নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

How the Universe formed

উপলব্দি প্রকাশ করি নির্ভয়ে

ড. মোস্তাফিজুর রহমান

I love to write. I like to enjoy fact and knowledge.

ড. মোস্তাফিজুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরু পার্ট-২

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৬





আজ দু’দিন হল আমি ঘর হতে বের হই নি। গতকাল বড় খালা এসেছিল আমাকে নিয়ে একটা কাজে বের হবে বলে। কিন্তু কোন ভাবেই আমি রাজি হইনি। বিরক্ত হয়ে শেষে বললাম, তোমার কি কাজ বল আমি আগামীকাল করে দেব। পরে বাধ্য হয়ে বললেন আমার ইচ্ছে ছিল তোর সাথে যাব। যাই হোক তুই একটু ফ্লাইং ক্লাবের খবর নিয়ে আসবি। মানহা এই বছর ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে। তোর খালুর ইচ্ছে তাকে পাইলট বানাবে। কখন ভর্তি, কি কি শর্ত, কত সময় লাগবে, কত খরচ ইত্যাদি সব তথ্য লাগবে। তোর খালুর বিশ্বাস তুই সব পারবি। তোর খালু তোর অন্ধ ভক্ত। বললাম খালা, মিথ্যা বলছো কেন? খালু মোটেই বলেন নি। সব তোমার কথা। বড় খালা কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বের হয়ে গেলেন। পেছন থেকে বললাম- খালা চিন্তা করো না। আগামীকাল সব তথ্য পেয়ে যাবে। আমার সামান্য জানা আছে ফ্লাইং একাডেমী আছে এয়ারপোর্টের কোথাও। সোজা চলে গেলাম এয়ারপোর্ট। কুলি, ট্রলিম্যান থেকে শুরু করে ইন্সপেক্টর, নিরাপত্তাকর্মী, পুলিশ, অফিসার কেউই বাদ যায়নি সবার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করলাম। জানা গেল এয়ারপোর্টের সর্বদক্ষিণে সীমানাঘেঁষে ফ্লাইং একাডেমী। মূল টার্মিনাল থেকে বের হয়ে দক্ষিণের রোডে যেতেই বাধা পেলাম। পুলিশকে বোঝাতে চাইলাম, কিন্তু তারা বলল বেশি বকাবকি করলে ধরে নিয়ে যাব। এবার চেষ্টা করলাম ভিন্ন পথে। হাঁটতে হাঁটতে খিলক্ষেত চলে এলাম। ঢোতা রাস্তা পেলাম না। এমন অবস্থা রিক্সা নেয়ার সুযোগ নেই। আবার ফিরতি পথ ধরে হাঁটতে লাগলাম। দুই টাকা দিয়ে একটি পত্রিকা কিনলাম। হাঁটতে হাঁটতে পড়তে লাগলাম। ভি ভি আই পি টার্মিনালের গেইট বরাবর রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। বুঝতে পারলাম প্রধানমন্ত্রী কোথাও যাবেন বা কোথাও হতে আসবেন। সেজন্য এত কড়াকড়ি। হঠাৎ দেখলাম একজন এয়ারফোর্স অফিসার ও একজন বিমান কর্মকর্তা কথা বলতে বলতে হেঁটে মূল রাস্তা হতে ভেতরের দিকে যাচ্ছে। তাদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকলাম। ঠিক সে সময়ে পুলিশ ভেতরে ঢোকার চেষ্টারত ৩জন মানুষকে পিটিয়ে বের করে দিচ্ছে। আমাকে কিছুই বলল না। ভাবল অফিসারদের সঙ্গী। এদিকে দুই অফিসার কথা বলছিল নিরাপত্তা বাড়াবাড়ি নিয়ে। ইন্দিরা গান্ধি মারা গেছে কিভাবে, জিয়াউল হক কিভাবে ইত্যাদি। হঠাৎ তারা উপলব্দি করল পেছনে একদম কাছাকাছি কেউ আছে এবং তাদের কথা শুনছে। আমাকে দেখে দু’জনই ভীষন চমকে উঠল। একজন বলে উঠল ভাই আপনি ইন্টিলিজ্যান্স এর লোক হলেও বলেন তো কথাটাতো মিথ্যা নয়। আমি মুছকি হেঁসে কথা না বলে তাদের পাশাপাশি হাঁটতে থাকলাম। বুঝলাম তারা ঘামছে। ততক্ষনে ভিভি আইপি টার্মিনালের সামনে চলে এলাম। আমার গন্তব্য বামে। সেখানে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অফিসারদের জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাবেন? বলল এইতো সামনে। বামের পুলিশদের দেখিয়ে দু’জনের সাথে হ্যান্ডশেক করে বললাম-যান অসুবিধা নেই। বামের রাস্তা ধরে পুলিশি ব্যারিকেডের সামনে যেতেই ওরা রাস্তা ছেড়ে দিল। আমি বরাবর এগিয়ে গেলাম। ফ্লাইং একাডেমীর লোকজন খুব খাতির করল। তথ্য যা দরকার সবই দিল। কত টাকা লাগবে, কত ঘন্টা উড়তে হবে, কোথায় মেডিকেল টেস্ট করতে হবে ইত্যাদি। ভর্তি ফরম কিনে বের হয়ে এলাম। মতিঝিল যেতে হবে। তারপর বড় খালার বাসায় যাব। এয়ারপোর্ট বাস স্ট্যান্ডে এলাম। কাউন্টার গাড়ি গুলোতে বরং ভীড় বেশি। আড়াই টাকা দিয়ে সোয়া একটি পান কিনে মুখে দিলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে মোটামুটি খালি পেয়ে একটি লোকাল বাসে উঠলাম। আমার সাথে আরো কয়েকজন উঠলেন। বেশ কয়েকটি সীট ফাঁকা আছে। আমার পেছন হতে এক লোক ধাক্কা দিয়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে এক মহিলার পাশে খালি সিটে বসে পড়ল। মনে হয় যেন আরেকটু দেরি হলে তিনি মহিলার পাশের সিট হারাবেন। আমি গিয়ে বসলাম এক বৃদ্ধের পাশে। সব সময় সাধারণত তাই করে থাকি। কারণ বৃদ্ধরা জীবনের কথা, অতীতের কথা বলতে চায়। সেগুলো শুনতে আমার ভাল লাগে। তবে একবার ব্যাপারটি খুবই বিরক্তিকর হয়েছিল।

