![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিয়ানমারের মিকিতলা শহরের পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক মুসলিম নারী। হঠাৎ এক বৌদ্ধ ভিক্ষু নারীটিকে পাকরাও করে গলায় ছুরি চেপে ধরে। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল একদল পুলিশ। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পুলিশ এগোতে উদ্যত হলেই ভিক্ষুটি চিত্কার করে বলে, ‘এগোলেই মেরে ফেলব।’ কিন্তু তখনো পুলিশেরা অতটা বিস্মিত হয়নি। কয়েক মুহূর্ত পর পুলিশ বুঝতে পারে, এসব ভিক্ষু আসলে দাঙ্গাকারী।
রয়টার্স জানায়, মেয়েটির গলায় ছুরি চেপে ধরা ভিক্ষুটি ছিল একটি বড় দলের সঙ্গে। ভিক্ষু দলটির প্রত্যেকের হাতে ছিল রামদা বা তলোয়ার। মুসলমানদের নিধনে ব্যবহূত হতে অস্ত্রগুলো যেন চকচক করছিল।
দিনটি ছিল এ বছরের ২১ মার্চ। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ওই এলাকায় ২৫ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়। মৃতদেহগুলোকে একটি পাহাড়ের ওপর তুলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকটি দেহ কুপিয়ে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়। রয়টার্সের এক ক্যামেরাম্যান পুড়ে অঙ্গার হওয়া দেহগুলোর ছবি তুলেছেন। তিনি জানান, মৃতদের অনেকেই ছিল শিশু, যাদের বয়স ১০ বছরের কম।
২০১১ সালের মার্চে ৪৯ বছরের সামরিক শাসনের অবসান হতে না-হতে শুরু হয় বৌদ্ধ-মুসলমান দাঙ্গা। গত মার্চের চার দিনের দাঙ্গায় মিকিতলা শহরটিতে মারা যায় ৪৩ জন। বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালায় প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। তাদের বেশির ভাগই মুসলমান। এ ঘটনার পর দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে আরও ১৪টি গ্রামে। দাঙ্গায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সশস্ত্র আক্রমণ খুবই লক্ষণীয়।
ধর্ম, ভিক্ষু ও দাঙ্গা
মিয়ানমারে গণতন্ত্রের সংগ্রামে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মিকিতলা দাঙ্গায় ভিক্ষুরা যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন, তাতে তাঁদের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থান এখন প্রশ্নের মুখোমুখি।
হত্যা ও লুটপাট যখন চলছিল, শহরের পুলিশ তখন ঠায় দাঁড়িয়েছিল। এমন অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। দাঙ্গার শিকার অসহায় লোকেদের রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অবস্থানের পেছনে কাদের হাত ছিল, তা অনুসন্ধানের বিষয়। তবে মুসলমানদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ ছিল আরও অনেক। ওই এলাকার বিভিন্ন দেয়ালে লেখা ছিল, ‘চাই মুসলমান নিধন’।
তবে দাঙ্গার দায় কেবল বৌদ্ধদের নয়। দাঙ্গার শুরুটি হয়েছিল এক বৌদ্ধকে হত্যার মধ্য দিয়ে। মুসলমানেরা ওই বৌদ্ধকে হত্যা করেছিল। দাঙ্গার জন্য দায়ী সন্দেহে ৪২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু এতে দাঙ্গা বন্ধ হয়ে যাবে, তা নয়। কারণ নতুন দাঙ্গার লু-হাওয়া ছড়াচ্ছে ‘৯৬৯’ আন্দোলন।
অর্থনৈতিক কারণ
ধর্মীয় ও জাতিগত কারণে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের দাঙ্গা চলছে, বিষয়টি এমন নয়। সব সময়ই দেখা যায়, এ ধরনের দাঙ্গাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা হয়। মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাঙ্গার কারণ যত না ধর্মীয়, তার চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক। এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশটিতে মেখতিলা প্রদেশে ও দেশটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থানকারী মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থা বৌদ্ধদের চেয়ে ভালো।
দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা ৫ শতাংশের কম। মেখতিলায় তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। মুসলমানদের হাতে আছে আবাসন ব্যবসা, ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসা, কাপড়ের দোকান, রেস্তোরাঁ ও মোটরসাইকেলের ডিলারশিপ। শহরটির বৌদ্ধদের মোট আয়ের বহু গুণ বেশি আয় করে মুসলমানেরা। বৌদ্ধরা মুসলমানদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক বা মুসলমানদের উত্পাদিত পণ্যের বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে থাকে।
মিয়ানমারে সামরিক শাসনের অবসানের পর নতুন বাণিজ্য ও বাজার প্রসারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বিরাট এ বাজারে দখল কায়েম করা ও জারি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক দাঙ্গা চলতে থাকলে নতুন মিয়ানমারের অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাবে ধনী মুসলমানেরা। তাই তাদের টিকে থাকার লড়াইও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করেই।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকান থেকে দাঙ্গা
২০ মার্চ মেখতিলার নিউ উইন্ট সেইন এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকান থেকে দাঙ্গা শুরু হয়। মুসলমান ব্যবসায়ীর সঙ্গে ক্রেতা বৌদ্ধ দম্পতির কথা-কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ওই ঘটনার জন্য মুসলমান ব্যবসায়ীটিই দায়ী। এমনিতেই এলাকায় উগ্র ও একরোখা হিসেবে ওই ব্যবসায়ীর কুখ্যাতি ছিল। তাই ক্রেতাকে বিক্রেতার চড় মারার ঘটনাটি ছিল ‘বারুদের গুদামে ম্যাচের কাঠি ছুড়ে’ দেওয়ারই নামান্তর।
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্বোধন করে প্রচার করা একটি লিফলেট মুসলিমবিরোধী ক্ষোভ উসকে দেয়। লিফলেটটি ছেড়েছিল ‘অসহায় বুদ্ধরা’ নামের একটি সংগঠন। সেটিতে যা লেখা ছিল তার মূল কথা হলো, মুসলমানেরা বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের অর্থ জোগাচ্ছে সৌদি আরব এবং তারা মসজিদে মসজিদে গোপন সভা করছে।
বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে শুরু হয় দাঙ্গা। চার মুসলমান এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে। মোটরসাইকেলের আরোহী বৌদ্ধ ভিক্ষুটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর মুসলমানেরা তাঁর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনা সো থেইন নামের এক মেকানিক দেখে ফেলে। সে দ্রুত এক বাজারে ছুটে গিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে ‘ভিক্ষুকে মেরে ফেলেছ! ভিক্ষুকে মেরে ফেলেছ!!’ সঙ্গে সঙ্গে শত শত বৌদ্ধ অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে আসে এবং মুসলমানদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আক্রমণ করে।
এ দাঙ্গায় ওই ভিক্ষুটি ছাড়া আর কেউ মারা যায়নি, তবে হাজার হাজার মুসলমান গৃহহীন হয়েছে। পুরো এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
৯৬৯ আন্দোলন
মিয়ানমারের বর্মিদের বিশ্বাস, দাঙ্গার জন্য এমন এক প্রতিষ্ঠান দায়ী, যেটি চোর-বাটপারে পূর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু দাঙ্গা যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে সংঘটিতে হচ্ছে, তা তারা বিশ্বাস করতে নারাজ।
মেখতিলার দাঙ্গা দেখেছেন এমন এক ব্যক্তি জানান, দাঙ্গায় অংশ নেওয়া ভিক্ষুরা এসেছেন আশপাশের সুপরিচিত মঠগুলো থেকে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেই থেকেও অনেকে এসেছিলেন। তাঁদের অন্যতম ছিলেন উইরাথু।
নয় বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছেন উইরাথু। সামরিক শাসন অবসানের পর যে কয়েক শ রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়, তাঁদের অন্যতম ছিলেন উইরাথু। ২০০৩ সালে মুসলমানবিরোধী দাঙ্গায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাঁর কারাদণ্ড হয়েছিল।
