নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তপন চাকমা

তপন চাকমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও বোডোল্যান্ড চুক্তি:একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা| শক্তিপদ ত্রিপুরা

২২ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:১৬

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও বোডোল্যান্ড চুক্তি: একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা

লেখক- শক্তিপদ ত্রিপুরা

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। অপরদিকে ২০০৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী ভারত সরকার ও বোডোল্যান্ড লিবারেশন টাইগার্স এর মধ্যে ‘বোডোল্যান্ড চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বোডোল্যান্ড লিবারেশন টাইগার্স উভয়ই সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত ছিল এবং সশস্ত্র সংগ্রামরত অবস্থায় সরকারের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

বোডোল্যান্ড লিবারেশন টাইগার্স(বিএলটি)- এর অন্যতম একটি দাবী ছিল- বোডো অধ্যুষিত অঞ্চল ৪টি জেলা- কোকরাজার, বাকসা,উদলগুরি ও চিরাঙকে ‘বোডোল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। বিএলটির দাবী অনুসারে ভারত সরকার আসামের ৪টি জেলাকে ‘বোডোল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জনসংহতি সমিতি) তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘জুম্মল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জনসংহতি সমিতির এই দাবীকে প্রত্যাখান করে। বিএলটির দাবী অনুসারে বিটিসির নিকট আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে; কিন্তু জনসংহতি সমিতি আইন পরিষদ সম্বলিত আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবী জানালেও বাংলাদেশ সরকার জনসংহতি সমিতির এই দাবী মেনে নেয়নি। বাংলাদেশ সরকার চুক্তিতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আঞ্চলিক পরিষদের নিকট রেখে দেয়নি। বোডোল্যান্ড চুক্তি ভারতের সংবিধানের স্বীকৃতি লাভ করেছে কিন্তু বাংলাদেশ সরকার আজ অবধি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও চুক্তির আলোকে স্থাপিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আইনকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করেনি। ১৯৯৭ সালে যখন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়, তখন এই চুক্তিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা সরকারের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ছিল না। তখন শেখ হাসিনা সরকার অঙ্গীকার করেছিলেন- ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নিয়ে সরকার গঠন করতে পারলে পার্বত্য চুক্তিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা এখনই উপযুক্ত সময়। সরকারের মেয়াদ একেবারেই শেষ প্রান্তে। এখনই যদি পার্বত্য চুক্তির সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা না হয় তাহলে পার্বত্য চুক্তির সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বা জোট সরকার জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য পেয়ে সরকার গঠন করা যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন কিংবা চুক্তিকে স্থায়ী ও শক্তিশালী করার বিষয়ে আন্তরিক নয় বিধায় ‘পার্বত্য চুক্তি’কে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের- এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হতে চলেছে।

চুক্তি অনুসারে ভারত সরকার বোডোল্যান্ডে ‘বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল’ গঠন করে সেই কাউন্সিলের নিকট ৪০টি বিষয় হস্তান্তর করে। এই ৪০টি বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল-

বন, ভূমি ও রাজস্ব, শিক্ষা(প্রাইমারী, হাইস্কুল, কলেজ ও টেকনিক্যাল), সংস্কৃতি, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ, পিডব্লিউডি, সড়ক ও জনপথ, পর্যটন, পৌরসভা ও জেলা বোর্ডসহ সকল স্থানীয় সংস্থা, শহর ও গ্রাম উন্নয়ন, নাটক ও সিনেমা, পরিসংখ্যান, বাজার ও মেলা, শহর ও গ্রাম উন্নয়ন, পরিবহন, ট্রাইবেল গবেষণা ইনস্টিটিউট, মিউজিয়াম,ক্রীড়া ও যুব উন্নয়ন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, জম্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি।

উল্লেখ্য যে, বিটিসির আইন পরিষদ রয়েছে যেখানে তারা আইন প্রণয়ন করতে পারে। তারা সেটাকে বলছে-Bodoland Territorial Council Legislative Assembly . 

