নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

The only person u should try to be better than, is the person u were yesterday.

ত্রিভকাল

আমি গ্রামের একজন সহজ সরল প্রথমশ্রেণীর আবুল, যে কিনা ছিঁড়া লেপের তলায় শুয়ে কোটিপতি হবার স্বপ্ন দেখতে ভীষণ ভালোবাসে। কৃপণ, কাইষ্টা মানুষের নাকি অনেক টাকা পয়সা হয়, সে হিসাব অনুযায়ী আমি অক্সফোর্ড কোটিপতি হবো। নিজের টাকা নিজেই খাইয়ম .... ফেইসবুক লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/Sabbirahmed069 ওয়েবসাইট লিন্ক : http://bkadda.blogspot.com http://www.trivokal.com http://www.votku.com htttp://www.likilose.com http://trivokal.wordpress.com/ http://www.vokalab.com

ত্রিভকাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অসম্পূর্ণ স্মৃতি...

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১৩

গত বছরের ১২.১২.১২ তে আমি ভার্সিটির শেষ ক্লাসটি করেছিলাম। ক্লাস শেষে কেন জানি ইচ্ছে হল হেঁটে হেঁটে বাসায় আসার। ভার্সিটি থেকে বাসা আবার বেশ খানিকটা দূরত্ব, প্রায় ৫ কিলোমিটার হবে। অনেকদূরই বলা চলে, তবে আজ যেহেতু আমার শেষ ক্লাস তাই হেঁটে হেঁটে আসার সময় ভার্সিটির স্মৃতিগুলোই মনে করা উচিত। তাই আমিও শুরু করেছিলাম হাটা। কিন্তু আপনি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন কিনা জানি না, আর তা হচ্ছে আপনি যখন যা প্ল্যান করে চিন্তা করতে চাইবেন, তা কখনোই আপনার মাথায় আসবে না। আমারও আসেনি, প্রতিদিনের মতোই হাজার হাজার চিন্তা মাথায় আসছিল, তবে সেগুলোর মধ্যে একটিও ভার্সিটি রিলেটেড না। সব চিন্তা-ভাবনা ছাপিয়ে কেন জানি আমার প্রথমদিনে স্কুলের কথাই মাথায় আসছিল বার বার...