কয়েকমাস আগে জামাল কাকার চাপে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে ট্রেনে করে যাচ্ছিলাম চট্টগ্রাম। আগে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। কাগজপত্র সাথে নিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল ট্রেনে বসে পড়াশোনা করব। কিন্তু এক মিনিট সময়ও পড়ায় মন দিতে পারিনি। পাশের সিটে বসেছিলেন এক বৃদ্ধ লোক। বৃদ্ধ লোকটি তার জীবনের ইতিহাস, ছেলে মেয়েদের কথা, বাবা-মা, ভাই-বোনদের কথা বলতে বলতে যখন চট্টগ্রাম পৌঁছি তখনও তার অনেক কথা বাকি ছিল। আমাকে প্রায় পাঁচশত উপদেষ্টা দিয়েছেন। আমি বুঝতে পারি না, যে বৃদ্ধগুলো বসে বসে ঝিমুতে থাকে। তারা যখন স্মৃতি চারন করে এত শক্তি পায় কোথায়। কোন ক্লান্তি তখন তাদের স্পর্শ করে না। যেমন এই মুহুর্তে পাশের বৃদ্ধ লোকটি অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে। হঠাৎ বেচারা মূখ ভরে বমি করে দিলেন। এরপর শুধু খাবি খাচ্ছিলেন। তার মাথা শক্ত করে ধরলাম। বমি করলেন মহিলার পাশে বসা ভদ্রলোকের গায়ে। লোকটি চেঁচিয়ে উঠল। আমি বললাম অন্য মহিলার পাশে বসলে এমনি হয়। লোকটি রেগে গেল। বললাম নিজের বউ এর সাথে মামলা চালাচ্ছেন। ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে ঘুরছেন। অথচ অন্য মহিলার সাথে বসার জন্য পাগল হয়ে গেছেন। লোকটি একেবারে চুপসে গেল। এদিকে বৃদ্ধ লোকটির অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছেনা। ততক্ষনে বাস কাকরাইল চলে এসেছে। বেচারাকে বাস থেকে নামিয়ে প্রধান বিচারপতির বাসার সামনে ফুটপাতে শুইয়ে দিলাম। তার আগে হাতের পত্রিকাটি বিছিয়ে দিয়েছি যাতে ময়লা না লাগে। অন্যকোন লোক নামলো না। নাড়ি দেখলাম মোটামুটি স্বাভাবিক। একটু একটু কথা বলতে পারলেন। পরিষ্কার করে একটি মোবাইল নাম্বার বললেন। নিজের নাম বললেন আলতাফ হোসেন ডায়াবেটিস আছে জানালেন। ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, একজন চা বিক্রেতা পেলাম। তার কাছ থেকে কিছু চিনি নিয়ে খাইয়ে দিলাম। চা বিক্রেতা ছেলেটার কাছে মোবাইল দেখলাম। সেখান থেকে বৃদ্ধের দেয়া নাম্বারে কল করলাম। মহিলা কণ্ঠÑকে?

