![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কাঠখোট্টা অসামাজিক একটা মানুষ। কথা বলার মতো বিরক্তিকর কাজ দ্বিতীয়টা নেই, তাই লেখালেখি বেছে নিয়েছি। বর্তমানে পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে।
পর্ব ১
No Blood Should Hold Us Back
আমার মার খুব প্রিয় টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে প্রখ্যাত একটি হিন্দি চ্যানেলও আছে। সেদিন সন্ধ্যায় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মা টিভির সামনে এসে বসলেন, তার পছন্দের চ্যানেলটিতে তখন বিজ্ঞাপন চলছে- একটি নামী কোম্পানীর স্যানিটারী ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনটা আমিও দেখেছি, অনেকেই হয়ত দেখেছেন- বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোতেও ওই একই বিজ্ঞাপনখানা এখনো প্রচার করা হয়। বিজ্ঞাপনটার অ্যানিমেশনে স্যানিটারী ন্যাপকিনের উপরে নীল রঙের লিকুইড ব্লাড মেখে থাকতে দেখা যায়। এটা দেখে আমার জাফর ইকবালের অবনীল সায়েন্স ফিকশনটার কথা মনে পড়ে গেল। যেখানে ভিন গ্রহের বাসিন্দা, এলিয়েন নায়কের গায়ের রক্তের রং নীল থাকে। আমার কেন যেন খুব হাসি পেতে থাকল।
এক্সকিউজ মি! পিরিয়ডের ব্লাড নীল হয় না! শুনতে হয়ত আশ্চর্য শোনাবে, কিন্তু আমরা এলিয়েন নই। তথাপি, মেয়েদের মাসিকের রক্তের রঙ লাল। সারপ্রাইজ, সারপ্রাইজ!
আচ্ছা ঠিক আছে। ধরে নিলাম, বিজ্ঞাপনে রক্তের আসল রঙ না দেখানোর পিছনে কিছু কারণ থাকতে পারে। এই মুহূর্তে গোড়া কনজারভেটিভ মুর্খতা বাদ দিলে একটিই কারণ আমার মাথায় আসে। সেটি হলো- অপ্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ বাচ্চাদের চোখেও লাল রঙের অ্যানিমেটেড পিরিয়ড ব্লাড লেগে থাকা অ্যানিমেটেড স্যানিটারী ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনখানা পড়ে যেতে পারে।
তাতে বিরাট বড় একখানা অন্যায় হবে। (?)
নৈতিকতার চরম মাত্রার লঙ্ঘন ঘটে যাবে। (?)
বাচ্চাদেরকে অশ্নীলতা শেখানো হবে। (?)
মোটকথা একটা লঙ্কাকান্ড ঘটবে।
ফর গডস সেক! এমনিতেই মেয়েদের পিরিয়ড বিষয়টাকে একটা স্টিগমা হিসেবে দেখানোর ও দেখবার প্রবণতা আমাদের মধ্যে কাজ করে। আমাদের মতো কনজারভেটিভ সমাজগুলোতে যে টিভি, রেডিও, পত্রিকা ইত্যাদি মিডিয়াতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের এড আদৌ দেখানো/শোনানো/পড়ানো হচ্ছে, সেইটাই একটা অবিশ্বাস্য বস্তু বটে। সেজন্যে দলে দলে আমাদের মেয়েদের উচিৎ রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকা!
আনওয়ান্টেড এডোলসেন্স অডিয়েন্সের অজুহাত যদি দেখানো হয়, তাহলে কনডমের এডগুলোর কথা কি বলবেন? বাথটাবে বসে আবেদনময় পন্থায় লাস্যময়ী নারীদের লাক্সের সাবান গায়ে মাখতে থাকা এডগুলো?
