নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তহুরা মরিয়ম মিষ্টি

মিষ্‌টি

মিষ্‌টি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও তার পরিনতি

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relations) বিভাগের মাস্টার্সের একটি কোর্স পড়ছি যার নাম হচ্ছে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বা International Security। কোর্সটি পড়তে গিয়ে পরিচিত হলাম অর্থনৈতিক নিরাপত্তার (Economic Security) ব্যাপারে। এর পূর্বে একটি কোর্স পড়েছিলাম- ‘বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ (Globalization and International Relations), যেখানে একটি পাঠ্যবিষয় আমাকে একটু ভাবিয়ে তুলেছিল আর সেটা হল রপ্তানি ভিত্তিক অর্থনীতি বা Export led Growth। গতকিছুদিন ধরেই ব্যাপার দুটি নিয়ে আমার চিন্তাটি লিখতে বসার জন্য সুযোগ খুঁজছিলাম, আজ করি-কাল করি বলতে বলতে অবশেষে বসলাম।

ঘটনাটি হচ্ছে এমন যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত দুটি ক্ষেত্রের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, তাদের একটি হল তৈরি পোশাক রপ্তানি, যার সাথে আমরা RMG sector নামে পরিচিত। আর অপরটি হল বাংলাদেশ থেকে যেসব শ্রমিক বিদেশে গিয়ে কাজ করছে তাদের প্রেরিত ডলার বা remittance থেকে আয়ের উপর। ২০১২ সালে RMG sector থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় যা মোট রপ্তানির ৮০% এবং ৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার আয়ের উৎস এই খাত (সোর্সঃ New York Times)। অন্যদিকে বাংলাদেশের বার্ষিক আয়ের ১১% আসে remittance থেকে যা দেশীয় মুদ্রাকে ডলারের কাছে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। সুতরাং খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে কোন কারণে যদি যে দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক এবং শ্রমিক আমদানি করে থাকে তাদের অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন বা ধ্বস আসে তখন বাংলাদেশের এই আয়ের উৎসও বন্ধ হতে বাধ্য। ঠিক যেমনটা হয়েছিল পাঁট শিল্পের ক্ষেত্রে এবং সম্প্রতি চা ও চিংড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রেও এমন দেখা গিয়েছে। আবার যখন লিবিয়া থেকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল তখন ফিরে আসা ওই শ্রমিকদের জন্য কোন কর্মসংস্থান বাংলাদেশ সরকার ব্যাবস্থা করতে অক্ষম হয়েছে। যার ফলে বেড়ে গিয়েছে বেকারত্ব এবং নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আর এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণ দেশের বেকারত্তের হার (৪০%-সোর্সঃ ২০১৩ সি আই এ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক) বরাবরই বেশি, এর উপর আবার বাড়তি বোঝার দায়িত্ব নিতে এখনও সক্ষম হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। হতে পারে এটা নিতান্তই তাদের অবহেলা, হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের ব্যার্থতা, আবার সম্পদের স্বল্পতাও এর কারণ হতে পারে। সে যাই হোক, যে কারণে আমি চিন্তিত তা হল বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাপত্তা। বাংলাদেশ সরকারের উচিত বিকল্প এবং নিজস্ব কোন অর্থনৈতিক আয়ের উৎসের ব্যাবস্থা নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা করা, নতুবা অচিরেই এ দেশের অর্থনীতিতে বিশাল কোন ক্ষতি হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বিকল্প ও নিজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে আমরা আয়করের উপর গুরুত্ব দিতে পারি, কারণ আয়কর জাতীয় আয়ের একটি অন্যতম খাত। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পেও উন্নয়নের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কৃষি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে আমরা দেশের অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে তরুণ সমাজকে কৃষিকার্যের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং আত্মকর্মসংস্থানের ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে সাহায্য বাড়াতে হবে। এসব পদক্ষেপ বেকারত্ব দূরীকরণেও অনেকাংশে সাহায্য করবে।