- আমি নিরু?

- কি চাই? শুধু শুধু ফোন করতে ভাল লাগে?

- কি বলছেন এসব?

- বেয়াদবদের এভাবেই বলতে হয়।

- বেয়াদবী করার সময়তো এখনো পেলাম না।

- এই কুকুরের বাচ্চা, তোকে না আর ফোন করতে নিষেধ করেছি। তোর কি লজ্জা শরম কিছুই নেই?

- তাই? আলতাফ সাহেবকে চিনেন?

- এই বেয়াদব, তিনি আমার বাবা জানিস না?

- না, জানি না। শুধু এটুকু জানি, উনি ফুটপাতে ঘুমিয়ে আছেন।

এরপরই লাইন কেটে দিলাম। সাথে সাথে আবার কল বেক করল। চা-ওয়ালাকে বুঝিয়ে বললাম। সে ফোন রিসিভ করে ঘটনার বয়ান দিল। মনে হয় একটু বেশিই বলল। মেয়েটি মতিঝিলেই ছিল। বিশ মিনিটের মধ্যে একটি সিএনজি নিয়ে হাজির হল। আমাকে অনেক সরি বলল। বললাম সরি আমাকে না বলে নিজের বাবাকে বলুন। বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছেন গোপনে। কিন্তু তিনি সেটা জেনে ফেলেছেন। আপনার পছন্দের ব্যাপারে তার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ঘটনা যা ঘটালেন তাতে তার অভিমান চরমে উঠেছে। ডায়াবেটিস অনেক বেড়ে গেছে। হার্ট এটাক করেনি সেটাই বেশি। এখন যদি তিনি জানেন বিয়ে ভেঙ্গে গেছে একরকম তখন অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? পুরুষ কন্ঠ শুনলে ভাব বেড়ে যায় না? মেয়েদের কথায় এত ঝাঁঝ না থেকে বরং শালীনতা থাকা ভাল। চা-ওয়ালা ছেলেটাকে বিশ টাকা দিবেন। মেয়েটাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে। সোজা ইউটার্ন নিয়ে ধানমণ্ডির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম। মতিঝিল আর যাব না। বড় খালার বাসায় যাব। বড় খালার বাসা ধানমণ্ডি। হাঁটতে হাঁটতে প্রথম জিগাতলা গেলাম। ওখানে কাঁচাবাজারের আগে রহম আলীর ভাতের আড়তে ভাত খেলাম গরু দিয়ে। এখানে সুবিধা হলো ফিক্সড ৮০ টাকা। ভাত যা খাওয়া যায় সাথে ডাল ফ্রি। তরকারি মাছ বা মাংস ছোট এক পেয়ালা। মাছ হলে একটি আর মাংস হলে দু’টি আনুবীক্ষণিক টুকরা। সাথে একটি আলুর গ্রেনেড।











সকাল থেকেই আবরার খুব খুশি। নানু এসেছে। নানু বাড়ির আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে আরও কত কী সব এনেছে। একটার পর একটা সে খেয়েই যাচ্ছে। দুপুরে খাওয়ার পর নানুর সাথে ঘুমুতে গেছে। নানুকে আবদার করে বলল নানু গল্প বলো। নানু বললেন কী গল্প বলব?