আমার আপনাদের মতো কোন বন্ধু বান্ধব নেই। ভার্সিটির পুরো চারটি বছর আমি একা একা ঘুড়েছি. ভার্সিটির কোনায় কোনায় একা একা বসে থেকেছি, একা একা ক্লাস করেছি। বাসাতেও এসেছি প্রতিটাদিন একা একা... যদিও বিকেলে ক্লাস শেষে বাসায় ফিরার সময় দেখতাম আমার সাথে হাজার হাজার মানুষ ব্যাস্ত হয়ে হাঁটছে বা ঘাড় ফিরিয়ে দেখতাম বাসের জন্য অপেক্ষারত মানুষদেরকে। আমি তাদের দেখে বুঝতাম তারা শুধু অপেক্ষাই করছে না, শঙ্কিত হয়ে ভাবছে আদো তারা তাদের কাঙ্গিত বাসটিতে উঠতে পারবে কি না! মাঝে মাঝে আমিও তাদের ভীড়ে অপেক্ষা করতাম। বাসে উঠার সময় অপেক্ষারত ক্লান্ত শ্রান্ত দেহের মানুষগুলো আমার মতো তরতাজা কুঁড়ের সাথে পেরে উঠতো না। বাসে উঠার পর জানলার গ্লাস গেলে দেখতাম সেইসব হেরে যাওয়া মানুষদের মুখগুলো। অবাক হয়ে লক্ষ্য করতাম, বাসে উঠতে না পারা মানুষগুলোর বেশীরভাগ হাসছে! এই হাসির একটা আলাদা নাম আছে আমার কাছে, আর সেটা হচ্ছে ‘ভ্যাবদামার্কা হাসি’। এই ‘ভ্যাবদামার্কা হাসিতে’ দুঃখবোধ যেরকম থাকে, সেরকম থাকে পরিহাস। নিজের প্রতি, দেশের প্রতি, রাস্তার প্রতি, ৬ নম্বার বাসের প্রতি এই পরিহাস মিশ্রিত থাকে। আমিও হাসি এই ধরণের ভ্যাবদামার্কা হাসি, যখন দেখতাম ভার্সিটিতে হালকা পাতলা পরিচিত কোনো মুখ গ্রুপ বেঁধে আড্ডা দিতে দিতে আমাকে দেখে ডাক দেয় হাত বাড়িয়ে। আমি তখন সেই ‘ভ্যাবদামার্কা হাসি’ হাসতে হাসতে এগিয়ে যেতাম তাদের দিকে। তবে তখন সেই ভ্যবদামার্কা হাসিতে পরিহাস মিশ্রিত থাকতো না। যেটা মিশ্রিত থাকতো সেটা হচ্ছে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রস্তুতজনিত সমস্যা’। আমার ধারণা এই ধরণের পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকেই কম বেশী পরতে হয়েছে। ধরুন আপনি পকেটে দশটাকা নিয়ে ঘুরছেন, কিভাবে কি করবেন তা নিয়ে ভাবছেন। ঠিক সে সময় যদি কোনো ফকির আপনার কাছে এসে ভিক্ষা চায়, আপনি তখন সেই ভ্যাবলামার্কা হাসিটি দিয়ে মাথা নাড়বেন। এটাই হচ্ছে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রস্তুতজনিত সমস্যা’। আর সেই হালকা পরিচিত আড্ডায় মগ্ন মানুষটি যখন কোল্ড ড্রিংস আর সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে আমাকে অনুরোধ করতো খাওয়ার জন্য, আমি তখন সেই হাসিটি দিয়ে বলতাম “একটু আগেই খেলাম মাত্র...!!”। এটাই হচ্ছে আমার জন্য ‘অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রস্তুতজনিত ভ্যাবদামার্কা হাসি’। আপনাকে আরেকটি জিনিস বলি, আর সেটা হচ্ছে যখন দেখবেন আপনার পকেটে টাকা নাই তখন রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় রাস্তার দু’পাশে যা ই দেখবেন সবই আপনার খেতে ইচ্ছে করবে। হাঁটছেন, দেখলেন সিঙ্গারা বানাচ্ছে... খেতে ইচ্ছে করবে। হাঁটছেন, দেখলেন জিলাপি বিক্রি করছে... খেতে ইচ্ছে করবে। হাঁটছেন, দেখলেন আস্ত তরমুজ বিক্রি করছে... তা ও খেতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু দেখা যাবে আপনি হয়তো ব্যাক্তিগতভাবে তরমুজও পছন্দ করেন না আবার জিলাপিও না। আমিও এসব পছন্দ করি না। তাই আমি কিনতাম ৫ টাকার বাদাম। বাদামের নাকি অনেক পুষ্টিগুণ। বাদামে রয়েছে ‘চর্বি ও প্রোটিন’, তবে খুব বেশী ভিটামিন নেই এতে। তবে পটাশিয়াম রয়েছে প্রচুর। জেনে রাখা ভালো, ১.৫ আউন্স বাদামে রয়েছে ২৪৯ গ্রাম ক্যালোরী, ২১.১ গ্রাম ফ্যাট এবং ১০.১ গ্রাম প্রোটিন। বাদামে এতোকিছু থাকতে সিঙ্গারা বা জিলাপি আমি কেন খাব বলুন তো ?



শেষ যেদিন বাসায় ফিরছিলাম ভার্সিটি থেকে, সেদিনও বাদামওলা খুজতেছিলাম মূল ফটক হতে বের হয়ে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, সেদিন আমি একটি বাদামওলাও দেখতে পায়নি। এটা যদি কোনো মুভির দৃশ্য হতো তাহলে হয়তো দেখা যেত মূল চরিত্র ভার্সিটির সামনে থেকে বাদাম কিনে বৃষ্টির মধ্যে সে আর তার প্রিয়তমা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে অথবা এটা যদি আমার গল্প না হয়ে আপনার গল্প হতো তাহলেও হয়তো দেখা যেত মূল চরিত্রকে ঘিরে তার বন্ধু-বান্দবরা মূল ফটক থেকে হৈ হোল্লব করে বের হয়ে বাদাম কিনে খাচ্ছে। এক একটা বাদাম মুখে দেওয়ার পর বাদামের খোসা একজন আরেকজনের গায়ে ছুড়ে মারছে। যার গায়ে ছুড়ে মারছে, সে কট মট করে তাকিয়ে তার বন্ধু কে দৌড়ানি দিচ্ছে... আমার সাথে শেষদিন এসবের কিছুই হয়নি। আমি সেদিন বৃষ্টিতে প্রিয়তমার হাত ধরেও হাটতে চায়নি, বন্ধুদের সাথে হৈ হোল্লড় করেও শেষ দিনটি উদযাপন করতে চায়নি, আমি চেয়েছিলাম সামান্য ৫ টাকার বাদাম খেতে খেতে বাসায় হেঁটে আসার জন্য...



