নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোট্টার মা, খোট্টি!

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস

আমি কাঠখোট্টা অসামাজিক একটা মানুষ। কথা বলার মতো বিরক্তিকর কাজ দ্বিতীয়টা নেই, তাই লেখালেখি বেছে নিয়েছি। বর্তমানে পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে।

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি pissed off ঈদের নাটক রিভিউ

২৮ শে জুন, ২০১৭ রাত ১২:৪৫

**স্পয়লার এলার্ট**

নাটকের নামঃ "ভালবেসেছিলে"
কাহিনী এবং নির্মাণঃ চয়নিকা চৌধুরী
অভিনয়েঃ আফসানা মিমি, সিয়াম আহমেদ, আবুল হায়াত ইত্যাদি
প্রচারঃ GTV, ঈদের দ্বিতীয় দিন রাত ৯ঃ৩০



চয়নিকা চৌধুরীর নাটক বিটিভি থাকতে দেখতাম, পাশের বাসার পিচ্চিরা যখন মজা করে ডিশের চ্যানেলে অলিম্পিক আর আন্টিরা জি বাংলার সিরিয়াল দেখত, কিন্তু আমাদের বাসায় তখনো ডিশ নেয়া হয়নাই এবং খালি বিটিভি ছাড়া দেখার আর কিছু ছিলনা। বিটিভি ছাড়া দেখার আর কিছু যেহেতু ছিলনা, কাজেই বিটিভিতে যা দেখানো হইত, সবই দেখতাম এবং আজকের মত এতোটা লো কোয়ালিটি কনটেন্ট তখন বিটিভিতে দেখসি বলে মনে পড়েনা! এজন্যই বোধকরি, চয়নিকা চৌধুরীর নাটক আজকের আগে এইরকম ফালতু কখনো মনে হয়নাই। অবশ্য ৯-১০ বছর আগের টিনেজার আমি আর আজকের আমির point of view এর মধ্যে পার্থক্য থেকেও এইটা মনে হইতে পারে। কিন্তু জদ্দুর মনে পড়ে, আগে বিটিভিতে ঈদের নাটক যখন দেখতাম, তখন এই চয়নিকা চৌধুরী আর হুমায়ুন আহমেদের নাটকই বেশী দেখা পড়ত, ভালোও লাগত। তথাপি, উনার নাট্যনির্মাণ সম্পর্কে আমার নিম্নোক্ত অভিজ্ঞতা ছিলঃ

১/ উনার নাটকে হাই প্রোফাইল অভিনেতাদের দেখা যায়। মাহফুজ, শোয়েব, রওনক হাসান, বিপাশা, আফসানা মিলি- এনারা বলতে গেলে "চয়নিকা চৌধুরী ম্যাটেরিয়াল"।

২/ উনার নাটকের স্টোরি সাধারণত রোম্যান্টিক হয়- or at least আমি উনার যে কয়খানা নাটক এবং খ নাটক দেখসি, সেগুলার বেশিরভাগই রোম্যান্টিক ঘরানার প্লট। ভালবাসা, মন্দবাসা, দাম্পত্য জীবনের সুখদুঃখ ইত্যাদি ইত্যাদি।

৩/ উনার নাটকে সুন্দর সুন্দর গান থাকে- সাধারণত।

৪/ উনার নাটকের ফিনিশিংগুলা জানি ক্যামন ক্যামন হয়, নাটক শেষে একটা obligatory "শেষ হইয়াও হইল না শেষ"- মার্কা unsatisfying ফিলিং হয়!
কিন্তু এই নাটক দেখার পরে মনে হইল, যিনি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে নাটক নির্মাণ করছেন এবং বাংলাদেশের একমাত্র (নারী) পরিচালক যার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে তিনশর বেশি নাটক এবং কোনো এক বিশেষ দিবসে যার নয়টিরও বেশী নাটক একাধারে প্রচার হবার রেকর্ড রয়েছে, তার কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না। উঁহু, একদমই এক্সেপ্টেবল না।
প্রথমে যখন দেখলাম যে এইটা চয়নিকা চৌধুরীর নাটক, আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে ভাবলাম- বাহ অনেক দিন উনার নাটক দেখিনা, নিশ্চয় ভালো একটা নাটক হবে!
এরপর দেখলাম, আফসানা মিমি আছে এই নাটকে। আমি আবেগের ঠেলায় এতই আপ্লুত হয়ে গেলাম যে চোখের কোণে জল জমিল! আই মিস আফসানা মিমি সো মাচ! অনেকদিন উনার নাটক/উনাকে নাটকে দেখিনাই যে...