- ঐ যে কাকের গল্প। কাক কীভাবে কাল হল।

- এ গল্পতো অনেকবার বলেছি

- আবার বলো।

বড় বোন মানহা এসে ধমক দিলো

- তুই নানুকে জ্বালাবি না। নানু হাসলেন ও কিছু না মানহা। আমি তাকে গল্প বলছি।

তাহলে শোন-

খুব প্রাচীনকালে কাকেরা এমন ছিল না। সব কাক ছিল সাদা রঙের। এদের মধ্যে একটি অনেক বড় কাক ছিল। সে ছিল কাকদের রাজা। তার কথা সবাই শুনতো। একবার হয়েছে কি-কাকের রাজার সাথে মহিষের বন্ধুত্ব হলো। মহিষ তাদের দুঃখের কথা কাকের রাজাকে জানালো। শিকারী দল এসে মহিষ ধরে নিয়ে যায়। এতে দিন দিন মহিষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কাকের রাজা সব কথা শুনে বলল আমি তোমাদের সাহায্য করব। কাকের রাজা সব কাকদের বলে দিল তোমরা যে যেখানে থাক যদি দেখ শিকারী দল আসছে তবে মহিষদের গিয়ে জানিয়ে দেবে। তাহলে তারা নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে পারবে। কারণ তারা আমাদের বন্ধু। রাজার নির্দেশে যখনই কোন শিকারী দল প্রস্তুতি নিয়ে জঙ্গলের দিকে রওয়ানা দেয় তখন কাক এসে মহিষদের জানিয়ে দেয়

‘‘কা-কা-কা-কা শিকারী দল আসছে তেড়ে,

তোমরা সবাই যাও জায়গা ছেড়ে।’’

ফলে অবস্থা এমন হল শিকারীগণ কোন মহিষই ধরতে পারেনা। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেল। শিকারীগণ সভায় বসল। আলোচনায় সবাই বুঝতে পারল এর জন্য কাকেরা দায়ী। অতএব কাকদের শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হল। শাস্তি কীভাবে দেয়া হবে তাও ঠিক করা হলো। স্বাস্থ্যবান এক যুবককে মহিষের শিংসহ চামড়া পরিধান করে মহিষ বানানো হলো। সে মহিষের মতো করে চারপায়ে ভর দিয়ে মহিষদের দলের কাছে চলে গেল। বেশ পরে শিকারীর দল রওয়ানা দিল। যথারীতি কয়েকটি কাক এসে মহিষদের বলল-

‘‘কা-কা-কা-কা শিকারীগণ আসছে দলে,

তোমরা সবাই যাও চলে’’।

মুহূর্তের মধ্যে মহিষপাল চলে গেল। মহিষের বেশে শিকারীটি ঘাস খাওয়ার ভান করতে লাগল। অনেকগুলো কাক এসে তাকে সাবধান করলেও সে জায়গা ছেড়ে গেল না। এর পর আসল কাকদের রাজা। সে উড়ে গিয়ে মহিষটির পিঠে বসে বলল-

‘‘কা-কা-কা কা, তুমি ভাই বধির নাকি।

শিকারীর দলকে তো পারবে না দিতে ফাঁকি।’’