বোডোল্যান্ড চুক্তির ৫ বছর আগে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হলেও আজ অবধি বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট সকল বিষয় (৩৩টি বিষয়), ক্ষমতা ও দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কিছু বিষয় হস্তান্তর করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন- ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইন-শৃংখলা, স্থায়ী পুলিশ, উন্নয়ন(সকল), বন ও পরিবেশ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়নি। যেসব বিষয় হস্তান্তর করা হয়েছে তাও যথাযথভাবে হস্তান্তর করা হয়নি।এছাড়া চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়, যেমন- এক ধরণের সামরিক কর্তৃত্ব ‘অপারেশন উত্তরণ’ ও অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন পূর্বক তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা, জুম্ম শরনার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন, জুম্মদের বেদখলকৃত ভূমি ফেরত প্রদান ও ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠা, সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পুনর্বাসন করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে বেসামরিক প্রশাসন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে সকল উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা ও জুম্মবান্ধব উন্নয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ ইত্যাদি কার্যকর করা হয়নি।

অপরদিকে চুক্তি অনুসারে বোডোল্যান্ডে ৪০টি বিষয় হস্তান্তরসহ বিটিসির নিকট সকল ক্ষমতা ও দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিটিসির অফিস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অফিস, স্টাফ কোয়ার্টার ইত্যাদি আজ অবধি নির্মাণ করা হয়নি। এসব অফিস নির্মাণ করার জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজটিও সরকার আজ অবধি সম্পন্ন করতে পারেনি। বোডোল্যান্ডের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম বিটিসির পরিকল্পনা অনুসারে বাস্তবায়িত হচ্ছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বিটিসি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বোডোল্যান্ডে বোডো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে। ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সকল প্রকার উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে এবং এসব উন্নয়ন বিটিসির মাধ্যমে ও বিটিসির পরিকল্পনা মাফিক পরিচালিত হচ্ছে। ভারত সরকারের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে ভারত সরকারের প্রতি বোডো জনগোষ্ঠীর আস্থা তৈরী হয়েছে। বিটিসি প্রতিষ্ঠার পর বোডো জনগোষ্ঠী মনে করছে- বোডোল্যান্ডে তাদের অস্তিত্ব সুরক্ষিত হয়েছে এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভিত রচিত হয়েছে। চুক্তির পর বিটিসি বোডোল্যান্ডে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে। ১টি বিশ্বিবদ্যালয় ও ২টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সাংস্কৃতিক একাডেমী, জিমনেসিয়াম, রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়েছে। মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ জোরে সোরে চলছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সরকারী হাসপাতাল ও সাংস্কৃতিক একাডেমীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম বোডো নেতাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে যা বাংলাদেশে একেবারে ভাবাই যায় না। বোরো নেতা বিনেশ্বর ব্রম্ম- এর নামে বিনেশ্বর ব্রম্ম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বোডোফা কালচারাল কমপ্লেকস, ড. রবি বরো- এর নামে ড. রবি বোরো মেমোরিয়াল সিভিল হাসপাতাল করা হয়েছে। এধরণের আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম বোডো নেতাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, হাসপাতাল ও কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নাম জুম্ম নেতা এম এন লারমা, বি কে রোয়াজা, কৃষ্ণ কিশোর চাকমা প্রমূখদের নামে হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন তাদের গণতান্ত্রিক চেতনা খুব বেশী উন্নত নয়। ভারতের রাজনীতিকদের মত বাংলাদেশের রাজনীতিকদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনা উন্নত নয় বিধায় বাংলাদেশে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম আদিবাসী নেতাদের নামে নামকরণ হতে পারছে না।

বোডোল্যান্ড চুক্তি হবার পর দিল্লী, কলকাতা, গোহাটিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বোডোল্যান্ড হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২০ বছর পেরোলেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর ঢাকা ও চট্টগ্রামে পার্বত্য ভবন প্রতিষ্ঠা হতে পারলো না (তবে রাজধানী ঢাকার পার্বত্য ভবনের কাজ শুরু হয়েছে)। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে যে দু’টি পাহাড়ী হোস্টেল রয়েছে সেই দু’টি হোস্টেলও আজ অবধি অবহেলা অবস্থায় রয়ে গেছে। এই দু’টি হোস্টেল ভবন যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে। তথাপি সরকারের পক্ষ থেকে ভবন সংস্কার কিংবা নূতন ভবন নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি আজ অবধি।এমন কি হোস্টেল দু’টির জায়গা এখনো পর্যন্ত পাহাড়ী হোস্টেলের নামে নামজারী হতে পারেনি। যার কারণে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাবান বিত্তবান অ-আদিবাসী ব্যক্তিরা এই দু’টি হোস্টেলের জায়গা বেদখল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যেতে লক্ষ্য করা গেছে।

