারেন না । তার উপর শফিকের চাকরি নাই আজ দুই মাস । বড় কষ্টে আছেন তিনি । কাঊকে বলতেও পারেন না । সইতেও অনেক কষ্ট !

০২
রশীদ সাহেব বের হয়ে যেতেই, শফিক রাহাতকে ডাক দেয় । রাহাত এলে বলে, কিরে কলেজে যাচ্ছিস না কেন !
-আমার স্যান্ডেল ছিড়া । আর কত দিন ঐ ছিড়া স্যান্ডেল পরব ? আর, কলেজে কেডস ছাড়া ঢুকতে দেবে না বলছে । কান ধরে নাকি বের করে দেবে ।
-এত দিন কোন সমস্যা হয় নাই । আজ হঠাৎ সমস্যা হচ্ছে ? ব্যাপার তো কিছু বুঝতেছি না । কেমন মিথ্যা মিথ্যা গন্ধ পাচ্ছি !

শফিক রাহাতকে যাই বলুক না কেন, সে ঠিকই বুঝতে পারছে, কলেজে ছিড়া স্যান্ডেল পরে যাওয়া কত কঠিন । বন্ধু-বান্ধব আছে, প্রেষ্টিজের ব্যাপার-স্যাপার আছে । তার খুবই ইচ্ছা করছে, ভাইকে একজোড়া কেডস কিনে দিতে । কিন্তু ইচ্ছা করলেই তো হবে না, টাকা চাই । শফিকের হাতে কেডস কেনার সেই টাকাই নাই । চাকরি নাই, টাকা তো দূরের কথা !
শফিক বলে, রাহাত, তুই যদি একটা ধাঁধাঁর উত্তর দিতে পারিস তাহলে সাথে সাথেই কেডস পেয়ে যাবি । কিন্তু দিতে না পারলে, কাল থেকে কলেজে যেতে হবে । বল, রাজী কি না ?
-আমি আর ওসবে ভুলছি না । হাঃ হাঃ হাঃ । আমাকে বোকা পেয়েছ নাকি !
-আরে, ভেবে দেখ । এখন, আব্বার হাতে কেডস কেনার টাকা নাই । তুই যতই রাগারাগী করিস লাভ নাই । কিন্তু যদি ধাঁধাঁটার উত্তর করতে পারিস, সাথে সাথে কেডস পাবি । আমি কিনে দিব ।
-হুঁহ, আমাকে মদন পেয়েছ ? টাকা তোমার আছে, বুঝি !
-সেটা তোর বিষয় না । তুই ধাঁধাঁর জবাব দিবি, কেডস নিবি ।
একটু ভেবে-টেবে রাহাত বলল, ঠিক আছে বল । সে জানে, বড় ভাই যেভাবেই হোক কিনে দিবে ।
শফিক ধাঁধাঁ বলে,
আদার কেহ নন তো তিনি, ও-কে বাদ দিলে কিছু কি চিনি ?
এফ এ দিয়ে এবার জানি, জীবন জুড়ে আছেন তিনি ।
বল, কে তিনি ?