তৎক্ষণাৎ মহিষের বেশ ধরা শিকারিটি কাকদের রাজা বড় সাদা কাকটিকে ধরে ফেলল। ধরেই রশি দিয়ে বেঁধে ফেলল। কাকের রাজার ভাগ্য নির্ধারণ করতে শিকারীগণ আবার সভা ডাকলেন। তখন শীতকাল ছিল। একপাশে আগুন জ্বলছিল। এক শিকারী অসম্ভব ক্রোধান্বিত হয়ে পা বাঁধা কাকটিকে আগুনে নিক্ষেপ করল। আগুনে রশি পুড়ে গেলে ঝলসানো অবস্থায় কোনমতে জীবন নিয়ে কাকটি উড়ে গেল। রং হয়ে গেল তার কাল। উড়তে উড়তে কাক শপথ করল আর কোন দিন মহিষের উপকার করবে না। তখন থেকে ধীরে ধীরে সব কাকের রং কাল হয়ে গেল। নানু গল্প শেষ করে তাকিয়ে দেখেন জিকু ইতোমধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। দরজায় টোকা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন জাহানারা বেগম। বললেন মা কী করছ? কিছুক্ষণ ঘুমাও। তোমার সাথে একটু ঘুমাবো। জিকুর নানু মনোয়ারা বেগম নিজের মেয়েকে জায়গা করে দিলেন। কলিংবেলের শব্দে মাত্র আসা ঘুমটি ভেঙ্গে গেল জাহানারা বেগমের। দরজা খুলে দেখেন অফিসের পিয়ন কালু মাতব্বর দাঁড়িয়ে আছে, হাতে বড় বাজারের ব্যাগ। কালু মিয়া সালাম দিল-

- আসসালামু আলাইকুম মেডাম

- কী ব্যাপার কালু, ব্যাগে কী?

- স্যারে তাজা মাছ ফাডাইছে

- তোমার স্যার কোথায়?

- স্যারে তো অফিসে

- যাও, মাছ তোমার স্যারকে দিয়ে আস।

- কী বলেন মেডাম, মাছ নিয়ে হে কী করব?

- যা বলেছি তা কর। ভাগ এখান থেকে। এই মাছ এখন কাটবে কে? বুয়া গেছে ছুটিতে । সময় অসময় নেই তোমাদের?

- মেডাম, আমি মাছ কাটতে পারি। আপনি অনুমতি দিলে মাছগুলো কেটে দিই। এই মাছ ফিরট নিয়ে গেলে আমার চাকরি চইল্যা যাইব।

- যাও রান্নাঘরে যাও, হাত কেটে এদিক ওদিক হলে সোজা চুপ করে চলে যাবে। আমি কিছু যেন না শুনি বা না দেখি।

- ঠিক আছে মেডাম।

- ঠিক আছে তো বলছ। পরে, না আবার আমার মাছগুলোই নষ্ট কর। তুমি কাটাকাটি শিখলে কখন?

- কী বলেন মেডাম । অফিসে দুপুরে যে পাকসাক হয়, হেইডা তো আমিই কাটি। অফিসের হগলে কয় যেই দিন আমি না কাডি হেই দিন কোন পাকই মজা হয় না।

- হইছে আর লেকচার মারতে হবে না। যাও দেখি শুরু কর।

আড়ালে দাঁড়িয়ে মানহা সব শুনছিল। কাছে এসে মাকে বলল-

- মা, তুমি লোকটার সাথে এমন ব্যবহার করলে কেন?

- কী করব? জামাই আদর করব না কী?

- মা, তুমি এসব কী বলছ?

- শুন, তোদের বাপ মেয়ে কারোই কোন আক্কেল নেই।

ডোর বেল বেজে উঠলে গজ গজ করতে করতে জাহানারা বেগম দরজা খুলে দিলেন। দরজায় পুলিশ দেখে তার মেজাজ খুবই শীতল হয়ে গেল। পুলিশ জিজ্ঞেস করল আফজাল সাহেবের বাসা? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। পুলিশ আবার জিজ্ঞেস করলÑ ভেতরে কোন পুরুষ মানুষ আছে?

- হ্যাঁ

- কী নাম?

- কালু মিয়া

- আপনার ছেলে?