পার্বত্য চুক্তির বহু পরে বোডোল্যান্ড চুক্তি সম্পাদিত হলেও ইতোমধ্যে বিটিসির দু’বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বোডোল্যান্ডের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নযনের ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। অপরদিকে চুক্তি সম্পাদনের ২০ বছর পার হলেও চুক্তির আলোকে স্থাপিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন আজ অবধি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। স্পষ্ট করে বললে সরকার দলীয় লোকদের দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে পরিচালনা করার হীন উদ্দেশ্য থেকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন না দিয়ে দলীয় দুর্ণীতিবাজ লোকদের দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালনা করছে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন দিলে নিশ্চিতভাবে সরকারী দল নির্বাচনে হেরে যাবে সে কারণে সরকার তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করছে না। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন না হবার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হতে পারছে না। কারণ আঞ্চলিক পরিষদ আইনে বলা হয়েছে- তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ভোটে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত হবে।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হলেও চুক্তির আলোকে গঠিত আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ- এর নিকট সকল ক্ষমতা ও দায়িত্ব হস্তান্তরিত না হবার কারণে এবং সরকারের আন্তরিক সহযোগিতার বিপরীতে জুম্ম জাতিসমূহের অস্তিত্ব বিপন্ন হয় এমন কার্যকলাপে লিপ্ত হবার কারণে জুম্ম জনগণ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আস্থাশীল হতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের বিপরীতে চুক্তি লংঘন করার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের ভূমি বেদখল ও সাম্প্রদায়িক হামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে চলেছে। পার্বত্য চুক্তির পরও আদিবাসীদের হাজার হাজার একর জমি বেদখল হয়েছে। সরকার চুক্তির আলোকে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার বিপরীতে জুম্ম জাতিসমূহের অস্তিত্ব বিপন্ন হয় এমন উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। নারী ধর্ষণ ও হত্যাসহ নিরীহ জুম্ম জনগণের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। এসময়ে জুম্ম জনগণ ও চুক্তি স্বাক্ষরকারী সংগঠন জনসংহতি সমিতি নেতা-কর্মীদের ওপর হয়রানী ও নির্যাতন অধিকতরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চুক্তি অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল ও তার বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিপরীতে চুক্তির বিধান লংঘন করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করতে চলেছে। শাসকগোষ্ঠীর এহেন কার্যকলাপ পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি পরিবেশকে বিনষ্ট করছে। চুক্তি বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে তুলছে। এসব কারণে বাংলাদেশ সরকার জুম্ম জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে ভারত সরকার বোডো বা বোরো জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার বা শাসকগোষ্ঠী নিজেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। চুক্তি যাতে বাস্তবায়িত হতে না পারে সরকারের ভেতরের একটি অংশ সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। সরকারের এই অংশ এতই শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাদের প্রস্তাবের বিপক্ষে যেয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। সর্ষের ভেতরে ভূত থাকার কারণে ভূত তাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। আজ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র জাতীয়তাবাদী ও মৌলবাদী চিন্তাধারা ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করেছে এবং তা রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। যার কারণে আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা বিকশিত হতে পারছে না। যদিও বা মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আকাঙা ছিল-একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা; কিন্তু সে লক্ষ্য ও আকাংখা আজ স্বপ্ন মাত্র, যে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। যে সাম্প্রদায়িক, স্বৈরচারী ও অগণতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলার জনগণ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে সেই দেশে আজ সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, অগণতান্ত্রিক চিন্তাধারা ও সামরিক কর্তৃত্বে রাষ্ট্র চলছে। এ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। সুতরাং যে দেশে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, অগণতান্ত্রিক-স্বৈরতান্ত্রিক ও সামরিক কর্তৃত্বে রাষ্ট্র চলে সে দেশে যেমনি গণতন্ত্র ও প্রগতিশীল চিন্তাধারা বিকশিত হতে পারে না, তেমনি জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না। এধরণের রাষ্ট্রে নারী সমাজের অধিকারও প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না। যার কারণে আজ সারাদেশে নারী ধর্ষণ, নারী হত্যা এবং নারীর ওপর নানা ধরণের নির্যাতন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এধরণের পরিবেশে সংখ্যালঘু নারীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। এহেন পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কোনভাবে হতে পারে না। এই পরিস্থিতি ও অবস্থার পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে না এবং পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে না। কেবল মাত্র নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এধরণের পরিস্থিতি ও অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের অংশ প্রশাসনের দায়িত্ব হল- ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করা। