নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোট্টার মা, খোট্টি!

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস

আমি কাঠখোট্টা অসামাজিক একটা মানুষ। কথা বলার মতো বিরক্তিকর কাজ দ্বিতীয়টা নেই, তাই লেখালেখি বেছে নিয়েছি। বর্তমানে পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে।

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারকীয় মুক্তি

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৮



(১)

মানুষটা খুবই সাধারণ দেখতে। কোমর সমান লম্বা কালো চুল। ছোট্ট গোল মুখটার তুলনায় বড় বড় গাঢ় বাদামী চোখদুটো বড্ড বেশি বেমানান। নাকটা বোঁচকা, ভ্রুদুটোর ডানেরটি কিঞ্চিৎ এবড়োখেবড়ো। সরলরেখার মত চিকণ ঠোঁটদুটোয় অদ্ভুত- হালকা লালচে রঙ কে যেন ছেলেমানুষি করে মাখিয়ে দিয়েছে, উপরের ঠোঁটটি কম লালচে, নিচেরটি বেশি!

- আপনাকে না আমি প্রায়ই এখানটায় দেখি। ঠিক এই বেঞ্চটায়ই বসে লেকের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকেন!
বলে মানুষটা সরাসরি তার চোখের দিকে তাকাল। তার কাজল পরা চোখে ওটা কি... নিখাদ কৌতূহল? আতঙ্ক, ভীতি, অসহায়ত্ব, ক্রোধ... এই অনুভূতিগুলোর সাথে সে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। নিত্যকার মেলামেশা তার এদের সাথে।
কিন্তু কৌতূহল এই প্রথম।

মানুষটার কথার উত্তর না দিয়ে সে আবার লেকের দিকে তাকাল। বিকেলের সোনালি রোদ, রুপোলী লেকের জলে ঠেকরে পড়ে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছে যে সে মোহাচ্ছন্নের মতো তাকিয়ে না থেকে পারল না। পার্থিব সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবার ক্ষমতা যে তার ছিল, এটা তার নিজেরই জানা ছিলনা... মুগ্ধতার সংজ্ঞা তার কাছে অন্যরকম।
লেকের জলে একটা নৌকা চলা শুরু করল হঠাৎ, ইঞ্জিন না কি যেন বলে- ওইরকম কিছু একটা নিশ্চয় যুক্ত রয়েছে সেটাতে- তার বিকট শব্দে পুরো পরিবেশটার মোহটাই হুট করে নষ্ট হয়ে যাবার কথা। আদতে হয়েছেও তাই। কিন্তু আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখে মনে হলোনা কেউ বিরক্ত হয়েছে। তারা এসবে অভ্যস্ত। বড্ড বেশি অভ্যস্ত।

সৌন্দর্য নষ্ট করবার ক্ষমতা এই মহাবিশ্বে মানুষের চেয়ে বেশি বোধহয় আর কারোরই নেই, হবেওনা কখনো। এই একটি দিক দিয়েই সে মানুষের অধস্তন।

কাপড়ের খসখসানির মতো একটা শব্দ হতেই সে পাশে ফিরে তাকাল। মানুষটা নিচু হয়ে শাড়ির উঠে যাওয়া পাড় ঠিক করছে,তার আকাশকালো চুল পিঠ থেকে সরে এসে মাটি ছুঁইছুঁই করছে। তাকিয়ে থাকা উচিৎ নয়- মানুষটি অস্বস্তি বোধ করতে পারে- জেনেও সে তাকিয়ে থাকল।
মাটির দেহ, অথচ একেক্টি মানুষের দেহাবয়ব, বর্ণ- ঘ্রাণ, আচার-আচরণ, দোষ-গুন একেকরকম, কারোর সাথে কারো মিলেনা। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গায় অনন্যসাধারণ, কেউই সাধারণ নয়- অথচ এই সত্য আজ অবধি তারা উপলব্ধিই করতে পারল না, যুদ্ধ- রক্তারক্তি, সাদাচামড়া- কালো চামড়ার দ্বন্দ...

মানুষটি সোজা হয়ে বসতেই কিছু একটা কর্কশ শব্দ করে বেজে উঠল। তার দিকে একটা লজ্জামাখা দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে মানুষটি তার পাশে, তাদের দুজনের মাঝখানে রাখা কালো একটি ব্যাগ খুলে হাতড়ে কি যেন বের করে টিপেটুপে দেখল- বিরক্তিকর শব্দটা থেমে যেতেই সে আবার ওটা ব্যাগে ভরে সোজা হয়ে বসল। তারপর বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।
তারপর নিজে থেকেই আবার কথা শুরু করল।
- সপ্তাহদুয়েক আগে আমার বিয়েটা ভেঙে গিয়েছে। এপারেন্টলি, ছেলের মার শেষ মুহূর্তে এসে মনে হয়েছে, হবু বউয়ের গায়ের রঙটা একটু বেশিই “শ্যামলা”! আমাকে নিয়ে বাবা মা খুবই চিন্তিত। পারলে সারাক্ষণই পাহারার মধ্যে রাখছে- এই বুঝি আমি আত্মহত্যা করে বসি! কিছুতেই কিছু বুঝানো যাচ্ছেনা তাদের। আমি অতো সাহসী নই যে নিজেকে নিজে আঘাত করতে পারব, যা আঘাত অন্যেরাই তো আমার হয়ে করে দিচ্ছে!
মানুষটার গলার স্বর শেষের দিকে আচমকা খাদে নেমে গেল। সে ঘাড় ঘুরিয়ে মানুষটার দিকে তাকাল। একরাশ দুঃখ আর হৃদয় নিংড়ানো হতাশা তার চোখের আঁধারে... অতিপরিচিত অনুভূতি, ঠাউরে নিতে তাই বিন্দুমাত্র সময় লাগল না।
কিন্তু মানুষটার হতাশার কারণ তার কাছে পরিষ্কার হচ্ছেনা। সে কি বলতে চাচ্ছে কেবল তার গায়ের রঙের জন্যই তার বিয়েটা হয়নি?
খানিকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আপাদমস্তক দেখল সে। কই, তার কাছে তো অস্বাভাবিক কিছু মনে হচ্ছেনা!

