![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতার জন্ম ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের চাটগাঁতে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ শেষে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। প্রীতিলতার ডাক নাম ছিল রানী। বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী এবং মা প্রতিভা ওয়াদ্দেদার দেশপ্রেমী গৃহিণী।
রানীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ডাঃ খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজী বালিকা বিদ্যালয়ে সরাসরি তৃতীয় শ্রেণী থেকে। প্রতি শ্রেণীতে প্রথম তিন স্থানের একটি অর্জন করায় রানী সবার স্নেহ ভালোবাসার পাত্রী ছিলেন। শিক্ষিকা উষাদির দেয়া ঝাঁসীর রানী লক্ষ্মীবাই বই পড়ে প্রীতিলতার হৃদয়ে বিপ্লবী চেতনা জেগে উঠে। চট্টগ্রাম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বিজনের কাছ থেকে নিয়ে প্রীতিলতা ক্ষুদিরাম, কানাইলাল, বাঘা যতীন, দেশের কথা ইত্যাদি বইগুলো পড়েন। চাচাতো ভাই অমৃত সুদানের মাধ্যমে তিনি বিপ্লবী রাজনীতির খবরা খবর শুনতেন। ইংরেজ শোষক ও শাসকদের তাড়াবার জন্য ১৯৫৭-তে নাটোরের রানী ভবাণীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস শোনার পর ভাইকে বলেন আমারও ইচ্ছে করে এদের মত হতে। দেশের স্বাধীনতার জন্য ওরা যদি লড়তে পারে আমি কেন পারব না? তাছাড়া তোমরা তো সবাই আমাকে রানী বলেই ডাকো। নাটোর আর ঝাঁসীর রানী পেরেছিল, চাটগাঁর রানীও পারবে। সে ভাইকে বিপ্লবী দলে যোগ দেয়ার ইচ্ছের কথা বলে।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা যেসব কর্মসূচী নিয়েছিলেন, তারমধ্যে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ অন্যতম ছিল। তরুণ বিপ্লবী শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল বিপ্লবীকে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এ আক্রমণ ব্যর্থ হয়, ব্যর্থতার বেদনা সহ্য করতে না পারায় শৈলেশ্বর চক্রবর্তী আত্মহত্যা করে। অতঃপর সূর্যসেন সিদ্ধান্ত নেন আক্রমণের দায়িত্ব একজন নারীকে দেবেন, তিনি বলেছিলেন বাংলায় বীর যুবকের আজ অভাব নেই। বালেশ্বর থেকে জালালাবাদ কালারপুল পর্যন্ত এদের দীপ্ত অভিযানে দেশের মাটি বারে বারে যুবকের রক্তে সিক্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলার ঘরে ঘরে মায়ের জাতিও যে- শক্তির খেলায় মেতেছে, ইতিহাসে সে অধ্যায় রচিত হোক এই-ই আমি চাই। ইংরেজ জানুক, বিশ্বজাত জানুক, এ দেশের মেয়েরাও মুক্তিযুদ্ধে পিছনে নেই”।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সূর্যসেন প্রীতিলতাকে নিয়ে গোপন বৈঠকে বসেন এবং জানিয়ে দেন তোমার নেতৃত্বে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত্রিতে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হবে। আক্রমণের পূর্বে কয়েকদিন পর্যন্ত প্রীতিলতা তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে অস্ত্রশিক্ষা নেন। অবশেষে ঠিক করেন ২৩ সেপ্টেম্বর রাত্র দশটায় ক্লাব আক্রমণ করবেন। সিদ্ধান্তানুযায়ী প্রীতিলতা তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে ক্লাবের বাবুর্চির সংকেত পেয়ে রিভলবারের গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে যায় গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করে। উদ্দাম বিদেশী দল নৃত্যের মধ্যে নেমে এলো মৃত্যুর হাহাকার আর ধ্বংসলীলা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রীতিলতা তার উপর ন্যস্ত দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করে হুইসেল দিয়ে সকলকে প্রত্যাবর্তনের আদেশ দেন। সকলকে সামনে পাঠিয়ে ক্লাবের বাইরে নালার পাশ দিয়ে প্রধান সড়কে ওঠে। ঐ পথ গিয়ে মিলেছে রেলের ওভার ব্রীজে এবং সেটা পার হয়ে গেলে পাহাড়তলী বাজার। এমন সময় নালার মধ্যে থেকে একটি গুলি এসে প্রীতিলতার বুকে লাগতেই তার রক্তাক্ত দেহ রাস্তার ধুলোয় লুটিয়ে পড়ে। রক্তস্রোতে প্রীতির স্বাভাবিক পোশাক ভিজে সামরিক পোশাকও রক্তরঞ্জিত হয়ে উঠে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে গিয়ে যন্ত্রণাকাতর প্রীতিলতার মনে হল, এমন আহত অবস্থায় শত্রুর হাতে ধরা পড়ার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। প্রীতিলতা তার পকেট থেকে বিষের মোড়কটি খুলে নিজের মুখের মধ্যে ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে দেহ তার হয়ে যায় নিথর নিশ্চল।
©somewhere in net ltd.