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনের সাথে যুক্ত কর্মকর্তাদের বেশীরভাগ সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক। সুতরাং অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক কর্মকর্তা দ্বারা ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করা বিশেষত: জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা সমুন্নত রাখা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সাম্প্রদায়িক বলেই সেটেলার বাঙালীরা ২০১৭ সালে লংগদুতে ২৫০টি পাহাড়ী ঘর পুড়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। লংগদুতে সেটেলার বাঙালীরা পাহাড়ী গ্রাম পুড়ে ফেলার সময় সেনা জওয়ান ও পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। তাদের উপস্থিতিতে পাহাড়ী ঘর পুড়ে ফেলা হয়েছিল। এহেন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে আঁচ করতে পেরে পাহাড়ী নেতারা পূর্বাহ্নে স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের অবহিত করেছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তারা পাহাড়ী নেতাদের অভিযোগের প্রতি কোন কর্ণপাতই করেননি। যার কারণে ২০১৭ সালের জুনের ২ তারিখে সেটেলার বাঙালী, সেনা ও পুলিশের উপস্থিতিতে লংগদু উপজেলার ৩টি গ্রামের ২৫০টি ঘর পুড়ে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছিল। এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বহু পাহাড়ী গ্রাম পুড়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছিল,বহু গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে শত শত পাহাড়ীকে মেরে ফেলা হয়েছিল। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন এহেন সাম্প্রদায়িক ও জাতিসত্ত্বা নির্মূলীকরণমূলক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে কিভাবে তারা জুম্ম জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে? সরকারের ভেতরের চুক্তি বিরোধী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়ে নূতন করে নানা ষড়যন্ত্র ও অপকর্ম শুরু হয়েছে। সরকারের এই গোষ্ঠীর উস্কানী ও পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়ে নূতন করে অস্ত্রের ঝনঝনানি, হত্যা, সন্ত্রাস ও অপহরণ বানিজ্য শুরু হয়েছে। নূতন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরছে, সাধারণ জনগণের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোর জবরদস্তি করে নির্বাচনের ফলাফল ছিনিয়ে।নেওয়া হয়েছে, ভূমি বেদখল, ধর্ষণ ও হত্যাসহ নারীর ওপর নিপীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। এক কথায় পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার নূতন করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। এসব করানো হচ্ছে একারণে যে, যাতে পাহাড়ী সংগঠন ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রাম জোরদার হতে পারে এবং পাহাড়ে সেনা কর্তৃত্ব বজায় রাখার অজুহাত ও পরিস্থিতি তৈরী করা যেতে পারে। বিগত তিন বছর ধরে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কোন ধরণের সশস্ত্র সংঘাত ছিল না। যার কারণে পাহাড়ীরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছিল। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর একটি অংশ পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। যার কারণে শাসকগোষ্ঠীর সেইঅংশের পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, হত্যা, গুম, অপহরণ ইত্যাদি আবার শুরু হয়েছে। এহেন কার্যকলাপের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নূতন করে অশান্ত হয়ে উঠছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার চুক্তির পূর্বাপর অবস্থায় ফিরে যাবে নিসন্দেহে। পরিস্থিতি যদি সেরূপ ধারণ করে তাহলে চুক্তির সব অর্জন নস্যাৎ হয়ে যাবে। অনেকের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে চুক্তির যে অর্জন সে অর্জনকে কোনভাবে নস্যাৎ হতে দেওয়া যায় না। তবে চুক্তির যে অর্জন সে অর্জনকে অব্যাহত রাখতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নূতন উদ্যমে এগিয়ে আসতে হবে। চুক্তির সময়কালে যে সাহস ও আন্তরিক মানসিকতা নিয়ে তিনি এই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন, সেই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অধিকতর সাহসী হয়ে আন্তরিক সহকারে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তা একেবারে ধুলোয় মিছে যাবে আর পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিণতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সাধারণভাবে মনে করা যেতে পারে- পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন আর জোরদার হতে পারবেনা; কিন্তু এ কথা মনেরাখা দরকার- `Necessity is mother of invention’ । পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক বাস্তবতা জুম্ম যুবসমাজকে প্রস্তুত করবে। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ কি ভেবেছিল- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের জম্ম নেবে? কেউ ভাবেনি। কিন্তু সেটি হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী যে ভূল করেছে, বাংলাদেশ সরকারও যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সে ধরণের ভূলের পুনরাবৃত্তি করে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূখন্ডটিও আগামীতে কি হবে তা কেউ বলে দিতে পারবে না। কারণ পৃথিবীর মানচিত্র সময়ে সময়ে পরিবর্তন লাভ করে। বিশ শতকে ভারতবর্ষের মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। বৃটিশকে ভারতবর্ষ থেকে চলে যেতে হয়েছে। ভারতবর্ষে ভারত ও পাকিস্তান দু’টি রাষ্ট্রের জম্ম নিয়েছে। পরিবর্তন ঘটেছে রাশিয়ার মানচিত্র। ইতোমধ্যে গত এক শতকে বেশ কয়েকটি নূতন রাষ্ট্রের জম্ম নিয়েছে। সুতরাং জনসংখ্যা কম বলে, ছোট বলে কাউকে অবহেলা করা ঠিক নয়। পৃথিবীতে ইহুদীদের জনসংখ্যা কয়েক লক্ষ মাত্র। কিন্তু তারা আমেরিকাসহ সারা পৃথিবীকে শাসন করছে। সুতরাং ছোট বলে কাউকে অবহেলা করা উচিত নয়।