০৩
রাহাতের মাথার চুল ছেড়ার অবস্থা । ধাঁধাঁটার উত্তর কোনভাবেই মেলাতে পারছে না । বড় ভাই কিছু hints দিয়েছে । তাতে যেন আরো গুলিয়ে ফেলছে সে । বড় ভাই বলেছে, “তিনি নাকি খুব স্বার্থহীন । ছোট থেকে বড় করতে তার অবদান অস্বীকারের উপায় নাই । তাকে কষ্ট দিতে নাই । তিনি নাকি উদয় অস্ত তার (রাহাতের জন্য) জন্য খাটেন” ।
কোনভাবেই মাথায় আসছে না । কে হতে পারে ? বাবা ? মা ? বড় ভাই ? টিচার ? বন্ধু ? মামা ? চাচা ? কে ?
জীবন জুড়ে কে আছেন ? তাকে আবার এফ এ দিতে হয় কেন ? ওরে বাদ দিয়ে কেন কিছু চেনা যাবে না ? রাহাত কিচ্ছু বুঝতে পারে না । কারো সাথেই কোন ভাবে মেলাতে পারছে না । বড় ভাইকে একবার বলেছে, তিনি মা ।
শফিক জিজ্ঞেস করে, কিভাবে বুঝলি ?
রাহাত বলে, হইছে কি না বল ? কি করে বুঝছি বোঝাতে পারব না । হইছে ?
-না, হয় নাই । আন্দাজে ঢিল ছুড়ে তো লাভ নাই । রাইফেল একটা হাতে নিয়ে টা টা করে মেরে দিলেই তো শিকার বলা যাবে না । তোকে যে হিন্টস দিছি, সে সব বুঝে একটু চিন্তা করলেই পারবি ।
রাহাত কোনমতেই পারে না ।
রাহাত পড়ে মহসিন কলেজে । কিন্তু ওর ক্লোজ বন্ধুরা পড়ে, চিটাগং কলেজে । সে আড্ডাও দেয়, চিটাগং কলেজের পাশে প্যারেড মাঠে । কতবার আড্ডায় সে এটা বলে জানতে চেয়েছে, বন্ধুদের কাছে । উত্তর কি হতে পারে ?
কেউ পারে নাই ।
আহা, উত্তরটা দিতে না পারলে সে কেডস পাবে না ! কি করবে, সে ! কোন দুঃখে যে বড় ভাইয়ের কথায় নেচেছিল !
মাথার চুল একটা একটা করে ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে, রাহাতের ।

০৪
রশীদ সাহেব শুনেছেন, কি এক ধাঁধাঁর শর্তে নাকি রাহাত কলেজে যাচ্ছে । তিনি একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন । বড্ড টেনশানে ছিলেন । ছেলেকে তো চেনেন । কেডস ছাড়া এক পা-ও নড়ার কথা না । যাক, বাঁচা গেল । তিনি মনে মনে বেশ খুশী অনুভব করেন ।
রশীদ সাহেব রাহাতকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন । ছেলেটাকে অনেকদূর পড়ানোর ইচ্ছা আছে । বড় মেয়েটাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে হয়েছিল, ইন্টারমিডিয়েটে পড়া অবস্থায় । বেচারী পরীক্ষাও আর দিতে পারে নাই । শফিক তো সংসারের হাল ধরার জন্য বিএ তে ভর্তি হয়েও আর পড়ল না । এখন সব স্বপ্ন রাহাতকে ঘিরে । ছেলেটা পড়ালেখায় বেশ ভাল, মনযোগীও ।

অনেক দিন পার হয়ে গেলেও রাহাত কেডসের কথা আর তুলে নাই । রশীদ সাহেব ভয়ে ভয়ে থাকেন, এই বুঝি কথাটা তুলল ! কিন্তু তুলে না । তবে কি সে ভুলে গেল !
কোনভাবেই ম্যানেজ করা যাচ্ছে না । কিভাবে জানি, সংসারে সব টাকা খরচ হয়ে যায় । শফিক নতুন চাকরি পেয়েছে, অবশ্য টেম্পোরারি । রশীদ সাহেব ভাবেন, এইবার যদি কোনভাবে একজোড়া কেডস কেনা যায় !

