নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

The only person u should try to be better than, is the person u were yesterday.

ত্রিভকাল

আমি গ্রামের একজন সহজ সরল প্রথমশ্রেণীর আবুল, যে কিনা ছিঁড়া লেপের তলায় শুয়ে কোটিপতি হবার স্বপ্ন দেখতে ভীষণ ভালোবাসে। কৃপণ, কাইষ্টা মানুষের নাকি অনেক টাকা পয়সা হয়, সে হিসাব অনুযায়ী আমি অক্সফোর্ড কোটিপতি হবো। নিজের টাকা নিজেই খাইয়ম .... ফেইসবুক লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/Sabbirahmed069 ওয়েবসাইট লিন্ক : http://bkadda.blogspot.com http://www.trivokal.com http://www.votku.com htttp://www.likilose.com http://trivokal.wordpress.com/ http://www.vokalab.com

ত্রিভকাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ত্রিভকালের প্রান্তরে; চ্যাপ্টার ১: সাইকেল

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০২





‘Man only likes to count his troubles, but he does not count his joys.’



উপরের কথাটা আমার না, এটা হচ্ছে দস্তয়েভস্কি বলে গিয়েছেন। আমরা নাকি আমাদের দুঃখের কথাগুলো বেশী স্বরণ করি। কথাটি সত্য। আমি গুণে গুণে বলে দিতে পারবো, আমি ঠিক কবে, কখন, কিভাবে, কার দ্বারা কষ্ট পেয়েছিলাম। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে রাত ১১ টা ৩৯ মিনিটে তন্দ্রা আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল

“আমি শুনবো... আমি বাবার কথা শুনবো...”



কথাটি শোনার পরপরই আমার মাথায় অন্য সবার মতো আকাশ ভেঙ্গে পরেনি। ৭ বছরের তিলে তিলে গড়ে উঠা সম্পর্কের শেষ ডিক্লারেশনটি তন্দ্রার মুখ থেকে শোনার পর আমার প্রথম যে কথাটি মাথায় এসেছিল তা হচ্ছে ‘এখন কয়টা বাজে... ঠিক কয়টা বাজে...’। সময়টা জানা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ সেদিনের পর থেকে যতবারই বছর ঘুরে এই দিনটি আসবে, আমাকে ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে পুরনো স্মৃতিগুলো হাতরাতে হবে...



তবে দস্তয়েভস্কির কথা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ আমি এখনো মনে করতে পারি সেই দিনটির কথা যেদিন আমি প্রথমবারের মতো তন্দ্রাকে দেখেছিলাম। ২০০৫ এর মে থেকে জুন এর মাঝামাঝি কোনো এক সন্ধ্যায় দেখেছিলাম তাকে। সঠিক তারিখটি আমার মনে নেই, কারণ আমি জানতাম না যে এই মেয়েটার সাথে আমার একদিন সম্পর্ক হবে, ছাঁদে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতে হবে, তারপর একটু একটু করে কাছে আসতে হবে, একটু একটু করে কাছে আসার পর পরই বাসা থেকে কথা শুনতে হবে, বাসা থেকে কথা শোনার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে, জেদের বসে নিজের পা নিজেকেই ভাঙ্গতে হবে, দীর্ঘ সময় চুপচাপ সব সহ্য করার পর আবার সেই সম্পর্কে জড়াতে হবে...