বিশ্বায়নের এই যুগে একটি দেশের অন্য দেশগুলোর উপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, উন্নত দেশগুলো যতটা না উন্নয়নশীল দেশের উপর নির্ভরশীল, তার থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর উপর অনেক বেশি হারে নির্ভরশীল। উন্নত দেশগুলো যতটা উন্নয়ন করে যাচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো অত বেশি তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মত দেশগুলো আস্তে আস্তে মেরুদণ্ডহীন হয়ে উঠছে। যেকোনো সময় এই খুঁটি ভেঙ্গে পড়লে চরম পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলোকে। তবে এর মানে এই নয় যে, আমি প্রগতি এবং উন্নতির বিপক্ষে; এই লেখাটির মাধ্যমে আমি শুধুই একটু সচেতনতা গড়ে তুলতে চাচ্ছি। একটি বিকল্প আয়ের উৎস বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পরাশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করতে সাহায্য করবে এবং অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনবে। ফলস্বরূপ বিভিন্ন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে এবং ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হবে আশা করা যায়। সর্বোপরি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি স্বাবলম্বী দেশের নাগরিকত্ব উপহার দেয়া যাবে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২৫

পাঠক১৯৭১ বলেছেন:






" বিকল্প ও নিজস্ব আয়ের উৎস হিসেবে আমরা আয়করের উপর গুরুত্ব দিতে পারি, কারণ আয়কর জাতীয় আয়ের একটি অন্যতম খাত। "

-বিকল্প হিসেবে আয়কর ?

মানুষ আয়কর কখন দি্তে পারে? আয় থাকলে। ধরে নিচ্ছেন পোশাক শিল্প বা রেমিট্যান্স এর বিকল্প হিসেবে 'আয়কর'; আয়টা হবে কিসের থেকে?


বই পড়ছেন, মাস্টারস করছেন, ভালো; মাথাটাকে জাকে লাগান!

২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৪

আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের বই পড়ে শুধু একটি সার্টিফিকেট পাবেন। সত্য পাবেন না।

পড়াশুনা শেষ করে আবার পড়াশুনা করতে হবে। বর্তমান পড়াশুনা কেন তা' বলেছি। আর তৎপরবর্তী পড়াশুনা হচ্ছে সত্যিকারের জ্ঞান অর্জনের জন্য।

সিলেবাস তৈরী করে তারা যারা দুনিয়া চালায়। তাই ঐ সিলেবাসে দুনিয়া কীভাবে চলে তা' কোন দিনও জানতে পারবেন না। সত্যি বলতে কি - আপনি জানুন তা' তারা চায় না। জানলে তাদের জন্য অসুবিধে। আপনি বোকা থাকলেই তাদের জন্য নিরাপদ। যেমন জনগণ নির্বোধ ও অশিক্ষিত হলেই সরকারের জন্য সুবিধে।

সিলেবাস প্রণেতারাও তাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের "সিলেবাস" ও "ড./প্রফেসর/শিক্ষক" তাদের পকেটে। একদিন বুঝবেন। যদি বুঝতে চান।

আমার কথাগুলো অদ্ভূত হলেও কিন্তু সত্য। হেল ইয়েস!
B-)

৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:০৫

ভারসাম্য বলেছেন: RMG সেক্টরের রফতানী আয় অনেক মনে হলেও, তার সিংহভাগই আমদানী ব্যায় হিসেবে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে বিদেশেই রয়ে যায়। এখন আবার বাংলাদেশের RMG খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদগুলি বিদেশীদের ( বিশেষ করে ভারতীয়দের) দখলে। ফলে RMG খাতের আয়ের বড় একটা অংশ রেমিটেন্স আকারেও বাইরে চলে যাচ্ছে বা থেকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস প্রবাসীরাই।

ভাল লাগল ভিন্নধারার লেখা। +++

৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩৭

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: এখন পর্যন্ত RMG সেক্টর বাংলাদেশের শিল্প খাতে সফল হলেও RMG সেক্টর কাঁচামালের জন্য আমদানি নির্ভর । তাই রপ্তানি আয় অর্ধেকের বেশি আমদানি বাবদ বিদেশে চলে যায় ।

তারপর RMG সেক্টর শক্তিশালী করার জন্য দরকার ফরোয়ার্ড লিঙ্কেজ / ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ( সংযোগ শিল্প ) যেমন ,বস্ত্র , বোতাম , প্যাকিং , বাক্স , সুতা এসব খাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন শিল্প গড়ে উঠছে না ।

আয়কর গুরুত্ব পূর্ণ সেক্টরে পরিনিত হতে পারত যদি সেই রকম আইন থাকত , কেউ আয়কর ফাঁকি না দিতে পারত আর কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া না হত ।

বেশ ভাল লিখেছেন , ভাল পয়েন্ট আউট করেছেন ।



৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩৭

মিষ্‌টি বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনাদের মন্তব্য প্রদানের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.