তাই সার্বিক বিচারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে অবহেলা করা সমুচিত হবে না, বরং এই চুক্তি বাস্তবায়ন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী জনগণ এবং দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ ও সুনাম বয়ে আনবে- দেশে এবং বিদেশে। এই সুনামের অধিকাংশ ভাগীদার হবে শেখ হাসিনা সরকারের। সরকারের প্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সুনাম বাড়বে, খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে দেশে বিদেশে। একারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবারও একটি প্রেক্ষিত তৈরী হবে, যা শেখ হাসিনার শুভাকাংখীরা প্রত্যাশা করে আসছে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তি যদি বাস্তবায়ন করা না হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা না পায় তাহলে শান্তি, শান্তি পুরস্কার, সুনাম-সুখ্যাতি সব উবে যাবে। পরিণামে পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার চুক্তির পূর্বাপর অবস্থায় ফিরে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এধরণের পরিণতি আবার উদ্ভব হোক জুম্ম জনগণ ও শান্তিকামী মানুষ তা আর কামনা করে না। তাই অতি দ্রুততার সহিত পার্বত্য চুক্তি সম্পূর্ণরূপে ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হওয়া অতীব জরুরী।এক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই বোডোল্যান্ড চুক্তি স্বাক্ষর ও চুক্তি বাস্তবায়নে ভারত সরকারের যে দৃষ্টান্ত , যে আন্তরিকতা ও অভিজ্ঞতা তা থেকে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা নিতে পারে। জুম্ম জনগণ ও বোডো জনগণের আন্দোলনের লক্ষ্য এক। উভয় জনগোষ্ঠীর লক্ষ্য- স্বকীয় ভাষা ও সংস্কৃতি সুরক্ষা পূর্বক জাতীয় অস্তিত্ব সুরক্ষা, স্বকীয় ঐতিহ্য ও পিতৃভূমি সুরক্ষা এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। বোডোল্যান্ড চুক্তির মধ্য দিয়ে বোডো জাতি যে রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করেছে, তার মধ্য দিয়ে বোডোল্যান্ডে বোডোদের জাতীয় অস্তিত্ব সুরক্ষিত হয়েছে। জাতীয় অস্তিত্ব সুরক্ষা এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য যে রাজনৈতিক. অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক অধিকার প্রয়োজন ছিল তা চুক্তি ও চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও অধিকার, যে অধিকার ও বিষয়সমূহ জুম্ম জাতিসমূহের অস্তিত্ব সুরক্ষা, ভূমি ও সংস্কৃতি সুরক্ষা এবং শিক্ষা , সংস্কৃতি ও অর্থনীতি উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত, সেসব অধিকার আজ অবধি প্রতিষ্ঠা পায়নি। সেকারণে জুম্ম জাতিসমূহের জাতীয় অস্তিত্ব সুরক্ষার নিশ্চয়তা নিশ্চিত হয়নি, তাদের ঐতিহ্য ও পিতৃভূমি সুরক্ষার নিশ্চয়তা নিশ্চিত হয়নি এবং তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য যে রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন সে অধিকার প্রতিষ্ঠা না পাবার কারণে জুম্মবান্ধব উন্নয়নের নিশ্চয়তাও সুনিশ্চিত লাভ করেনি। এসব কারণে জুম্ম জনগণ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আস্থাশীল হতে পারেনি।ভারত সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করে যেভাবে বোডো জনগোষ্ঠীর আস্থার জায়গা তৈরী করেছে, সেখানে বাংলাদেশ সরকার জনসংহতি সমিতি তথা জুম্ম জনগণের আস্থা অর্জনের সহায়ক পরিবেশ তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের বিপরীতে চুক্তি লংঘন করে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ধ্বংস হয় এম কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর সহায়তায় জুম্ম জনগণের জুমভূমি-লাঙ্গল চাষের জমিসহ বাগান বাগিচা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি ইত্যাদি বেদখল করা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক হামলা, গ্রাম জ্বালাও পোড়াও, নারী ধর্ষণসহ হত্যা, নিরীহ জনগণের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হয়রানী ও নিপীড়ন নির্যাতন ও জেল-জুলুম চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাসহ সেটেলার বসতি অব্যাাহত রয়েছে। জুম্ম জাতিসমূহের অস্তিত্ব বিপন্ন হয় এমন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর সমস্ত কার্যকলাপকে বিশ্লেষন করলে এটি পরিস্কার যে, চুক্তি বাস্তবায়ন এখন আর সরকারের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে নেই; বরং পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের মুসলিম বসতিকারীদের হাতে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তর ও নিশ্চিত করাটাই সরকারের মূল লক্ষ্য, তা সরকারের কার্যকলাপে সুস্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে। এখানেই ভারত সরকার ও বাংলাদেশ বা পাকিস্তান সরকারের মধ্যে পার্থক্য। গণতন্ত্র চর্চা আছে বলে আজ ভারত টিকে আছে, অপরদিকে পাকিস্তান গণতন্ত্র চর্চা করে না, বরং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদিতা, উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বিধায় আজ পাকিস্তান দ্বিখন্ডিত হয়েছে। বাংলাদেশেও আজ গণতন্ত্র সংকোচিত, বিপরীতে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদিতা, দুর্ণীতি, দুর্বৃত্তায়ন, সেনা কর্তত্ব জোরদার হয়েছে। যে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদিতা, দুর্ণীতি, দুর্বৃত্তায়ন, সেনা কর্তৃত্ব ও উগ্র জাতীয় চিন্তাধারার সম্প্রসারণ ঘটে সে দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নারীসমাজ ও সাধারণ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না; বরং তারা নিপীড়ন নির্যাতন ও বঞ্চণার শিকার হয়। তারা প্রান্তিক থেকে অধিকতর প্রান্তিক অবস্থানে নিক্ষিপ্ত হয়। দেশের সংখ্যালঘু জাতির অস্তিত্ব ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলতে চাই- 
এটি ঠিক যে, পার্বত্য চুক্তি যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। পার্বত্য চুক্তির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং জতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব অর্জন তা ধুলোয় মিছে যাবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পূর্বাপর অবস্থায় ফিরে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার অশান্ত হয়ে উঠবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা বহুমাত্রিক রূপ লাভ করবে। পূর্বের তুলনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো কঠিন ও জটিল আকার ধারণ করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ বুঝতে পেরেছে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন।জীবন বিপন্ন। সুতরাং তারা মরিয়া হয়ে উঠবে। যে কোন মানুষের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।আত্মরক্ষার জন্য প্রতিটি জুম্ম জীবন দিতে প্রস্তুত হয়ে উঠবে।আত্মরক্ষার অধিকার মানবাধিকার। আত্মরক্ষার জন্য,জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে জুম্ম জনগণ সংগ্রাম করে যাবে। কোন সংগ্রামই বৃথা যায় না। জুম্মজনগণের সংগ্রাম বৃথা যেতে পারেনা। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একদিন জুম্ম জনগণ তাদের আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার ছিনিয়ে আনবে। জুম্মজনগণের সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:১২

