![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গোপন কথা রহিবে না গোপনে
০১.
অদ্ভুত ব্যাপার হল প্রাইমারী স্কুলে আমাদের ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বিষয়টি পড়াতেন একজন হিন্দু শিক্ষক। উনার ভাল নাম কি ছিল সেটা এখন আর মনে নেই। তবে উনাকে আমরা সবাই বাবু স্যার বলেই ডাকতাম। চোখে কম দেখতেন বলে ক্লাশে আমরা একজন দুষ্টুমি করলে স্যার এসে পাশের জনকে বেত্রাঘাত করতেন। তবুও স্যারের প্রতি আমাদের একধরণের মোহ কাজ করতো। স্যার একদিন পড়ানোর ফাঁকে মজা করে আমাদের বললেন- তোরা কেউ উর্দু কিংবা হিন্দি ভাষা জানিস? আমরা ডানে বামে মাথা দুলিয়ে বললাম- না স্যার।
স্যার হাঁসতে হাঁসতে বললেন- যে কোন বাংলা বাক্যের শেষে হোগা শব্দটি যোগ করলে উর্দু হয়ে যায় আর হ্যায় শব্দটি যোগ করলে হিন্দি হয়ে যায়। তার পর থেকে আমরা ক্লাশে সবাই সব কথার শেষে হোগা আর হ্যায় শব্দ যোগে উর্দু আর হিন্দিতে কথা বলা শুরু করলাম। এই যেমন- দত্তরি (দপ্তরি) ঘন্টা বাজাতে হ্যায়,ইশকুল ছুটি হোগা ইত্যাদি। অদ্যাবধি আমার উর্দু আর হিন্দি ভাষার জোর ওই হোগা আর হ্যায় এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।
এখনো হিন্দি মুভি দেখতে বসলে ডায়ালগ বুঝতে আমাকে ইংরেজী সাবটাইটেল এর উপরই ভরসা করতে হয়। উর্দু মুভি দেখাই হয়না। বলা চলে এই দুটো ভাষা আমাকে কখনো টানে নাই।
কয়েকদিন আগে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দলীয় আলোচনা সভায় বিরোধী দলীয় নেত্রীর উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে উর্দুতে কি যেন বলেছিলেন। টেলিভিশনে দেখছিলাম আর অভ্যাস বশতঃ প্রধানমন্ত্রীর উর্দুতে বলা কথাটা না বুঝে নিচ দিয়ে বাংলা কিংবা ইংরেজী সাবটাইটেল খুঁজলাম। না পেয়ে হতাশ হয়ে অর্থ উদ্ধার করতে আমাকে উর্দু জানা এক বন্ধুর দ্বারস্থ হতে হয়েছিল।
ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় বাংলা ভাষা ব্যাতিত অন্য ভাষায় বলা কথাগুলো বুঝতে আমার মত উর্দু, হিন্দি না জানা মূর্খদের জন্য টিভি স্ক্রীণে বাংলা সাবটাইটেল যুক্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
০২.
...আলী। আমাদের গ্রামের ই পঞ্চাশোর্ধ অবিবাহিত এক আধা পাগল। সব সময় প্রমিত বাংলায় কথা বলতো সে। সবই ঠিক আছে প্রবলেম হল তার সামনে কেউ "ডাইল আলু" বললেই সে চরম ক্ষেপে উঠতো। সে যে পুরুষ, লুঙ্গি তুলে সবাইকে এটার প্রমান দিত। আর একবার ক্ষেপলে তার গালাগালি আর পাগলামো থামতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগত। গালাগালির সময় পুরো গ্রামের সব মানুষের মায়ের সাথেই সে মুখে মুখে আকাম করতো। কেউ তখন তার দিকে তাকালে, তাকে থামতে বললে কিংবা প্রতিবাদ করলে তার গালাগালি আর পাগলামোর ডিউরেশান দ্বিগুণ হয়ে যেত।
এমন পরিস্থিতিতে এলাকার গণ্যমান্য মুরুব্বীরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত দিলেন যে আলীর সামনে কেউ "ডাইল আলু" শব্দ দুটি উচ্চারণ করতে পারবে না। সে গালাগালি কিংবা পাগলামী যা ই করুক কেউ তার দিকে তাকাতেও পারবেনা। এলাকার সবাই তাকে বয়কট করবে।
...আলী মারা গেছে প্রায় চার কি পাঁচ বছর আগে।
হঠাৎ গত কয়েকদিনে রাতের টকশোর টকারদের কথা, আবুলদের দাঁত কেলিয়ে রাবিশ, বোগাস কিংবা মহিউদ্দিন সাহেবদের ক্ষেপে গিয়ে দেখা মাত্র গুলি, পুলিশের আঙ্গুল চোষা তত্ব শুনতে শুনতে আমার গ্রামের ক্ষেপাটে পাগলা আলীর কথা মনে পড়ে গেল। কিছু একটা বলতে গিয়েই আবার চুপসে গেলাম। মনে পড়ে গেল এলাকার এক মুরুব্বীর কথা - পাগলদের কথার প্রতিবাদ কিংবা বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করার চাইতে বয়কট করাই ভাল...।
০৩.
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দলীয়করণ এর ফলে সবাই যখন হতাশ। ঠিক তখনই কয়েকজন তরুণ শহীদ রুমী স্কোয়াড গঠন করে একাত্তরের রাজাকার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের স্পেসিফিক দাবীতে অনশন শুরু করে। মনে মনে তাদের সাপোর্ট করলেও আশঙ্কা করছিলাম গণজাগরণ মঞ্চের মতই কি এটারও পরিণতি হবে কিনা? টানা কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টি আর গরম উপেক্ষা করে তাদের অনশন চালিয়ে যেতে দেখে আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু দাবী আদায়ের আগেই সরকারের এক মন্ত্রীর সাথে কথা বলে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে অনশন ভাঙ্গতে দেখে একটা কথাই মনে পড়লো- অনশন আর কাঁচের জিনিশ একটা সময়ে ভাঙ্গবেই....।
২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৩
ইনফা_অল বলেছেন: অনশন আর কাঁচের জিনিশ একটা সময়ে ভাঙ্গবেই....। ওহঃ রিয়েলী....
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮
মদন বলেছেন: ++++++++++++++++++++++