আমারও স্পষ্টই মনে আছে সেই দিনটির কথা, যেদিন আমি প্রথমবারের মতো তন্দ্রাকে দেখেছিলাম আমার বোনের রুমের চেয়ারে বাম পা উঠিয়ে সেই পায়ের হাটুতে মাথা রেখে একগাল হাসি দিয়ে সবার সাথে কথা বলছে। সাদা ফতুয়া আর নীল জিন্সে তাকে অপ্সরীর চাইতেও একটা ‘মাল’ লাগতেছিল। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, আমি ‘মাল’ ই বলেছি। এটা কোনো সিনেমা বা বইয়ের নায়ক নায়িকার দৃশ্য না যে, প্রথম দর্শনেই তন্দ্রাকে আমার জনম জনমের সাথী মনে হচ্ছিল। তাকে আমার ‘মাল’ ই মনে হচ্ছিল। আমার অন্ধকার করে রাখা রুম থেকে তাকে দেখছিলাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, দেহের প্রতিটি বাকে আমার চোখ পড়ছিল, আর হিসাব করছিলাম দেহের ঠিক কোন জায়গায় কতটুকু চর্বি আছে, আর কতটুকু মাংস আছে, মাংসের অনুপাতে কি চর্বি বেশী না চর্বির অনুপাতে মাংস ? হিসাব করার পর আমার বাল্যবন্ধু শুভ্রকে ফোন করেছিলাম ‘একটেল জয়’ সিম দিয়ে। সেই সময় আবার একটেল বাংলাদেশের কাপলদের জন্য একজোড়া ফ্রি সিম এর অফার ছেড়েছিল। অফারটির নাম হচ্ছে ‘একটেল জয়’। প্রথম একমিনিটের টাকা কেটে রাখার পর ফ্রি মিনিট শুরু হয়ে যায়। শুভ্র আর আমি সারাদিন কথা বলতাম মোবাইলে। যে কেউ দেখলে ভাবতো যে আমরা হয়তো গে, কিন্তু আমরা মোটেও সেরকম ছিলাম না। আমার স্কুলের তিনজন বন্ধু ছাড়া আর কোনো বন্ধু ছিলো না। আর কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে এস এস সি দিয়েই দেশের বাড়ি চাদপুরে চলে এসেছিলাম আমরা। তাই নতুন পরিবেশের নতুন কোনো বন্ধুই হয়ে উঠেনি আমার। আর তাই শুভ্রর সাথে দিন রাত কথা বলা ছিল আমার ডেইলি রুটিন। চার্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কল অনলাইনে থাকতো। তন্দ্রাকে প্রথমবার দেখার পর শুভ্রকে বলেছিলাম



- মামা, আমগো বাসায় তো মাল আইছে রে একটা...

- কস কিতা !! কেডা এইডা ?

- বড় বোনের বান্ধুবী, চাদপুরে আমাদের তিন তালার ভাড়াটিয়ার কি বলে হয়। হেগো বাসায় বেড়াইতে আইছে।

- তোর বোনের বান্ধুবী আবার ভাড়াটিয়ার আত্মীয় !! বুঝাইয়া ক...

- আরে বেড়াইতে আইছে ভাড়াটিয়ার বাসাতেই, আর আসার পর বোন দেখে তার লগে নাকি কলেজে একলগে পড়ছিল।

- কিরাম কিরাম ?

- কইছ না মামা, ৩:১ এর এক অপূর্ব সংকলন। দেহের তিনভাগ হইতাছে গিয়া তোর মাংস আর এক ভাগ হইতাছে গিয়া তো চর্বি। সিনার মাংস খাইতে যেইরাম টেষ্ট, হেইরাম টেষ্ট পাইবি খাইয়া।

- জাস্তি! জাস্তি!

- অ... মোনডা চাইতেছে বাথরুমে যাইয়া ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পীর-ফকির, গুন্ডা-বদমাইশ, সব ভাসায়া দেই কমোডে...

- যা যা ত্যাগ কইরা আয়... আয়া ফোন দিস...