মাসিক ব্যাপারটাকে খুব জঘন্য, ডিসগাস্টিং, বিরক্তকর একটা ব্যাপার হিসেবে অনেকে মনে করেন। গত সেপ্টেম্বরে 'প্রজেক্ট কন্যা' নামের একটি নন প্রফিট ওর্গানাইজেশনের জরিপ কাজে গাইবান্ধার বন্যাকবলিত থৈকরের পাড়া যাওয়া হয়েছিল। সেখানে বেশ কিছু মহিলার সাথে কথা বলতে গিয়ে হার্টব্রেকিং কিছু জিনিশ বেরিয়ে এসেছিল। মাসিক জিনিষটা এদের কাছে একটা অভিশাপের মত মনে হয়। "আল্লাহ পাক মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে আমাদের এই অভিশাপ দিয়েছেন", এইভাবে বলছিল একটা সদ্য বিবাহিতা মেয়ে। শুনে আমার ইচ্ছে করছিল কাউকে গিয়ে খুব করে কটা কিলঘুষি মেরে আসি! প্রচন্ড একটা ক্রোধ জন্মেছিল সেদিন।
ধর্মীয় কিংবা সামাজিক কুসংস্কারের দরুন মাসিক ব্যাপারটিকে আমরা একটা সমস্যা, একটা অভিশাপ, একটা নেগেটিভ, ডিসগাস্টিং, কদাকার ব্যাপার হিসেবে দেখি। অথচ এটা কোনো অভিশাপ নয়, বরঞ্চ এটা একটা ব্লেসিং, সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটা আশীর্বাদ, নারীত্বের প্রথম স্বাদ!
মেন্সট্রুয়েশন কোনো গোপন বিষয় নয়, এটা স্রেফ একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া! মেয়ে হয়ে জন্মাবার সৌভাগ্য হলে এটা আপনার জন্য একটা আশীর্বাদ মাত্র! আশীর্বাদকে অভিশাপ বা ডিসগাস্টিং হিসেবে না দেখলে হয়না? এই আশীর্বাদটিকে স্টিগ্মা বা নীল রক্ত হিসেবে তুলে না ধরে, স্কুলের পাঠ্যবইয়ের মাসিক সংক্রান্ত চ্যাপ্টারটিকে স্ট্যাপল করে না রেখে আমরা কি পারিনা একটা সুস্থ, ইতিবাচক ইমেজ তুলে ধরতে?
{প্রথমবারের মত পিরিয়ডের ব্লাড নীল না দেখিয়ে ব্রিটেনভিত্তিক হাইজিন ব্র্যান্ড, BodyForm, একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে বিশ্বজুড়ে খ্যাতিলাভ করেছিল, বিজ্ঞাপনটির নাম "No Blood Should Hold Us Back."}
২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৫
ঢাকার লোক বলেছেন: পুরো সমাজই পিছিয়ে, অন্ধকারে আবৃত, সতত সত্য প্রকাশে ভীত, সবকিছুই আমরা ভালোবাসি লুকিয়ে রাখতে পাছে লোকে কিছু বলে, সচ্ছতাকে ভয় পাই নিয়ত, এর থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে!
৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আমাদের একটা অদ্ভুদ সাবকন্টিনেন্ট মানসিকতা! সিনেমায় যৌনতা দেখানো যায়, কিন্তু দরকারী কিছু দেখাতে গেলে ছল-চাতুরির আশ্রয় নেয়া লাগে! জন্ম-নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারটাকেও একসময় স্টিগমাটাইজড করে রাখা হয়েছিল, তবে আশার কথা,আস্তে আস্তে মেঘ কেটে যাচ্ছে। লেখাটা ভালো লাগলো।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৯
দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: শুধু আসলে সাবকন্টিনেন্টেরই নয়, অনেক উন্নত দেশেও এই জিনিষগুলো নিয়ে স্টিগমা দেখা যায়। ওদের সাথে আমাদের পার্থক্যটা হলো এইখানে যে, এট লিস্ট ওদের সোসাইটিতে কেউ এই স্টিগমার বিরুদ্ধে দুটা কথা বলেই খালাস হয়না, একচুয়ালি কিছু করে দেখায় এবং লোকে একসময় তাদের সাপোর্টও করে। আমাদের দেশে এগুলো নিয়ে কাজ করবার স্কোপ খুবই কম। এখানে কেউ এইসব স্টিগ্মার বিরুদ্ধে দুটা কথা বললেই তাকে স্রোতের বিপরীতে দাড় করিয়ে দেয়া হয়। এই পোস্টের কমেন্টগুলোই দেখুন না!
৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ভাবতে হবে অনেক।
৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫৩
মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: ধর্মে এটাকে অভিশাপ হিসেবে বলা হয় নাই। কুরআনে মাসিক নিয়ে আয়াত আছে। গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
৬| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৮
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এগুলো সবাই জানে। তাই এটা নিয়ে টিভিতে বিজ্ঞাপন বা একদম খোলামেলা ভাবে শেখানোর কিছু নেই। এখনকার মেয়েরা আর অভিভাবকরা অনেক বুঝদার। সমস্যা কিছু আছে অশিক্ষিত গ্রাম্য পরিবারে...
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৩
দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: সমস্যা শুধু গ্রাম্য কিছু অশিক্ষিত পরিবারেই নেই, ভাইয়া। এবং এগুলো খোলামেলাভাবে শেখবার পিছনের রুঢ় বাস্তবতাটা যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে আর আমার কিছু বলার নেই।
৭| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:২১
আবু তালেব শেখ বলেছেন: পিরিয়ড খুব ভালো জিনিস মনে হচ্ছে আপনার মতে।
এটা নিয়ে তো কোন আলোচনা সমালোচনা হচ্চে না। তাহলে
মিছেমিছি কেন এটাকে আলোচনায় আনতে চাচ্ছেন।
নারীদের গোপন বিষয় গোপনই থাকায় শ্রেয় নয়কি?
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৪
দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: Exactly আপনাদের মত লোকদের জন্যই পোষ্টটি লেখা। পিরিয়ড নিয়ে "মিছেমিছি" একটা স্টিগমা আপনারাই তৈরি করে রেখেছেন। মেয়েদের মাসিক হয়- এটা আমাদের মেয়েদের জন্য গোপন কোনো বিষয় নয়। এখানে "গোপন" কিছু নেই যে একে "গোপন" করে রেখে সমাজে অজ্ঞতা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্নতাকে প্রশ্রয় দিতে হবে। মেন্সট্রুয়েশন খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া এবং এই প্রক্রিয়া আপনার মায়ের দেহেও হয়েছিল বলেই আপনার জন্মটা নির্বিঘ্নে হয়েছে।
৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৬
দপ্তরবিহীন মন্ত্রী বলেছেন: আপনাদের মন মানসিকতার গ্রুপই(সম্ভবত উইম্যান চ্যাপ্টারের কেউ) তো বোধহয় বলেছিল, পিরিয়ড নিয়ে ছেলেদেরও সচেতন করতে হবে। যে ঘরে পিতা নেই সেই ঘরে মা ও বোনের সাথে এসব নিয়ে সচেতনতামূলক আলাপ করতে হবে!!
৯| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:০৩
নতুন বলেছেন: এটাকে স্বভাবিক ভাবে নিলে কি সমস্যা হয় তা মাথায় ঢোকে না।
অনেক দেশেই মেয়েরা ওড়না পরে না এবং দেখাযায় সেখানে কিন্তু ছেলেরা বুকের দিকে তাকিয়ে থাকেনা। কারন ওদের কাছে এটা সাভাবিক.... তাই এই সব নিয়ে ছেলেরা বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকেনা।
পিরিওড না হলে বা এটা যে কত দরকারী একটা প্রকৃয়া সেটা অনেকেই জানেন না। তাই তারা এটাকে ট্যাবু বলে মনে করে।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩০
দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: একমত আপনার সাথে। কিছু সচেতনতামূলক কাজ হচ্ছে। আশা করি অজ্ঞতার অন্ধকার আর বেশীদিন থাকবেনা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৫
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: নো কমেন্ট।