তো খায়েশ করে শুরু করলাম দেখা। মিনিট দশেক পরেই আমার মাথায় হাত! ও খোদা, ডায়ালগের এ কি অবস্থা? পুরাই cringeworthy ডায়ালগ! ডায়ালগ যদি নাটকের একমাত্র cringeworthy বিষয় হইত, তাও মেনে নেওয়া যাইত। কিন্তু সিয়ামের অভিনয় ছিল ডাবল cringeworthy!
ভাউ রে ভাউ, বাংলাদেশের পুলাপাইন আজকাল ফা-ফা-ফার্ট থুক্কু, ফ্লার্ট করা শিখসে বটে! এই নাটকে "উঠতি পুলা" সিয়াম ফ্লার্ট করতেসিল কার সাথে গেস করেন তো? আজ্ঞে হ্যাঁ, আফসানা মিমির সাথে! চক্ষু কপালে উঠসে? না উঠলে এখন নাটকের প্লটটা সংক্ষেপে বলিঃ

আফসানা মিমি আর অজ্ঞাত আরেক মডেল/সিজনাল অভিনেত্রী হইল গিয়া আবুল হায়াতের দুই মেয়ে। বড়মেয়ে মিমির বয়স চল্লিশ পার হয়ে গেসে, লেকিন মেয়ে এখনো বিয়ে করেনাই কারণ-
১/ রিটায়ার্ড বাপের বিশাল কোম্পানীর দায়িত্ব তার ঘাড়ে গিয়ে পড়সে। কর্পোরেট বস আফসানা মিমি তাই বিয়ে করার ফুরসৎ পায়নাই।
২/ ছোটবোনটা একটা আকাইম্যা। বড়বোনরে কোম্পানী দেখভাল করার কাজে বিন্দুমাত্র সাহায্য করেনা।
এই আকাইম্যা ছোটবোনের বিয়া দেওনের বয়স হইসে, এবং কোনো এক "অজ্ঞাত" (?) কারণে ছোটজন আবুল হায়াতের লগে দাবা খেলতে বইসা বারংবার সেই কথা স্মরণও করায় দেয়। (আমি আঙ্গুলে গুনসি, পুরা নাটকে ছোট মেয়ে ছয়বার নিজের বিবাহের প্রসংগ তুলেছে। নাউজুবিল্লাহ, লজ্জায় আমার অবস্থা কাহিল! সবচে irony হইতেসে, আমি এই নাটক দেখতে বসছি যখন, আমার আব্বাও তখন আমার সাথে ছিলেন। নাটকে ছোট মেয়ে যখন বারবার নিজের বিয়ের কথা বাবা আবুল হায়াতের কাছে তুলতেসে, আমি চক্ষের কোণা দিয়া আমার আব্বাজানরে দেখি। ওমা, আব্বায় দেখি মুচকি মুচকি হাসে, কি সব্বনাশ! :P ) এর মধ্যে নাটকে সদা হাস্য এবং সদা ফ্লার্টিংরত সিয়ামের আবির্ভাব হয়, কোনো এক প্রজেক্টের কাজের জন্য সে মিমির সাথে দেখা করে, এবং অনেক গাইগুই, আরো ডজনখানেক ফ্লার্টিং ফ্লার্টিং ইশটিং-ঢিষটিং, মুচকি হাসির পর ফাইনালি কাজের দায়িত্ব সিয়াম পেয়েও যায়। সিয়ামের কাজের রেজাল্ট দেখে ইমপ্রেসড হয়ে মিমি এক্কেবারে কাইত! সেই কাইত এবং আরো বেশ কিছু ড্রামাটিক "অফিস ডেট" এর পরে হঠাত হতভাগা দর্শক আমরা এবং মিমি নিজেও আবিস্কার করে যে মিমি সিয়ামকে পছন্দ করে ফেলেছে। Oh nooooo! B:-) সিয়াম মিমিকে প্রপোজও করে, কিন্তু মিমি সায় দেয়না, because you know, she is 40+ and he is 20+! এরপরে একখান টুইস্ট যে আসে নাটকে, আমি এই টুইস্টের কথা নেক্সট এক সপ্তাহ ভুলতে পারবনা। ম :|| িমির ছোটবোন মিমির সিয়ামের প্রতি দুর্বলতা টের পেয়ে রেগেমেগে সিয়ামের কাছে গিয়ে চিল্লাচিল্লি, শার্ট ধরে হ্যাঁচকা টান, typical angry girlfriend behaviour etc etc করে এবং সেই মুহূর্তে প্রকাশ হয় যে সিয়ামের আসলে চল্লিশোর্ধ মিমির ছোট বোনের সাথে আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল, কিন্তু মিমির সাথে পরিচয় হবার পর সিয়াম তার প্রেমিকার বড়বোন মিমির উপর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাকে ভালবেসে ফেলে। শেষমেশ, বেচারার আমও গেল, ছালাও গেল! :D :D :D
মোরাল অফ দ্যা স্টোরি, প্রেমিকার বড়বোনের লগে প্রেম করবানা, স্পেশালি যদি সেই বড়বোন তোমার বস হয়। কারণ এইধরনের আকাশপাতাল বয়সের তফাৎ থাকে যেই প্রেমে, সেই প্রেমে চাকরি লস!