একা একা মনে মনে বাদাম চিবুতে চিবুতে ভাবছিলাম আমার প্রথম স্কুলে ভর্তি হউয়ার দিনটির কথা, ১৯৯৫ সালের কথা। আমার বাবা রাঙ্গামাটিতে বদলি হয়। পাহাড়ের উপর বাসা, উপরে টিনশেড আর পাশে দেয়াল, সামনে পিছনে অনেক জায়গা। আমার বয়স তখন ৫ বছর, সারাদিন বাসার বাউন্ডারিতে ছোটাছুটি করি। এই টাংকির উপর উঠি তো, এই পেয়ারা গাছে। তবে ছোটাছুটি বন্ধ নেই। তবে আমি বেশীরভাগ সময় পিপড়া নিয়েই খেলতাম। রাঙ্গামাটিতে আবার অনেক ধরণের পিপড়া আছে। এক ধরণের পিপড়া আছে যার হুলে খানিকটা বিষ থাকে। গায়ে উঠা মাত্র হুল ফুটিয়ে দেয়। যার বিষে মারাত্মক ক্ষতি না হলেও অনেকখানি জায়গা ফুলে যায় আর অনেকক্ষণ ধরে জ্বলা ধরে থাকে। আবার আরেক ধরণের পিপড়া আছে যেটা সব জায়গাতেই দেখা যায়। মাথাটা মোটা, দুটা দাত থাকে আর মাথার দু'পাশে থাকে দুটি বড় বড় চোখ। আমার এই বড় বড় চোখওলা পিপড়া গুলোই ভালো লাগতো বেশ। তাই ম্যাচ বক্সে করে চার পাচটা পিপড়া নিয়ে ঘুরতাম সারাক্ষণ। বাসার সামনে কালবৌশাখী ঝড়ে হেলে পরা জাম গাছেটির ডালে হেলান দিয়ে পিপড়া নিয়ে খেলতাম বেশীরভাগ সময়। দুই হাতে থাকতো বড় বড় দুইটি পিপড়া, একটাকে দিয়ে আরেকটাকে কামড় দেওয়াতাম। তখন জানতাম না যে প্রাচিন রোমের এরিনাতে গ্লাডিয়টরটা একে অপরকে ঘায়েল করতো যেকোনো একজনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। আর সেইসব লড়াই প্রাণভরে উপভোগ করতো রোমের শাসকেরা। ছোটবেলায় এই বিষয়টি আমার না জানা থাকলেও ‘পিপড়া’ গুলো নিয়ে আমি এভাবেই খেলতাম। আবার বাবার ড্রয়ার থেকে চুরি করা আতস কাঁচ দিয়ে রোদের তীব্র আলো দিয়ে মেরে মজা পেতাম হুলওলা পিপড়াগুলোকে। এভাবে মেরে ফেলতাম দেখে আবার ভেবে বসবেন না যে আমি অনেক নিষ্ঠুর। ‘পিপড়া’ আমি কখনোই ঘৃণা করতাম না, কারণ সেই সময়ের দিনগুলোতে এগুলাই ছিল আমার খেলার একমাত্র উপকরণ বা আমার খেলার সাথী বা আমার পরম বন্ধু। যদিও তখনো ‘বন্ধু মানে কি?’ তা আমার জানা ছিল না, তারপরও কেউ যদি তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করত ‘কিছু বন্ধুর নাম বলার জন্য’, আমি হয়তো কারো নাম বলতে পারতাম না ঠিকই তবে আঙ্গুল উচিয়ে নিশ্চয়ই পিপড়াগুলোকেই দেখাতাম...