তন্দ্রার পুড়া নাম হচ্ছে ‘তন্দ্রা বকসী সুমি’। এখন মনে হয় আর এই নাম নেই। বিয়ের পর মেয়েদের নামের সাথে তার কর্তার নামও জুড়ে যায়। সেই হিসাব অনুযায়ী তার নাম হতে পারে, ‘তন্দ্রা পল’ বা ‘তন্দ্রা চক্রবর্তী’ বা ‘তন্দ্রা সেনগুপ্ত’ বা ‘তন্দ্রা ভট্টাচারিয়া’ বা ... তবে আমার কাছে তার কোনো নির্দিষ্ট নাম ছিলো না, আমার যখন যা মাথায় আসতো আমি তখন তাকে সেই নামেই ডাকতাম। একদিন বাথরুম থেকে আসার পর নাম দিলাম ‘গুয়ের পোটলা’, টেলিভিশনের এড দেখার পর একদিন নাম দিয়েছিলাম ‘নিপ্পন টিভি’, চাঙ্কি পান্ডের মুভি দেখার পর হয়েছিল তা ‘চিঙ্কি পান্ডে’, সারাটাক্ষন ‘একটু কথা বলবো’, ‘একটু কথা বলবো’ বলার জন্য তা হয়েছিল ‘একটু মুনশী’, সারাক্ষন সবার সাথে গণ্ডগোল করার জন্য তা হয়েছিল ‘ভং চং গিট্টু মাষ্টার’, সারাক্ষন আমার উপর জোড়জবর দোস্তি করতো বলে হয়েছিল ‘পকপকি গুন্ডা’... ‘চৌধুরী সাহেব’... ‘সোট্ট বাবু পাতলাপায়খানা’... আরো কত শত হাজারো নাম...



আজ আর হয়তো তাকে কেউ এসব নামে ডাকে না, বা সে হয়তো নতুন নতুন আরো কিছু নাম পেয়েছে যে নাম ধরে তার কাছের মানুষ ডাকে এখন। তবে চাঁদপুরে যেবার বেড়াতে গিয়েছিল, আমি তখন তাকে প্রথম প্রথম ‘তন্দ্রাপু’ বলে ডাকতাম। তিনি আমাদের বাসায় আমার বোনের সাথে, আমার মায়ের সাথে এসে গল্পগুজব করতো। একদিন কলেজ থেকে এসে দেখলাম তিনজন মিলে লুডু খেলতেছে। আমি আসাতে আমার মা বলল, ‘সাগর আয়, লুডু খেল আমাদের সাথে... জোড় জোড় কইরা খেলি’। আমি আর আমার মা, তন্দ্রাপু আর আমার বড় বোন তৃষাপু। সেই প্রথম লুডু খেলায় কারা জিতেছিল আমার জানা নেই, কিন্তু সেই লুডু খেলা দিয়েই যে আমার জীবনের সাপ লুডু শুরু হয়েছিল আমার তা স্পষ্ট মনে আছে।



আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলাম যে সে আসলে একটা ‘মাল’ না, তার একটা নাম আছে। আর সেটা অবশ্যই ‘তন্দ্রাপু’ না, সেটা হচ্ছে শুধু ‘তন্দ্রা’, ‘পু’ অনুসর্গ যোগ করার লজিক আমি আর তখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই সম্ভোধন করাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। শুধু একা একা থাকলে ‘ম্যাডাম’ বলে ডাকতাম। একদিন জানলাম আমার ম্যাডামের জন্মদিন আসছে, কিছুতো দেওয়াই লাগে। কলেজে পড়ি, আর বাসা থেকে আমাকে ১ টাকাও দেয় না। কি করবো... কি করবো... ভাবতে ভাবতে মা কে বললাম, “আম্মু সাইকেল টা তো চালানো হয় না, এটা জং ধরে যাওয়ার আগেই বিক্রি করে দেওয়া মনে হয় ঠিক হবে”। আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিচ্ছুক্ষণ। তার তাকানোর স্টাইল খারাপ, চোখও খারাপ। চোখ দেখলেই মনে হয় মনের সব কথা যেন পড়ে ফেলেছে এক নিমিষে। আমাকে বলল “কি কিনার শখ জাগছে ?” আমি আমার মনের কথা লুকানোর জন্য বললাম, “একটা এমপিফোর প্লেয়ার কিনবো”। মা বলল, “আচ্ছা”



