![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাম তার শাহাদাত হোসেন রবি। চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে। অন্য দিনের মত এদিন ও সে স্কুলে যায়। দিনটি ছিল ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১। ঐদিনই ঘটে যায় তার এই ক্ষনিক জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। তখন বিদ্যালয়ের টিফিন টাইম চলছিল। অন্য সবার মত সে ও মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করে। মাঠের এক পাশে রাখা ছিল একটি ট্রাক। বাচ্চারা সাধারনত গাড়ি দেখলে দৌড়ে যায়, পিছন দিয়ে লাফিয়ে ঝুলতে পছন্দ করে। দূর্ঘটনার কথা তারা হয়ত ভাবে না। খেলার মাঠে সব বাচ্চারা খেলতেছিল। এমন সময় ট্রাকটিতে ড্রাইভার(যথা সম্ভব হেলপারই হবে) চড়ে বসে ট্রাকটি স্টার্ট করল। ট্রাকটি সামনে এগুতে লাগল। আর বাচ্চারা কেউ সাইডে সরে যাচ্ছে, কেউ পিছনে সরে যাচ্ছে। এভাবে ট্রাকটি এগুতে থাকে। ড্রাইভার বেশধারী হেলপারটি ট্রাকটিকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। শাহাদাত হোসেন রবি পিছনে সরতে সরতে দেওয়ালে গিয়ে ঠেকে যায়। আর অমনি ট্রাকটি তার কোমর বরাবর সজোরে চাপ দেয়। ওখানেই বসে পড়ে সে। কোন কাটা ছেড়া কিছুই হয়নি। কিন্তু কি যে হয়ে গেছে তা যতই সময় যেতে লাগল ততই আমারা এখন টের পাচ্ছি। পুরো কোমরের হাড় ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে গেছে। তবে ভাঙ্গার চেয়ে মারাত্মক যে ক্ষতিটি হয়েছে তা হল তার প্রসাবের রাস্তটি ছিঁড়ে গেছে।
প্রাথমিক অবস্থায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডাক্তার একটি এক্সরে করে রিপোর্ট দেখে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পঙ্গু এবং ঢাকা মেডিকেল তাকে ৩ দিনে ৫টি বড় ধরনের অপারেশন করেন। সেই থেকে বিভিন্ন হাসপাতলে ঘুরতে ঘুরতে আজও তার প্রসাবের রাস্তাটি ঠিক হয়নি। দূঃসহ স্মৃতির দিনগুলো ফেব্রুয়ারি আসলে মনে পড়ে। মনে পড়ে যায় যখন ঐসব পথ দিয়ে যাই। কিংবা তাকে যেখানে যেখানে নিয়ে গেছি সেখানে যাই যখন।
এই দূর্ঘটনার মাধ্যমে সমাজের উচ্চবিত্তশালী কিছু মানুষকে খুব কাছে থেকে জানার সুযোগ হয়েছে। তা হল শাহাদাত হোসেন রবিকে যে ঘাতক ট্রাকটি স্কুলে খেলার মাঠে টিফিন টাইমে এক্সসিড্ন্টে করে তার মালিক এলাকার স্বনামধন্য, অনেক টাকার মালিক। দূর্ঘটনার খবরটি আমরা জানার পর থেকে শাহাদাত হোসেন রবির সুচিকৎিসা ও তাকে সুস্থ করার জন্য আমরা আমাদের সাধ্যমত সব চেষ্টা করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছি। আমার অনেক শিক্ষার্থী অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছে তার জন্য। এজন্য আমি তাদের নিকট চির কৃতজ্ঞ। ঘাতক ট্রাকটির মালিকের বিরুদ্ধে অনেক্ই আমাদেরকে মামলা করার জন্য বলেছে। কিন্তু আমরা রবিকে নিয়ে তার চিকিৎসার জন্য সম্ভব সবকিছু করেছি। ট্রাকটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা, এসব বিষয়ে আমাদের কোন আগ্রহ ছিল না। ট্রাকটির মালিক ৩দনি পর প্রথম দেখা করতে আসেন। একমাসের মাথায় ৫০ হাজার টাকা দেন। আমরা নিতে চাইনি। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার অনুরোধে কেবল তা গ্রহন করি। এক মাসে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকার মত ব্যয় হয়ে গেছে । ভবিষ্যতে আরও হবে। এর মধ্য খেকে ৫০ হাজার টাকা! যাই হোক মালিক শুধু টাকাটিই দিয়েছেন তেমন কোন খোঁজ খবর নিতেন না। দুই মাসের মাথায় আবার একদিন ২৫ হাজার টাকা দিলেন। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তাও গ্রহন করি। এখানেই শেষ। সেই থেকে আজ অবধি ট্রাকের মালিক একটি বারের মত মোবাইল ফোনে পর্যন্ত খবর নেননি। পাশাপাশি গ্রামে বাড়ি, ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে বাড়িতে যান। একটি বারের জন্য রবিকে দেখতে যাননি। হায়রে মানুষ! আজও আমরা রবির চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের দ্বারে দ্বারে। জানি না আল্লাহ কবে তাকে পরিপূর্ন সুস্থ করবেন। সবাই দোয়া করবেন রবি যেন পরিপূর্ন সুস্থ হয়। এখনও আমার কারো দোষ দিব না। হয়ত এটাই ছিল রবির নিয়তি।
গত এক সপ্তাহ আগে তোলা ছবি।
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:২৬
তছলিম উদ্দিন বলেছেন: দিনটি ছিল ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১১
২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৭
রাফছানজানি বলেছেন: দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলেন।
৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৬
DJ টোকাই বলেছেন: দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৮
মৈত্রী বলেছেন: বাংলাদেশের কোন স্কুল শুক্রবার দিন খোলা থাকে???