- মাঝেমাঝে মনে হয়, একটা সাপ হয়ে জন্মালে বোধহয় ভাল হত। খোলস পাল্টাতে পারতাম কথায় কথায়, কেউ আঘাত করলে ফুঁসলে উঠে ছোবল বসিয়ে দিতে পারতাম! আমার একটা খোলস দরকার... এই শরীরটার আসল রূপ লুকিয়ে রাখার খোলস...

তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই মানুষটি চোখ সরু করে তার দিকে তাকাল।
- আপনারা পুরুষরা শরীর ছাড়া আর কিছু বুঝেননা কেন বলুন তো?!
উত্তরে ঠিক কি বলা উচিৎ বা আদৌ কিছু বলা উচিৎ কিনা- সেটা ভেবে বের করার আগেই সে বিস্মিত হয়ে লক্ষ্ করল, মানুষটির চোখ থেকে টপ করে এক ফোঁটা জল বেরুল, তারপর তার গাল বেয়ে সেটা তার কোলের উপর রাখা হাতের পিঠে পড়ল। এবং তারপর আরেক ফোঁটা, তারপর আরেকটি...

মানুষটি এখন আর তার দিকে তাকিয়ে নেই, তার দৃষ্টি লেকের রূপোলী জলে নিবদ্ধ। কিন্তু মানুষটিকে ঘিরে অপার শুন্যতার যে একটা কালো বলয়, সেটার উপস্থিতি টের পেতে তার অসুবিধা হলোনা ... যেন ওর কেউ নেই, অপূর্ব সুন্দর এই গ্রহে বুঝি তার কেউ নেই, কেউ না...
মানুষটির থেকে চোখ ফিরিয়ে সে নিজের হাতের দিকে তাকাল। মেকি চামড়ার নিচের শিরায় শিরায় অপার শক্তির স্রোত বইছে, রক্ত নয়। এক মুহূর্তের ভগ্নাংশের ব্যবধানে মানুষটিকে তার সব দুশ্চিন্তা সে চিরতরের জন্য মুক্তি দিতে পারে, এটা তার জন্য কিছুই নয়। কিন্তু...

(২)

- দেখুন, আপনার কষ্ট দূর করে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়, কিন্তু যদি চান তো আমি আপনাকে মুক্তি দিতে পারি।
ঈশিতা মাথা তুলে তাকাতেই দেখল, তার পাশে বসে থাকা লোকটা উঠে দাঁড়িয়েছে। লোকটার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি, কিন্তু তার সৌম্যশান্ত মুখের টানটান চামড়ার সাথে সে হাসিটা কেন যেন বড্ড খাপছাড়া লাগছে দেখতে... যেন অনেকদিনের অব্যবহারে হাসিটায় জং ধরেছে...

তারচেয়েও অদ্ভুত ব্যপার, এই জং ধরা হাসিটাতেই আবার কেন যেন লোকটাকে ভালো লাগছে..
লোকটার চেহারা সাদামাটা, শক্তপোক্ত লম্বা গঠনের শরীর, প্রশস্ত কাঁধ- চুলের কোথাও পাক ধরেনি- কিন্তু কোনো এক বিচিত্র কারণে ঈশিতার মনে হতে থাকল, লোকটার যেন অনেক, অনেক, অনেক বয়স... তাদের গ্রামের বাড়ির ধানক্ষেতটা পেরিয়ে যে শতবর্ষী প্রাচীন বটগাছটা আছে, ঠিক ওটার মত...
একটা ছোট নিঃশ্বাস নিয়ে ঈশিতা আবার লেকের জলের দিকে তাকাল।

- আচ্ছা...
লোকটা এক কদম এগিয়ে এসে তার সামনে এসে দাঁড়াল। ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে আলতো করে ঈশিতার কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে হাত বুলিয়ে দিল সে... আর সঙ্গে সঙ্গে ঈশিতার মনে হল, এরকম করে কেউ বুঝি তাকে কখনো ছোয়নি... কোন এক অদ্ভুত শান্তির অনুভূতি ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করে ফেলতে থাকে...

বড্ড ঘুম পাচ্ছে তার... মনে হচ্ছে একবার ঘুমিয়ে পড়লে এই ঘুম হয়ত তার আর কোনোদিন ভাঙবে না... কিন্তু সেটা নিয়ে তার কেন যেন কোনো দুশ্চিন্তা হচ্ছেনা... কোন কিছু নিয়েই কেন যেন তার আর দুশ্চিন্তা হচ্ছেনা...






মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:০৬

শোভন শামস বলেছেন: ভালো লাগল। শুভ কামনা থাকলো

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৯

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৭

ঘটনা সত্য সাক্ষী দুর্বল বলেছেন: ভাল লাগল। লিখে যান

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.