নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নগরের নাগরিক

এসো ভাই , তোলো হাই , শুয়ে পড়ো চিত, অনিশ্চিত এ সংসারে এ কথা নিশ্চিত - জগতে সকলই মিথ্যা , সব মায়াময়, স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয়।

নগরের নাগরিক

গোপন কথা রহিবে না গোপনে

নগরের নাগরিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কল্পনায় সন্তান হারানো সকল মায়ের বুকে কান পেতে তীব্র হাহাকার শোনার চেষ্টা করি…।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩

সন্তান যখন প্রথম বাবা আর মা ডাক শেখে পৃথিবীর সবচাইতে খুশী হন সেই সন্তানের বাবা মা। কিন্তু আমার বেলায় ঘটেছে ঠিক উল্টো। যেদিন প্রথম বাবা ডেকেছিলাম সেদিন আমার মা সবচেয়ে বেশী দু:খ পেয়েছেন। জড়িয়ে ধরে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। আর বাবা ! খুশী কিংবা দু:খ কোন ধরণের অনুভুতি প্রকাশেরই সুযোগ পাননি। আমার বয়স যখন মাত্র পাঁচ মাস তখনই মরণব্যধি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে তিনি জাগতিক সবকিছু ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ওই প্রথম অবুঝ অবস্থায় বাবা ডাক ই আমার জীবনে শুরু এবং শেষ। জ্ঞান হবার পর আমি আর কখনো বাবা ডাকতে পানিনি। সেই থেকে আমার মা একাই আমার কাছে বাবা এবং মা দুটোই।



ছয় ভাই চার বোনের সংসার একা হাতে সামলাতে গিয়ে মাকে দেখেছি ভোর বেলা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করতে। চোখের পানি আর ঘাম মিলেমিশে একাকার হয়ে মায়ের শরীর থেকে যে ঘ্রাণ বের হত খোদার কসম করে বলছি পৃথিবীর কোন আতর সুগন্ধীতে আমি সেই সুবাস পাইনি। মা আমাদের আগলে রেখেছেন বড় করেছেন মানুষ করেছেন। নিজের সুখের কথা মুহুর্তের জন্যও ভাবেননি। জগতের সব মা ই হয়ত এমন। মায়ের কাছে আজো আমি সেই পাঁচমাস একবছরের অবুঝ ছেলেটি।



বয়স হয়েছে। গত প্রায় ১৪/১৫ বছর থেকে মায়ের ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, সাথে প্রেসারও। নিয়মিত ইনসুলিন নিচ্ছেন দুবেলা করে। দৃষ্টি শক্তি কমে গিয়েছে। ২০১২ সালের মে মাসে সেজো ভাইয়ার অকাল মৃর্ত্যুতে শারিরীক ও মানসিকভাবে মা খুবই ভেঙ্গে পড়েছেন। সাইলেন্ট স্ট্রোক করে হসপিটালে ছিলেন। এখন মহান আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে অনেকটাই সুস্থ আছেন। কিন্তু হরেকরকমের ঔষধের প্রভাবে গত প্রায় দুই মাস থেকে প্রচন্ড কাশি শুরু হয়েছে। কাশির কারণে ঘুমুতে পারেননা সারারাত। রাতে অনেকসময় কাশতে কাশতে মায়ের শুভ্র চেহারা লাল হয়ে যায়। নি:শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। একান্ত বাধ্য না হলে মমতাময়ী মা কাউকে ডাকতে চান না আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে ভেবে। রাতে মায়ের এমন অবস্থা দেখে সেদিন মনে মনে আল্লাকে বলেছিলাম হে আল্লাহ! আমার মায়ের কাশি সহ যাবতীয় কষ্ট তুমি আমায় দিযে দাও তবু উনাকে তুমি সুস্থ রাখো। গত তিন চারদিন থেকে সামান্য ঠান্ডা লাগায় আমার গলায় টনসিল আসলো সাথে সর্দি কাশি শুরু হল। মায়ের কাশির তুলনায় দশভাগের একভাগ কাশি আমার হওয়াতেই আমি বুঝতে পারি মা কি পরিমাণ ধৈর্য নিয়ে বেঁচে আছেন। অন্যদিকে মা নিজের এমন অবস্থায় যতটুকু বিচলিত হতেন তার তুলনায় আমার সামান্য জ্বর সর্দি কাশি হওয়াতেই কয়েকগুণ বেশী বিচলিত হয়ে পড়েছেন। নিজের গরম জামা শরীর থেকে খুলে আমায় পরিয়ে দিয়েছেন। ব্যাগ থেকে গলায় বাধার জন্য মাফলার বের করে দিয়েছেন। প্রতিটা মুহুর্তেই খোঁজ নিচ্ছেন এখন কেমন লাগছে। আমি মায়ের চেহারার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি আর স্রষ্টার অদ্ভুতরকমের এক সৃষ্টিরহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করি।