একদিন শুনলাম আমি স্কুলে ভর্তি হতে যাচ্ছি। সরাসরি ক্লাস ওয়ানে, কারণ রাঙ্গামাটিতে নার্সারী, কেজি টাইপের স্কুল অনেক দূরে। আর আমরা থাকতাম পর্যটনের কাছাকাছি। তাই কাছের একটা স্কুলে ভর্তি হতে হবে, অল্প বয়সের আমাকে দূরে পাঠানো যাবে না। কাছাকাছির যে স্কুলটি ঠিক করা হলো, তা ও হচ্ছে বাসা থেকে ৩ কিলো দূরে। স্কুলের নাম 'দক্ষিণ বালিকা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় '। 'উচ্চ বিদ্যালয় 'লেখা থাকলেও স্কুল ছিল ক্লাস ৫ পর্যন্ত, আর 'বালিকা 'লেখা থাকলেও কিছু বালকেরাও পড়তো ওখানে। আর আমি ছিলাম সেখানকারই গুটিকয়েক বালকের একজন।



প্রথম স্কুলে যাবার দিনের কথা এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠে। নতুন স্কুল ড্রেস পরে আমি আর আমার বড় বোন আমাদের বাবার পিয়নের সাথে স্কুলের দিকে হেটে রওনা দিয়েছিলাম। রাঙ্গামাটিতে রিকশা চলে না তাই হেটে হেটেই যেতে হয়েছিল আমাদের। স্কুলে যাওয়ার পর আমাকে শূন্য একটি ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল আমাদের পিয়ন। একটু পর দেখলাম একটা ছেলে এসেছে। বসেছে ঠিক আমার পিছনের বেঞ্চে। একপর্যায়ে সে আমাকে তার নাম বলল। জানলাম প্রথম স্কুলের প্রথম ক্লাসে আমার সাথে প্রথম যে ছেলেটার পরিচয় হলো, তার নাম হচ্ছে 'মানিক '। নাম বলার পর সে আমাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিল। তাই আমিও খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকলাম তাকে। দেখলাম মানিক এর গায়ে কোন স্কুল ড্রেস নেই, কোন ব্যাগও নিয়ে আসেনি সে। গায়ের শার্ট ময়লা, যার মাত্র ২ থেকে ৩ টা বোতামই আছে। তাই নিচের দিকে শার্ট দুইদিকে ছড়িয়ে তার পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। তখন শীতকাল চলছিল কিনা মনে নেই কিন্তু মানিকের নাক দিয়ে যে 'হিঙ্গিস ' উকি দিচ্ছিল একটু পর পর তা আমার স্পষ্ট মনে আছে। মানিক একসময় আমাকে প্রথম যে কথাটা বলেছিল তা হলো,

'নতুন আইছো? '

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই, সে বলল "কলা আঁকতে পারোনি? "

আমি 'পারি না 'বলতেই সে বলল, "কৃষ্ণা দিদিমণি তাইলে তো তোমারে মাইরা ফাডাইলাইবো, আইজকা কৃষ্ণা দিদিমনির ক্লাস আছে"

আমি আর কোন প্রশ্নের অপেক্ষা না করে ভ্যা করে কেদে দিয়েছিলাম।



একা একা রাস্তা দিয়ে হাটার সময় ঐ দিনের ঘটনাটা মনে পড়ার পর নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি এসে পরেছিল... আর ঠিক সেই সময়টাতেই আমার চোখ থেকে দু তিন ফোটা করে জল গড়িয়ে পরতে থাকে গাল বেঁয়ে। যদিও আমি জানি আমি এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি, আমার ভার্সিটির শেষ ক্লাস করে এসেছি, আমার কান্না করাটা বেমানান... তারপরও কাঁদতে কেন জানি খুব ভালো লাগছিল... বাদামওলাকে খুজে না পেলেও আমি বাদাম খাচ্ছিলাম মনে মনে, বৃষ্টি না পরলেও বৃষ্টি পড়ছিল আমার গাল বেঁয়ে...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:২৩

বোকামন বলেছেন:
কিছু শৈশবস্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো .....।
খুব সুন্দর লিখেন আপনি।।

[১+]

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.