- না, আমার আমার হাজব্যান্ড অর্থাৎ আফজাল সাহেবের অফিসের পিওন।

- আপনি মিথ্যা বলছেন। নিজের ছেলে কামালকে আদর করে কালু মিয়া ডাকতে পারেন। কিন্তু তাকে অফিসের পিওন বানিয়ে ফেললেন। এটাতো ঠিক হয় নি।

পুলিশ ভেতরে ঢুকে রুমে রুমে তল্লাশি শুরু করল। রান্নাঘরে গিয়ে কালু মিয়াকে আটক করল। পুলিশ দেখে বেচারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। গত মাসে গ্রামে জায়গা-জমিন নিয়ে তার চাচাদের সাথে ঝগড়া হয়েছিল। চাচা বলেছেন তিনি প্রয়োজনে মামলা করবেন, লাল দালানে ঢুকাবেন ইত্যাদি। সম্ভবত তারা মামলা মোকদ্দমা করেছে। কিন্তু পুলিশ তার খোঁজে স্যারের বাসায় কীভাবে চলে এল এটি তার মাথায় ধরে না। পুলিশের কোন কথাই সে শুনছিল না। শুধু জ্বি জ্বি বলছিল। পুলিশ বলল, তুমি আফজাল সাহেবের ছেলে?-জ্বি। তোমার নাম কামাল?-জ্বি। লাইলী তোমার প্রেমিকা?-জ্বি। লাইলীকে এসিড মারার দায়ে তোমাকে গ্রেফতার করা হল। জ্বি-ঠিক আছে। আপনারা তাহলে যান। আমি অফিসে চলে যাচ্ছি। পুলিশ হেসে উঠল। জাহানারা বেগম এতক্ষণে দিশা পেলেন। তিনি বললেন আপনারা এসব কী করছেন? আমার এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়েটি এবার এইচ এস সি পাশ করেছে। ছেলেতো এখনো স্কুলেই যাওয়া শুরু করেনি। পুলিশ অফিসার বললেন, আপনি আবারও মিথ্যা বলছেন।

না, খালা মিথ্যা বলেনি।

নিরুর কণ্ঠ শুনে সবাই সেদিকে তাকালো। ঘরের দরজা খোলা ছিল। কয়েকমিনিট আগে নিরু বাসায় ঢুকেছে। নিরু বললো, আরে ওসি সাহেব! সেই আপনি?

- হ্যাঁ, আমার প্রমোশন অর্ডার হয়েছে। কয়েক দিন হলো ধানমন্ডি থানায় এসেছি। আগামী মাসে মিশনে যাব। তারপর দেশে ফিরে অর্থাৎ ১ বছর পর প্রমোশন কার্যকর হবে। তবে ভাবছি দেশে ফিরে আর চাকুরি করব না।

- নিরু হেসে উঠে বলল-এখনো দেখি আপনার মাথায় ধান্ধা ঘুরছে। আর এখানে এসে খালুর পাছা চুলকাচ্ছেন।

- এসব অসভ্য কথা বললে, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অপরাধে আপনাকে অ্যারেস্ট করা হবে।

- তৎক্ষণাৎ একজন পুলিশ কনস্টেবল এসে নিরুর পাছায় কষে লাথি মারল। ওসি সাহেব নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলেন কনস্টেবলের আচরণে। তিনি চাননি ঘটনা এমন হোক। তবে পুলিশের কাজের ধরন অনুযায়ী এটি স্বাভাবিক প্র্যাকটিস। নিরু ব্যাথা পেয়েছে। একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল-

যাক আমি বলছিলাম চুলকানির কথা। গর্দভটি লাথি দিয়ে বসল। ওসি সাহেব আমি তার পায়ের দিক থেকে পচা গন্ধ পাচ্ছি। কনস্টেবলটি আবার এগিয়ে যেতে চাইলে ওসি হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিল। নিরু ওসির হাত থেকে ওয়ারেন্ট অর্ডারটি নিয়ে পড়ে দেখে বলল-

- সর্বনাশ, ওসি সাহেব। আমি না এলে আজকে মহাবিপদে পড়তেন। প্রমোশন আর মিশনে যাওয়াতো দূরের কথা সাসপেন্ড হয়ে যেতেন।

- কী ব্যাপার?

