নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোট্টার মা, খোট্টি!

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস

আমি কাঠখোট্টা অসামাজিক একটা মানুষ। কথা বলার মতো বিরক্তিকর কাজ দ্বিতীয়টা নেই, তাই লেখালেখি বেছে নিয়েছি। বর্তমানে পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে।

দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নহীন রোগ!

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:১০


Ursula K. Le Guin নামক একজন চিন্তাশীল আমেরিকান লেখিকা একবার লিখেছিলেন, "The creative adult is the child who survived."
প্রথমত কথাটার মধ্যে দারুণ ঘাবড়ে যাবার মতো একটা নির্মম সত্য ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তার মানে কি আমি সেইসব দুর্ভাগাদের একজন, যারা সারভাইভ করতে পারেনি? সারভাইভালের দুরন্ত রেসের জকি হয়ে শৈশব থেকে যৌবন- এই লম্বা ট্রানজিটকালে যাদের কল্পনাশক্তি আর সৃজনশীলতা ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে- আমি কি তাদের একজন? আমার এইরকম ভাববার কারণ, সেদিন ডেস্ক গোছাতে গিয়ে চিপাচাপা থেকে বহুত পুরনো কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করেছিলাম। তার মধ্যে ছিলঃ
অনেক আগের লেখা তিনচারটা অসমাপ্ত গল্প।
কিছু ভাঙ্গা ভাঙ্গা গানের লিরিক্স।
(লজ্জাজনকরকম) অপরিপক্ব কিছু রোম্যান্টিক অণুকাব্য।
সাথে কিছু অদ্ভুত লিস্টও বেরিয়েছিল। কাটাকুটিতে ভরা লিস্টগুলো নিয়ে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে পড়েছিলাম। তারপরে আমার আর কোনো খোঁজ নেই। দুপুর পেরিয়ে বিকেল, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে চলল। নস্টালজিয়ার অথৈ অতলান্তে ডুব।

লিস্টগুলোর মধ্যে ছিল,

১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলে আমি কি করতাম, তার সাতপাতা বিস্তারিত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বিবরণ।

২। বড় হয়ে বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল দিতাম, সে স্কুলের ভেতর কি কি ফুল-ফল-সব্জির বাগান থাকবে, স্কুলে কোনো বাচ্চাকে বইখাতাভর্তি ভারী ব্যাগ নিয়ে আসতে হবেনা, লকার সিস্টেম থাকবে, স্কুল থেকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই আর শিক্ষা উপকরণ দেয়া হবে, স্কুলে সপ্তাহে বাচ্চাদের কয়টি মুভি/কবিতা/গল্প/গান/নাচ/ক্র্যাফটের ক্লাস হবে, স্কুলটায় হ্যারি পটারের হগওয়ার্টস স্কুলের জাদুর সিড়িগুলো মত মুভিং স্টেয়ার্স থাকবে কিনা, স্কুলে বাচ্চাদের সঙ্গ দেবার জন্য কিছু বন্ধুবৎসল পোষা প্রাণী রাখা হবে কিনা ইত্যাদি

৩। এমন একটা ফ্যাশন চেইন শপ খোলা, যেখানে শুধু নীল রঙের জামাকাপড়,জুতো, এক্সেসরিজ ইত্যাদি আইটেম বিক্রি হবে। এই চেইন শপের দোকানে নীল ছাড়া অন্য কোনো রঙের একটা জিনিষও পাওয়া যাবেনা! (এইরকম উদ্ভট চিন্তার কারণ খুব সম্ভবত এটা যে, নীল আমার খুবি পছন্দের একটা রঙ। নীল রঙটার সাথে আমার অন্যরকম একটা সখ্যতা আছে, সেটা ঠিক ব্যাখ্যা করে বুঝানো সম্ভব না)

৪। রাস্তার নেড়ি কুকুর-বিড়ালগুলোর জন্য একটা বিশাল হোটেল/হাসপাতাল দেয়া। দিনে দুবার যেখানে কুকুরগুলোকে পেট পুরে গোশত খাওয়ানো হবে, বিড়ালগুলোকে চিকিৎসা দেয়া হবে ইত্যাদি। কুকুরদের বিশেষ ট্রেনিঙয়েরও ব্যবস্থা থাকবে, ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ বানিয়ে এদেরকে র‍্যাব, পুলিশ, বোম্ব স্কোয়াড সদস্যদের সাহায্যের জন্য কিংবা অন্ধ বা প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য সহযোগী পশু হিসেবেও নিয়োগ দেয়া হবে।