ছোটবেলা থেকে আমার মা আমাকে কারো সাথেই মিশতে দেয়নি। কারো সাথে না বলতে কারো সাথেই না। আমার রুম, আমার কম্পিউটার, আর গল্পের বই ছিল আমার জগতের তিনটি এবং শুধুমাত্র উপাদান। স্কুল আর প্রাইভেট ছাড়া আমার বাহিরে যাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিলো। অনেকটা ক্যু জারি করার মতো। ক্যু জারি করলে দেশের মানুষকে কখন কি করতে হবে তা যেমন বলা লাগে না। আমাদের ভাইবোনদের কেও কখন কি করতে হবে তা কখনো বলা লাগেনি। আমাদের মা আমাদেরকে মাত্র একটা ওয়ার্ড শিখিয়ে দিয়েছিল। আর সেটা হচ্ছে, ‘জানি না’



- বাবু তোমার আব্বু কি বাসায় আছে ?

- জানি না

- বাবু তোমার আব্বু বাসায় থাকে কখন ?

- জানি না

- তোমাদের বাসায় কাজের মানুষ আছে ?

- জানি না

- বাহ! তোমার জোতাটাতো অনেক সুন্দর , কোথা থেকে কিনেছো ?

- জানি না, আম্মু জানে

- তোমার নাম কি ?

- ‘জা... সাব্বির আহমেদ সাগর’



সারাদিন বাসায় থাকতাম, আর বাহিরের কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে ঐ একই উত্তর দিতাম। আসলে মাঠে ঘাটে খেলাধূলা করতে কিরকম লাগে তা আমি কখনোই বুঝতে পারিনি তাই বাসার বাহিরেও যে আলাদা একটা দুনিয়া আছে তা আমার জানা ছিলো না। কিছুটা জানতে পারলাম সেদিন যেদিন কিনা আমি প্রথম সাইকেল পেলাম... সাইকেল এ চড়ে যেদিন প্রথম চালিয়েছিলাম দেহের সবটুকু শক্তি উজার করে... ছোট ছোট পা দিয়ে প্যাডেল মেরে যখন এক একটি রিকশা পার করছিলাম তখন আমার অনূভতি যে কিরকম ছিল, তা আমি কখনোই বুঝাতে পারবো না। তাই যতক্ষণ সাইকেল চালাতাম, ততক্ষণই আমি ছিলাম স্বাধীন। আর এজন্যই সাইকেলটি ছিল আমার প্রাণের বন্ধু।



সেই সাইকেল যেদিন বিক্রি করে দিচ্ছিলাম, আমার বুকভরে কান্না আসছিল... মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেঁদে দিবো সাইকেল ক্রেতার সামনে। কিন্তু আমি জানতাম কাঁদলে চলবে না। একেতো আমি কলেজে পড়ি, আর দ্বিতীয়তো আমার টাকার দরকার... ম্যাডামকে জন্মদিনের গিফট কিনে দিতে হবে যে...



কি কিনেছিলাম জানেন ?

২২০০ টাকা দিয়ে একটা ৩২ এমবি মেমরি কার্ড। যা কিনা ম্যাডামের মোবাইলে সাপোর্ট করবে ভালোভাবে...



.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।



আজাইড়া গল্পের আজাইড়া 'প্রস্তাবনা' পড়তে চাইলে ক্লিক করুন নিচের লিংকে

ত্রিভকালের প্রান্তরে : 'গু' সমাচার ও একজন আবুলের গল্পের প্রস্তাবনা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৯

ময়না বঙ্গাল বলেছেন: আপনার আবেগীয় ব্যাপারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি- আমি যেন আপনার মধ্যে গল্পকার কথাসাহিত্যিকের প্রবনতা অনুভব করলাম। লেখার প্রচেষ্টা নিন। শুভ কামনা সব সময়।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৩

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: অনেক ভালো লাগল লিখা। মাঝখানে যদিও একটু নেস্টি নেস্টি!! গল্পটা কেন জানি সত্যি সত্যি মনে হয়। আসলেই কি তাই??

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো!

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩০

আমিনুর রহমান বলেছেন:




সহজ ভাষায় লিখা পড়তে ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.