- আপনার ওয়ারেন্টে আসামীর নাম কামাল হোসেন, পিতা- আফজাল হোসেন খান। ঠিকানা ঃ ২১নং বাড়ি অথচ এই ব্যাক্তি খালুর অফিসের পিওন, কালু মিয়া, বাড়ি গোপালগঞ্জ। আর যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এটি ২৭ নং বাড়ি। আমার খালুর নাম আফজাল ইসলাম চৌধুরী।

ওসি, আর একটি কথাও না বলে ফোর্স নিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেলেন।

পুলিশ বের হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই আফজাল সাহেব বাসায় ঢুকলেন। চোখ দুটো কপালে তুলে বললেন আমার বাসায় পুলিশ? নিরু বললো-কেন খালুজান, আপনার বাসায় পুলিশ আসতে পারে না?

- না, অসম্ভব।

- পুলিশ আপনার ছেলেকে ধরতে এসেছে।

- ইয়ার্কী করবি না, আমার মাসুম বাচ্চা কোন অপরাধ করে নি।

- তাহলে আপনি করেছেন?

- চুপ বেয়াদব।

- না খালু, এই ধরেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে অখ্যাত কোম্পানিকে লোন দেয়া ইত্যাদি। তাছাড়া পুলিশ...........

নিরু আর কথা বলতে পারল না। খালা এসে তার মুখ চেপে ধরে বললেন, প্লিজ নিরু তুই কোন কথা বলবি না। আমার ভয় করে। তুই কথা বলতে দেরি, ফলতে দেরি হয় না।

স্বামীকে উদ্দেশ্যে করে বললেন-শোন পুলিশ ভুলে এ বাসায় এসেছে। তোমার নামের সাথে মিল এক ভদ্রলোকের অপরাধী ছেলের সন্ধানে এসেছিল। ভুল বুঝতে পেরে ফিরে গেছে। সবার অলক্ষে কালু মিয়া নিরুর পা ধরে বসে রইল। নিরু পা সরানোর চেষ্টা করতে গেলে সকলের চোখে পড়ল। আফজাল সাহেব রেগে আগুন হয়ে গেলেন। দৌড়ে গেলেন কালুর দিকে- গর্দভ কোথাকার। আমার ইজ্জত ডোবাবি। কালু উত্তর দিল-স্যার, নিরু ভাইজান আজ আমার জান বাছাইছে। পুলিশরে আপনার পাছা চুলকানোর কথা বলে তাড়াইছে।

- কুত্তার বাচ্চা, আমার বাসা থেকে বের হয়ে যা।

জাহানারা বেগম এগিয়ে এলেন।

- সবার মাথা গরম হলে তো সমস্যা। ফ্রিজে বরফ আছে, তোমার মাথায় বরফ পানি দেব নাকি?

- ফালতু কথা বলে মেজাজ গরম করবে না।

- আমার সব কথা ফালতু, আর তোমার ঐসব বিশ্রী গালি দরকারি কথা, না?

- সবাই ভাগ, নিজের চরকায় তেল দাও গিয়ে, আমি এখন ঘুমাবো।

নিরু বলল খালুজান, আজকে ঘুম আপনার কপালে নাই। কিছুক্ষণ পর দুদক থেকে একজন নোটিশ নিয়ে আসবে। আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তারা। আপনি নির্দোষ হলেও সবাই তো জানে না বা বিশ্বাস করে না। নোটিশটি আপনি রিসিভ করলে আগামীকালই দুদকে হাজিরা দিতে হবে। আর এখন যদি কেটে পড়েন তবে ঘুচিয়ে নিতে দু-চারদিন সময় পাবেন। হিতাকাক্সক্ষী কারা আছে তাদের কাছে যান। দ্রুত এখান থেকে ভাগেন। আফজাল সাহেব চোখ গরম করলেও খুবই নরম পদক্ষেপে বাসা হতে বের হয়ে গেলেন। তাকে অনুসরণ করে কালু মিয়াও বের হলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.