৫। ঢাকার গাজীপুর কিংবা এরকম কোনো জায়গায় বিরাট পরিসরে প্ল্যানড একটা আবাসন কমপ্লেক্স গড়ে তোলা, যেখানে ঢাকার সমস্ত বস্তিবাসী আর ছিন্নমূল মানুষগুলোকে তুলে এনে এপার্টমেন্টে ফ্রি থাকতে দেয়া হবে। গরীব মানুষগুলোর মাথা গোঁজার একটা ঠাই তো হল! চাইলে এখান থেকেই কর্মসংস্থান করা যাবে।
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি নানান উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা-পরিকল্পনা। টুকরা টুকরা দিবাস্বপ্ন।

These are some of the things I used to dream about when I was a kid. I'm not a kid anymore. Neither do I dream of these extraordinarily humanitarian things anymore.

আমি অত্যাশ্চর্যের সাথে খেয়াল্ করলাম, দিনকেদিন আমার স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা ভোঁতা হয়ে আসছে! আগের মত উদার কল্পনাপ্রসূত লেখালেখি হয়ে উঠছেনা ঠিক। এটা একটা ভয়ংকর রকমের মন খারাপ করা বোধোদয়।
এই তো, ন'-দশ বছর আগেও এমন আকাশপাতাল স্বপ্ন বুনতাম আমি। আর এখন? এখন আর আগের মত স্বপ্ন দেখিনা, ওলটপালট কল্পনা করিনা। ওসব করতে গেলেই বাস্তবতা এসে হাজির হয় সামনে। বাস্তবতাটাকে আসলে এখন অনেকটা পেপার শ্রেডার মেশিনের মতোন মনে হয়; বেচারা স্বপ্নগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে আরেকমাথা দিয়ে বেরিয়ে আসে। এমনই ছিন্নভিন্ন অবস্থা যে সেগুলোকে জোড়া লাগিয়ে বাঁচানোর কোনো দ্বিতীয় সুযোগ নেই।

লিমিটেড রিসোর্স থাকার কারণেই হউক, বড় হয়েছি দেখেই হউক, কিংবা মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলেই হউক- জানিনা ঠিক কি কারণে যেন আগের মতো ব্রড রেঞ্জে এখন আর স্বপ্ন দেখা হয়না, পারিনা। একদমই পারিনা। বাস্তবতা আমার সাথে অনাহুত ছায়াসঙ্গী, যেখানেই যাই, যাই করিনা কেন, বাস্তবতার রুঢ় বড়ভাই আমার পিছু ছাড়েনা।
স্বপ্ন দেখতেও এখন আসলে কড়ি লাগে, মামা-চাচার জোর লাগে।
কে জানত, নিজের জন্য নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখাটাও যে একসময় একটা নিছক বিলাসিতায় পরিণত হবে?


দ্বিতীয়ত, পরে অনেক চিন্তার পর বুঝতে পারলাম, উনার কথাটা আসলে আমি ভুল কনটেক্সটে বসাচ্ছি। কথাটা তিনি বলেছিলেন ম্যাচুরিটির ক্ষেত্রে। Ursula আসলে কথাটা বলেছিলেন এভাবে, "I believe that maturity is not an outgrowing, but a growing up; that an adult is not a dead child, but a child who survived."

কাজেই এটা পরিষ্কার হল এখন যে আমি যে অর্থে উনার কথাটা নিচ্ছিলাম, আসলে তিনি সেটা বোঝাতে চাননি। এটা আরো স্পষ্ট হল যখন একই লেখকেরই আরেকটি লেখা পেলাম, যেখানে উনি বলেছেন, "I doubt that the imagination can be suppressed. If you truly eradicated it in a child, he would grow up to be an eggplant. "

কল্পনাশক্তির ক্ষয় আসলেই সম্ভব কিনা, সেটাকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি মনে করেন, যদি একটি শিশুর কল্পনাশক্তিকে আসলেও ওভাবে দমন করা যেত, তাহলে শিশুটা বড় হতো একটা বেগুনের মতোই বোধশুদ্ধিহীনরূপে। এটা যদি মেনে নেই, তাহলে বুকের ভেতর থেকে অনেক বড় একটা পাথর সরে যায়। কিন্তু আসলেই কি এটা সত্য?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.