০৫
রাহাতের মন একদম ভাল নাই । সে ধাঁধাঁটার সমাধান আজও করে উঠতে পারে নাই । শফিককে সে বলেছিল, পারবে না । উত্তর বলে দিতে । শফিক বলে, “নাহ তা হবে না । উত্তর দিবি, কেডস নিবি” ।
মহা ঝামেলা !
কলেজে ছিঁড়া স্যান্ডেল পরে যেতে তার আর ভাল লাগে না । সবাই কি সুন্দর কেডস, জুতা, শু আরো কত নতুন নতুন স্যান্ডেল পরে যায় । আর সে কি না সেই কোন বৃটিশ আমলের বাটা স্যান্ডেল পরে ! তা-ও ভাল হলে একটা কথা ছিল !
রাহাত গালে হাত দিয়ে বসেছিল । চিন্তা করছে । এমন সময় রশীদ সাহেব দেখতে পেয়ে বলে উঠলেন, “কিরে আব্বা, গালে হাত দিছ কেন ! হাত নামাও, গালে হাত দেয়া ভাল না” ।
রাহাত অনিচ্ছাভরে হাত নামায় ।
“আচ্ছা আব্বা, আপনাকে একটা ধাঁধাঁ ধরলে পারবেন” ?
-ধাঁধাঁ ! আমাকে ! দেখি, পারি কি না ।
রাহাত বলে উঠে,
“আদার কেহ নন তো তিনি, ও-কে বাদ দিলে কিছু কি চিনি
এফ এ দিয়ে এবার জানি, জীবন জুড়ে আছেন তিনি”
বলেন তো কে তিনি ?
-ভাবতে দে ।
একটু পর রশীদ সাহেব আপন মনেই হেসে উঠেন । তারপর হাঃ হাঃ হাঃ করে অট্টহাসিতে ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকেন । রাহাত কিছুটা বিস্ময় চোখে দেখছে, রশীদ সাহেবের এই অদ্ভুত আচরণ ।
-এই ধাঁধাঁটাই কি তোকে শফিক বলছে ?
-হ্যাঁ ।
-শফিকের মাথা থেকেই এসব বের হওয়ার কথা ! পাগলের মতন কাজ কারবার সে ছাড়া কেই বা আর করবে !
-আব্বা, আপনি পারছেন ? অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে জিজ্ঞাস করে রাহাত ।
-না পারার কি আছে !
-দেখ, আদার মানে O-T-H-E-R … অর্থাৎ অন্য । তারপর O-কে বাদ দিলে THER হয়ে যায় । যাতে কিছু বোঝা যায় না । এবার বলছে... FA দিতে... তারপর হয়ে যায় FATHER মানে...
-বাবা ।
-ইয়েস । পেয়েছিস তো !
-হুম ।

০৬
রাহাত যেন আরো চুপসে গেছে । তার বারবার মনে পড়ছে বড় ভাই হিন্টস দিতে গিয়ে যে সব কথা বলতেন সেগুলো । সত্যিই তো বাবাকে এমন করে কখনো সে চিন্তা করে নাই । বড় ভাই একবার বলেছিলেন, “তিনি আমাদের জন্য রক্ত জল করা পরিশ্রম করে পয়সা কামান । যাতে আমরা সুখে থাকতে পারি” । রাহাতের খুব কান্না পাচ্ছে ।

শফিক প্রতিদিনের মত আজও জিজ্ঞাস করল, কিরে উত্তর জানিস ? কেডস নিতে পারবি ?
-হুম ।
-উত্তর জানিস !
-হ্যাঁ ।
-নিজে পারছিস না কারো সাহায্য লাগছে ।
-উত্তর যিনি তিনিই বের করে দিছেন ।
-মানে......
-হুম, আব্বাই বলে দিছেন ।
-তাহলে তো কেডস দিতেই হয় । কাল কলেজে যেতে আম্মার কাছ থেকে নিয়ে নিস ।
শফিকের ঠোঁটে রহস্যজনক হাসি দেখা যায় ।
রাহাত কাঁদছে তো কাঁদছে । কান্না কোনমতেই থামাতে পারছে না । কিসের জন্য এত কান্না, সে নিজেই তা বুঝতে পারছে না । তার কাঁদতে ভাল লাগছে । তাই কেঁদেই যাচ্ছে । চিৎকার করে কাঁদতে পারলে সবচেয়ে ভাল হত ।


_____###_________

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.