স্ট্রোকের পর থেকে মাকে আমরা কোন রকম দু:সংবাদ এবং খুব ভাল কোন সুসংবাদ সাথে সাথেই শুনাইনা। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে আস্তে আস্তে বুঝিয়ে বলি। সামান্য কোন বিষয়েও মা এখন খুব বিচলিত হয়ে পড়েন। বাসায় মায়ের সময় কাটে ভাইয়ার ছেলের সাথে গল্প করে আর নামাজ কালাম পড়ে। মাঝে মাঝে টিভিতে খবর শুনেন। সমসাময়িক অস্থিতিশীল রাজনীতি নিয়ে মা খুবই চিন্তিত। আমরা বাইরে যাওয়ার আগে একই কথা বারবার বলেন- বাবা সাবধানে থাকিস। কয়েকদিন আগে বিশ্বজিতের নৃশংস হত্যাকান্ড দেখে মা কয়েকরাত ঘুমুতে পারেননি। গতকালের হরতালে বগুড়ায় ৪জনের খুন হওয়ার খবর মাকে প্রথমে শুনাতে চাইনি উনার অস্থিরতা বেড়ে যাবে এই ভেবে। রাত দশটার সংবাদ চলাকালে পাশের রুম থেকে আওয়াজ শুনে মা আর থাকতে পারেননি। উঠে এসে জানতে চাইলেন কোথায় কয়জন মারা গেছে। কিভাবে মারা গেছে।



মাকে টেনশান থেকে বিরত রাখতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম মা এটা তেমন কিছুইনা জামায়াত শিবিরের লোক মরেছে। ওরা রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী। ওদের মারাই উচিৎ। আমাদের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ এদের উপর হিংস্র থেকে আরো হিংস্রতর হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তার দলের নেতা কর্মীদের। পুলিশ কমিশনার দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কি আছে।

মা অনেকক্ষণ চুপ থাকলেন।

তারপর একটা দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলে বললেন- আহারে যারা মারা গেছে তাদের মায়েদের কি অবস্থা। মায়ের কাছে সন্তান মানে নাড়ি ছেঁড়া ধন। যেখানে রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাপরাধী বলে কিছু নেই। এই মায়ের বুক খালি করেছে যারা তাদের বিচার আল্লায় করুক।



আমি কল্পনায় সন্তান হারানো সকল মায়ের বুকে কান পেতে তীব্র হাহাকার শোনার চেষ্টা করি…। শ্রদ্ধায় অবলীলায় মুখ থেকে বেরিয়ে যায়- রাব্বির হাম হুমা কামা রব্বায়ানি সগিরা…।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩৭

ঝটিকা বলেছেন: খুব টাচি লেখা। আল্লাহর সব সৃষ্টিই নিঃসন্দেহে অনেক সুন্দর। কিন্তু আমার কছে শ্রষ্ঠ মনে হয় মা'কে তৈরি করা। এতো আবেগ, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা!!

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩১

রক্তভীতু ভ্যাম্পায়ার বলেছেন: অনেক ভালো লিখেছেন! প্লাস!

৩| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬

স্পাইসিস্পাই001 বলেছেন: উপস্থাপনা প্রশংসনীয়......

আাপনার মা'র জন্য শুভকামনা রইল.......

ধন্যবাদ........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.