উইরাথু মান্দালেইয়ের বিরাট মেসোইয়েন মঠে ৬০ জন ভিক্ষু ও আড়াই হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে অবস্থান করেন। এ মঠে বসে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘৯৬৯’ আন্দোলনের। মুসলমানদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক অবস্থান এ আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯৬৯ সংখ্যাটি তিনটি বৌদ্ধ মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রথম ৯ দিয়ে বোঝানো হয় বুদ্ধের নয়টি বিশেষ ক্ষমতা, ৬ দিয়ে বোঝানো হয় বুদ্ধের ছয়টি শিক্ষা এবং শেষ ৯ দিয়ে বোঝানো হয় সংঘ বা বৌদ্ধ মতবাদের নয়টি বিশেষ প্রতীক। আন্দোলনের নেতার বলছেন, তাঁদের লক্ষ্য হলো মিয়ানমারে বৌদ্ধ আধিপত্য বজায় রাখা। তাঁরা মনে করছেন, মুসলমানেরা পরজীবীর মতো টিকে থেকে বৌদ্ধদের আধিপত্য নস্যাত্ করছেন।
৯৬৯ আন্দোলনের প্রভাব
তবে ৯৬৯ সংখ্যাটি এখন মুসলমানবিরোধী জাতীয়তাবাদের ব্রান্ডে পরিণত হয়েছে। উইরাথু এক সাক্ষাত্কারে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের একটি স্লোগান আছে: খেতে হলে ৯৬৯ খাও, যেতে হলে ৯৬৯-এ যাও, কিনতে হলে ৯৬৯-এ কেনো।’ এর অর্থ হলো, যদি আপনি খেতে, কোথাও যেতে বা কিছু কিনতে চান, তবে তা করুন একজন বৌদ্ধের সঙ্গে। ‘মৌলবাদী’ পরিচয়কে সানন্দে গ্রহণ করে উইরাথু নিজেকে ‘বর্মি বিন লাদেন’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
চার মাস আগে উইরাথু তাঁর ৯৬৯ মতবাদ ছড়াতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাজ হলো, এ অভিযান ছড়িয়ে দেওয়া।’ তবে ৯৬৯ স্টিকার ও প্রতীক কাজে লাগতে শুরু করেছে। সহিংসতা যত বাড়ছে, ৯৬৯ প্রতীকের ব্যবহারও তত বাড়ছে।
মিকিতলার দেয়ালে দেয়ালে দাঙ্গাকারীরা ৯৬৯ এঁকে রেখেছে। রেঙ্গুনের বাগো এলাকায় ৯৬৯ দলের ভিক্ষুরা গণসংযোগ চালানোর পরপরই সেখানে মুসলমানবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। ৯৬৯ লেখা স্টিকারে ছেয়ে যাচ্ছে দেশটির দোকানপাট, মোটরসাইকেল, মোটরগাড়ি স-ব।
মিনলা শহরের এক কমিউনিটি সেন্টারে গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারিতে এক বৌদ্ধসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উইমালা বিওয়ানথা। তিনি শ্রোতাদের মধ্যে মুসলমানবিরোধী চেতনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, তাঁর নিজের প্রদেশ ‘মন’-এ মুসলমানদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে। সেখানে ৯৬৯ আন্দোলনের কর্মীরা এক মুসলমানের মালিকানাধীন একটি জনপ্রিয় বাস সার্ভিসকে বয়কট করেছে। এসব ভাষণে বৌদ্ধরা উজ্জীবিত হয়, মুসলমানেরা ভয়ে কুঁকড়ে যায়। এর মাস খানেক পর প্রায় ৮০০ বৌদ্ধ লোহার পাইপ ও হাতুড়ি হাতে পথে নেমে আসে। তারা তিনটি মসজিদ ও ১৭টি বাড়ি ভেঙে ফেলে। অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও তারা গুঁড়িয়ে দেয়।
উইরাথু বলছেন, তিনি ভিক্ষুদের সংঘাতে ঠেলে দেওয়ার জন্য দায়ী নন। তবে তিনি বলেছেন, মুসলমানেরা বৌদ্ধদের পরিচয়কে নষ্ট করছে। তিনি বলেন, ‘অর্থ আয় করে ওরা (মুসলমানেরা) বড়লোক হয়ে গেছে। ওরা এখন বৌদ্ধদের মেয়েদের বিয়ে করে, ধর্মান্তরিত করে আর ধর্মবিস্তার ঘটায়। ওদের ব্যবসা-বাণিজ্য দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। ওরা জমি ও বাড়িঘর কিনছে। এর অর্থ হলো বৌদ্ধদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’
উইরাথু বলেন, ‘ওরা যখন বেশি কামাবে, তখন বেশি মসজিদ বানাবে। ... এগুলো হলো শত্রুদের থাকার জায়গা। তাই আমরা অবশ্যই এগুলো ঠেকাব।’
রক্ষকেই ভক্ষক