এইবার চক্ষু কপালে উঠসে? জ্বি, এইরকম অ-সা-ধা-র-ন রকমের ফালতু গল্পের একটা নাটক উপহার দিয়ে চয়নিকা ম্যাডাম উনার একজন (এবং আশা করি আরো হাজার খানেক) ভক্ত অফিসিয়ালি হারালেন। খুব বেশি আসলে শকড হবারও কিছু নেই, because this is exactly what happens when quantity is valued way more than quality of the content. কিন্তু আফসানা মিমি? আবুল হায়াত? উনাদের মতো প্রফেশনাল এক্টররা কি স্ক্রিপ্ট আগে পড়ে দেখেন না? এইরকম বাজে গল্পের নাটকে কি করে উনারা অভিনয় করতে রাজি হলেন?! ও আবুল হায়াত আংকেল, সিরিয়াসলি? চল্লিশ বছরের এক মহিলা আর বিশ বছরের এক তরুণের প্রেমের নাটকে আপনি কি করে...!!!?? :|

উল্লেখ্য,
নাটকের মাঝখানে জাস্টিন বিবারের "বেবি" গান এবং আরো দুয়েকটা ইংরেজী গান যেগুলা আমি জীবনে শুনিওনাই শুনে আমি অবাক হইনাই, অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করেছি। আজকাল বাংলা নাটকে ইংরেজী- হিন্দি গানের ম্যাশাপ না থাকলে নাটক বাজারে কাটেনা, আমাদের কলকাতার সিরিয়াল ডেইলি সকাল বিকাল গিলে অভ্যস্ত দর্শক তো অন্যকিছু খুবেক্টা খাবে না। কাজেই নাট্য নির্মাতা আর টিভি চ্যানেলগুলোর আর দোষ কি বলেন!

:(

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৭ রাত ২:২৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বাংলা‌দেশী নাট‌ক/‌সি‌নেমার জন্য দেশ‌প্রেম বিসর্জন‌ দি‌য়ে‌ছি অ‌নেক আ‌গে। তা‌দের গ‌ল্পের বিষয় অ‌নেক আ‌গেই শেষ হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছে...

২| ২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বয়স দেখে কি ভালো লাগা, ভালোবাসা হয়? মন কি কারোর নিয়ন্ত্রণে চলে?

৩| ২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ৪/ উনার নাটকের ফিনিশিংগুলা জানি ক্যামন ক্যামন হয়, নাটক শেষে একটা obligatory "শেষ হইয়াও হইল না শেষ"- মার্কা unsatisfying ফিলিং হয়!" এ কারণেই প্রথম থেকেই কেমন বিরক্ত লাগতো । নাটকের কোন সারবস্তু খুঁজে পেতাম না!
আফসানা মিমির প্রতি মুগ্ধতা কমে গেছে "কোথাও কেউ নেই" ধারাবাহিকের কান্ডজ্ঞানহীন অভিনয়ের কারণে ।

২৮ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:২৫

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: *দীর্ঘশ্বাস* :(

৪| ২৮ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৭

অবনীলের ডানা বলেছেন: বেইবি গানটার জন্য হইলেও দেখবো! আফটার অল মেলাদিন সলিড বিনোদন পাইতেসিনা

২৮ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:২৪

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: =p~

৫| ২৮ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৭

মক্ষীরাজা বলেছেন: আপুমণিতা!!!!!!!!!

বাহ!!!!!!!!

মুগ্ধ মুগ্ধ মুগ্ধ!!!!!!!!

ঠিক পরীর দেশের রাজণ্যদের লেখা !!!!!!!!

উলে জাদুরে। উম্মা :>

২৮ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:৩৮

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: :P

৬| ২৯ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৪৬

মিথুন আহমেদ বলেছেন: আর কত গল্পের প্লট খুজঁবে? তাইত কিছুটা বৈচিত্র্য আনার জন্য এ ধরণের গল্পের নাটক বানায়। একঘেয়ে নাটকে অভিনয় করতে করতে ক্নান্ত অভিনেতা অভিনেত্রীরাও কিছুটা বৈচিত্র্যতার জন্য এ ধরণের নাটকে অভিনয় করে। অনেকটা এ ধরণের নাটক আর একটি চ্যানেলে দেখলাম যেখানে নায়ক তার ভালবাসা প্রত্যাশি নায়িকাকে ছেড়ে তারএক দিদির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, যে দিদি আবার নায়কের অজান্তে পরিস্থিতির শিকারে একজন হাই সোসাইটি কলগার্ল। যেভাবে নাটকগুলো বানানো হচ্ছে, দুইদিন পর মামা-ভাগনির, খালা-ভাগ্নের প্রেম নিয়ে নাটক বানালে অবাক হব না। আমাদের নাটক নির্মাতাদের আরও সময় নিয়ে মেধা লাগিয়ে কাজ করা উচিত। এই ঈদে মাসুদ সেজান , সাগর জাহান আর লাভলু ভাইয়ের নাটকগুলো ভালো লাগছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.