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: অনেক কিছু পড়লাম এই লেখায়। একটা সহজ কথা জিজ্ঞেস করি, জুমল্যান্ড এর ধারনা কি আপনি সমর্থন করেন?

২২ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০০

তপন চাকমা বলেছেন: হ্যাঁ, অবশ্যই সমর্থন করি। কারণ জুম্মল্যান্ড মানেই বাংলাদেশের কেন বিচ্ছিন্ন নয়। জুম্মল্যান্ড মানে হচ্ছে অধিকার ও আত্মপরিচয় নিয়ে আদিবাসীদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার একটি গোলকবৃত্ত। যেখানে স্বশাসনের মধ্য সীমাবদ্ধ থ্কবে আদিবাসীরা।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।

আপনার কাছে জানতে চাই, একটা পাহাড় কি লিজ নেওয়া যাবে?

২২ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০১

তপন চাকমা বলেছেন: মন্তব্য ক্লিয়ার করুন দয়া করে....

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার লেখা থেকে বুঝা যায়, আপনি বাংলাদেশের বিপক্ষে আছেন, আপনার বিচার হওয়ার দরকার আছে।

২২ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৭

তপন চাকমা বলেছেন: আপনার বুঝার সমস্যা। লেখাগুলো মোটেও বাংলাদেশ বিদ্ধেষী নয়। এখানে একটি জাতি(সংখ্যাগুরু) কতৃক আরেকটি জাতিকে(সংখ্যালুঘু) নিপীড়ন নির্যাতন ও শোষণ বঞ্চনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ন্যায় কখনো অন্যায়কে সমর্থন করতে পারেনা। ন্যায়কে সমর্থন করকে গিয়ে কিংবা সত্য তুলে ধরতে গিয়ে হতে হয় যদি বাংলার বিপক্ষ, হ্যাঁ তাহলে আমি বাংলার বিপক্ষেই আছি এবং থ্কবো।