‘উইরাথুকে গ্রেপ্তার করা উচিত,’ বলছিলেন গণতন্ত্রের দাবিতে ২০০৭ সালের বিক্ষোভের প্রধান নেতা ও জনপ্রিয় ভিক্ষু নেই নেই লুইন। ওই আন্দোলনকে সামরিক বাহিনী কঠোর হাতে দমন করেছিল। নেই নেই বলেন, ‘সে (উইরাথু) যা বলছে, তা বুদ্ধের শিক্ষা নয়। তিনি একজন ভিক্ষু, তিনি মঠের অধ্যক্ষ। কিন্তু তিনি ভয়ংকর। ক্রমে তিনি ভীতিকর ও করুণ হয়ে উঠছেন।’
নেই নেই বলেন, কেবল সরকারই এসব মুসলমানবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘অতীতে গণতন্ত্র ও রাজনীতির কথা বললে ওরা (সরকার) বাধা দিত। আর এখন এসব জ্বালাময়ী ভাষণকে তারা বাধা দিচ্ছে না। উইরাথু একটি প্রভাবশালী মঠের অধ্যক্ষ বলে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। তাই সরকারের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’
ব্যাংকক পোস্টোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা এখনো জানা যায়নি যে ৯৬৯ আন্দোলন ও আশিন উইরাথুর পেছনে করা আছেন। ধারণা করা হয়, উইরাথুর পেছনে আছেন অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কেউ কেউ মনে করেন, সেনাবাহিনীর একটি কট্টর অংশ এদের পেছনে আছে। সেনাবাহিনীর এ অংশটি হারানো ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় এবং দাঙ্গা বাধিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরি করে রাখতে চাইছে। সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হলো, দেশের সরকার উইরাথুকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং সে দাঙ্গা উসকে দেওয়ার মতো ভাষণ চালিয়ে গেলেও সরকার তাঁকে কিছু বলছে না।
পিস কালটিভেশন নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও ৫৬ বছর বয়সী বৌদ্ধ ভিক্ষু আশিন পাম না ওনথা এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘উইরাথু হলো হাতের পুতুল। ও আভিজাত্য ও খ্যাতির লোভে নাচছে।’ আশিন থাম ১৯৮৮ সাল থেকে দেশের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এখন তিনি বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মধ্য সদ্ভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করছেন।
আশিন থাম আরও বলেন, ‘উইরাথু ও তার ৯৬৯ আন্দোলন ঘনিষ্ঠজনদের থেকে সহায়তা পাচ্ছেন।’ ‘ঘনিষ্ঠজন’ বলতে তিনি সামরিক বাহিনীর খুব কাছের ৩০ জন ব্যবসায়ীর একটি সংগঠনকে নির্দেশ করেছেন। এই সংগঠনটিই দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি বলেন, মুসলমানদের হাতে আছে বিপুল সম্পদ এবং এই ঘনিষ্ঠজনেরা সেটি লুট করতে চায়।
আশিন থাম মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, দাঙ্গার পেছনে সেনাবাহিনীর হাত আছে।
বাণিজ্যিক দখল
সংস্কারকরা দাঙ্গা বাধাচ্ছেন, এমন গুজবও আছে বেশ জোরেশোরে। অনেকেই বলছেন, সাবেক সামরিক শাসকের ঘনিষ্ঠজনেরা দাঙ্গা বাধাচ্ছেন। এত দিন তাঁরা ছিলেন ক্ষমতায়, তাই বাণিজ্যের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেননি। এখন ক্ষমতা ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসছে, তাই ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করার প্রয়োজন পড়ছে। তাঁরা চাইছেন, মুসলমান ব্যবসায়ীদের তাড়িয়ে দিয়েএক অর্থনৈতিক শূন্যস্থান তৈরি করতে। তাহলে ওই শূন্যস্থানে তাঁরা জেঁকে বসতে পরবেন। মেখতিলার ৬৭ বছর বয়সী মুসলমান ব্যবসায়ী ওন থুইনও এমনটাই মনে করেন।
দাঙ্গায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া তাঁর মেটাল ওয়ার্কশপে হাঁটাহাঁটি করতে করতে ওন থুইন বলেন, ‘এর (দাঙ্গার) পেছনে ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক উভয় কারণই আছে।’ তিনি বলেন, তাঁরা কয়েক পুরুষ ধরে ওই লাভজনক ব্যবসা করে আসছেন। তাঁর নিজের অনেক বৌদ্ধ বন্ধু আছেন। তাঁদেরই একজন দাঙ্গার সময় তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছেন।
©somewhere in net ltd.