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৭

ching বলেছেন: @রাজীব নুর, চলে আসেন পাহাড়ে।
কেঊ পাবে, কেঊ পাবে না।

৫| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার পোষ্টে সোজাসুজি বাংলাদেশের বিপক্ষে কিছু বলা হয়নি, আমি আপনার আরো পোষ্ট পড়েছি; আমি অনুমান করছি যে, বাংলাদেশের প্রতি আপনার তেমন আনুগত্য নেই।

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৫০

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন: আমি আপনাদের ঐখানে আনারসের বাগান কিনতে চাই। এই ব্যাপারে একটু সাহায্য করতে পারবেন, প্লিজ?

৭| ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ২:১৬

রাকু হাসান বলেছেন:

আপনার শেষ অংশটা এমন, বলা যায় স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের মত । যা হোক । ব্লগে লিখুন । আপনাদের সমস্যার কথা জানান । আমরা পড়ি । এটা আপনাদের প্রতি জনমত তৈরিতে সহায়তা করবে ।

৮| ০৯ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:১৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক তথ্যবহুল, নিঃসন্দেহে।

মজার ব্যাপার হলো, চুক্তির মূল দিকটি এড়িয়ে সমস্ত দায় সরকারের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
যা করতে গিয়ে, সব এক পক্ষীয় তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে, সবচেয়ে ভয়ংকর দিকটি হলো কিছু কিছে ক্ষেত্রে সত্যের সাথে মিথ্যে মিশ্রিত।

চুক্তি হয়েছিল সরকারের সাথে জেএসএস এর।
অথচ, চুক্তির সাথে সাথে জেএসএস এর অপেক্ষাকৃত তরুণ অংশ ( ছাত্র সমিতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ইত্যাদির তরুণেরা) এর বিরোধিতা করে এবং ইউপিডিএফ আত্নপ্রকাশ করে। অর্থাৎ সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সকলে চুক্তি সমর্থন করেনি। এই বিরোধিতাকারীরা (ইউপিডিএফ) তাদের অস্ত্র রেখে দেয়। আর, ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র কর্মীদের হাত থেকে নিজেদের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে জে এস এস তার সশস্ত্র কর্মীদের সকলকে নিরস্ত করেনি। সহজ ভাষায়, চুক্তির শুরু থেকেই পাহাড়ের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের একাংশ হাতে অস্ত্র রেখে দেয়। অথচ, চুক্তি অনুযায়ী সকলের অস্ত্র সমর্পণ করার কথা।

প্রতি বছর চুক্তি বাস্তবায়ন না করার দায় চাপানো হয়, সরকারের ঘাড়ে। অথচ, কেউ একটিবারের জন্যেও প্রশ্ন তুলে না যে, পাহাড়ে এখনো এত অস্ত্র কেন রয়েছে ? চুক্তির এক পক্ষ অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে আসার কথা থাকলেও আসেনি, কিন্তু সেটা নিয়ে কিছু না বলে প্রতিবার সরকারের প্রতি আঙ্গুল তুলে কি নিরপেক্ষ বক্তব্য দেয়া যায়?

একটা চুক্তির এক পক্ষ শুরু থেকেই চুক্তি অমান্য করে চলছে। অথচ, তারাই আবার উঁচু গলায় দাবি করে যে, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়। চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে, পাহাড়ে আবার আগুন জ্বলতে পারে। কথা হলো, পাহাড়ীরা তাদের সব অস্ত্র জমা দিয়ে, এই কথাটা বলুক না।

চুক্তি বাস্তবায়নের প্রশ্ন উঠেছে বলে লিংক দিচ্ছি। পড়ে দেখতে পারেন। পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতিঃ মতভিন্নতা ও বাস্তবতা

পুরো লেখাতে, বেছে বেছে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে এবং যুক্তি দেয়া হয়েছে। কয়েকটি উদাহরণ না দিলে, পাঠক বুঝতেই পারবে না যে, কিভাবে তাদেরকে কনভিন্স করার চেষ্টা করা হয়েছে।

১। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে "উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল" বলা হয়েছে। অথচ, লেখক চুক্তির সুত্রোল্লেখ করে এখানে লিখেছেন "জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল"। যারা চুক্তিটি পড়েননি, তারা নিঃসন্দেহে ধরে নিবেন যে, চুক্তিতে এই লেখকের দাবিকৃত শব্দগুলোই ছিল। মত প্রকাশের স্বাধীনতা !

২। পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক সম্প্রদায় 'জুম্মল্যান্ড' এর আড়ালে চাকমাদের আধিপত্য বিস্তারের ভয়ে শংকিত। তারা 'জুম্মল্যান্ড'-কে 'চাকমাল্যান্ড'-এর বাস্তবায়নের পথে প্রথম পদক্ষেপ মনে করে। চাকমাদের শিক্ষার হার প্রায় ৭২% এর উপরে। অথচ, উপজাতি কোটার চাকুরি, শিক্ষা এবং অন্যান্য সুবিধা বেশিরভাগই চাকমারা গ্রহণ করছে। তাই, অন্যান্য সম্প্রদায়ের অনেকেই চাকমাদের এই আধিপত্যে নিজেদের অধিকার খর্ব হচ্ছে বলে মনে করে। পুরো লেখাতে 'চাকমা আধিপত্যের' এই ভীতিকর দিকটি তুলে ধরা হয়নি। বরং তুলে ধরা হয়েছে 'মুসলিম' আধিপত্যবাদের আশংকা। যদিও বাস্তবতা হলো, পাহাড়িদের যতজন ধর্মান্তরিত হয়ে খৃষ্টান হয়েছে, মুসলমান হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম। কিন্তু, এ বিষয়ে কেন যেন কেউই কোন কথা বলে না।

৩। বোডোল্যান্ড এর সাথে জুম্মল্যান্ডের তুলনা কিভাবে হতে পারে, বোধগম্য নয়। আসাম অঞ্চলে বোডো সম্প্রদায়ের আগমন ঘটেছিল প্রায় কয়েক হাজার বছর আগে। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা ও অন্যান্যদের আগমন কোনো মতেই ৩০০ বছরের অধিক নয়। 'চাকোমাস' নামের যে ম্যাপের কথা বলা হয়, সেটিও ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের এবং সেখানে আরাকান রাজ্য, ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলা রাজ্য পাওয়া যায়। অথচ, চাকমারা সেই ম্যাপকেই চাকমা রাজ্যের ম্যাপ বলে প্রচার করে দাবি করে যে, এই অঞ্চলে তাদের রাজ্য ছিল। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!

৪। বোডোদের আজন্ম আবাসভুমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাম্রাজ্য দখল করেছিল। (The Bodo people in the Brahmaputra Valley have survived in the midst of Khilji, Mughal, Aryan and Shan invaders and settlers)। যা এখন ভারতের অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল পাহাড়ীরাই এখানে অন্যান্য অঞ্চল হতে এসেছে, কেউ এখানকার ভুমিজ সন্তান নয়। তাই, বোডোদের নামে হাসপাতাল বা অন্যান্য মনুমেন্ট তৈরির উদাহরন টেনে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্যদের ( যারা দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল) জন্যেও তেমন কিছু আশা করা কতটা বাস্তবসম্মত হতে পারে, চিন্তার বিষয়।

পুরো লেখার লাইন বাই লাইন ধরে এগুলে, মন্তব্যটাই লেখার চেয়ে বড় হতে পারে। তাই সেই চেষ্টা করছি না।
বরং এটুকু বলি, লেখকের মতো মানসিকতাসম্পন্ন অনেকেই আছেন। যারা সব সময় নিজের মতো করে সমস্ত যুক্তি তুলে ধরেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা শুরু মূল কারন ছিল দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। পাহাড়ীরা নিজেদের দৃষ্টিকোন থেকে সব কিছু বিচার করেছে, সমগ্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং সমকালীন জাতীয় ঘটনাবলী বিবেচনায় নেয়নি। নব্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে যখন হাজারো সমস্যা, তখন পাহাড়ের অধিবাসীরা আচমকা তাদের জন্যে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবি করে বসে। একবারের জন্যেও ভাবেনি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একজনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না, তিন রাজার দুইজন যার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী চাকমা রাজা ছিল পাকিস্তানের সক্রিয় সহযোগী। সেই পার্বত্য চট্টগ্রামে নেতৃবৃন্দ দেহস স্বাধীন হওয়ার মাত্র বছর খানের মধ্যেই সশস্ত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেয় ( ৭ জানুয়ারি ১৯৭৩ এ শান্তি বাহিনী আত্নপ্রকাশ করে)।

তাদের সাথে মিলে, দেশের মূল জনগোষ্ঠির একাংশ এই সমস্যাকে যার যার মতো করে ব্যাখ্যা করেছে। এভাবে নিজের মতো করে যুক্তি দিয়ে, বা যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললে মতামত নিজের পক্ষে টানা সম্ভব - সেগুলো বেছে বেছে উপস্থাপন করে সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.